রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। রোববার, (০৯ নভেম্বর ২০২৫) বিকেলে সিআইডির মালিবাগস্থ প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার অভিযোগপত্র দাখিলে সিআইডিপ্রধানের অনুমোদন
# জমি ও ফ্ল্যাটসহ ৭শ’ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে: সিআইডি
প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিবগাত উল্লাাহ, সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত ডিআইজি আলি আকবর খান, সংস্থাটির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি রায়হান উদ্দিন খান। তারা মামলার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সিআইডির প্রধানের অনুমোদনের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুই-একদিনের মধ্যে আদালতে এসব অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান (মিডিয়া) জানান, মামলার প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং অন্য সহযোগীরা মিলে একাধিক করর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজের আড়ালে এ অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাডভ্যানসার গার্মেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপেয়ার্স, অটোমান লোপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন গার্মেন্টসসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তদন্তে আরও উঠে আসছে, তারা এ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক পিএলসি. মতিঝিল শাখা ঢাকা থেকে এলসি বা বিক্রয় চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল। তবে রপ্তানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি।
এভাবে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুবাইয়ে আর আর গ্লোবার ট্রেডিং এর মাধ্যমে চলে যেত সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউকে, ইউএসএ, আইয়ারল্যান্ড ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে।
আর আর গ্লোবার ট্রেডিংয়ের মালিকানা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে নিবন্ধিত। এই প্রক্রিয়ায় ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮০ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা) রপ্তানি দেখানো হয়েছে।
কিন্তু রপ্তানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি, অর্থাৎ রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবসন না করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে। এ অর্থ পাচারের ঘটনায় সিআইডি বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক ১৭টি মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করেছে।
ইতোমধ্যে এসব মামলা সংক্রান্তে আদালতের আদেশে আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। এরমধ্যে রয়েছে- ঢাকা জেলার দোহার থানা এলাকায় ২ হাজার শতাংশ জমি ও তদস্থিত স্থাপনা সমূহ, রাজধানীর গুলশানে ‘দ্য এনভয়’ বিল্ডিংয়ের ৬,১৮৯ দশমিক ৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকায়র ৬৮/এ রাস্তায় ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত ২,৭১৩ বর্গফুটের আরও একটি ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট।
এছাড়াও সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পাশাপাশি তাদের বিদেশ গমনও রোধ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্রোককৃত সম্পত্তির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৬শ’-৭শ’ কোটি টাকা।
উল্লেখিত ১৭টি মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও জড়িত মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শেষে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য সিআইডির প্রধান কর্তৃক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
উক্ত আসামিদের মধ্যে জেল হাজতে থাকা সালমান এফ রহমানকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার ওয়াসিউর রহমানকে গত জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটনসহ তদন্তসংক্রান্ত অন্যান্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ পূর্বক দ্রুততম সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে দায়েরকৃত ১৭টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের কার্যক্রম শেষে করেছে সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
মানিলন্ডারিংয়ের মতো জটিল ও সময় সাপেক্ষে ১৭টি মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তার দায়িত্ব শেষ করেছে বলে সিআইডি জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রের অর্থপাচারে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীদের আইনের আওতায় আনা এবং আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণে সিআইডির এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। রোববার, (০৯ নভেম্বর ২০২৫) বিকেলে সিআইডির মালিবাগস্থ প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার অভিযোগপত্র দাখিলে সিআইডিপ্রধানের অনুমোদন
# জমি ও ফ্ল্যাটসহ ৭শ’ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে: সিআইডি
প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিবগাত উল্লাাহ, সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত ডিআইজি আলি আকবর খান, সংস্থাটির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি রায়হান উদ্দিন খান। তারা মামলার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সিআইডির প্রধানের অনুমোদনের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুই-একদিনের মধ্যে আদালতে এসব অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান (মিডিয়া) জানান, মামলার প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং অন্য সহযোগীরা মিলে একাধিক করর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজের আড়ালে এ অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাডভ্যানসার গার্মেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপেয়ার্স, অটোমান লোপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন গার্মেন্টসসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তদন্তে আরও উঠে আসছে, তারা এ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক পিএলসি. মতিঝিল শাখা ঢাকা থেকে এলসি বা বিক্রয় চুক্তির ব্যবস্থা করেছিল। তবে রপ্তানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি।
এভাবে রপ্তানির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুবাইয়ে আর আর গ্লোবার ট্রেডিং এর মাধ্যমে চলে যেত সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউকে, ইউএসএ, আইয়ারল্যান্ড ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে।
আর আর গ্লোবার ট্রেডিংয়ের মালিকানা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এএসএফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে নিবন্ধিত। এই প্রক্রিয়ায় ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে মোট ৯৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮০ মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা) রপ্তানি দেখানো হয়েছে।
কিন্তু রপ্তানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি, অর্থাৎ রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবসন না করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে। এ অর্থ পাচারের ঘটনায় সিআইডি বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক ১৭টি মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করেছে।
ইতোমধ্যে এসব মামলা সংক্রান্তে আদালতের আদেশে আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ ক্রোক করেছে সিআইডি। এরমধ্যে রয়েছে- ঢাকা জেলার দোহার থানা এলাকায় ২ হাজার শতাংশ জমি ও তদস্থিত স্থাপনা সমূহ, রাজধানীর গুলশানে ‘দ্য এনভয়’ বিল্ডিংয়ের ৬,১৮৯ দশমিক ৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশান আবাসিক এলাকায়র ৬৮/এ রাস্তায় ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত ২,৭১৩ বর্গফুটের আরও একটি ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট।
এছাড়াও সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পাশাপাশি তাদের বিদেশ গমনও রোধ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্রোককৃত সম্পত্তির বর্তমান আনুমানিক মূল্য ৬শ’-৭শ’ কোটি টাকা।
উল্লেখিত ১৭টি মামলায় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এএসএফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও জড়িত মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শেষে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য সিআইডির প্রধান কর্তৃক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
উক্ত আসামিদের মধ্যে জেল হাজতে থাকা সালমান এফ রহমানকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার ওয়াসিউর রহমানকে গত জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন দেশে পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটনসহ তদন্তসংক্রান্ত অন্যান্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ পূর্বক দ্রুততম সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে দায়েরকৃত ১৭টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের কার্যক্রম শেষে করেছে সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
মানিলন্ডারিংয়ের মতো জটিল ও সময় সাপেক্ষে ১৭টি মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তার দায়িত্ব শেষ করেছে বলে সিআইডি জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রের অর্থপাচারে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীদের আইনের আওতায় আনা এবং আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণে সিআইডির এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।