টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘আমরণ অনশন’ ও সড়কে অবস্থান কর্মসূচি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের -সংবাদ
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দাবির মুখে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবে না। কর্মসূচি যদি দিতেই হয় শিক্ষা কার্যক্রম ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন করা ঠিক নয় বলেও তিনি মনে করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টার এই আহ্বান ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনরত তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। তারা আন্দোলন আরও জোরালো করার হুমকি দিয়েছেন। তারা টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘আমরণ অনশন’ ও সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
আল্টিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না
: আল্টিমেটাম বা সময় বেঁধে দিয়ে কখনো বিশ্ববিদ্যালয় হয় না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন করছে ভালো কথা, তবে তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। কর্মসূচি যদি দিতেই হয় শিক্ষা কার্যক্রম ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন করা ঠিক নয়।
রোববার ২ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অযৌক্তিকভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবো, আর সেটার ভার পরবর্তী সরকারকে বহন করতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।’
সাত কলেজ নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার কাজ চলছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাতে তিতুমীর কলেজও থাকবে। তবে কাউকে যদি বিশেষ বিবেচনা করি সেটা হবে রাজশাহী কলেজ। কারণ রাজশাহী কলেজ অনেক পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী।’
তিতুমীর কলেজকে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বিশেষ বিবেচনা করিনি। বিশেষ বিবেচনায় যদি নিয়ে থাকি তবে সেটি হবে রাজশাহী কলেজ। কেউ যদি বিশেষ বিবেচনায় থাকে সেটা হবে রাজশাহী কলেজ। আলটিমেটাম বা সময় বেঁধে দিয়ে কখনো বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। একটা সুশাসন ও সংস্কারের জন্য আমরা এসেছি।’
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা কাজ করছেন।’
দেশের মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকই গত সাত বছরে গঠিত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যা বিশ্বে এক অনন্য রেকর্ড। আন্দোলন করা ভালো কিন্তু পরীক্ষাও দিতে হবে। যারা নিয়মিত ক্লাস করতে চায় এবং জনদুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে নজর রেখে কর্মসূচি দেয়া উচিত।’
উপদেষ্টার আহ্বান প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের
:
তিতুমীরের আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যের পর কলেজটির শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্যের’ ফেইসবুক পেজে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ‘দাবি আদায়ের এক পথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘সবাই তাহবান্দে আসুন,’ ‘এখন মানে এখনই ব্যারিকেড’, ‘সবাই আমতলী মুভ করেন, সড়ক ও রেল অবরোধ হবে’, ‘কাল নয় আজই ব্যারিকেড হবে, এখন মানে এখনই। সবাই দ্রুত চলে আসুন’।
শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রতিনিধি মেহেদি হাসান বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের ‘খামখেয়ালি’ শিক্ষার্থীদের রাজপথে আন্দোলনে নামাতে বাধ্য করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হওয়া জনদুর্ভোগের জন্য সরকারই দায়ী।
শিক্ষা উপদেষ্টার রোববারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আবারও হল থেকে বেরিয়ে এসেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। তারা ‘কঠোর’ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হামিদ বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য ‘সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা’ এবং আগের কথার সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’। শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য ‘প্রত্যাখ্যান’ করে সামনে আরও ‘কঠোর আন্দোলন’ করা হবে।
আব্দুল হামিদ বলেন, ‘অনশনরত সবার অবস্থা খারাপ। এমন অবস্থাতেও উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করছে। এর জবাব তাদের দিতে হবে।’
নাসরিন আক্তার নামে তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছেন। এর উপযুক্ত জবাব তারা দেবেন। এর চেয়ে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না শিক্ষার্থীরা।
টানা চতুর্থ দিনে আন্দোলন
:
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো শিক্ষার্থীরা ‘আমরণ অনশন’ এবং সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে রাজধানীর মহাখালী থেকে গুলশান সড়কের দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ব ইজতেমার কথা বিবেচনায় রেখে পূর্ব ঘোষিত ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’ কর্মসূচি শিথিল করে শিক্ষার্থীরা রোববার দুপুর ১২টা থেকে মহাখালীতে কলেজের সামনের সড়কে বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে অবস্থান করেন।
আন্দোলনকারীদের একজন সাদ উল হাসান সিফাত বলেন, ‘তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে কর্মসূচি চলছে। আমরা জনগণের কাছে অত্যন্ত দুঃখিত, এটার জন্য আমরা সরকারকে দায়ী করব। সরকার এ বিষয়ে আলোকপাত করেনি।’
