alt

বাংলাদেশে আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে আশাবাদী মহাসচিব

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের জোট বিমসটেকের এগিয়ে চলার সঙ্গে এই অঞ্চলের আরেকটি সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ঝিমিয়ে পড়ার কোনো সম্পর্ক দেখছেন না বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্র মনি পাণ্ডে। মঙ্গলবার ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পাণ্ডে বলেন, ১৯৯৭ সালে যখন চার দেশ নিয়ে বিমসটেক গঠিত হয়, তখন সার্ক ছিল ‘বর্ধনশীল’ আঞ্চলিক সংস্থা, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছিল। তিনি আরো বলেন, “সুতরাং আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, একটি সংস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কমতির সঙ্গে বিমসটেক গঠনের কোনো সংযোগ নেই।”

দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশও বিমসটেকের ছাতার নিচে থাকার কথা তুলে ধরে পাণ্ডে বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিমসটেকের নিজস্ব এজেন্ডা, অভিষ্ট, ও সনদ রয়েছে। সার্কের ক্ষেত্রেও তেমন ছিল। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী দেখা যায়, দেশগুলো কেবল একটি আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক জোটের সদস্য হয় না, বরং সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা এগিয়ে নিতে তারা কোনো একটি জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে একযোগে কাজ করে। সুতরাং, আঞ্চলিক সংস্থাগুলো একসঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে।

বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশেন (আইওআরএ) এবং আসিয়ানের সদস্য থাকার প্রসঙ্গও টানেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় সার্ক। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২০০৭ সালে যোগ দেয় আফগানিস্তান। সার্কের জোরালো কার্যক্রম চলার মধ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিস্ট-টেক) যাত্রা শুরু করে। সেই বছরই মিয়ানমার এই জোটে যুক্ত হওয়ার পর নাম হয় ‘বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক)’। ২০০৪ সালে নেপালও সদস্যপদ পায় বিমসটেকের। এরপর দেশের নামের আদ্যক্ষরে পরিবর্তে সংস্থার নামকরণ করা হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেক’। বর্তমানে সাত দেশের জোট বিমসটেকের সদস্য পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান নেই।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততার কারণে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে অকার্যকর হয়ে রয়েছে সার্ক। ২০১৪ সালের পর আর কোনো শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের একমঞ্চে আনতে পারেনি এই আঞ্চলিক সংস্থা।

গত অগাস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করণের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি গত ১২ ডিসেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, “সার্ক আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সার্ককে সক্রিয় করার বিষয়ে বলেছি।” তিনি বলেন, “ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ‘কিছু ইস্যুর জন্য’ সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না, কিন্তু আমি মনে করি, দুটি দেশের মধ্যকার সমস্যা অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত না।”

ইউনূস বলেন, “প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা যদি সাক্ষাৎ করেন, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন, তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে যে ‘আমরা একসঙ্গে আছি’।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইনডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি লিখেছেন, “দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অকার্যকর হয়ে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সার্ককে কার্যকর করার জন্য ‘আন্তরিক উদ্যোগ’ গ্রহণ করেছে।” তবে, তিনি উল্লেখ করেছেন, “এখন পর্যন্ত ভারতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আমরা মনে করি না এই উদ্যোগ নিয়ে ভারতের ভয় পাওয়ার কিছু আছে।”

সাবেক কূটনৈতিক তৌহিদ হোসেন লিখেছেন, “আমরা জানি, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তবে, হাজার মাইলের যাত্রা একটি ছোট পদক্ষেপে থেকেই শুরু হয়। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের নেতৃবৃন্দ কি অন্তত একটি সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে পারেন না?”

এদিকে, সার্কের অকার্যকর অবস্থার মধ্যে আগামী ৪ এপ্রিল ব্যাংককে শীর্ষ সম্মেলন মিলিত হচ্ছেন বিমসটেক নেতারা। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে সংস্থার পরবর্তী সভাপতির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন মহাসচিব ইন্দ্র মনি পাণ্ডে। তিনি বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক হবে। সদস্য দেশগুলো চাইলে সম্মেলনের ফাঁকে শীর্ষ নেতাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও হতে পারে।

এদিকে, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বললেও ঢাকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর বিমসটেকের সঙ্গে কাজের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন না হওয়ার কথা বলেন বিমসটেক মহাসচিব। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও আমরা বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্যায় থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছি, ভবিষ্যতে বিমসটেককে কেবল পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে না, বরং সহযোগিতা গভীর ও জোরালো করা হবে।”

কোনো সদস্য দেশ থেকে সহযোগিতার বিষয়ে কোনো দ্বিধা না থাকার কথা তুলে ধরে বিমসটেক মহাসচিব বলেন, “কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে, একযোগে কাজ করার মাধ্যমে অনেক লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।”

এবারের শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে নৌ পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি সই হতে পারে বলে জানান তিনি।

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন: নতুন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলছে

ছবি

সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

ছবি

দ্বিমতের কোনো জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না: ইউনূস

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত সময়ের আগেই

ছবি

মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোতে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত: ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিদ্ধান্ত

