পঁচিশে মার্চ ২০১৭’তে স্পেনের বিপক্ষে ফ্রান্সের হয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের প্রথম ম্যাচ খেলার কয়েক মাসের মধ্যেই ফ্রান্সের হয়ে প্রথম গোল করেন। তাকে দলে নেয়ার জন্য যা করা দরকার, রিয়াল মাদ্রিদ তার সব-ই করেছে। তারা একাধিক ট্রায়াল, ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, বৈঠক আয়োজন করার পাশাপাশি সে সময়কার ম্যানেজার জিনেদিন জিদান ও এমবাপ্পের আইডল রোনালদোর সঙ্গেও সাক্ষাতের আয়োজন করে। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে নেয়ার জন্য তারা সবরকম প্রস্তুাবই দিয়েছে। তাদের সেই প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আগস্ট ২০১৭’তে এক মৌসুমের জন্য ধারে পিএসজিতে যোগ দেন এমবাপ্পে। তার পরের বছর ১৩ কোটি ইউরোতে পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর থেকে পাঁচ মৌসুম খেলে দলকে চারটি লীগ শিরোপা জেতান।
এর পরের অংশটা ইতিহাস, আর তা সবারই জানা। দুই হাজার আঠারো বিশ্বকাপ বিজয়ী এমবাপের স্বপ্ন ছিল শুধু ফুটবল খেলা, তার চালিকাশক্তি ছিল ফুটবলের জন্য তার ভালোবাসা।
কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্ম প্যারিসের উত্তরের ছোট্ট শহরতলি বন্ডিতে। স্থানীয় ফুটবল ক্লাব বন্ডি এফসির মাঠের কাছে দরিদ্র পরিবারদের জন্য নির্ধারিত একটি বাড়িতে থাকতেন কিলিয়ান, তার বাবা উইলফ্রিয়েড, মা ফায়জা ও তার দত্তক নেয়া ভাই জিরেস কেম্বো-একোকো। বাড়ির সামনে একটা রাস্তা পার করলেই ছিল মাঠ, আর সেখানে কিলিয়ান তার বন্ধুদের সঙ্গে সারাদিন খেলতেন। তার বাবা স্থানীয় বিভিন্ন দলের কোচ ছিলেন, ফলে সেখানকার ফুটবল অঙ্গনে বেশ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো।
তার ছেলেও ফুটবল ছাড়া আর কোন কিছুতেই আগ্রহী ছিল না। কিলিয়ানের সব চিন্তাভাবনা ছিল ফুটবল ও তার বাবার দলকে ঘিরে। তার পরিবারের সবাই এক অর্থে ছিল ফুটবল পাগল।
টেলিভিশনে খেলা দেখা থেকে শুরু করে স্কুলের ফুটবল টিম বা বন্ডিতে কোন ফুটবল টিমে খেলাই ছিল কিলিয়ান ও তার পরিবারের একমাত্র চিন্তার বিষয়।
এমবাপ্পে ফুটবল শুধু খেলতোই না, তার শ্বাস-প্রশ্বাসে, শয়নে-স্বপনে ছিল ফুটবল। অনেক আগে থেকেই এটা পরিষ্কার ছিল যে ফুটবলে তরুণ কিলিয়ানের বিশেষ প্রতিভা রয়েছে। তার বয়স যখন ১০, তখনই প্যারিস এবং আশেপাশের মানুষের মুখে মুখে ছিল বন্ডি অঞ্চলের আসন্ন এক ফুটবল মহাতারকার গল্প।
ফরাসি প্রিমিয়ার লীগের পাশাপাশি ইউরোপের বড় বড় সব ক্লাবের স্কাউটরা তাদের ক্লাবকে জানান দেয় এই প্রতিভার আগমন সম্পর্কে।
এমবাপ্পে পরিবারের পরিকল্পনা অবশ্য পরিষ্কার ছিল। তারা একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল যে কিলিয়ান তার পরবর্তী কয়েক বছর ফ্রান্সেই কাটাবেন, তবে তারা চাইছিলেন কিলিয়ান যেন সেরাদের সঙ্গে খেলার মধ্যে থাকেন।
