শিশুটির মৃত্যুর পর বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, বিচার দাবি শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শিশু ধর্ষণের মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করা হবে: আইজিপি
ধর্ষণে নিহত শিশু আছিয়ার কফিন নেয়া হচ্ছে মাগুরার গ্রামে, পাশে শোকার্ত মা
মাগুরায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মাগুরায় নেয়া হয়। জেলা স্টেডিয়ামে নামার পরে সন্ধ্যা সাতটায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শিশুটির মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় যান। প্রায় একই সময়ে আলাদা একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ শিশুটির গ্রামে নেয়া হয়।
ধর্ষণের শিকার ৮ বছর বয়সী শিশুটিকে বাঁচাতে গত কয়েকদিন ধরে চিকিৎসকদের কোনো চেষ্টাই কাজে এলো না। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর জানিয়েছে। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিকে, শিশু ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ আগামী ‘সাত দিনের’ মধ্যে শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এছাড়া শিশু ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, ‘বৃহস্পতিবার সে আরও দু’বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছে। দ্বিতীয়বার প্রায় ৩০ মিনিট সিপিআর দেয়ার পর হৃদস্পন্দন ফিরেছে, তবে তার মস্তিষ্ক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। ‘কোমা স্কেলে (জিসিএস) মাত্রা ৩, যা গভীর অচেতন অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। শিশুটির রক্তচাপ ও অক্সিজেনের মাত্রাও বিপজ্জনকভাবে কম।’ এরপর দুপুরে শিশুটির মৃত্যুর খবর দেয় আইএসপিআর। সেখানে সেনাবাহিনীর তরফে শোক প্রকাশ করা হয়। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি।’
এর আগে সোমবার শিশুটির শারীরিক অবস্থান সামান্য উন্নতির খবর দিয়ে বলা হয়, ‘পাঁচ দিনের মাথায় তার চোখের পাতা নড়েছে’। চিকিৎসকদের বরাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘শিশুটির শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে। ‘তবে শ্বাসরোধের কারণে তার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘিœত হয়েছিল। মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল, যেটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তার বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটা দূর করা গেছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী দুয়েক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।’ সোমবার উপ প্রেস সচিবের ওই বক্তব্যের দুদিনের মাথায় বুধবার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতির খবর দেন।
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। সেই খবরে সারাদেশে তৈরি হয় ক্ষোভ। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মিছিল, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি চলছে। শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ
মামলার নথিতে বলা হয়, সজীবের সহায়তায় তার বাবা হিটু মিয়া শিশুটিকে ‘ধর্ষণ’ করেন। বিষয়টি জাবেদা ও তার ছোট ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা চালান তারা। মামলার এজাহারে শিশুটির মা অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান। শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) এর ক/ ৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শিশুটির বড় বোনের সঙ্গে মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালী মাঠপাড়ার হিটু শেখের (৪২) ছোট ছেলে সজীব শেখের (১৮) বিয়ে হয় চার মাস আগে। ওই বাড়িতে হিটু শেখ, তার স্ত্রী জাহেদা খাতুন (৪৫), বড় ছেলে রাতুল শেখ (২০) ও ছোট ছেলে সজীব শেখ থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তার শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ নিজনান্দুয়ালীতে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় ৮ বছরের শিশুটি।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (সজীব) দরজা খুলে দিলে তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তার মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তার স্বামী সজীব শেখ মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে জোহরা নামের এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর রাতুল শেখ দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।
তিন আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ
৮ বছরের শিশু ‘ধর্ষণের’ ঘটনায় করা মামলার তদন্তের স্বার্থে কারাগারের থাকা চার আসামির মধ্যে তিনজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।মঙ্গলবার তিন পুরুষ আসামিকে ঢাকায় সিআইডির ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে নিয়ে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে জানান মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম। সেইসঙ্গে ভুক্তভোগী শিশুর ডিএনএ নমুনাও জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী শিশুটি যখন মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আসামিদের মধ্যে একজন নারী। বাকি পুরুষ আসামিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা সিআইডি ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের নমুনা সংগ্রহের পর আবার তাদের মাগুরা জেলা কারাগারে নেয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম।
বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, বিচার দাবি
