alt

জাতিসংঘকে নির্বাচনি সহায়তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’— এমন নির্বাচনে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। বর্তমানে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।

শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়। দলটির পক্ষে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চিঠিতে বলা হয়, “অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ না আসা পর্যন্ত আমরা জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির প্রতি নির্বাচনি সহযোগিতা স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতা এগিয়ে নিতে এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে নির্বাচনি সম্পৃক্ততার ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

‘বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনি সহযোগিতা এবং জাতিসংঘ সনদের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও মৌলিক অধিকারের মূলনীতি লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ’ শিরোনামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “ইউএনডিপির ব্যালট প্রকল্প এবং আসন্ন নির্বাচনে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। এমন সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের মূলনীতি ও ইউএনডিপির ম্যান্ডেটের পরিপন্থী হতে পারে।”

আওয়ামী লীগ বলছে, বাংলাদেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি তারা জানালেও অতীতে দলটির বিরুদ্ধেই তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের অভিযোগ ছিল।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল জয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

দশম ও দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী দল অংশ নেয়নি, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তারা ভোট বর্জন করে। ফলে ২০১৪ সালে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন—যে কারণে সংসদটি ‘বিনা ভোটের সংসদ’ নামে পরিচিত হয়।

২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ নিলেও ভোটের আগের রাতে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়, আর সেই ভোট ‘নীশিরাতের নির্বাচন’ নামে পরিচিত হয়।

২০২৪ সালের দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনাদের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ শরিক জাতীয় পার্টির জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেয়। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই, যা পরিচিত হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন হিসেবে।

এই তিন বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলটি দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে।

এরপর হাই কোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশ বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পথ তৈরি করে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে অবাধ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যায়নি এবং জনগণের আস্থা নষ্ট হয়েছে।

বিএনপি পরবর্তীতে ওই তিন নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়।

জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে আওয়ামী লীগ বলেছে, “আমরা শক্তিশালী নির্বাচনি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার গুরুত্ব স্বীকার করি। তবে তা অবশ্যই মৌলিক স্বাধীনতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ নিবর্তনমূলক—হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক ও নাগরিক আটক বা হুমকির মুখে রয়েছেন। রাজনৈতিক সংলাপের সুযোগ নেই এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ বেড়েছে, যা দেশের উদার মূল্যবোধ নষ্ট করছে।”

চিঠিতে দলটি আরও দাবি করে, “ইউএনডিপির ভূমিকা দ্রুত পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত, যাতে তাদের সহযোগিতা কাউকে বাদ দেওয়া বা নিপীড়নের কারণ না হয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সংলাপ, সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন—এর মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও অন্তর্ভুক্ত।”

ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এরপর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে, ফলে দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে আওয়ামী লীগ দাবি করত, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মানে দল নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণ। সদ্য বিদায়ী জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে হলো সমাজের সব শ্রেণি, নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক দল নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণই এখানে মুখ্য।”

তবে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি নিয়ে ইউএনডিপির প্রতিনিধি স্টেফান লিলা বা সংস্থার মুখপাত্রের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।

ছবি

শেষ নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে আবেগঘন বার্তা দিলেন বিএনপি মহাসচিব

ছবি

প্রার্থী ঘোষণা: সিলেট বিএনপিতে অস্থিরতা

ছবি

চাঁদপুরে জাতীয় পার্টি ও জাতীয় জাসদ থেকে শতাধিক নেতাকর্মীর এনসিপিতে যোগদান

ছবি

বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর কোথাও আনন্দ, কোথাও বিক্ষোভ

ছবি

জামায়াত ‘যথাসময়ে’ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা দেবে: শফিকুর রহমান

ছবি

মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি

ছবি

দিনাজপুর-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন

ছবি

বরগুনার দু’টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নজরুল ও মনি

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

কুড়িগ্রামে ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস

ছবি

নাসিরনগর বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নান

ছবি

সিরাজগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় মনোনায়ন পেয়ে প্রচারণায় নেমেছে

ছবি

কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী আপন দুই ভাইকে নিয়ে আলোচনার ঝড়

ছবি

রাজবাড়ী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম

ছবি

নরসিংদীর ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা

ছবি

শেরপুর থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা

ছবি

জয়পুরহাটে বিএনপির দুই প্রার্থী মাসুদ রানা ও আব্দুল বারী

ছবি

সিলেট বিএনপির প্রার্থী লুনা

ছবি

কিশোরগঞ্জের ৪টি আসনের বিএনপির প্রার্থীতা ঘোষণা

ছবি

কবিরহাটে ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার চালকসহ ছয়জন নিহত

