alt

রাজনীতি

যশোরে বিশাল জনসভা

প্রতিশ্রুতি দিলেন, নৌকায় ভোটের ওয়াদাও চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

যশোর অফিস : বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২

যশোর : বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় স্টেডিয়ামে আ’লীগের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান -সংবাদ

যশোরে লাখ লাখ মানুষের জনসমুদ্রে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের অনেক উন্নয়ন করেছি; আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনে আরও উন্নয়ন করবো। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না ওয়াদা চাই। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন।’ এ সময় সমবেত জনতা দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে যশোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জেলা আ’লীগের স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় ভাষণদানকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে অনেকে নানা সমালোচনা করছে। অনেকে প্রশ্ন করেন রিজার্ভ গেলো কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। কারণ আমরা সবসময় মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কর্মকা- চালাচ্ছি।’

রিজার্ভ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোন সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোন সমস্যা নেই, আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোন সমস্যা হবে না।’

কোন মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাহীন থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিই একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। এবার আমরা ক্ষমতায় এসে ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিয়েছি। তাই ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। ঘর পেয়ে মানুষের জীবন পাল্টে গেছে। জাতির পিতার আকাক্সক্ষা পূরণ করেছি।

তিনি বলেন, কারও জমি যেন অনাবাদি না থাকে। প্রত্যকটা জমি আবাদ করতে হবে। যাতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি না হয়। কারো কাছে হাত পাততে না হয়। কারো কাছে চেয়ে চলতে না হয়। যার কাছে যা আছে তা দিয়ে কিছু উৎপাদন করেন।

যশোরে জনসভা করতে পেরে আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানের মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর ছিল তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, যে লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে দারিদ্র্য বিমোচন ট্রেনিং সেন্টার হচ্ছে।’

মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি আর কিছু দিতে পারেনি। তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। বিচার পাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে হারিয়েছি। তারপরও এ বাংলায় ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমার লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। একের পর এক ক্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জিয়া মোশতাক সবাই জড়িত। জিয়া-মোস্তাক সবাই খুনি। আমি বিচার চাইতে পারিনি। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি একটাই কারণে, এই জাতির পিতা আমার পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছে। সেজন্য আমার লক্ষ্য ছিল, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। বার বার ক্ষমতায় এসেছি বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বিএনপি দিয়েছে অস্ত্র, খুন, হত্যা। শুধু হত্যা আর খুন ছাড়া কিছু দিতে পারেনি বিএনপি। মানুষের ভাগ্য ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যায়, কিছু রেখে যায়নি। ভাঙা বাক্স আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।

তিনি আরও বলেন, আজকে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেজন্য তার সাজা হয়েছে। অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা খেয়েছে, সেখানেও তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমিসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছে। আর খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত নেতা জনগণকে কী দেবে? তারা কিছুই দিতে পারে না, শুধু রক্ত চুষে খেতে পারে।

সরকারপ্রধান বলেন, যশোরে বিএনপি উন্নয়নের কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে করেছে। ’৭৫ এর পর এদেশের আর কোন উন্নয়ন হয়নি। আ’লীগ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে যেন যশোর আসতে পারে সেই রেললাইনের কাজ চলছে।

নির্বাচনে যশোরের সবকটি আসন থেকে নির্বাচিত করায় যশোরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। সেখানে যুবকদের অনেক কর্মসংস্থান হবে। যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনা জামানতে ৩ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। এটা নিয়ে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারবে। এখনকার যুগে কেউ বেকার থাকবে না। কিছু না কিছু করতে পারবে। সেই সুযোগটা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দেশ করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়নি। আমি দিয়েছি। এই করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ বিমান পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সামগ্রী এনেছি। রিজার্ভ মানুষের কাছে লেগেছে। যে গম ২০০ ডলারে কিনতাম, তা এখন ৬শ’ ডলার। যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে। তারপরও আমরা কিনে এনেছি, যাতে খাদ্য-ঘাটতি না দেখা দেয়। এজন্য আমি জমি অনাবাদী না রেখে উৎপাদন করার কথা বলেছি।