তাই তারা ইংলিশ ক্লাব চেলসির প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এগারো বছর বয়সে কিলিয়ান এক সপ্তাহের জন্য চেলসিতে ট্রেনিং করেন। তার বয়স যখন ১২ তখন রেয়াল মাদ্রিদেও এক সপ্তাহ ট্রেনিং করেন তিনি। দুই ইউরোপিয়ান জায়ান্টই কিলিয়ান ও তার বাবা-মাকে লন্ডন অথবা স্পেনে এসে থাকতে রাজি করাতে চেয়েছিল, যার জন্য তারা যেকোন অঙ্কের অর্থ খরচ করতেও প্রস্তুত ছিল।
কিন্তু এমবাপ্পে পরিবার শুধু চেয়েছিল তাদের ছেলের পরীক্ষা নিতে। কিলিয়ান যেখানেই গিয়েছে, সেখানেই সে সবার সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে
এমনকি ক্লেয়ারফঁতে অ্যাকাডেমিতেও, যেটিকে প্যারিসের তরুণ খেলোয়াড়দের সবচেয়ে অভিজাত অ্যাকাডেমি মনে করা হয়। সেখানে শত শত ১৩-বছর বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর দু’বছর থাকতে হয় এবং সপ্তাহের ছুটির দিনে খেলোয়াড়রা তৃণমূলের কোন ক্লাব বা পেশাদার ক্লাবের হয়ে ম্যাচ খেলে থাকেন।
এমবাপ্পেকে দলে নেয়ার জন্য অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখায়, কিন্তু অ্যাকাডেমির অন্য সতীর্থদের মতো কোন ক্লাবে যোগ না দিয়ে তিনি ক্লেয়ারফতেতে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
ফরাসি ক্লাব ধরেই নিয়েছিল যে তারা কিলিয়ানকে পেয়ে গেছে। তবে কিলিয়ান পছন্দ করে মোনাকোকে, কারণ মোনাকো তাকে বলেছিল যে সে মূল দলে খেলতে পারবে।
সে সময় কিলিয়ানের বয়স ছিল ১৫ এবং তার স্বপ্ন ছিল শুধু ফুটবল খেলা। ফুটবলের জন্য তার আবেগ ছিল তুলনাহীন।
মোনাকো অ্যাকাডেমিতে যুব দলের হয়ে যখন তিনি নিয়মিত খেলছিলেন, তখনই তার আইডল রোনালদোর মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। তার পরিবারও তার সঙ্গে মোনাকোতে চলে আসে এবং সেখানেই থাকতে শুরু করে।
তাই এমবাপ্পের সাফল্যের রহস্য বুঝতে তার পরিবারকে বোঝাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরিবার হিসেবে তারা সব কাজ একসঙ্গে করে থাকেন।
এমবাপ্পে পরিবারের যখন মনে হয় যে প্রশিক্ষণে ভালো পারফর্ম করার পরও কিলিয়ানকে প্রথম একাদশে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না, তখন তারা প্রতিবাদ করে।
ফলস্বরূপ মোনাকোর কোচ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কিলিয়ানকে অভিষেকের সুযোগ করে দেন।
১৬ বছর ৩৪৭ দিন বয়সে মোনাকোতে খেলে মোনাকোর কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসি ফরোয়ার্ড থিয়েরি অঁরির রেকর্ড ভাঙেন এমবাপ্পে। ফেব্রুয়ারি ২০১৬তে ট্রয়ের বিপক্ষে গোল করে ১৭ বছর ৬২ দিন বয়সে মোনাকোর কনিষ্ঠতম গোলস্কোরার হিসেবেও অঁরির রেকর্ড ভাঙেন তিনি।
তারপর থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে আর কিছুই থামাতে পারেনি।
আর তার সেই ভালোবাসাকে লালন করে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পেছনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল তার পরিবারের।
রোববার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২