ছবি

মেহেরপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ

ছবি

এই নির্বাচন হয়তো আমার জীবনের শেষ” : মির্জা ফখরুল

ছবি

২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, তিন আসনে খালেদা জিয়া, একটিতে তারেক

ছবি

তিন দলকে নিবন্ধন দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন

ছবি

গণভোট নিয়ে সংলাপ চায় জামায়াতসহ ৮ দল, ইউনূসকে রেফারি হওয়ার প্রস্তাব বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

ছবি

সীতাকুণ্ডে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি

ছবি

জন্মভূমি দিনাজপুরে ভোটের ময়দানে খালেদা জিয়া

ঢাকার ২০ আসনের মধ্যে ১৩টিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

ছবি

২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা : কে কোথায়

জনতা ব্যাংকের ১,৯৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং: সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের পাঁচ মামলা

ছবি

জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে সংলাপের আহ্বান ধর্মভিত্তিক আট দলের

ছবি

শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে: ফখরুল

গায়েবি মামলার ঝড়ে বিধ্বস্ত, রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার: ট্রাইব্যুনালে ইনু

ছবি

সিপিবি নেতাকে দ্রুত বিচার আইন ও বিভিন্ন মামলায় বাসদের ২২ নেতাকর্মী কারাগারে

ছবি

বিএনপি সংস্কার ‘ভেস্তে দিচ্ছে’, জামায়াত নির্বাচন পেছানোর ‘দুরভিসন্ধি করছে’: নাহিদ ইসলাম

tab

জাতিসংঘকে নির্বাচনি সহায়তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’— এমন নির্বাচনে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। বর্তমানে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় তারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।

শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়। দলটির পক্ষে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চিঠিতে বলা হয়, “অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ না আসা পর্যন্ত আমরা জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির প্রতি নির্বাচনি সহযোগিতা স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতা এগিয়ে নিতে এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে নির্বাচনি সম্পৃক্ততার ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

‘বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনি সহযোগিতা এবং জাতিসংঘ সনদের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও মৌলিক অধিকারের মূলনীতি লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ’ শিরোনামের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “ইউএনডিপির ব্যালট প্রকল্প এবং আসন্ন নির্বাচনে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। এমন সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের মূলনীতি ও ইউএনডিপির ম্যান্ডেটের পরিপন্থী হতে পারে।”

আওয়ামী লীগ বলছে, বাংলাদেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি তারা জানালেও অতীতে দলটির বিরুদ্ধেই তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের অভিযোগ ছিল।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল জয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

দশম ও দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী দল অংশ নেয়নি, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তারা ভোট বর্জন করে। ফলে ২০১৪ সালে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন—যে কারণে সংসদটি ‘বিনা ভোটের সংসদ’ নামে পরিচিত হয়।

২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ নিলেও ভোটের আগের রাতে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়, আর সেই ভোট ‘নীশিরাতের নির্বাচন’ নামে পরিচিত হয়।

২০২৪ সালের দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনাদের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ শরিক জাতীয় পার্টির জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেয়। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই, যা পরিচিত হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন হিসেবে।

এই তিন বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলটি দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে।

এরপর হাই কোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশ বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পথ তৈরি করে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে অবাধ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যায়নি এবং জনগণের আস্থা নষ্ট হয়েছে।

বিএনপি পরবর্তীতে ওই তিন নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনারদের আসামি করা হয়।

জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে আওয়ামী লীগ বলেছে, “আমরা শক্তিশালী নির্বাচনি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার গুরুত্ব স্বীকার করি। তবে তা অবশ্যই মৌলিক স্বাধীনতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ নিবর্তনমূলক—হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক ও নাগরিক আটক বা হুমকির মুখে রয়েছেন। রাজনৈতিক সংলাপের সুযোগ নেই এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ বেড়েছে, যা দেশের উদার মূল্যবোধ নষ্ট করছে।”

চিঠিতে দলটি আরও দাবি করে, “ইউএনডিপির ভূমিকা দ্রুত পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত, যাতে তাদের সহযোগিতা কাউকে বাদ দেওয়া বা নিপীড়নের কারণ না হয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সংলাপ, সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন—এর মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও অন্তর্ভুক্ত।”

ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। এরপর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে, ফলে দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে আওয়ামী লীগ দাবি করত, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মানে দল নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণ। সদ্য বিদায়ী জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে হলো সমাজের সব শ্রেণি, নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক দল নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণই এখানে মুখ্য।”

তবে আওয়ামী লীগের পাঠানো চিঠি নিয়ে ইউএনডিপির প্রতিনিধি স্টেফান লিলা বা সংস্থার মুখপাত্রের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।

back to top