# যা থাকতে পারে আলোচনায় : ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পন
নানা ইস্যুতে সম্পর্কের চরম টানাপোড়নের মধ্যে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসাটেশন (এফওসি)। আগামী ৯ অথবা ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এ দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এ ফরেন অফিস কনসাটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হবে বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন। এফওসিতে অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি। আগামী ৯/১০ তারিখে তিনি ঢাকায় আসবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি হতে পারে ভারত সরকারের জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মকর্তার প্রথম ঢাকা সফর।
এফওসিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। সফরকালে মিশ্রি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে বার্ষিক এফওসি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হবে এফওসিতে বাংলাদেশ-ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে তা নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা চলছে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও রাজনৈতিক মহলে।
কুটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ফরেন অফিস কনসাটেশন (এফওসি )-এ প্রথানুযায়ী দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় ও দুই দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে তার অগ্রগতি এবং সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করবেন।
তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবারের এফওসিতে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কিভাবে প্রশমিত করা যায় তা নিয়ে। এবে বাংলাদেশ পক্ষ আলোচনার টেবিলে তুলবেন একদিকে ভারতে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারনা, বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতন, মন্দির ভাংচুর এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারনা । আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের এক উগ্রবাদীর হামলা ও ভাংচুর প্রসঙ্গও তুলবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে দিন কয়েক আগে জানিয়েছেন, আসন্ন এফওসির আলোচনার প্রস্তুতি সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এফওসির আলোচনায় বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ এবং ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলোসহ দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো থাকবে বলে জানা গেছে। গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের সমুখীন করা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সরকারের উপদেষ্টারা শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করা জোড়ালো দাবি জানিয়ে আসছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও তার বিভিন্ন বক্তৃতায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছন। এখণ সরকারের সামনে রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে তৎপরত হওয়া ছাড়া হত্যন্ত নেই বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করেন। আর শেখ হাসিনা ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গটি প্রথম এবার অনুষ্ঠিতব্য এফওসিতে তুলবে বাংলাদেশ- এটা প্রায় নিশ্চিত।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে বড় ধাক্কা লেগেছে। সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। সীমান্ত সমস্যা, নদীর পানিবণ্টনসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় ঝুলে গেছে। আমদানি-রপ্তানিও বিঘিœত। দোষারোপে চড়ছে উত্তেজনা। এরই মধ্যে সংখ্যালঘু ইস্যু সামনে এনে ভারত সরকার, দেশটির গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমন্বিতভাবে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারে নেমেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিকৃত, মিথ্যা ও ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়াচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রের ভাষ্য, এ অবস্থানের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা দিলেও, দিল্লির আন্তরিকতা বুঝতে চাইছে ঢাকা এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এসব বিষয়ও এফওসিতে আলোচনার টেবিলে উঠবে।
আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ-ভারত এফওসি অনুষ্ঠানের তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে ফরেন অফিস কনসালটেশন হবে ১০ ডিসেম্বর। হয়তো একদিন আগে হতে পারে অথবা ১০ ডিসেম্বর হবে। এটা খুব স্পষ্ট, আমরা চাই ভালো সম্পর্ক। তবে সেটা দুই পক্ষ থেকে চাইতে হবে, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
বিক্রম মিশ্রির সফরের বিষয়ে তয়েকদিন আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক (দ্বিপক্ষীয়) সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং এফওসি হবে সেদিকে এগুনোর প্রথম পদক্ষেপ।”
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক (দ্বিপক্ষীয়) সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং এফওসি হবে সেদিকে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ।’ আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাস্তবসম্মতভাবেই এগিয়ে যেতে পারে।
উভয় পক্ষই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করি এবং আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ভারতের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকতে পারে, এটা স্বাভাবিক। যখন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়, তখন কিছু সমস্যা দেখা দেয়। উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য এ সমস্যাগুলো অতিক্রম করে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের কারণে দুই দেশের মধ্যে ‘সম্পর্কের উন্নতির জটিলতা’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি প্রতিবেশী দেশে না থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্য প্রক্রিয়াটি সহজ হতো।
কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা, রাজনৈতিক বোঝাপড়া, ভারতীয় গণমাধ্যমের বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার, ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য, ভিসার জট খোলা, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, ভারত থেকে নিত্যপণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে রপ্তানির নানা বাধা সরানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ জোর দিতে পারে।
বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধু জরুরি চিকিৎসা ভিসা এবং তৃতীয় দেশ সফরের জন্য ভিসা সেবা চালু রয়েছে। অবশ্য ভারতের পক্ষ থেকে জনবলের ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে। জনবল বৃদ্ধির পর পুরোদমে ভিসা সেবা চালুর আশ্বাস দিয়েছে ভারত। আশা করা হচ্ছে, দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের পর ভিসা জট খোলোর ব্যাপারে কিছুটা হলেও নমনীয় হতে পারে দিল্লি।
