রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিজ থেকেই একটি ‘সিদ্ধান্ত নেবে’ বলে জানিয়েছেন এই সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না এ কথা তিনি কাউকে বলতে শোনেননি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই উপদেষ্টার মতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ‘এখতিয়ার রয়েছে’। সোমবার, (১০ নভেম্বর ২০২৫) সচিবালয়ে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ নয় মাসের প্রচেষ্টার শেষ পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েই গেছে। বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজনের দিনক্ষণ নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের মূল দাবি- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা।
অন্যদিকে গণভোট ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনই করার পক্ষে বিএনপি। সনদ বাস্তবায়ন এবং উভয়কক্ষে পিআর চালুর বিষয়েও জামায়াতের দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলটি।
সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে বিএনপির পক্ষে কিছু দল এবং জামায়াতের পক্ষে কিছু দল নীতিগত অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাও দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্ভব হলে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের যে আহ্বান ছিল, সে সময় শেষ হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধের মীমাংসা করতে পারেনি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
ইউনূসের দিকে তাকিয়ে
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জামায়াতে ইসলামী উদ্যোগ নিলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। বিএনপি বলেছে, তারা প্রধান উপদেষ্টা ডাকলে আলোচনায় বসবেন। ছয় দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ৯ দলের যে উদ্যোগ, সেটিও এগোয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে এবং গণভোট আয়োজনের তারিখ নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেই আসতে পারে বলে আলোচনা আছে।
এখন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দিকেই তাকিয়ে আছে দলগুলো।
কাউকে বলতে শুনিনি
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকার দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় দিয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি। তারা যেহেতু সাতদিনের মধ্যে আলোচনায় বসেনি, সেক্ষেত্রে সরকার একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি তো কাউকে বলতে শুনিনি যে, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।’
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ‘এখতিয়ার রয়েছে’ জানিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকার চায় ১০০ ভাগ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভেতর দিয়ে আসুক। যদি ৯০ ভাগও আসে, ১০ ভাগ না আসে, সেক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব একটা দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে অচলাবস্থাকে কাটিয়ে আনতে হবে। আর খুব বেশি দিন দেরি হবে না। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না।’
নতুন করে আলোচনা
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকারের দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা ছিল। এখন সরকার নতুন করে সবাইকে আলোচনায় ডাকবে এমন কোনো কথা আমি শুনিনি। আমার ধারণা সরকার এবার বিষয়গুলো নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত একটা সরকার। সেখানে আমরা মতপার্থক্য কমিয়ে এনে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করি। আমরা এখন যেহেতু একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি সেখানে আমরা আর ‘যদি কিন্তু’ এর কথা আনবো না। আমাদেরকে একটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব তো আমাদের পালন করে যেতে হবে। আমাদের কাছে জনগণেরও কিছু প্রত্যাশা আছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়েই যাচ্ছে। দেশের মানুষের কাছে এটা এখন স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে যখনই কোনো অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে আমরা সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো তা নিয়ন্ত্রণে আনার।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিজ থেকেই একটি ‘সিদ্ধান্ত নেবে’ বলে জানিয়েছেন এই সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না এ কথা তিনি কাউকে বলতে শোনেননি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এই উপদেষ্টার মতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ‘এখতিয়ার রয়েছে’। সোমবার, (১০ নভেম্বর ২০২৫) সচিবালয়ে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ নয় মাসের প্রচেষ্টার শেষ পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েই গেছে। বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজনের দিনক্ষণ নিয়ে দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের মূল দাবি- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয়কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা।
অন্যদিকে গণভোট ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনই করার পক্ষে বিএনপি। সনদ বাস্তবায়ন এবং উভয়কক্ষে পিআর চালুর বিষয়েও জামায়াতের দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দলটি।
সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে বিএনপির পক্ষে কিছু দল এবং জামায়াতের পক্ষে কিছু দল নীতিগত অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাও দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্ভব হলে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের যে আহ্বান ছিল, সে সময় শেষ হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট মতবিরোধের মীমাংসা করতে পারেনি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
ইউনূসের দিকে তাকিয়ে
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জামায়াতে ইসলামী উদ্যোগ নিলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। বিএনপি বলেছে, তারা প্রধান উপদেষ্টা ডাকলে আলোচনায় বসবেন। ছয় দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ৯ দলের যে উদ্যোগ, সেটিও এগোয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে এবং গণভোট আয়োজনের তারিখ নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেই আসতে পারে বলে আলোচনা আছে।
এখন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দিকেই তাকিয়ে আছে দলগুলো।
কাউকে বলতে শুনিনি
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকার দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় দিয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি। তারা যেহেতু সাতদিনের মধ্যে আলোচনায় বসেনি, সেক্ষেত্রে সরকার একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি তো কাউকে বলতে শুনিনি যে, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।’
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ‘এখতিয়ার রয়েছে’ জানিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকার চায় ১০০ ভাগ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভেতর দিয়ে আসুক। যদি ৯০ ভাগও আসে, ১০ ভাগ না আসে, সেক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব একটা দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে অচলাবস্থাকে কাটিয়ে আনতে হবে। আর খুব বেশি দিন দেরি হবে না। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না।’
নতুন করে আলোচনা
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকারের দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা ছিল। এখন সরকার নতুন করে সবাইকে আলোচনায় ডাকবে এমন কোনো কথা আমি শুনিনি। আমার ধারণা সরকার এবার বিষয়গুলো নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত একটা সরকার। সেখানে আমরা মতপার্থক্য কমিয়ে এনে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করি। আমরা এখন যেহেতু একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি সেখানে আমরা আর ‘যদি কিন্তু’ এর কথা আনবো না। আমাদেরকে একটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব তো আমাদের পালন করে যেতে হবে। আমাদের কাছে জনগণেরও কিছু প্রত্যাশা আছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটা হয়েই যাচ্ছে। দেশের মানুষের কাছে এটা এখন স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে যখনই কোনো অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে আমরা সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো তা নিয়ন্ত্রণে আনার।’