‘দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না বলে জাতির পিতা যে প্রকল্প শুরু করেছিলেন, তার সেই পথ ধরে সারাদেশে গৃহহীনদের তালিকা করে জমিসহ ঘর করে দিয়েছি বিনা পয়সায়। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ঘর পেয়েছে যাদের কোন ঠিকানা ছিল না। এটা তাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে। এই দেশের কোন মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। যে বাংলাদেশ খালেদা জিয়া রেখে গিয়েছিল ৪০ ভাগ দারিদ্র্যের হার, এটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। যে হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিল, তা আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, যশোরে ভবদহ জলাবদ্ধতার দূর করার প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার আমরা দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর ফলে যশোর খুলনা সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর হবে। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ হাতে নিয়েছি। কপোতাক্ষের মতো ভবদহের জলাবদ্ধতার যেন না থাকে, সেই বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নেবো।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর বিমান ঘাঁটিতে বিমানবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এরপর দুপুর দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভা মঞ্চে আসেন। মঞ্চে উঠে তিনি হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলেন।

বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখো জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন। ৩৫ মিনিটের ভাষণে তিনি দেশের নানা উন্নয়নচিত্র; অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

এর আগে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি পরিচালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, মোল্লাহাট, ফকিরহাট) আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সম্পাদকম-লী সদস্য ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়য়া, সামছুন্নাহার চাপা, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, আনিসুর রহমান, মেরিনা জাহান কবিতা ও পারভিন জামান কল্পনা।

ছবি

বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে : কাদের

ছবি

‘স্বার্থহীন’ রাজনীতির উদাহরণ পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ছবি

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা: কাদের

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

প্রথম ধাপে চার উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন নেই

ছবি

মাদারীপুরে দুইটি উপজেলায় ২১ প্রার্থীর প্রতিক বরাদ্দ

ছবি

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে : কাদের

ছবি

উপজেলা নির্বাচন: পরশুরামে এবারও ভোটের প্রয়োজন হবে না

চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতার মনোনযন প্রত্যাহার, দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই

ছবি

হাতিয়াতে ভোট ছাড়াই জয়ী হচ্ছেন চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস-চেয়ারম্যান

ছবি

তাপপ্রবাহের কারণে বিএনপির ২৬ এপ্রিলের সমাবেশ স্থগিত

লালমনিরহাটে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই সাবেক মন্ত্রীর ভাই-ছেলের লড়াই

ছবি

শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা

ছবি

সেনবাগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

কসবায় নির্বাচন থেকে সরছেন না মন্ত্রীর আত্মীয় ছাইদুর

ছবি

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করে প্রাইভেট হাসপাতালের রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফি নির্ধারণ: স্বাস্থ্য মন্ত্রী

ছবি

রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

ছবি

১০ দিনে ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করবে ছাত্রলীগ

ছবি

সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই-- অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি

ছবি

স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই: ইসি আলমগীর

ছবি

সরকার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে, যেকোনো সময় ডুবে যাবে: রিজভী

ছবি

ইরাকে ইরানপন্থি বাহিনীর ঘাঁটিতে বিমান হামলায় হতাহত ৭

ছবি

আবদুল আউয়াল মিন্টু হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে : কাদের

ছবি

আমি লজ্জিত-দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, দোষীদের কপালে দুঃখ আছে : পলক

ছবি

যারা নুন-ভাতের কথাও ভাবতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংসের চিন্তা করে : শেখ হাসিনা

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ’লীগের

ছবি

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন : শেখ হাসিনা

ছবি

বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে : ওবায়দুল কাদের

ছবি

মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ছবি

মনোনয়নে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা, তবে দল দু’টির বর্জনের ঘোষণা

ছবি

আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

ছবি

হিটলারের চেয়েও ভয়ঙ্কর নেতানিয়াহু : ওবায়দুল কাদের

tab

রাজনীতি

যশোরে বিশাল জনসভা

প্রতিশ্রুতি দিলেন, নৌকায় ভোটের ওয়াদাও চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

যশোর অফিস

যশোর : বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় স্টেডিয়ামে আ’লীগের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান -সংবাদ

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২

যশোরে লাখ লাখ মানুষের জনসমুদ্রে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের অনেক উন্নয়ন করেছি; আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনে আরও উন্নয়ন করবো। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না ওয়াদা চাই। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন।’ এ সময় সমবেত জনতা দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে যশোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জেলা আ’লীগের স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় ভাষণদানকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে অনেকে নানা সমালোচনা করছে। অনেকে প্রশ্ন করেন রিজার্ভ গেলো কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। কারণ আমরা সবসময় মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কর্মকা- চালাচ্ছি।’

রিজার্ভ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোন সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোন সমস্যা নেই, আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোন সমস্যা হবে না।’

কোন মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাহীন থাকবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন থেকে সিদ্ধান্ত নিই একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। এবার আমরা ক্ষমতায় এসে ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিয়েছি। তাই ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। ঘর পেয়ে মানুষের জীবন পাল্টে গেছে। জাতির পিতার আকাক্সক্ষা পূরণ করেছি।

