মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ; সীতাকুণ্ডে চার নেতাকে বহিষ্কার
মনোনয়ন ঘোষণা নিয়ে গতকাল মেহেরপুরে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় -সংবাদ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে মনোনয়ন ঘোষণার পর প্রায় সব জেলায় আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন নেতাকর্মীরা। তবে কোথাও কোথাও মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তারা দলের প্রার্থী নির্বাচনকে ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’ দাবি করে মিছিল, অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
গাজীপুর-২ আসন শওকত
রনির কোলাকুলি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন লাভের পর গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি মঙ্গলবার,(০৪ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের কাশিমপুরস্থ বাসায় যান। সেখানে তারা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেন। সেখানে একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় মঞ্জুরুল করিম রনি একগুচ্ছ ধানের শীষ শওকত হোসেন সরকারের হাতে তুলে দেন। এ আসনে শওকত হোসেন সরকার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, রনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শওকত হোসেন সরকারের বাসায় পৌঁছালে তিনি হাসিমুখে মঞ্জুরুল করিম রনিসহ অতিথিদের বরণ করে নেন। এ সময় দুজন কোলাকুলি ও করমর্দনের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তারা উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন এবং ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শওকত হোসেন সরকার বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে আমরা দুজনই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছি। আমাদের সবার প্রতীক ধানের শীষ। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। এটি হবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি আমাদের উপহার।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শহীদুজ্জামান, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান এলিস, টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী সালাউদ্দিন, বিএনপি নেতা মোফাজ্জল হোসেন, গাজীপুর মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মাহমুদ হাসান রাজু, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল খন্দকার সুমনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ও বিপুলসংখ্যক কর্মী সমর্থক।
এর আগে এম মঞ্জুরুল করিম রনি সালনায় তার পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করেন। তিনি এ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন।
চাঁদপুরে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ হান্নান। এতে ফুঁসে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে সড়কের দুদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় চরম ভোগান্তি।
গতকাল সোমবার রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য দেন- সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জিল হোসেন, ডা. আবুল কালাম আজাদ, আবু জাফর খসরু মোল্লা, ফারুক আহমেদ খান, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আমানত গাজী, যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল মিজি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন, সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আমজাদ হোসেন শিপন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, পৌর যুবদলের সভাপতি ইমামহোসেন, সাধারণ সম্পাদক আমিন মিজি, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান মঞ্জুর, সাধারণ সম্পাদক শাওন চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, বিএনপির রাজনীতির জন্য সর্বস্ব হারানো এমএ হান্নান দীর্ঘদিন কারাবরণ করে মিথ্যা মামলার ঘানি টেনেছেন, ব্যবসাসহ হারিয়েছেন সবকিছু। তিনি এমপি না হয়েও উপজেলার সব স্তরের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করেছেন। অথচ এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে লায়ন মো. হারুনুর রশিদকে। এ আসনে বিএনপির নেতাকমীদের প্রত্যাশা এমএ হান্নানকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া ফরিদগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা কখনো মেনে নেবে না। অবিলম্বে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির ত্যাগী নেতা এমএ হান্নানকে মনোনয়ন না দিলে ফরিদগঞ্জের বিএনপির সব নেতাকর্মীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবেন।
এদিকে বিএনপির বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের সড়ক অবরোধের কারণে ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে প্রায় ৪ কিলো সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার রাত থেকে চলমান অবরোধের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও অবরোধ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। স্বাভাবিক হয়নি সড়কে যানবাহন চলাচল।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহআলম জানান, এমএ হান্নানের সমর্থিত বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীদের অবরোধের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে রাস্তায় যানজট তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন তারা। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ উপজেলায় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে বিজয়ী সংসদ সদস্য লায়ন মো. হারুনুর রশিদ।
সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন ধরান। এ সময় ফকিরহাট বাংলাবাজার এলাকায় অন্তত ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ভাটিয়ারী, কদমরসুল ও জলিল গেইট এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসলাম চৌধুরীর নির্দেশে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
ঘটনার পর বিএনপি সীতাকুণ্ড স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের পর মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত
মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে মনোনয়ন বঞ্চিত সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকীর সমর্থকেরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কামাল জামান মোল্লাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ঘোষণা করার পরই বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাংনী ও সাতক্ষীরায় উত্তেজনা
মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাবেদ মাসুদ মিল্টন সমর্থিত নেতাকর্মীরা। রাত আটটার দিকে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন তারা। এর আগে দলের মহাসচিব আমজাদ হোসেনের নাম ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নামেন মিল্টনপন্থিরা।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৭ বছর মাঠে থেকে সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন জাবেদ মাসুদ মিল্টন। অথচ মাঠে অনুপস্থিত একজনকে হঠাৎ মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে ডা. শহিদুল আলমের সমর্থকদের মিছিল ও সমাবেশ হয়। সাতক্ষীরা-৩ (কালিগঞ্জ-আশাশুনি) আসনে কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে শহিদুল আলমের সমর্থকরা। শহিদুল আলমের সমর্থকরা বলেন, ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দিলে এ আসনে বিএনপি নিশ্চিতভাবে পরাজিত হবে।
ময়মনসিংহেও বিভক্তি
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) ও ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর দলের স্থানীয় দুইপক্ষ পৃথক মিছিল করেছে। বিক্ষোভকারীরা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে রুমিন ফারহানার অনুসারীরা হতাশ
বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর একাংশ) আসনে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। এই আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। আসনটি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এতে হতাশ হয়েছেন এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রুমিন ফারহানার অনুসারী নেতাকর্মীরা। রুমিন ফারহানা ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তার অনুসারীরা।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটিতে প্রায় প্রতিবারই ধানের শীষের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তবে ২০০৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী আওয়ামী লীগের শরিক দল জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এদিকে এ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে মাঠে আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে রুমিন ফারহানার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। এখানে জোটের শরিক কাউকে (মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবী) মনোনয়ন দেয়ার পর রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জোটের প্রার্থী জামানত হারাবেন। যেমনটি হয়েছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এখানে ৭০ শতাংশ দলীয় নেতাকর্মী রুমিন ফারহানার পক্ষে থাকবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুমিন ফারহানার এক অনুসারী বলেন, ‘এখানে তাকে (রুমিন ফারহানা) ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা প্রথমে আন্দোলন করব। প্রয়োজন হলে অন্য চিন্তা করবো।’
দলীয় ব্যাখ্যা
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না।’ তবে স্থানীয়পর্যায়ের কর্মীদের অভিযোগ, ‘ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দূরের লোকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ; সীতাকুণ্ডে চার নেতাকে বহিষ্কার
মনোনয়ন ঘোষণা নিয়ে গতকাল মেহেরপুরে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় -সংবাদ
মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে মনোনয়ন ঘোষণার পর প্রায় সব জেলায় আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন নেতাকর্মীরা। তবে কোথাও কোথাও মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তারা দলের প্রার্থী নির্বাচনকে ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক’ দাবি করে মিছিল, অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
গাজীপুর-২ আসন শওকত
রনির কোলাকুলি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন লাভের পর গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি মঙ্গলবার,(০৪ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের কাশিমপুরস্থ বাসায় যান। সেখানে তারা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেন। সেখানে একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় মঞ্জুরুল করিম রনি একগুচ্ছ ধানের শীষ শওকত হোসেন সরকারের হাতে তুলে দেন। এ আসনে শওকত হোসেন সরকার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, রনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শওকত হোসেন সরকারের বাসায় পৌঁছালে তিনি হাসিমুখে মঞ্জুরুল করিম রনিসহ অতিথিদের বরণ করে নেন। এ সময় দুজন কোলাকুলি ও করমর্দনের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তারা উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন এবং ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শওকত হোসেন সরকার বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে আমরা দুজনই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছি। আমাদের সবার প্রতীক ধানের শীষ। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। এটি হবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি আমাদের উপহার।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শহীদুজ্জামান, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান এলিস, টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী সালাউদ্দিন, বিএনপি নেতা মোফাজ্জল হোসেন, গাজীপুর মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মাহমুদ হাসান রাজু, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল খন্দকার সুমনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ও বিপুলসংখ্যক কর্মী সমর্থক।
এর আগে এম মঞ্জুরুল করিম রনি সালনায় তার পিতা-মাতার কবর জিয়ারত করেন। তিনি এ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার সঙ্গে কথা বলেন এবং খোঁজখবর নেন।
চাঁদপুরে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ হান্নান। এতে ফুঁসে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে সড়কের দুদিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় চরম ভোগান্তি।