এদিকে শিশুটির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বাড়িতে মাতম চলছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন শিশুটির বাড়িতে গিয়ে ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে দেখা যায়, তার বাবা ও ছোট বোন বাড়িতে আছেন। মা ও বড় বোন শিশুটির সঙ্গে ঢাকায় আছেন। শিশুটির মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করছেন। ঘটনার পর শিশুটির বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শিশুটির চাচা (বাবার ফুপাতো ভাই) বলেন, ‘দুপুরে আমরা মৃত্যুর খবর পাই। এলাকার গোরস্তানে দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ শিশুটির আরেক আত্মীয় বলেন, ‘ওর বাবা নির্বাক হয়ে গেছে। সকাল থেকে কিছু খাননি। তাকে কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছে না। লোকজনের ভিড়ে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’ বাড়িতে ভিড় করা এলাকাবাসী ও স্বজনেরা বলছেন, দুপুরের পর তারা শিশুটি মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। শিশুটির সঙ্গে এতটাই নির্মমতা হয়েছে যে অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, এরপর আর চেতনা ফেরেনি। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
শিশুটি মৃত্যু নিয়ে শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মাগুরার বিশিষ্টজনেরা। সাধারণ মানুষ দাবি তুলেছেন আসামিদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির। শিশুটির মৃত্যুর সংবাদে জেলায় শোকাতুর-শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এখনও শহরে কোনো বিক্ষোভ দেখা যায়নি। তবে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাগুরায় এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। কোনোভাবেই এ ধর্ষণ-মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ধর্ষকদের পক্ষে কোনো আইনি সহায়তা দেয়া হবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আইনজীবী সমিতি সব ধরনের সহায়তা করবে।’ জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লাবণী জামান বলেন, ‘সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। যে কারণে মাগুরায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ‘আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে শিশুটির ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেলা মহিলা পরিষদ সবসময় শিশুটির পরিবারের পাশে থাকবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. হুসাইন বলেন, ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে শিশু ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর করা না হলে ছাত্র-যুব সমাজ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৮ বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ মার্চই তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরে শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা শনিবার জানিয়েছিলেন, শিশুটির অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’। এরপর তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে নেয়া হয়।
শিশুটির মৃত্যুর পর বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, বিচার দাবি শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শিশু ধর্ষণের মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করা হবে: আইজিপি
ধর্ষণে নিহত শিশু আছিয়ার কফিন নেয়া হচ্ছে মাগুরার গ্রামে, পাশে শোকার্ত মা
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
মাগুরায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মাগুরায় নেয়া হয়। জেলা স্টেডিয়ামে নামার পরে সন্ধ্যা সাতটায় শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শিশুটির মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে শিশুটির মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মাগুরায় যান। প্রায় একই সময়ে আলাদা একটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক। সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ শিশুটির গ্রামে নেয়া হয়।
ধর্ষণের শিকার ৮ বছর বয়সী শিশুটিকে বাঁচাতে গত কয়েকদিন ধরে চিকিৎসকদের কোনো চেষ্টাই কাজে এলো না। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর জানিয়েছে। এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিকে, শিশু ধর্ষণ মামলার বিচারকাজ আগামী ‘সাত দিনের’ মধ্যে শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এছাড়া শিশু ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, ‘বৃহস্পতিবার সে আরও দু’বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছে। দ্বিতীয়বার প্রায় ৩০ মিনিট সিপিআর দেয়ার পর হৃদস্পন্দন ফিরেছে, তবে তার মস্তিষ্ক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। ‘কোমা স্কেলে (জিসিএস) মাত্রা ৩, যা গভীর অচেতন অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। শিশুটির রক্তচাপ ও অক্সিজেনের মাত্রাও বিপজ্জনকভাবে কম।’ এরপর দুপুরে শিশুটির মৃত্যুর খবর দেয় আইএসপিআর। সেখানে সেনাবাহিনীর তরফে শোক প্রকাশ করা হয়। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃদস্পন্দন ফিরে আসেনি।’
এর আগে সোমবার শিশুটির শারীরিক অবস্থান সামান্য উন্নতির খবর দিয়ে বলা হয়, ‘পাঁচ দিনের মাথায় তার চোখের পাতা নড়েছে’। চিকিৎসকদের বরাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘শিশুটির শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে। ‘তবে শ্বাসরোধের কারণে তার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘিœত হয়েছিল। মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল, যেটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তার বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটা দূর করা গেছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী দুয়েক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।’ সোমবার উপ প্রেস সচিবের ওই বক্তব্যের দুদিনের মাথায় বুধবার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতির খবর দেন।
