দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিদেশে পালিয়ে থাকা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করতে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদিত হয়েছে। শিগগিরই এটি আদালতে দাখিল করা হবে।”
তদন্তের বরাত দিয়ে দুদক বলছে, বেনজীর আহমেদের ১১ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলেছে’ অনুসন্ধানে। এছাড়া সম্পদ বিবরণীতে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদের তথ্য ‘গোপন’ করেছেন।
কমিশন সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দিলে বেনজীর আহমেদ ২০২৪ সালের ২৭ অগাস্ট আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। সেখানে তিনি ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৬ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেন।
দুদক বলছে, তার নামে ৭ কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৭ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে অনুসন্ধানে। অর্থাৎ তিনি ১ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৬২২ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য ‘গোপন’ করেছেন। এছাড়া তার নামে ৮ কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ২৬৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক, যা তার ঘোষণার তুলনায় ২ কোটি ৪০ লাখ ৪১ হাজার ২৯৮ টাকা বেশি।
দুদক বলছে, তদন্তে বেনজীর আহমেদের মোট ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। এর বিপরীতে তার বৈধ আয় পাওয়া গেছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৬৮ টাকা, এবং ব্যয় ১ কোটি ৯৫ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৩ টাকা। ফলে নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। অর্থাৎ, দুদকের হিসাবে, বেনজীর আহমেদ ১১ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৬ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন করেছেন।
কমিশনের অভিযোগ, “তিনি এসব অর্থের উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করে তা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ দেখিয়ে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।”
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা, এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক বলছে, তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে বেনজীর আহমেদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের বিস্তারিত জানার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। এসব তথ্য পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আগে থেকেই লোকমুখে আলোচনা ছিল। তবে ২০২৪ সালের মার্চে সংবাদপত্রে তার সম্পদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। দুদক কয়েক দফা তলব করলেও বেনজীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে যাননি। গত বছর সরকার পতনের পরপরই বিমানবন্দর দিয়ে তার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় আসে।
বেনজীর এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ১৫ ডিসেম্বর চারটি মামলা করে দুদক। সেসব মামলায় বলা হয়, বেনজীর ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তাদের বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার এবং মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয় এজাহারে। সাবেক এই পুলিশ প্রধানকে ধরতে এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) মাধ্যমে ‘রেড নোটিস’ জারি করা হয়।
এরপর মে মাসে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে থাকা দুবাইয়ের দুইটি ফ্ল্যাট জব্দ এবং দুটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। একই মাসে তার মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে দুবাইয়ে থাকা একটি ফ্ল্যাট জব্দ ও দুটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ আসে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিদেশে পালিয়ে থাকা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করতে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদিত হয়েছে। শিগগিরই এটি আদালতে দাখিল করা হবে।”
তদন্তের বরাত দিয়ে দুদক বলছে, বেনজীর আহমেদের ১১ কোটি টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলেছে’ অনুসন্ধানে। এছাড়া সম্পদ বিবরণীতে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদের তথ্য ‘গোপন’ করেছেন।
কমিশন সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দিলে বেনজীর আহমেদ ২০২৪ সালের ২৭ অগাস্ট আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। সেখানে তিনি ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৬ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেন।
দুদক বলছে, তার নামে ৭ কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৭ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে অনুসন্ধানে। অর্থাৎ তিনি ১ কোটি ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৬২২ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য ‘গোপন’ করেছেন। এছাড়া তার নামে ৮ কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ২৬৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক, যা তার ঘোষণার তুলনায় ২ কোটি ৪০ লাখ ৪১ হাজার ২৯৮ টাকা বেশি।
দুদক বলছে, তদন্তে বেনজীর আহমেদের মোট ১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের ‘প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। এর বিপরীতে তার বৈধ আয় পাওয়া গেছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৬৮ টাকা, এবং ব্যয় ১ কোটি ৯৫ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৩ টাকা। ফলে নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। অর্থাৎ, দুদকের হিসাবে, বেনজীর আহমেদ ১১ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৬ টাকার ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ’ অর্জন করেছেন।
কমিশনের অভিযোগ, “তিনি এসব অর্থের উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করে তা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ দেখিয়ে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।”
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা, এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক বলছে, তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে বেনজীর আহমেদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের বিস্তারিত জানার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। এসব তথ্য পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আগে থেকেই লোকমুখে আলোচনা ছিল। তবে ২০২৪ সালের মার্চে সংবাদপত্রে তার সম্পদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। দুদক কয়েক দফা তলব করলেও বেনজীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে যাননি। গত বছর সরকার পতনের পরপরই বিমানবন্দর দিয়ে তার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় আসে।
বেনজীর এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ১৫ ডিসেম্বর চারটি মামলা করে দুদক। সেসব মামলায় বলা হয়, বেনজীর ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তাদের বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার এবং মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয় এজাহারে। সাবেক এই পুলিশ প্রধানকে ধরতে এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) মাধ্যমে ‘রেড নোটিস’ জারি করা হয়।
এরপর মে মাসে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে থাকা দুবাইয়ের দুইটি ফ্ল্যাট জব্দ এবং দুটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। একই মাসে তার মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে দুবাইয়ে থাকা একটি ফ্ল্যাট জব্দ ও দুটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ আসে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।