ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে এই আশঙ্কায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ফসলের ক্ষতি এড়াতে পাকা ধান, আম ও অন্যান্য ফসল দ্রুত সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
তবে এই ঘূর্ণিঝড়টি কতটা শক্তিশালী হবে বা কতটা শক্তি নিয়ে কোথায় আঘাত হানবে তা নিয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলছেন না আবহাওয়াবিদরা। তবে মে মাসে তৈরি হওয়া অতীত ঘূর্ণিঝড়গুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে ঘূর্ণিঝড় বেশ শক্তিশালী হয়। মোখাও শক্তিশালী হবে, এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ?‘মোখা’। বুধবার (১০ মে) পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় মোখা নিম্নচাপ আকারে আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার ভোরে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় আকারে আঘাত হানতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্বাভাস অনুযায়ী সমুদ্রে বুধবার ১ নম্বর সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে। এটির মুভমেন্ট (গতি) অনুযায়ী সর্তক বার্তাও বাড়তে থাকবে। ৯১-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ছায়া দেখা যাচ্ছে মোখায়।’
‘কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনের নিম্ন এলাকায় প্রথমে আঘাত হানবে’ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরপর আঘাত করবে চট্টগ্রাম এলাকায়। তবে এর গতি পরিবর্তন হতে পারে যেকোন সময়। তাই উপকূলীয় জেলাসহ আশপাশের জেলা প্রশাসকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে’।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব থেকে ফসল বাঁচাতে দ্রুত সব ধরনের ফসল সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। উপকূলের নিচু এলাকায় জলোচ্ছ্বসের আশঙ্কায় ফসলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকদের মাধ্যমে কিছু নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। ফসলের ক্ষতি এড়াতে পাকা ধান, আম ও অন্যান্য ফসল সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম।
‘মোখা’ কতটা আঘাত হানতে পারে এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, উপকূলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পরে ১৬০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঝড়ো হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো সাত থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে’।
এদিকে ‘এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগের মতো সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে’ বলে আশ্বস্ত করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জন্য ২০ লাখ টাকা, ১৪ টন শুকনো খাবার এবং ২০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে পাহাড় ধস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পাহাড় ঘেঁষে থাকা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হবে’।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছি। কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু রোহিঙ্গারা টেকনাফে অবস্থান করছে সেহেতু তাদের বিষয়টাও দেখতে হচ্ছে। আগাম সতর্কবার্তা প্রচারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত আছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট কার্ড।’
উপকূলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘৫, ৬, ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি হলে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া শুরু হবে। সিপিপিকে (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সব নির্দেশনা দিয়েছি চট্টগ্রামের যতগুলো উপকূলীয় উপজেলা আছে সেগুলোর আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার জন্য বলেছি।’
‘আমরা সব মাছ ধরার নৌকা উপকূলে নিয়ে আসার জন্য বলেছি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আম্ফান, চিত্রার মতো অনেক ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। মৃত্যু জিরোতে (শূন্য) নিয়ে এসেছি। সত্তরে যেখানে ২ লাখ লোক মারা গেছে, এখন সেখানে শূন্য। এবারও মানুষের জানমাল রক্ষা করতে পারব।’
তিনি আরও জানান, মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানবে কক্সবাজার এবং এর আশপাশের এলাকায়। বর্তমানে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া আছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপের পর আরও শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এজন্য দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তৃতীয় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুধবার সকালে গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারে ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের কারণে কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। গভীর নিম্নচাপটি কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে (বুধবার) এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।
সংবাদ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় জানমালের ক্ষতি কমাতে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এছাড়া নগরীর দামপাড়ায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে চসিক। কন্ট্রোল রুমের ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯ জরুরি সেবা নম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবে চট্টগ্রামবাসী। বুধবার চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপকমিটির সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে এবং কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া, নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সব এলাকায় মাইকিং, আরবান মেডিকেল টিম গঠন, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা এত শক্তিশালী হওয়া প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদরা জানান, এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের এই সময়টায় সূর্য বঙ্গোপসাগরের ঠিক উপরে থাকে। রোদের তাপে বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠে যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি সুপ্ত তাপ নিয়ে বায়ুমন্ডলে যুক্ত হয়। এটা যত বেশি দিন ধরে হয়, তত বেশি শক্তি সঞ্চিত হয়। ফলে এই মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় বেশি শক্তিশালী হয়। এছাড়া এ বছর যেহেতু এখনও কোন ঘূর্ণিঝড় হয়নি, তাই আসন্ন ঘূর্ণিঝড় অনেক শক্তিশালী হতে পারে বলেও জানান আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৯৮ সাইক্লোন সেন্টার থাকবে ১৮ মেডিকেল টিম
ধেয়ে আসা সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব মোকাবিলায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা হিসেবে উপজেলার দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯৮টি সাইক্লোন সেন্টারকে। পাশাপাশি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি করে মোট ১৮টি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। বুধবার বিকেলে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উপজেলা প্রশাসনের জরুরি প্রস্তুতি সভায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাহাত উজ জামান।
ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব মোকাবিলায় প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদি।
অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান।
অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বক্তব্য দেন চকরিয়া সেনা ক্যাম্পের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জাবের, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট, চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম নাছিম হোসেন, চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী, চকরিয়া উপজেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির লিডার ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা।
সভায় বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিআরডি), চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু হাসনাত সরকার, চকরিয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী মাস-উদ মোর্শেদ, চকরিয়া উপজেলা রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের (উপজেলা সরকারি হাসপাতাল) প্রতিনিধি, চকরিয়া ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নুরে হোছাইন আরিফ, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন, সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুরুল কাদের, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান, ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিপিপি নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
সভায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদি ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো. রাহাত উজ জামান বলেন, ধেয়ে আসা সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব মোকাবিলায় চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনসহ মোট ৯৮টি সাইক্লোন সেন্টারকে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূণিঝড়ের আগের দিন থেকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিপিপি ও আনসার সদস্যরা এসব সাইক্লোন সেন্টারে নিরাপত্তা ও লোকজনের থাকা-খাওয়া সব বিষয়ে তদারকি করবেন। দুর্গত জনপদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ৭০টি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে।
সভায় তারা আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে জনগণের মাঝে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স সমন্বয়ে মোট ১৮টি মেডিকেল টিম উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে দুর্যোগ মুহূর্তে গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমও কাজ করবে। তারা বলেন, দুর্গত জনপদের সার্বিক নিরাপত্তা ও জনগণের বিপদসংকুল মুহূর্তে চকরিয়া থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠ থাকবেন। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালের দুইটি অ্যাম্বুলেন্স ও থানা পুলিশের দুই গাড়ি জরুরি মুহূর্তে পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
ভারপ্রাপ্ত চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত উজ জামান বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় গরিব মানুষের জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে শুকনা খাবার ও নিরাপদ পানি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা ঘটলে লোকালয়ে পানি বেড়ে গেলে বা অবস্থার প্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের পাউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন স্লুইসগেটগুলো তাৎক্ষণিক খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হবে।
সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন। বলেন, সকলের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে চকরিয়ায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব থেকে জনসাধারণ ও যানমাল দুইটি রক্ষা করা সম্ভব হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ১০ মে ২০২৩
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে এই আশঙ্কায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ফসলের ক্ষতি এড়াতে পাকা ধান, আম ও অন্যান্য ফসল দ্রুত সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
তবে এই ঘূর্ণিঝড়টি কতটা শক্তিশালী হবে বা কতটা শক্তি নিয়ে কোথায় আঘাত হানবে তা নিয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলছেন না আবহাওয়াবিদরা। তবে মে মাসে তৈরি হওয়া অতীত ঘূর্ণিঝড়গুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে ঘূর্ণিঝড় বেশ শক্তিশালী হয়। মোখাও শক্তিশালী হবে, এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ?‘মোখা’। বুধবার (১০ মে) পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় মোখা নিম্নচাপ আকারে আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার ভোরে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় আকারে আঘাত হানতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্বাভাস অনুযায়ী সমুদ্রে বুধবার ১ নম্বর সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে। এটির মুভমেন্ট (গতি) অনুযায়ী সর্তক বার্তাও বাড়তে থাকবে। ৯১-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ছায়া দেখা যাচ্ছে মোখায়।’
‘কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিনের নিম্ন এলাকায় প্রথমে আঘাত হানবে’ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরপর আঘাত করবে চট্টগ্রাম এলাকায়। তবে এর গতি পরিবর্তন হতে পারে যেকোন সময়। তাই উপকূলীয় জেলাসহ আশপাশের জেলা প্রশাসকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে’।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব থেকে ফসল বাঁচাতে দ্রুত সব ধরনের ফসল সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। উপকূলের নিচু এলাকায় জলোচ্ছ্বসের আশঙ্কায় ফসলের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকদের মাধ্যমে কিছু নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। ফসলের ক্ষতি এড়াতে পাকা ধান, আম ও অন্যান্য ফসল সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম।
‘মোখা’ কতটা আঘাত হানতে পারে এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, উপকূলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পরে ১৬০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঝড়ো হাওয়াসহ প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো সাত থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে’।
এদিকে ‘এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগের মতো সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে’ বলে আশ্বস্ত করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জন্য ২০ লাখ টাকা, ১৪ টন শুকনো খাবার এবং ২০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে পাহাড় ধস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পাহাড় ঘেঁষে থাকা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হবে’।
ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছি। কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু রোহিঙ্গারা টেকনাফে অবস্থান করছে সেহেতু তাদের বিষয়টাও দেখতে হচ্ছে। আগাম সতর্কবার্তা প্রচারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত আছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট কার্ড।’
উপকূলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘৫, ৬, ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি হলে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া শুরু হবে। সিপিপিকে (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সব নির্দেশনা দিয়েছি চট্টগ্রামের যতগুলো উপকূলীয় উপজেলা আছে সেগুলোর আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার জন্য বলেছি।’