ছবি

টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি: দেড় মাসে নিবন্ধন প্রায় ৮৯ লাখ শিশু

tab

বাংলাদেশে আসন্ন বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে আশাবাদী মহাসচিব

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত দেশের জোট বিমসটেকের এগিয়ে চলার সঙ্গে এই অঞ্চলের আরেকটি সহযোগিতা সংস্থা সার্কের ঝিমিয়ে পড়ার কোনো সম্পর্ক দেখছেন না বিমসটেকের মহাসচিব ইন্দ্র মনি পাণ্ডে। মঙ্গলবার ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পাণ্ডে বলেন, ১৯৯৭ সালে যখন চার দেশ নিয়ে বিমসটেক গঠিত হয়, তখন সার্ক ছিল ‘বর্ধনশীল’ আঞ্চলিক সংস্থা, যা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছিল। তিনি আরো বলেন, “সুতরাং আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, একটি সংস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কমতির সঙ্গে বিমসটেক গঠনের কোনো সংযোগ নেই।”

দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশও বিমসটেকের ছাতার নিচে থাকার কথা তুলে ধরে পাণ্ডে বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিমসটেকের নিজস্ব এজেন্ডা, অভিষ্ট, ও সনদ রয়েছে। সার্কের ক্ষেত্রেও তেমন ছিল। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী দেখা যায়, দেশগুলো কেবল একটি আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক জোটের সদস্য হয় না, বরং সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা এগিয়ে নিতে তারা কোনো একটি জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে একযোগে কাজ করে। সুতরাং, আঞ্চলিক সংস্থাগুলো একসঙ্গে সহাবস্থান করতে পারে।

বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশেন (আইওআরএ) এবং আসিয়ানের সদস্য থাকার প্রসঙ্গও টানেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় সার্ক। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২০০৭ সালে যোগ দেয় আফগানিস্তান। সার্কের জোরালো কার্যক্রম চলার মধ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিস্ট-টেক) যাত্রা শুরু করে। সেই বছরই মিয়ানমার এই জোটে যুক্ত হওয়ার পর নাম হয় ‘বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক)’। ২০০৪ সালে নেপালও সদস্যপদ পায় বিমসটেকের। এরপর দেশের নামের আদ্যক্ষরে পরিবর্তে সংস্থার নামকরণ করা হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেক’। বর্তমানে সাত দেশের জোট বিমসটেকের সদস্য পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান নেই।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততার কারণে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে অকার্যকর হয়ে রয়েছে সার্ক। ২০১৪ সালের পর আর কোনো শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের একমঞ্চে আনতে পারেনি এই আঞ্চলিক সংস্থা।

গত অগাস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করণের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি গত ১২ ডিসেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেন, “সার্ক আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সার্ককে সক্রিয় করার বিষয়ে বলেছি।” তিনি বলেন, “ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ‘কিছু ইস্যুর জন্য’ সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না, কিন্তু আমি মনে করি, দুটি দেশের মধ্যকার সমস্যা অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত না।”

ইউনূস বলেন, “প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা যদি সাক্ষাৎ করেন, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন, তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে যে ‘আমরা একসঙ্গে আছি’।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইনডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি লিখেছেন, “দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অকার্যকর হয়ে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সার্ককে কার্যকর করার জন্য ‘আন্তরিক উদ্যোগ’ গ্রহণ করেছে।” তবে, তিনি উল্লেখ করেছেন, “এখন পর্যন্ত ভারতের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আমরা মনে করি না এই উদ্যোগ নিয়ে ভারতের ভয় পাওয়ার কিছু আছে।”

সাবেক কূটনৈতিক তৌহিদ হোসেন লিখেছেন, “আমরা জানি, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তবে, হাজার মাইলের যাত্রা একটি ছোট পদক্ষেপে থেকেই শুরু হয়। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের নেতৃবৃন্দ কি অন্তত একটি সম্মেলনে একসঙ্গে ছবি তুলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে পারেন না?”

এদিকে, সার্কের অকার্যকর অবস্থার মধ্যে আগামী ৪ এপ্রিল ব্যাংককে শীর্ষ সম্মেলন মিলিত হচ্ছেন বিমসটেক নেতারা। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে সংস্থার পরবর্তী সভাপতির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন মহাসচিব ইন্দ্র মনি পাণ্ডে। তিনি বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক হবে। সদস্য দেশগুলো চাইলে সম্মেলনের ফাঁকে শীর্ষ নেতাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও হতে পারে।

এদিকে, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বললেও ঢাকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর বিমসটেকের সঙ্গে কাজের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন না হওয়ার কথা বলেন বিমসটেক মহাসচিব। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও আমরা বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্যায় থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছি, ভবিষ্যতে বিমসটেককে কেবল পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে না, বরং সহযোগিতা গভীর ও জোরালো করা হবে।”

কোনো সদস্য দেশ থেকে সহযোগিতার বিষয়ে কোনো দ্বিধা না থাকার কথা তুলে ধরে বিমসটেক মহাসচিব বলেন, “কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে, একযোগে কাজ করার মাধ্যমে অনেক লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।”

এবারের শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে নৌ পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি সই হতে পারে বলে জানান তিনি।

back to top