কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী ২৫ জুন পুনারায় উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। এখন, বন্দর থেকে কয়লা খালাশ করে বিদ্যুকেন্দ্রে পৌঁছানো এবং জ্বালানি লোড করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে ৪৮-৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। সে হিসেবে, আগামী ২৫ জুন থেকেই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে নিশ্চিত করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনার যাবতীয় প্রক্রিয়া এ মাসের শুরুতেই সম্পন্ন করা হয়। সে অনুযায়ী, ২২ জুন থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি জাহাজ প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার মে.টন কয়লা নিয়ে আসবে। এর মধ্যে, প্রায় ৩৬ হাজার টনের প্রথম চালান বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বাংলাদেশ সমুদ্র অঞ্চলে প্রবেশ করে।
ডলার সংকটে যথাসময়ে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত ২৫ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এবং ৫ জুন দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে দেশে লোডশেডিং বেড়ে যায়। তখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু মানুষকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থতি থেকে উত্তোরণের আশ্বাস দেন।
পায়রা বন্ধ হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেছিলেন, তারা চেষ্টা করছেন। সরকারও সহযোগিতা করছে। জুনের ২৫ তারিখ থেকে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় কেন্দ্রটি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব বাজারে জ্বালানির মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়, বাংলাদেশ তখন উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংকট তৈরি হয়। বিদ্যুতের এই ঘাটতি পূরণে পিডিবি তখন পায়রার সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরো মাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছিল।
সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর জ্বালানি (কয়লা) দিয়ে চলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা কয়লার বিল পরিশোধ করাতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। বিশাল অঙ্কের (প্রায় ৩৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিল সরবরাহকারী বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান।
এই কথা গত এপ্রিলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল বিসিপিসিএল; যার অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেয়া হয়েছিল। বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’ তবে সময়মতো বকেয়া পরিশোধ করে কয়লার জোগান নিশ্চিত করতে না পারায় পায়রা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সরকার দ্রুততার সঙ্গে ডলারের জোগান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়। প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করে পুনরায় কয়লা আমদানির পথ খোলা হয়। এরপর, বৃহস্পতিবার কয়লা নিয়ে প্রথম জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, কয়লার জাহাজ বাংলাদেশে আসলেও তা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোলইয়ার্ডে পৌঁছাতে দুই দিন সময় লাগতে পারে। সেখানে জ্বালানি পৌঁছানো মাত্রই উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। সূত্র বলছে, কারিগরি কারণে কয়লা লোড হওয়ার পর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে কিছুটা সময় লাগে। আবার একটি ইউনিট চালুর পর দ্বিতীয় ইউনিট চালু করতে কয়েকদিন সময় লাগে।
পিডিবির একটি সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৫ জুন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি চালু হওয়ার পর এটি থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। কারিগরি কারণে, প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর ৭ দিন পর আগামী ২ জুলাই কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হবে। ওইদিন থেকে জাতীয় গ্রিডে ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে দৈনিক প্রায় ৬০০০ টন কয়লা লাগে। আর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে লাগে আরও ৬০০০ টন। তবে পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম-বেশি হয়। চাহিদা বেশি থাকলে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পায়রা।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত ১৩টি শিপমেন্টে যে পরিমাণ কয়লা আসবে তা দিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পায়রার দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরও ২ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ থাকবে। এরপর ৯ আগস্ট পর্যন্ত আসবে আরও ৪টি শিপমেন্ট। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, নতুন করে আরও কয়লা আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বিসিপিসিএল পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে সেই কোম্পানিকে কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি। কয়লা আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী, সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয়মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারে। তবে ছয় মাস পার হয়ে গেলেও ডলার সংকটে বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি পায়রা কর্তৃপক্ষ। বড় অঙ্কের (প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা) বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কারণে কয়লা আমদানিতে জটিলতায় পরে বিসিপিসিএল।
পায়রা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোডশেডিং বেড়ে যায়। গরম ও লোডশেডিংয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নিম্নআয়ের মানুষেরা। এই প্রেক্ষিতে, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে সরকার। এদিকে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমায় পরিস্থিতিও সহায়ক হয়।
পায়রার বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু হলে দেশে চলমান বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রায় থাকবে না বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ক্যাপটিভ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আমদানিসহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তবে পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারে না বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ১৯ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৪ মেগাওয়াট।
বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩
কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী ২৫ জুন পুনারায় উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। এখন, বন্দর থেকে কয়লা খালাশ করে বিদ্যুকেন্দ্রে পৌঁছানো এবং জ্বালানি লোড করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে ৪৮-৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। সে হিসেবে, আগামী ২৫ জুন থেকেই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে নিশ্চিত করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনার যাবতীয় প্রক্রিয়া এ মাসের শুরুতেই সম্পন্ন করা হয়। সে অনুযায়ী, ২২ জুন থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি জাহাজ প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার মে.টন কয়লা নিয়ে আসবে। এর মধ্যে, প্রায় ৩৬ হাজার টনের প্রথম চালান বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বাংলাদেশ সমুদ্র অঞ্চলে প্রবেশ করে।
ডলার সংকটে যথাসময়ে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত ২৫ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এবং ৫ জুন দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে দেশে লোডশেডিং বেড়ে যায়। তখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু মানুষকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থতি থেকে উত্তোরণের আশ্বাস দেন।
পায়রা বন্ধ হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেছিলেন, তারা চেষ্টা করছেন। সরকারও সহযোগিতা করছে। জুনের ২৫ তারিখ থেকে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় কেন্দ্রটি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব বাজারে জ্বালানির মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়, বাংলাদেশ তখন উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংকট তৈরি হয়। বিদ্যুতের এই ঘাটতি পূরণে পিডিবি তখন পায়রার সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরো মাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছিল।
সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর জ্বালানি (কয়লা) দিয়ে চলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা কয়লার বিল পরিশোধ করাতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। বিশাল অঙ্কের (প্রায় ৩৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিল সরবরাহকারী বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান।
এই কথা গত এপ্রিলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল বিসিপিসিএল; যার অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেয়া হয়েছিল। বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’ তবে সময়মতো বকেয়া পরিশোধ করে কয়লার জোগান নিশ্চিত করতে না পারায় পায়রা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সরকার দ্রুততার সঙ্গে ডলারের জোগান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়। প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করে পুনরায় কয়লা আমদানির পথ খোলা হয়। এরপর, বৃহস্পতিবার কয়লা নিয়ে প্রথম জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, কয়লার জাহাজ বাংলাদেশে আসলেও তা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোলইয়ার্ডে পৌঁছাতে দুই দিন সময় লাগতে পারে। সেখানে জ্বালানি পৌঁছানো মাত্রই উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। সূত্র বলছে, কারিগরি কারণে কয়লা লোড হওয়ার পর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে কিছুটা সময় লাগে। আবার একটি ইউনিট চালুর পর দ্বিতীয় ইউনিট চালু করতে কয়েকদিন সময় লাগে।
পিডিবির একটি সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৫ জুন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি চালু হওয়ার পর এটি থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। কারিগরি কারণে, প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর ৭ দিন পর আগামী ২ জুলাই কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হবে। ওইদিন থেকে জাতীয় গ্রিডে ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে দৈনিক প্রায় ৬০০০ টন কয়লা লাগে। আর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে লাগে আরও ৬০০০ টন। তবে পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম-বেশি হয়। চাহিদা বেশি থাকলে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে পায়রা।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত ১৩টি শিপমেন্টে যে পরিমাণ কয়লা আসবে তা দিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পায়রার দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরও ২ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ থাকবে। এরপর ৯ আগস্ট পর্যন্ত আসবে আরও ৪টি শিপমেন্ট। বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, নতুন করে আরও কয়লা আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বিসিপিসিএল পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে সেই কোম্পানিকে কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি। কয়লা আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী, সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয়মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারে। তবে ছয় মাস পার হয়ে গেলেও ডলার সংকটে বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি পায়রা কর্তৃপক্ষ। বড় অঙ্কের (প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা) বকেয়া হওয়ায় চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কারণে কয়লা আমদানিতে জটিলতায় পরে বিসিপিসিএল।
পায়রা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার লোডশেডিং বেড়ে যায়। গরম ও লোডশেডিংয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন নিম্নআয়ের মানুষেরা। এই প্রেক্ষিতে, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে সরকার। এদিকে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমায় পরিস্থিতিও সহায়ক হয়।
পায়রার বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় শুরু হলে দেশে চলমান বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রায় থাকবে না বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ক্যাপটিভ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আমদানিসহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তবে পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারে না বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ১৯ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৪ মেগাওয়াট।