‘আমরা সব মাছ ধরার নৌকা উপকূলে নিয়ে আসার জন্য বলেছি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আম্ফান, চিত্রার মতো অনেক ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। মৃত্যু জিরোতে (শূন্য) নিয়ে এসেছি। সত্তরে যেখানে ২ লাখ লোক মারা গেছে, এখন সেখানে শূন্য। এবারও মানুষের জানমাল রক্ষা করতে পারব।’
তিনি আরও জানান, মোখা সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানবে কক্সবাজার এবং এর আশপাশের এলাকায়। বর্তমানে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া আছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপের পর আরও শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এজন্য দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তৃতীয় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বুধবার সকালে গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারে ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, গভীর নিম্নচাপের কারণে কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। গভীর নিম্নচাপটি কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে (বুধবার) এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।
সংবাদ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় জানমালের ক্ষতি কমাতে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এছাড়া নগরীর দামপাড়ায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে চসিক। কন্ট্রোল রুমের ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯ জরুরি সেবা নম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবে চট্টগ্রামবাসী। বুধবার চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপকমিটির সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে এবং কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া, নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সব এলাকায় মাইকিং, আরবান মেডিকেল টিম গঠন, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা এত শক্তিশালী হওয়া প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদরা জানান, এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের এই সময়টায় সূর্য বঙ্গোপসাগরের ঠিক উপরে থাকে। রোদের তাপে বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠে যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি সুপ্ত তাপ নিয়ে বায়ুমন্ডলে যুক্ত হয়। এটা যত বেশি দিন ধরে হয়, তত বেশি শক্তি সঞ্চিত হয়। ফলে এই মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় বেশি শক্তিশালী হয়। এছাড়া এ বছর যেহেতু এখনও কোন ঘূর্ণিঝড় হয়নি, তাই আসন্ন ঘূর্ণিঝড় অনেক শক্তিশালী হতে পারে বলেও জানান আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৯৮ সাইক্লোন সেন্টার থাকবে ১৮ মেডিকেল টিম
ধেয়ে আসা সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব মোকাবিলায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা হিসেবে উপজেলার দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯৮টি সাইক্লোন সেন্টারকে। পাশাপাশি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি করে মোট ১৮টি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। বুধবার বিকেলে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উপজেলা প্রশাসনের জরুরি প্রস্তুতি সভায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রাহাত উজ জামান।
ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব মোকাবিলায় প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদি।
অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান।
অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বক্তব্য দেন চকরিয়া সেনা ক্যাম্পের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জাবের, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট, চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম নাছিম হোসেন, চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী, চকরিয়া উপজেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির লিডার ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা।
সভায় বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিআরডি), চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু হাসনাত সরকার, চকরিয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী মাস-উদ মোর্শেদ, চকরিয়া উপজেলা রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের (উপজেলা সরকারি হাসপাতাল) প্রতিনিধি, চকরিয়া ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নুরে হোছাইন আরিফ, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন, সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বমুবিলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুরুল কাদের, বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান, ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিপিপি নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।
সভায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদি ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো. রাহাত উজ জামান বলেন, ধেয়ে আসা সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখার তান্ডব মোকাবিলায় চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনসহ মোট ৯৮টি সাইক্লোন সেন্টারকে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূণিঝড়ের আগের দিন থেকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সিপিপি ও আনসার সদস্যরা এসব সাইক্লোন সেন্টারে নিরাপত্তা ও লোকজনের থাকা-খাওয়া সব বিষয়ে তদারকি করবেন। দুর্গত জনপদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ৭০টি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে।
সভায় তারা আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার অংশ হিসেবে জনগণের মাঝে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স সমন্বয়ে মোট ১৮টি মেডিকেল টিম উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে দুর্যোগ মুহূর্তে গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমও কাজ করবে। তারা বলেন, দুর্গত জনপদের সার্বিক নিরাপত্তা ও জনগণের বিপদসংকুল মুহূর্তে চকরিয়া থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠ থাকবেন। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালের দুইটি অ্যাম্বুলেন্স ও থানা পুলিশের দুই গাড়ি জরুরি মুহূর্তে পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
ভারপ্রাপ্ত চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত উজ জামান বলেন, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় গরিব মানুষের জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে শুকনা খাবার ও নিরাপদ পানি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা ঘটলে লোকালয়ে পানি বেড়ে গেলে বা অবস্থার প্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের পাউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন স্লুইসগেটগুলো তাৎক্ষণিক খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হবে।
সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন। বলেন, সকলের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে চকরিয়ায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব থেকে জনসাধারণ ও যানমাল দুইটি রক্ষা করা সম্ভব হবে।