সংঘাতের পর পাকিস্তান স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার আগে মালপত্র নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা -এএফপি
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ভয়াবহ এক সীমান্ত লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনী। দুই দেশের সীমান্ত বরাবর একাধিক স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় পক্ষই একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংস করার দাবি করেছে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এবং দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাকতিকায় বিস্ফোরণের দুই দিন পর এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনার ‘পাল্টা জবাব’ হিসেবে গত শনিবার রাতে আফগান বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই হামলায় ২৩ জন সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় তালেবান এবং এর সঙ্গে যুক্ত ২০০ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান বাহিনীর এই হামলাকে ‘বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ’ আখ্যায়িত করেছেন।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার গত বৃহস্পতিবারের হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই হামলার বিষয়টি স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই করা তালেবান যোদ্ধাদের পাকিস্তান সমর্থন করত। এ ছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া তিনটি দেশের মধ্যে একটি ছিল পাকিস্তান।
কিন্তু ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গি হামলা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে, তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তান তালেবানের জঙ্গিদের আফগান ভূখণ্ডে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল অবশ্য এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
সীমান্ত সংঘাতের পর পাকিস্তান স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। বন্ধ হওয়ার আগে মালপত্র নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের জেলা চমানে, ১২ অক্টোবর ২০২৫
সীমান্ত সংঘাতের পর পাকিস্তান স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। বন্ধ হওয়ার আগে মালপত্র নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের জেলা চমানে, ১২ অক্টোবর ২০২৫ছবি: রয়টার্স
কেন এই সংঘাত: তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার জানায়, আগের দিন বৃহস্পতিবার কাবুল শহরে দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী প্রদেশ পাকতিকার একটি বেসামরিক বাজারে আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই হামলার পরপরই পাকিস্তানকে আফগান ‘ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব’ লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে তালেবান সরকার। যদিও ইসলামাবাদ সরাসরি হামলার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। তারা আফগান সরকারের প্রতি তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)–এর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানায়।
পাকিস্তানের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল এবং কাবুলে হামলার উদ্দেশ্য ছিল টিটিপিপ্রধান। ওই কর্মকর্তা জানান, টিটিপিপ্রধান একটি গাড়িতে করে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তবে টিটিপিপ্রধান নুর ওয়ালি মেহসুদ এই হামলা থেকে বেঁচে গেছেন কি না, তা আলাদাভাবে যাচাই করতে পারেনি আল-জাজিরা।
অভিন্ন নিরাপত্তার স্বার্থে একসময় পরস্পরের মিত্র হলেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সম্পর্ক ক্রমেই বৈরী হতে থাকে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান প্রশাসন পাকিস্তান তালেবানকে আফগান ভূখণ্ডে আশ্রয় দিচ্ছে। এই গোষ্ঠীটি বছরের পর বছর পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়ে আসছে।
ইসলামাবাদভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (সিআরএসএস) তথ্যমতে, এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানে এ ধরনের হামলায় কমপক্ষে ২ হাজার ৪১৪ জন নিহত হয়েছেন। গত মাসে প্রকাশিত সিআরএসএসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৫ সাল পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী বছর হতে পারে। গত বছর দেশটিতে হামলায় কমপক্ষে ২ হাজার ৫৪৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, কাতার ও ইরান। দেশগুলো উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের পতনের পর থেকেই দেশটিতে হামলা বাড়তে শুরু করেছে। ইমরান খানের সরকার টিটিপিকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর জন্য তালেবানকে মধ্যস্থতায় যুক্ত করেছিল।
যদিও সেই যুদ্ধবিরতি শেষ পর্যন্ত তাঁর মেয়াদকালেই ভেঙে যায়, তবু সে সময় হামলা তুলনামূলক কম ছিল।
বর্তমানে এই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। কারণ, ইসলামাবাদ এখন টিটিপি যোদ্ধাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের সীমান্তজুড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মূল কারণ পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের হামলা বৃদ্ধি। পেশোয়ারভিত্তিক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাহমুদ জান বাবর বলেন, আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ টিটিপির ধারাবাহিক আক্রমণই পাকিস্তানকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালাতে বাধ্য করেছে।
মাহমুদ জান বাবর বলেন, এর মাধ্যমে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে আফগান তালেবান যদি তাদের ভূখণ্ড থেকে এই গোষ্ঠীগুলোকে (টিটিপি) নিয়ন্ত্রণ না করে, তবে পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডের ভেতরে আঘাত হানবে। এই বিশ্লেষক বলেন, সমস্যা হলো টিটিপি আফগান তালেবানের অভ্যন্তরে যথেষ্ট সমর্থন পায়। আর সে কারণেই টিটিপি যখন পাকিস্তানের ভেতরে কর্মকাণ্ড চালায়, তখন আফগান সরকার প্রায়ই দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
মাহমুদ জান বাবর বলেন, যদি কাবুল সরকার টিটিপির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে যায়, তবে তাদের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বে বড় ধরনের বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। তখন কেবল টিটিপি যোদ্ধারাই নয়, আফগান তালেবানের সাধারণ সদস্যরাও হয়তো বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাত মেলাবে। আরও খারাপ কিছু হলে কথিত ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান প্রভিন্স (আইএসকেপি)-তে যোগ দিতে পারে। এ ছাড়া লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলেছে। কয়েক দশকের সংঘাত থেকে বাঁচতে কমপক্ষে ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
সংঘাতের পর পাকিস্তান স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার আগে মালপত্র নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা -এএফপি
সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ভয়াবহ এক সীমান্ত লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনী। দুই দেশের সীমান্ত বরাবর একাধিক স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় পক্ষই একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংস করার দাবি করেছে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এবং দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাকতিকায় বিস্ফোরণের দুই দিন পর এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই ঘটনার ‘পাল্টা জবাব’ হিসেবে গত শনিবার রাতে আফগান বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই হামলায় ২৩ জন সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা দাবি করেছে, তাদের পাল্টা হামলায় তালেবান এবং এর সঙ্গে যুক্ত ২০০ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফগান বাহিনীর এই হামলাকে ‘বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ’ আখ্যায়িত করেছেন।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার গত বৃহস্পতিবারের হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই হামলার বিষয়টি স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই করা তালেবান যোদ্ধাদের পাকিস্তান সমর্থন করত। এ ছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া তিনটি দেশের মধ্যে একটি ছিল পাকিস্তান।
কিন্তু ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গি হামলা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে, তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তান তালেবানের জঙ্গিদের আফগান ভূখণ্ডে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল অবশ্য এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
সীমান্ত সংঘাতের পর পাকিস্তান স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। বন্ধ হওয়ার আগে মালপত্র নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের জেলা চমানে, ১২ অক্টোবর ২০২৫
সীমান্ত সংঘাতের পর পাকিস্তান স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। বন্ধ হওয়ার আগে মালপত্র নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন আফগানিস্তানের নাগরিকেরা। সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের জেলা চমানে, ১২ অক্টোবর ২০২৫ছবি: রয়টার্স
কেন এই সংঘাত: তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার জানায়, আগের দিন বৃহস্পতিবার কাবুল শহরে দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী প্রদেশ পাকতিকার একটি বেসামরিক বাজারে আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই হামলার পরপরই পাকিস্তানকে আফগান ‘ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব’ লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে তালেবান সরকার। যদিও ইসলামাবাদ সরাসরি হামলার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। তারা আফগান সরকারের প্রতি তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)–এর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানায়।
পাকিস্তানের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল এবং কাবুলে হামলার উদ্দেশ্য ছিল টিটিপিপ্রধান। ওই কর্মকর্তা জানান, টিটিপিপ্রধান একটি গাড়িতে করে যাওয়ার সময় তাঁকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। তবে টিটিপিপ্রধান নুর ওয়ালি মেহসুদ এই হামলা থেকে বেঁচে গেছেন কি না, তা আলাদাভাবে যাচাই করতে পারেনি আল-জাজিরা।
অভিন্ন নিরাপত্তার স্বার্থে একসময় পরস্পরের মিত্র হলেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সম্পর্ক ক্রমেই বৈরী হতে থাকে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, তালেবান প্রশাসন পাকিস্তান তালেবানকে আফগান ভূখণ্ডে আশ্রয় দিচ্ছে। এই গোষ্ঠীটি বছরের পর বছর পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালিয়ে আসছে।
ইসলামাবাদভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (সিআরএসএস) তথ্যমতে, এ বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানে এ ধরনের হামলায় কমপক্ষে ২ হাজার ৪১৪ জন নিহত হয়েছেন। গত মাসে প্রকাশিত সিআরএসএসের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৫ সাল পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী বছর হতে পারে। গত বছর দেশটিতে হামলায় কমপক্ষে ২ হাজার ৫৪৬ জন নিহত হয়েছিলেন।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব, কাতার ও ইরান। দেশগুলো উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের পতনের পর থেকেই দেশটিতে হামলা বাড়তে শুরু করেছে। ইমরান খানের সরকার টিটিপিকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর জন্য তালেবানকে মধ্যস্থতায় যুক্ত করেছিল।
যদিও সেই যুদ্ধবিরতি শেষ পর্যন্ত তাঁর মেয়াদকালেই ভেঙে যায়, তবু সে সময় হামলা তুলনামূলক কম ছিল।
বর্তমানে এই সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। কারণ, ইসলামাবাদ এখন টিটিপি যোদ্ধাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের সীমান্তজুড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মূল কারণ পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের হামলা বৃদ্ধি। পেশোয়ারভিত্তিক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাহমুদ জান বাবর বলেন, আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ টিটিপির ধারাবাহিক আক্রমণই পাকিস্তানকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালাতে বাধ্য করেছে।
মাহমুদ জান বাবর বলেন, এর মাধ্যমে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে আফগান তালেবান যদি তাদের ভূখণ্ড থেকে এই গোষ্ঠীগুলোকে (টিটিপি) নিয়ন্ত্রণ না করে, তবে পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডের ভেতরে আঘাত হানবে। এই বিশ্লেষক বলেন, সমস্যা হলো টিটিপি আফগান তালেবানের অভ্যন্তরে যথেষ্ট সমর্থন পায়। আর সে কারণেই টিটিপি যখন পাকিস্তানের ভেতরে কর্মকাণ্ড চালায়, তখন আফগান সরকার প্রায়ই দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
মাহমুদ জান বাবর বলেন, যদি কাবুল সরকার টিটিপির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে যায়, তবে তাদের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বে বড় ধরনের বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। তখন কেবল টিটিপি যোদ্ধারাই নয়, আফগান তালেবানের সাধারণ সদস্যরাও হয়তো বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাত মেলাবে। আরও খারাপ কিছু হলে কথিত ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান প্রভিন্স (আইএসকেপি)-তে যোগ দিতে পারে। এ ছাড়া লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলেছে। কয়েক দশকের সংঘাত থেকে বাঁচতে কমপক্ষে ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।