২৮ বছর ধরে তিতুমীর কলেজকে বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলন হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান আন্দোলন তীব্রতর রূপ পেয়েছে। সরকার সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যার কারণে, জনগণের এ দুর্ভোগ হচ্ছে।’
আন্দোলন নিয়ে মানুষের কাছে ‘ইতিবাচক সাড়া’ আশা করছেন জানিয়ে তিতুমীর শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, ‘বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আমাদের ইতিহাস জানুন, ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য আছে, ঐতিহ্যকে ধারণ করি। অন্যান্য প্রাইভেট পাবলিক ইউনিভার্সিটির মতো তিতুমীর কলেজকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রিপ্রেজেন্ট করি। তারপর আমাদের নিয়ে কথা বলতে আসুন।’
অনশনে ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক
:
মহাখালীতে কলেজের মূল ফটকে শিক্ষার্থীদের চলমান ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি পালনকালে অসুস্থদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের চিকিৎসক রাসেল আহমেদ।
তিনি রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে তিনজন ‘ডিহাইড্রেশনে’ ভুগছে। হাসপাতালে না নিয়ে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এর আগে শনিবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মাহামুদুর রহমান মুক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আমরণ অনশন চলছে। শুক্রবার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি, তা চলবে যতদিন তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পায়।’ বিশ^ ইজতেমার জন্য রোববার সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি শিথিল রাখা হয়। এর পরিবর্তে তাদের ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিট’ কর্মসূচির আওতায় মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা অথবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
এছাড়া ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ন্যূনতম আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন; অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ; শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে আসনসংখ্যা সীমিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
২৭ জানুয়ারি রাতে ‘তিতুমীর ঐক্যের’ পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। এই সময়ে দাবি মানা না হলে বৃস্পতিবার থেকে অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়।
ওই ঘোষণা অনুযায়ী কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বৃহস্পতিবার থেকে কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ৭ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কলেজের প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি ‘যথাযথভাবে’ কাজ করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘আমরণ অনশন’ ও সড়কে অবস্থান কর্মসূচি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের -সংবাদ
রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দাবির মুখে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবে না। কর্মসূচি যদি দিতেই হয় শিক্ষা কার্যক্রম ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন করা ঠিক নয় বলেও তিনি মনে করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টার এই আহ্বান ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনরত তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। তারা আন্দোলন আরও জোরালো করার হুমকি দিয়েছেন। তারা টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘আমরণ অনশন’ ও সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
আল্টিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না
: আল্টিমেটাম বা সময় বেঁধে দিয়ে কখনো বিশ্ববিদ্যালয় হয় না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, ছাত্ররা আন্দোলন করছে ভালো কথা, তবে তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। কর্মসূচি যদি দিতেই হয় শিক্ষা কার্যক্রম ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন করা ঠিক নয়।
রোববার ২ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অযৌক্তিকভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবো, আর সেটার ভার পরবর্তী সরকারকে বহন করতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।’
সাত কলেজ নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার কাজ চলছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাতে তিতুমীর কলেজও থাকবে। তবে কাউকে যদি বিশেষ বিবেচনা করি সেটা হবে রাজশাহী কলেজ। কারণ রাজশাহী কলেজ অনেক পুরোনো এবং ঐতিহ্যবাহী।’
তিতুমীর কলেজকে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো বিশেষ বিবেচনা করিনি। বিশেষ বিবেচনায় যদি নিয়ে থাকি তবে সেটি হবে রাজশাহী কলেজ। কেউ যদি বিশেষ বিবেচনায় থাকে সেটা হবে রাজশাহী কলেজ। আলটিমেটাম বা সময় বেঁধে দিয়ে কখনো বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। একটা সুশাসন ও সংস্কারের জন্য আমরা এসেছি।’
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা কাজ করছেন।’
দেশের মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকই গত সাত বছরে গঠিত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যা বিশ্বে এক অনন্য রেকর্ড। আন্দোলন করা ভালো কিন্তু পরীক্ষাও দিতে হবে। যারা নিয়মিত ক্লাস করতে চায় এবং জনদুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে নজর রেখে কর্মসূচি দেয়া উচিত।’
উপদেষ্টার আহ্বান প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের
:
