উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও পরিবারের ছোট্ট সদস্যদের নিয়ে ট্রেনে চড়ে পদ্মা পাড়ি দেন -সংবাদ
পদ্মা সেতুতে বাসের পরে এবার চললো ট্রেন। এর মধ্যে দিয়ে খুললো রেলপথের দখিন দুয়ার। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন এই রেলপথ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে চারটি জেলা রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পুরো প্রকল্প (ঢাকা-যশোর) চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের নতুন মাত্রা পাবে। এই রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে বিধায় এ রেলপথের কোথাও কোনো রেলক্রসিং থাকবে না। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, কাজ সম্পন্ন হলে এই রেলপথে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। এতে ওই অঞ্চল থেকে সারাদেশে পণ্য আনা-নেয়া সহজ হবে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানার, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রেলপথটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওর্য়াকের আরেকটি উপরুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। কারণ, এই রুটটি কন্টেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের একাংশ (ঢাকা-ভাঙ্গা) উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে মাওয়ায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে বোতাম চেপে নতুন রেল সার্ভিসটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পরপরই মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকেট কাটেন শেখ হাসিনা। এরপর পতাকা উড়িয়ে হুইসেল বাজান তিনি, আর ট্রেন ছাড়ে। পরে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বিশেষ ট্রেনে করে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বক্তব্যে বলেছেন, ‘ট্রেনে পদ্মা সেতু অতিক্রম করার স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে।’
বর্তমান সরকারের যোগাযোগ অবকাঠামোর একটি ‘মেগাপ্রকল্প’ এই পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। রেলপথটি তিনটি অংশে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে গেন্ডারিয়া-মাওয়া অংশ (৩৭ কিলোমিটার), মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ (৪২ কিলোমিটার) এবং ভাঙ্গা জংশন-যশোর অংশ (৮৭ কিলোমিটার)।
এর মধ্যে ঢাকা ও গেন্ডারিয়ার মধ্যে তিন কিলোমিটারের একটি সংযোগও নির্মিত হয়েছে। রেলপথে প্রায় ৪৩.২ কিলোমিটার লুপ, সাইডিং এবং ওয়াই-কানেকশনও রয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো ব্রডগেজ রেলপথটির মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২১৫.২ কিলোমিটারে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ২০টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ৬টি পুরনো এবং ১৪টি স্টেশন নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। পুরনো স্টেশনগুলোও সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ১০টি স্টেশনের মধ্যে তিনটির নির্মাণ শেষ। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৬ সালের ৩ মে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল। তখন এটির নির্মাণ ব্যয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। পরে ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে খরচ আরও বাড়তে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি চীনের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পটির কাজ করছে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২৬৬ কোটি ৭৯ লাভ মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাকি খরচ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের কাজ তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার রেলপথটির একাংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমরা মিটারগেজ ও ব্রডগেজকে একীভূত করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ডবল লাইনে রূপান্তর করার জন্য প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতুর রেল প্রকল্পের কারণে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।’
কোন ট্রেন চলবে, কত ভাড়া হবে, কত আয় হবে
উদ্বোধন হলেও বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এক সপ্তাহ পর এই পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলতে পারে। আর এ রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার ও লোকালসহ আরও তিন ধরনের ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে। এগুলোর ভাড়া কম-বেশি হবে। সব ট্রেনেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার হিসাবে। এসি শ্রেণীতে আন্তঃনগরে কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। সেতুর জন্য পয়েন্ট চার্জ যুক্ত হয়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর-খুলনা ও বেনাপোল রুটে প্রাথমিকভাবে আট জোড়া ট্রেন চলবে। এসব ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১৪ হাজার ৫০০। এর মাধ্যমে ২৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।’ রেল সচিব আরও বলেন, ‘এই পথে পণ্যবাহী তিন জোড়া ওয়াগন চালানো হবে। আর এই মালামাল পরিবহন করে ১০৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।’
রেলওয়ে জানায়, আপাতত পদ্মা সেতু হয়ে চলবে ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস। রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটের মধুমতি এক্সপ্রেসকে ঢাকা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। ট্রেনগুলো ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী দিয়ে গন্তব্যে যাবে।
বর্তমানে ট্রেন দুটি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ঘুরে তথা টঙ্গী, জয়দেবপুর, যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে যায়। রাজবাড়ী থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে ঈশ্বরদী-রাজশাহী যায় মধুমতি এক্সপ্রেস। এই তিন ট্রেনের নতুন ভাড়ার তালিকা প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের কমিটি।
ঢাকার কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, নিমতলী, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, শিবচর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। রেলের এসি কামরায় প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। এ হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা ১৫০ টাকা। সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
কিন্তু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। ফলে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে এসি কেবিনের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৯১৫ টাকা। ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ৫২ টাকা।
সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশনে শোভন শ্রেণীতে ২৫০, শোভন চেয়ারে ৩০৫, ফার্স্ট ক্লাসে ৪০৫, কেবিনে ৬১০, এসিতে ৫০৫, এসি সিটে ৬১০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস, কেবিন ও এসিতে ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
ঢাকা থেকে মাওয়ার দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার। কিন্তু ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাবে দূরত্ব বিবেচনা করা হয়েছে ১৩৩ কিলোমিটার। শোভন শ্রেণীতে ৯০, শোভন চেয়ারে ১১০, ফার্স্ট ক্লাসে ১৪৫, কেবিনে ২২০, এসিতে ১৮০, এসি সিটে ২২০ ও এসি কেবিনে ৩৩০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাটসহ কেবিনের ভাড়া ৩৮০ টাকা।
ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও পরিবারের ছোট্ট সদস্যদের নিয়ে ট্রেনে চড়ে পদ্মা পাড়ি দেন -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
পদ্মা সেতুতে বাসের পরে এবার চললো ট্রেন। এর মধ্যে দিয়ে খুললো রেলপথের দখিন দুয়ার। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন এই রেলপথ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে চারটি জেলা রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পুরো প্রকল্প (ঢাকা-যশোর) চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের নতুন মাত্রা পাবে। এই রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে বিধায় এ রেলপথের কোথাও কোনো রেলক্রসিং থাকবে না। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, কাজ সম্পন্ন হলে এই রেলপথে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। এতে ওই অঞ্চল থেকে সারাদেশে পণ্য আনা-নেয়া সহজ হবে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানার, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রেলপথটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওর্য়াকের আরেকটি উপরুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। কারণ, এই রুটটি কন্টেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের একাংশ (ঢাকা-ভাঙ্গা) উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে মাওয়ায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে বোতাম চেপে নতুন রেল সার্ভিসটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পরপরই মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকেট কাটেন শেখ হাসিনা। এরপর পতাকা উড়িয়ে হুইসেল বাজান তিনি, আর ট্রেন ছাড়ে। পরে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বিশেষ ট্রেনে করে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বক্তব্যে বলেছেন, ‘ট্রেনে পদ্মা সেতু অতিক্রম করার স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে।’
বর্তমান সরকারের যোগাযোগ অবকাঠামোর একটি ‘মেগাপ্রকল্প’ এই পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। রেলপথটি তিনটি অংশে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে গেন্ডারিয়া-মাওয়া অংশ (৩৭ কিলোমিটার), মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ (৪২ কিলোমিটার) এবং ভাঙ্গা জংশন-যশোর অংশ (৮৭ কিলোমিটার)।
এর মধ্যে ঢাকা ও গেন্ডারিয়ার মধ্যে তিন কিলোমিটারের একটি সংযোগও নির্মিত হয়েছে। রেলপথে প্রায় ৪৩.২ কিলোমিটার লুপ, সাইডিং এবং ওয়াই-কানেকশনও রয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো ব্রডগেজ রেলপথটির মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২১৫.২ কিলোমিটারে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ২০টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ৬টি পুরনো এবং ১৪টি স্টেশন নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। পুরনো স্টেশনগুলোও সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ১০টি স্টেশনের মধ্যে তিনটির নির্মাণ শেষ। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৬ সালের ৩ মে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল। তখন এটির নির্মাণ ব্যয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। পরে ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে খরচ আরও বাড়তে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি চীনের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পটির কাজ করছে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২৬৬ কোটি ৭৯ লাভ মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাকি খরচ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের কাজ তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার রেলপথটির একাংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমরা মিটারগেজ ও ব্রডগেজকে একীভূত করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ডবল লাইনে রূপান্তর করার জন্য প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতুর রেল প্রকল্পের কারণে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।’
কোন ট্রেন চলবে, কত ভাড়া হবে, কত আয় হবে
উদ্বোধন হলেও বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এক সপ্তাহ পর এই পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলতে পারে। আর এ রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার ও লোকালসহ আরও তিন ধরনের ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে। এগুলোর ভাড়া কম-বেশি হবে। সব ট্রেনেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার হিসাবে। এসি শ্রেণীতে আন্তঃনগরে কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। সেতুর জন্য পয়েন্ট চার্জ যুক্ত হয়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর-খুলনা ও বেনাপোল রুটে প্রাথমিকভাবে আট জোড়া ট্রেন চলবে। এসব ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১৪ হাজার ৫০০। এর মাধ্যমে ২৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।’ রেল সচিব আরও বলেন, ‘এই পথে পণ্যবাহী তিন জোড়া ওয়াগন চালানো হবে। আর এই মালামাল পরিবহন করে ১০৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।’
রেলওয়ে জানায়, আপাতত পদ্মা সেতু হয়ে চলবে ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস। রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটের মধুমতি এক্সপ্রেসকে ঢাকা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। ট্রেনগুলো ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী দিয়ে গন্তব্যে যাবে।
বর্তমানে ট্রেন দুটি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ঘুরে তথা টঙ্গী, জয়দেবপুর, যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে যায়। রাজবাড়ী থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে ঈশ্বরদী-রাজশাহী যায় মধুমতি এক্সপ্রেস। এই তিন ট্রেনের নতুন ভাড়ার তালিকা প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের কমিটি।
ঢাকার কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, নিমতলী, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, শিবচর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। রেলের এসি কামরায় প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। এ হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা ১৫০ টাকা। সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
কিন্তু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে। ফলে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে এসি কেবিনের ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৯১৫ টাকা। ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ৫২ টাকা।
সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঢাকা-ভাঙ্গা সেকশনে শোভন শ্রেণীতে ২৫০, শোভন চেয়ারে ৩০৫, ফার্স্ট ক্লাসে ৪০৫, কেবিনে ৬১০, এসিতে ৫০৫, এসি সিটে ৬১০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস, কেবিন ও এসিতে ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
ঢাকা থেকে মাওয়ার দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার। কিন্তু ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাবে দূরত্ব বিবেচনা করা হয়েছে ১৩৩ কিলোমিটার। শোভন শ্রেণীতে ৯০, শোভন চেয়ারে ১১০, ফার্স্ট ক্লাসে ১৪৫, কেবিনে ২২০, এসিতে ১৮০, এসি সিটে ২২০ ও এসি কেবিনে ৩৩০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাটসহ কেবিনের ভাড়া ৩৮০ টাকা।
ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।