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। সেই খবরে সারাদেশে তৈরি হয় ক্ষোভ। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও মিছিল, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি চলছে। শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ
মামলার নথিতে বলা হয়, সজীবের সহায়তায় তার বাবা হিটু মিয়া শিশুটিকে ‘ধর্ষণ’ করেন। বিষয়টি জাবেদা ও তার ছোট ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা চালান তারা। মামলার এজাহারে শিশুটির মা অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান। শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪) এর ক/ ৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শিশুটির বড় বোনের সঙ্গে মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালী মাঠপাড়ার হিটু শেখের (৪২) ছোট ছেলে সজীব শেখের (১৮) বিয়ে হয় চার মাস আগে। ওই বাড়িতে হিটু শেখ, তার স্ত্রী জাহেদা খাতুন (৪৫), বড় ছেলে রাতুল শেখ (২০) ও ছোট ছেলে সজীব শেখ থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তার শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ নিজনান্দুয়ালীতে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় ৮ বছরের শিশুটি।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (সজীব) দরজা খুলে দিলে তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তার মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তার স্বামী সজীব শেখ মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে জোহরা নামের এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর রাতুল শেখ দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।
তিন আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ
৮ বছরের শিশু ‘ধর্ষণের’ ঘটনায় করা মামলার তদন্তের স্বার্থে কারাগারের থাকা চার আসামির মধ্যে তিনজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।মঙ্গলবার তিন পুরুষ আসামিকে ঢাকায় সিআইডির ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে নিয়ে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে জানান মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম। সেইসঙ্গে ভুক্তভোগী শিশুর ডিএনএ নমুনাও জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী শিশুটি যখন মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে তার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আসামিদের মধ্যে একজন নারী। বাকি পুরুষ আসামিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা সিআইডি ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের নমুনা সংগ্রহের পর আবার তাদের মাগুরা জেলা কারাগারে নেয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম।
বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, বিচার দাবি
এদিকে শিশুটির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর বাড়িতে মাতম চলছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন শিশুটির বাড়িতে গিয়ে ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে দেখা যায়, তার বাবা ও ছোট বোন বাড়িতে আছেন। মা ও বড় বোন শিশুটির সঙ্গে ঢাকায় আছেন। শিশুটির মৃত্যুর খবরে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করছেন। ঘটনার পর শিশুটির বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শিশুটির চাচা (বাবার ফুপাতো ভাই) বলেন, ‘দুপুরে আমরা মৃত্যুর খবর পাই। এলাকার গোরস্তানে দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ শিশুটির আরেক আত্মীয় বলেন, ‘ওর বাবা নির্বাক হয়ে গেছে। সকাল থেকে কিছু খাননি। তাকে কিছুই খাওয়ানো যাচ্ছে না। লোকজনের ভিড়ে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’ বাড়িতে ভিড় করা এলাকাবাসী ও স্বজনেরা বলছেন, দুপুরের পর তারা শিশুটি মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। শিশুটির সঙ্গে এতটাই নির্মমতা হয়েছে যে অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, এরপর আর চেতনা ফেরেনি। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
শিশুটি মৃত্যু নিয়ে শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মাগুরার বিশিষ্টজনেরা। সাধারণ মানুষ দাবি তুলেছেন আসামিদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির। শিশুটির মৃত্যুর সংবাদে জেলায় শোকাতুর-শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এখনও শহরে কোনো বিক্ষোভ দেখা যায়নি। তবে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাগুরায় এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। কোনোভাবেই এ ধর্ষণ-মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ধর্ষকদের পক্ষে কোনো আইনি সহায়তা দেয়া হবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আইনজীবী সমিতি সব ধরনের সহায়তা করবে।’ জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লাবণী জামান বলেন, ‘সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। যে কারণে মাগুরায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ‘আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে শিশুটির ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেলা মহিলা পরিষদ সবসময় শিশুটির পরিবারের পাশে থাকবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. হুসাইন বলেন, ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে শিশু ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর করা না হলে ছাত্র-যুব সমাজ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৮ বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ মার্চই তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরে শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা শনিবার জানিয়েছিলেন, শিশুটির অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’। এরপর তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে নেয়া হয়।