বাংলাদেশে বিএনপির হাত ধরে বারবার গণতন্ত্র এসেছে। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার দাবিদার দল আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
শনিবার, (০৮ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম আয়োজিত ‘একটি কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন’ নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ৭১ এর হাত ধরে দেশ যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছিলো। গণতন্ত্রের পথে হেঁটেছে। তখন স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলের দাবিদার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা সামরিক শাসনের হাত ধরে গণতন্ত্র উদ্ধার হয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র এসেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এসেছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এসেছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি একাত্তর বড়, না চব্বিশ বড়- এই প্রশ্ন তুলেন তাহলে সে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অসম্মান করবে। যারা বলবে একাত্তর সব, চব্বিশ কিছু না তাহলে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আনাসের মতো ১৪০০ মানুষ ৩৬দিনে পাখির মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তাদের প্রতি অসম্মান করা হবে।
তিনি বলেন, ন্যায়ের আকাক্সক্ষা থেকে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তনে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে ন্যায়ভিত্তিক সমতার আকাক্সক্ষা পূরণে সংবিধান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই সংবিধানের চোখে সবাই সমান। সংবিধানের আলোকে এই আইন প্রণয়নে কোনো বাধা নেই। বর্তমান সময়েই এটা সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আইনি সুরক্ষার অভাবে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে দলিত, হরিজন, বেদে, চা শ্রমিক, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, হিজড়া ও রোহিঙ্গরা বঞ্চিত হন।
শিক্ষা লাভ, সরকারি পরিসেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ আবাসনের ক্ষেত্রে দলিত হরিজন, বেদে চা শ্রমিক,প্রতিবন্ধী, আদিবাসী পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও হিজড়ারা বঞ্চিত হয়। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দলিত, হরিজন, বেদে ও হিজড়ারা বৈষম্যের শিকার হন। কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন হলে পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা হবে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, প্রত্যেক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সংগ্রামে ত্যাগ ও অর্থ ব্যয় করে তার দাবি আদায় করা হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গত সরকারের সময়ে সংসদে গেলেও শেষ পর্যায়ে এসে থেমে যায়। এরপর আর অগ্রসর হয়নি। আশা করছি বর্তমান সরকার উদ্যোগ নেবে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-গণ আন্দোলনের ফসল হিসেবে যে সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এ সরকার বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে। এ আইন অনুমোদনের ফলে সেই কাজ আরও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আগের সরকার বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। ২০২২ সালে সংসদে উপস্থাপিত হলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখনি। আগামীর সরকারও যাতে এমন না হয়, সেজন্য সব রাজনৈতিক দলগুলো এ আইন অবহেলা না করে এজন্য দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে; এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
জাকির হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আইন একমাত্র প্রস্তাবিত আইন, যা পাস করার সময় বিপক্ষে বিক্ষোভ করে বন্ধ করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত আইনে এমন কিছু বিষয় ছিল, যা পাসের হলে সুবিধার পরিবর্তে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর আর বেশি ক্ষতি হতো।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনষ্ঠানে বার কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক কাফি রতন ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বক্তব্য দেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশে বিএনপির হাত ধরে বারবার গণতন্ত্র এসেছে। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার দাবিদার দল আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
শনিবার, (০৮ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম আয়োজিত ‘একটি কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন’ নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ৭১ এর হাত ধরে দেশ যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছিলো। গণতন্ত্রের পথে হেঁটেছে। তখন স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলের দাবিদার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা সামরিক শাসনের হাত ধরে গণতন্ত্র উদ্ধার হয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র এসেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এসেছে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এসেছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি একাত্তর বড়, না চব্বিশ বড়- এই প্রশ্ন তুলেন তাহলে সে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অসম্মান করবে। যারা বলবে একাত্তর সব, চব্বিশ কিছু না তাহলে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আনাসের মতো ১৪০০ মানুষ ৩৬দিনে পাখির মতো গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তাদের প্রতি অসম্মান করা হবে।
তিনি বলেন, ন্যায়ের আকাক্সক্ষা থেকে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তনে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে ন্যায়ভিত্তিক সমতার আকাক্সক্ষা পূরণে সংবিধান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই সংবিধানের চোখে সবাই সমান। সংবিধানের আলোকে এই আইন প্রণয়নে কোনো বাধা নেই। বর্তমান সময়েই এটা সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আইনি সুরক্ষার অভাবে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে দলিত, হরিজন, বেদে, চা শ্রমিক, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, হিজড়া ও রোহিঙ্গরা বঞ্চিত হন।
শিক্ষা লাভ, সরকারি পরিসেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ আবাসনের ক্ষেত্রে দলিত হরিজন, বেদে চা শ্রমিক,প্রতিবন্ধী, আদিবাসী পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও হিজড়ারা বঞ্চিত হয়। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দলিত, হরিজন, বেদে ও হিজড়ারা বৈষম্যের শিকার হন। কার্যকর বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন হলে পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা হবে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, প্রত্যেক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সংগ্রামে ত্যাগ ও অর্থ ব্যয় করে তার দাবি আদায় করা হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গত সরকারের সময়ে সংসদে গেলেও শেষ পর্যায়ে এসে থেমে যায়। এরপর আর অগ্রসর হয়নি। আশা করছি বর্তমান সরকার উদ্যোগ নেবে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-গণ আন্দোলনের ফসল হিসেবে যে সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এ সরকার বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে। এ আইন অনুমোদনের ফলে সেই কাজ আরও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আগের সরকার বৈষম্যবিরোধী আইন প্রবর্তন করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। ২০২২ সালে সংসদে উপস্থাপিত হলেও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখনি। আগামীর সরকারও যাতে এমন না হয়, সেজন্য সব রাজনৈতিক দলগুলো এ আইন অবহেলা না করে এজন্য দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে; এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
জাকির হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী আইন একমাত্র প্রস্তাবিত আইন, যা পাস করার সময় বিপক্ষে বিক্ষোভ করে বন্ধ করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত আইনে এমন কিছু বিষয় ছিল, যা পাসের হলে সুবিধার পরিবর্তে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর আর বেশি ক্ষতি হতো।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনষ্ঠানে বার কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক কাফি রতন ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বক্তব্য দেন।