তিনি বলেন, কারও জমি যেন অনাবাদি না থাকে। প্রত্যকটা জমি আবাদ করতে হবে। যাতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি না হয়। কারো কাছে হাত পাততে না হয়। কারো কাছে চেয়ে চলতে না হয়। যার কাছে যা আছে তা দিয়ে কিছু উৎপাদন করেন।

যশোরে জনসভা করতে পেরে আনন্দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানের মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরুল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর ছিল তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, যে লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে দারিদ্র্য বিমোচন ট্রেনিং সেন্টার হচ্ছে।’

মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি আর কিছু দিতে পারেনি। তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। বিচার পাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে হারিয়েছি। তারপরও এ বাংলায় ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমার লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। একের পর এক ক্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জিয়া মোশতাক সবাই জড়িত। জিয়া-মোস্তাক সবাই খুনি। আমি বিচার চাইতে পারিনি। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি একটাই কারণে, এই জাতির পিতা আমার পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছে। সেজন্য আমার লক্ষ্য ছিল, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। বার বার ক্ষমতায় এসেছি বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বিএনপি দিয়েছে অস্ত্র, খুন, হত্যা। শুধু হত্যা আর খুন ছাড়া কিছু দিতে পারেনি বিএনপি। মানুষের ভাগ্য ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যায়, কিছু রেখে যায়নি। ভাঙা বাক্স আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।

তিনি আরও বলেন, আজকে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেজন্য তার সাজা হয়েছে। অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা খেয়েছে, সেখানেও তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমিসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছে। আর খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত নেতা জনগণকে কী দেবে? তারা কিছুই দিতে পারে না, শুধু রক্ত চুষে খেতে পারে।

সরকারপ্রধান বলেন, যশোরে বিএনপি উন্নয়নের কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে করেছে। ’৭৫ এর পর এদেশের আর কোন উন্নয়ন হয়নি। আ’লীগ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে যেন যশোর আসতে পারে সেই রেললাইনের কাজ চলছে।

নির্বাচনে যশোরের সবকটি আসন থেকে নির্বাচিত করায় যশোরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। সেখানে যুবকদের অনেক কর্মসংস্থান হবে। যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনা জামানতে ৩ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। এটা নিয়ে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারবে। এখনকার যুগে কেউ বেকার থাকবে না। কিছু না কিছু করতে পারবে। সেই সুযোগটা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন দেশ করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়নি। আমি দিয়েছি। এই করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ বিমান পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সামগ্রী এনেছি। রিজার্ভ মানুষের কাছে লেগেছে। যে গম ২০০ ডলারে কিনতাম, তা এখন ৬শ’ ডলার। যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে। তারপরও আমরা কিনে এনেছি, যাতে খাদ্য-ঘাটতি না দেখা দেয়। এজন্য আমি জমি অনাবাদী না রেখে উৎপাদন করার কথা বলেছি।

‘দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না বলে জাতির পিতা যে প্রকল্প শুরু করেছিলেন, তার সেই পথ ধরে সারাদেশে গৃহহীনদের তালিকা করে জমিসহ ঘর করে দিয়েছি বিনা পয়সায়। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ঘর পেয়েছে যাদের কোন ঠিকানা ছিল না। এটা তাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে। এই দেশের কোন মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। যে বাংলাদেশ খালেদা জিয়া রেখে গিয়েছিল ৪০ ভাগ দারিদ্র্যের হার, এটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। যে হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিল, তা আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, যশোরে ভবদহ জলাবদ্ধতার দূর করার প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার আমরা দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর ফলে যশোর খুলনা সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর হবে। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ হাতে নিয়েছি। কপোতাক্ষের মতো ভবদহের জলাবদ্ধতার যেন না থাকে, সেই বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নেবো।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর বিমান ঘাঁটিতে বিমানবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এরপর দুপুর দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভা মঞ্চে আসেন। মঞ্চে উঠে তিনি হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলেন।

বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখো জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন। ৩৫ মিনিটের ভাষণে তিনি দেশের নানা উন্নয়নচিত্র; অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

এর আগে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি পরিচালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, মোল্লাহাট, ফকিরহাট) আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সম্পাদকম-লী সদস্য ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়য়া, সামছুন্নাহার চাপা, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, আনিসুর রহমান, মেরিনা জাহান কবিতা ও পারভিন জামান কল্পনা।

back to top