# যা থাকতে পারে আলোচনায় : ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পন
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
নানা ইস্যুতে সম্পর্কের চরম টানাপোড়নের মধ্যে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসাটেশন (এফওসি)। আগামী ৯ অথবা ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এ দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এ ফরেন অফিস কনসাটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হবে বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন। এফওসিতে অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি। আগামী ৯/১০ তারিখে তিনি ঢাকায় আসবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি হতে পারে ভারত সরকারের জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মকর্তার প্রথম ঢাকা সফর।
এফওসিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। সফরকালে মিশ্রি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে বার্ষিক এফওসি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হবে এফওসিতে বাংলাদেশ-ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে তা নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা চলছে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও রাজনৈতিক মহলে।
কুটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ফরেন অফিস কনসাটেশন (এফওসি )-এ প্রথানুযায়ী দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় ও দুই দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে তার অগ্রগতি এবং সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করবেন।
তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এবারের এফওসিতে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কিভাবে প্রশমিত করা যায় তা নিয়ে। এবে বাংলাদেশ পক্ষ আলোচনার টেবিলে তুলবেন একদিকে ভারতে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারনা, বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতন, মন্দির ভাংচুর এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারনা । আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের এক উগ্রবাদীর হামলা ও ভাংচুর প্রসঙ্গও তুলবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে দিন কয়েক আগে জানিয়েছেন, আসন্ন এফওসির আলোচনার প্রস্তুতি সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এফওসির আলোচনায় বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ এবং ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলোসহ দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো থাকবে বলে জানা গেছে। গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের সমুখীন করা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সরকারের উপদেষ্টারা শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করা জোড়ালো দাবি জানিয়ে আসছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও তার বিভিন্ন বক্তৃতায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছন। এখণ সরকারের সামনে রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে তৎপরত হওয়া ছাড়া হত্যন্ত নেই বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করেন। আর শেখ হাসিনা ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গটি প্রথম এবার অনুষ্ঠিতব্য এফওসিতে তুলবে বাংলাদেশ- এটা প্রায় নিশ্চিত।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে বড় ধাক্কা লেগেছে। সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। সীমান্ত সমস্যা, নদীর পানিবণ্টনসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় ঝুলে গেছে। আমদানি-রপ্তানিও বিঘিœত। দোষারোপে চড়ছে উত্তেজনা। এরই মধ্যে সংখ্যালঘু ইস্যু সামনে এনে ভারত সরকার, দেশটির গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমন্বিতভাবে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারে নেমেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিকৃত, মিথ্যা ও ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়াচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রের ভাষ্য, এ অবস্থানের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা দিলেও, দিল্লির আন্তরিকতা বুঝতে চাইছে ঢাকা এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এসব বিষয়ও এফওসিতে আলোচনার টেবিলে উঠবে।
আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ-ভারত এফওসি অনুষ্ঠানের তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের সঙ্গে ফরেন অফিস কনসালটেশন হবে ১০ ডিসেম্বর। হয়তো একদিন আগে হতে পারে অথবা ১০ ডিসেম্বর হবে। এটা খুব স্পষ্ট, আমরা চাই ভালো সম্পর্ক। তবে সেটা দুই পক্ষ থেকে চাইতে হবে, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
বিক্রম মিশ্রির সফরের বিষয়ে তয়েকদিন আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক (দ্বিপক্ষীয়) সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং এফওসি হবে সেদিকে এগুনোর প্রথম পদক্ষেপ।”
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক (দ্বিপক্ষীয়) সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং এফওসি হবে সেদিকে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ।’ আশাবাদ ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাস্তবসম্মতভাবেই এগিয়ে যেতে পারে।
উভয় পক্ষই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করি এবং আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ভারতের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকতে পারে, এটা স্বাভাবিক। যখন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়, তখন কিছু সমস্যা দেখা দেয়। উভয় পক্ষের সুবিধার জন্য এ সমস্যাগুলো অতিক্রম করে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য।’
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের কারণে দুই দেশের মধ্যে ‘সম্পর্কের উন্নতির জটিলতা’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি প্রতিবেশী দেশে না থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্য প্রক্রিয়াটি সহজ হতো।
কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা, রাজনৈতিক বোঝাপড়া, ভারতীয় গণমাধ্যমের বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার, ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য, ভিসার জট খোলা, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, ভারত থেকে নিত্যপণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে রপ্তানির নানা বাধা সরানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ জোর দিতে পারে।
বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধু জরুরি চিকিৎসা ভিসা এবং তৃতীয় দেশ সফরের জন্য ভিসা সেবা চালু রয়েছে। অবশ্য ভারতের পক্ষ থেকে জনবলের ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে। জনবল বৃদ্ধির পর পুরোদমে ভিসা সেবা চালুর আশ্বাস দিয়েছে ভারত। আশা করা হচ্ছে, দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের পর ভিসা জট খোলোর ব্যাপারে কিছুটা হলেও নমনীয় হতে পারে দিল্লি।