গতকাল সোমবার রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য দেন- সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জিল হোসেন, ডা. আবুল কালাম আজাদ, আবু জাফর খসরু মোল্লা, ফারুক আহমেদ খান, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আমানত গাজী, যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল মিজি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন, সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আমজাদ হোসেন শিপন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, পৌর যুবদলের সভাপতি ইমামহোসেন, সাধারণ সম্পাদক আমিন মিজি, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান মঞ্জুর, সাধারণ সম্পাদক শাওন চৌধুরী।
বক্তারা বলেন, বিএনপির রাজনীতির জন্য সর্বস্ব হারানো এমএ হান্নান দীর্ঘদিন কারাবরণ করে মিথ্যা মামলার ঘানি টেনেছেন, ব্যবসাসহ হারিয়েছেন সবকিছু। তিনি এমপি না হয়েও উপজেলার সব স্তরের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করেছেন। অথচ এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে লায়ন মো. হারুনুর রশিদকে। এ আসনে বিএনপির নেতাকমীদের প্রত্যাশা এমএ হান্নানকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া ফরিদগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা কখনো মেনে নেবে না। অবিলম্বে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপির ত্যাগী নেতা এমএ হান্নানকে মনোনয়ন না দিলে ফরিদগঞ্জের বিএনপির সব নেতাকর্মীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবেন।
এদিকে বিএনপির বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের সড়ক অবরোধের কারণে ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে প্রায় ৪ কিলো সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার রাত থেকে চলমান অবরোধের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও অবরোধ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। স্বাভাবিক হয়নি সড়কে যানবাহন চলাচল।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহআলম জানান, এমএ হান্নানের সমর্থিত বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীদের অবরোধের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে রাস্তায় যানজট তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন তারা। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ উপজেলায় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে বিজয়ী সংসদ সদস্য লায়ন মো. হারুনুর রশিদ।
সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক অবরোধ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন ধরান। এ সময় ফকিরহাট বাংলাবাজার এলাকায় অন্তত ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ভাটিয়ারী, কদমরসুল ও জলিল গেইট এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আসলাম চৌধুরীর নির্দেশে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
ঘটনার পর বিএনপি সীতাকুণ্ড স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের পর মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত
মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে মনোনয়ন বঞ্চিত সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকীর সমর্থকেরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কামাল জামান মোল্লাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ঘোষণা করার পরই বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাংনী ও সাতক্ষীরায় উত্তেজনা
মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাবেদ মাসুদ মিল্টন সমর্থিত নেতাকর্মীরা। রাত আটটার দিকে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন তারা। এর আগে দলের মহাসচিব আমজাদ হোসেনের নাম ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নামেন মিল্টনপন্থিরা।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১৭ বছর মাঠে থেকে সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছেন জাবেদ মাসুদ মিল্টন। অথচ মাঠে অনুপস্থিত একজনকে হঠাৎ মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে ডা. শহিদুল আলমের সমর্থকদের মিছিল ও সমাবেশ হয়। সাতক্ষীরা-৩ (কালিগঞ্জ-আশাশুনি) আসনে কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে শহিদুল আলমের সমর্থকরা। শহিদুল আলমের সমর্থকরা বলেন, ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দিলে এ আসনে বিএনপি নিশ্চিতভাবে পরাজিত হবে।
ময়মনসিংহেও বিভক্তি
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) ও ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর দলের স্থানীয় দুইপক্ষ পৃথক মিছিল করেছে। বিক্ষোভকারীরা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে রুমিন ফারহানার অনুসারীরা হতাশ
বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর একাংশ) আসনে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। এই আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। আসনটি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এতে হতাশ হয়েছেন এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রুমিন ফারহানার অনুসারী নেতাকর্মীরা। রুমিন ফারহানা ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তার অনুসারীরা।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটিতে প্রায় প্রতিবারই ধানের শীষের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তবে ২০০৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী আওয়ামী লীগের শরিক দল জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এদিকে এ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে মাঠে আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে রুমিন ফারহানার ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। এখানে জোটের শরিক কাউকে (মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবী) মনোনয়ন দেয়ার পর রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জোটের প্রার্থী জামানত হারাবেন। যেমনটি হয়েছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এখানে ৭০ শতাংশ দলীয় নেতাকর্মী রুমিন ফারহানার পক্ষে থাকবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুমিন ফারহানার এক অনুসারী বলেন, ‘এখানে তাকে (রুমিন ফারহানা) ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা প্রথমে আন্দোলন করব। প্রয়োজন হলে অন্য চিন্তা করবো।’
দলীয় ব্যাখ্যা
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না।’ তবে স্থানীয়পর্যায়ের কর্মীদের অভিযোগ, ‘ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দূরের লোকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’