তিতুমীরের আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যের পর কলেজটির শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্যের’ ফেইসবুক পেজে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ‘দাবি আদায়ের এক পথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘সবাই তাহবান্দে আসুন,’ ‘এখন মানে এখনই ব্যারিকেড’, ‘সবাই আমতলী মুভ করেন, সড়ক ও রেল অবরোধ হবে’, ‘কাল নয় আজই ব্যারিকেড হবে, এখন মানে এখনই। সবাই দ্রুত চলে আসুন’।
শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রতিনিধি মেহেদি হাসান বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের ‘খামখেয়ালি’ শিক্ষার্থীদের রাজপথে আন্দোলনে নামাতে বাধ্য করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হওয়া জনদুর্ভোগের জন্য সরকারই দায়ী।
শিক্ষা উপদেষ্টার রোববারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আবারও হল থেকে বেরিয়ে এসেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। তারা ‘কঠোর’ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হামিদ বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য ‘সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা’ এবং আগের কথার সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’। শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য ‘প্রত্যাখ্যান’ করে সামনে আরও ‘কঠোর আন্দোলন’ করা হবে।
আব্দুল হামিদ বলেন, ‘অনশনরত সবার অবস্থা খারাপ। এমন অবস্থাতেও উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করছে। এর জবাব তাদের দিতে হবে।’
নাসরিন আক্তার নামে তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছেন। এর উপযুক্ত জবাব তারা দেবেন। এর চেয়ে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না শিক্ষার্থীরা।
টানা চতুর্থ দিনে আন্দোলন
:
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো শিক্ষার্থীরা ‘আমরণ অনশন’ এবং সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এতে রাজধানীর মহাখালী থেকে গুলশান সড়কের দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ব ইজতেমার কথা বিবেচনায় রেখে পূর্ব ঘোষিত ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’ কর্মসূচি শিথিল করে শিক্ষার্থীরা রোববার দুপুর ১২টা থেকে মহাখালীতে কলেজের সামনের সড়কে বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে অবস্থান করেন।
আন্দোলনকারীদের একজন সাদ উল হাসান সিফাত বলেন, ‘তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে কর্মসূচি চলছে। আমরা জনগণের কাছে অত্যন্ত দুঃখিত, এটার জন্য আমরা সরকারকে দায়ী করব। সরকার এ বিষয়ে আলোকপাত করেনি।’
২৮ বছর ধরে তিতুমীর কলেজকে বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলন হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান আন্দোলন তীব্রতর রূপ পেয়েছে। সরকার সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যার কারণে, জনগণের এ দুর্ভোগ হচ্ছে।’
আন্দোলন নিয়ে মানুষের কাছে ‘ইতিবাচক সাড়া’ আশা করছেন জানিয়ে তিতুমীর শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, ‘বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আমাদের ইতিহাস জানুন, ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য আছে, ঐতিহ্যকে ধারণ করি। অন্যান্য প্রাইভেট পাবলিক ইউনিভার্সিটির মতো তিতুমীর কলেজকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রিপ্রেজেন্ট করি। তারপর আমাদের নিয়ে কথা বলতে আসুন।’
অনশনে ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক
:
মহাখালীতে কলেজের মূল ফটকে শিক্ষার্থীদের চলমান ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি পালনকালে অসুস্থদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের চিকিৎসক রাসেল আহমেদ।
তিনি রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে তিনজন ‘ডিহাইড্রেশনে’ ভুগছে। হাসপাতালে না নিয়ে এদের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এর আগে শনিবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মাহামুদুর রহমান মুক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আমরণ অনশন চলছে। শুক্রবার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি, তা চলবে যতদিন তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পায়।’ বিশ^ ইজতেমার জন্য রোববার সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি শিথিল রাখা হয়। এর পরিবর্তে তাদের ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিট’ কর্মসূচির আওতায় মহাখালীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা অথবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
এছাড়া ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ন্যূনতম আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন; অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ; শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে আসনসংখ্যা সীমিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।
২৭ জানুয়ারি রাতে ‘তিতুমীর ঐক্যের’ পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়। এই সময়ে দাবি মানা না হলে বৃস্পতিবার থেকে অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়।
ওই ঘোষণা অনুযায়ী কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বৃহস্পতিবার থেকে কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ৭ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কলেজের প্রধান ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি ‘যথাযথভাবে’ কাজ করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।