অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত বিএনপি। তবে কেন অন্য একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে আলোচনা আহ্বান জানানো হচ্ছে— সে প্রশ্ন তুলেছে দলটি। একই সঙ্গে দলটি বলেছে, নির্বাচিত নয় এমন একটি সরকারের এত ক্ষমতা প্রদর্শন শোভা পায় না।
রাজধানীতে শনিবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর’ উপলক্ষে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদল আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদের আহ্বান জানায় কোনো বিষয়ে আলোচনার জন্য, আমরা সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু কেন অন্য একটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আহ্বান জানানো হচ্ছে?”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধিত্বকারী এই নেতা জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব নিয়ে দলের গুরুতর আপত্তি রয়েছে। ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছিল, বিএনপি সেটির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও, কমিশন ২৮ অক্টোবর যে বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে মূল সনদের অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সালাহউদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, গণভোট নিয়েও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মতভিন্নতায় রয়েছে। বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হোক, অন্যদিকে জামায়াত আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে চায়।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছাতে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিল। গত রোববার উপদেষ্টা পরিষদের সভা থেকে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঐক্য না হলে সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে।
গত বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামী নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান। ফখরুল জানান, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে অবস্থান জানাবেন। পরদিনই সালাহউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “আমরা সব দলের সঙ্গে গণতান্ত্রিকভাবে যোগাযোগ রাখি— সেটা এনসিপি, জামায়াত বা অন্য দল হোক। কিন্তু আলোচনার আহ্বানে কোনো দলকে রেফারির ভূমিকায় আনা সঠিক নয়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্ধারিত সময়সীমার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আপনারা নির্বাচিত নন— এটা মনে রাখতে হবে। সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, না হলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে— এমন নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার আপনাদের নেই। এত শক্তি প্রদর্শন মানায় না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে, আর সরকার থাকবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। কিন্তু এখন তো সরকারই রেফারি হয়ে গোল দিয়ে দিয়েছে।”
জামায়াতের প্রতি কঠোর সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আপনারা ১৯৭১ সালে উল্টো পথে গিয়েছিলেন, ১৯৪৭ সালেও বিপরীত দিকে যাত্রা করেছিলেন। এখন যদি আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মেলান, তার পরিণতি আল্লাহ মালুম। এতে ফ্যাসিস্ট শক্তিই উৎসাহিত হবে। বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না।”
তিনি বলেন, “গণভোটের নামে সংবিধান পরিবর্তনের চেষ্টা করা উচিত নয়। নির্বাচনের দিন ছাড়া গণভোটের বিকল্প নেই।”
১৩ নভেম্বর ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষিত হবে। মানুষ বলে— পাগলের সুখ মনে মনে। আওয়ামী লীগের ডাকা এই লকডাউনে কেউ সাড়া দেবে না। সাহস থাকলে তারা আসুক, জনগণ কীভাবে তাদের গ্রহণ করে দেখবে।”
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “দেশ ক্রমেই অস্থিতিশীল হচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত আসছে। যারা ভারতকে সুযোগ করে দিতে চায়, ইতিহাসে তাদের নাম লেখা থাকবে।”
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়সহ অন্য নেতারা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত বিএনপি। তবে কেন অন্য একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে আলোচনা আহ্বান জানানো হচ্ছে— সে প্রশ্ন তুলেছে দলটি। একই সঙ্গে দলটি বলেছে, নির্বাচিত নয় এমন একটি সরকারের এত ক্ষমতা প্রদর্শন শোভা পায় না।
রাজধানীতে শনিবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর’ উপলক্ষে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদল আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যদি আমাদের আহ্বান জানায় কোনো বিষয়ে আলোচনার জন্য, আমরা সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু কেন অন্য একটি রাজনৈতিক দল দিয়ে আহ্বান জানানো হচ্ছে?”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধিত্বকারী এই নেতা জানান, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব নিয়ে দলের গুরুতর আপত্তি রয়েছে। ১৭ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছিল, বিএনপি সেটির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলেও, কমিশন ২৮ অক্টোবর যে বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে মূল সনদের অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সালাহউদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী, গণভোট নিয়েও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মতভিন্নতায় রয়েছে। বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হোক, অন্যদিকে জামায়াত আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে চায়।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছাতে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিল। গত রোববার উপদেষ্টা পরিষদের সভা থেকে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঐক্য না হলে সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে।
গত বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামী নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানান। ফখরুল জানান, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে অবস্থান জানাবেন। পরদিনই সালাহউদ্দিন আহমদ এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “আমরা সব দলের সঙ্গে গণতান্ত্রিকভাবে যোগাযোগ রাখি— সেটা এনসিপি, জামায়াত বা অন্য দল হোক। কিন্তু আলোচনার আহ্বানে কোনো দলকে রেফারির ভূমিকায় আনা সঠিক নয়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্ধারিত সময়সীমার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আপনারা নির্বাচিত নন— এটা মনে রাখতে হবে। সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, না হলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে— এমন নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার আপনাদের নেই। এত শক্তি প্রদর্শন মানায় না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে, আর সরকার থাকবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। কিন্তু এখন তো সরকারই রেফারি হয়ে গোল দিয়ে দিয়েছে।”
জামায়াতের প্রতি কঠোর সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আপনারা ১৯৭১ সালে উল্টো পথে গিয়েছিলেন, ১৯৪৭ সালেও বিপরীত দিকে যাত্রা করেছিলেন। এখন যদি আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মেলান, তার পরিণতি আল্লাহ মালুম। এতে ফ্যাসিস্ট শক্তিই উৎসাহিত হবে। বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না।”
তিনি বলেন, “গণভোটের নামে সংবিধান পরিবর্তনের চেষ্টা করা উচিত নয়। নির্বাচনের দিন ছাড়া গণভোটের বিকল্প নেই।”
১৩ নভেম্বর ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষিত হবে। মানুষ বলে— পাগলের সুখ মনে মনে। আওয়ামী লীগের ডাকা এই লকডাউনে কেউ সাড়া দেবে না। সাহস থাকলে তারা আসুক, জনগণ কীভাবে তাদের গ্রহণ করে দেখবে।”
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “দেশ ক্রমেই অস্থিতিশীল হচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত আসছে। যারা ভারতকে সুযোগ করে দিতে চায়, ইতিহাসে তাদের নাম লেখা থাকবে।”
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়সহ অন্য নেতারা।