পঁচিশে মার্চ ২০১৭’তে স্পেনের বিপক্ষে ফ্রান্সের হয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের প্রথম ম্যাচ খেলার কয়েক মাসের মধ্যেই ফ্রান্সের হয়ে প্রথম গোল করেন। তাকে দলে নেয়ার জন্য যা করা দরকার, রিয়াল মাদ্রিদ তার সব-ই করেছে। তারা একাধিক ট্রায়াল, ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, বৈঠক আয়োজন করার পাশাপাশি সে সময়কার ম্যানেজার জিনেদিন জিদান ও এমবাপ্পের আইডল রোনালদোর সঙ্গেও সাক্ষাতের আয়োজন করে। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে নেয়ার জন্য তারা সবরকম প্রস্তুাবই দিয়েছে। তাদের সেই প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আগস্ট ২০১৭’তে এক মৌসুমের জন্য ধারে পিএসজিতে যোগ দেন এমবাপ্পে। তার পরের বছর ১৩ কোটি ইউরোতে পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর থেকে পাঁচ মৌসুম খেলে দলকে চারটি লীগ শিরোপা জেতান।
এর পরের অংশটা ইতিহাস, আর তা সবারই জানা। দুই হাজার আঠারো বিশ্বকাপ বিজয়ী এমবাপের স্বপ্ন ছিল শুধু ফুটবল খেলা, তার চালিকাশক্তি ছিল ফুটবলের জন্য তার ভালোবাসা।
কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্ম প্যারিসের উত্তরের ছোট্ট শহরতলি বন্ডিতে। স্থানীয় ফুটবল ক্লাব বন্ডি এফসির মাঠের কাছে দরিদ্র পরিবারদের জন্য নির্ধারিত একটি বাড়িতে থাকতেন কিলিয়ান, তার বাবা উইলফ্রিয়েড, মা ফায়জা ও তার দত্তক নেয়া ভাই জিরেস কেম্বো-একোকো। বাড়ির সামনে একটা রাস্তা পার করলেই ছিল মাঠ, আর সেখানে কিলিয়ান তার বন্ধুদের সঙ্গে সারাদিন খেলতেন। তার বাবা স্থানীয় বিভিন্ন দলের কোচ ছিলেন, ফলে সেখানকার ফুটবল অঙ্গনে বেশ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো।
তার ছেলেও ফুটবল ছাড়া আর কোন কিছুতেই আগ্রহী ছিল না। কিলিয়ানের সব চিন্তাভাবনা ছিল ফুটবল ও তার বাবার দলকে ঘিরে। তার পরিবারের সবাই এক অর্থে ছিল ফুটবল পাগল।
টেলিভিশনে খেলা দেখা থেকে শুরু করে স্কুলের ফুটবল টিম বা বন্ডিতে কোন ফুটবল টিমে খেলাই ছিল কিলিয়ান ও তার পরিবারের একমাত্র চিন্তার বিষয়।
এমবাপ্পে ফুটবল শুধু খেলতোই না, তার শ্বাস-প্রশ্বাসে, শয়নে-স্বপনে ছিল ফুটবল। অনেক আগে থেকেই এটা পরিষ্কার ছিল যে ফুটবলে তরুণ কিলিয়ানের বিশেষ প্রতিভা রয়েছে। তার বয়স যখন ১০, তখনই প্যারিস এবং আশেপাশের মানুষের মুখে মুখে ছিল বন্ডি অঞ্চলের আসন্ন এক ফুটবল মহাতারকার গল্প।
ফরাসি প্রিমিয়ার লীগের পাশাপাশি ইউরোপের বড় বড় সব ক্লাবের স্কাউটরা তাদের ক্লাবকে জানান দেয় এই প্রতিভার আগমন সম্পর্কে।
এমবাপ্পে পরিবারের পরিকল্পনা অবশ্য পরিষ্কার ছিল। তারা একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল যে কিলিয়ান তার পরবর্তী কয়েক বছর ফ্রান্সেই কাটাবেন, তবে তারা চাইছিলেন কিলিয়ান যেন সেরাদের সঙ্গে খেলার মধ্যে থাকেন।
তাই তারা ইংলিশ ক্লাব চেলসির প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এগারো বছর বয়সে কিলিয়ান এক সপ্তাহের জন্য চেলসিতে ট্রেনিং করেন। তার বয়স যখন ১২ তখন রেয়াল মাদ্রিদেও এক সপ্তাহ ট্রেনিং করেন তিনি। দুই ইউরোপিয়ান জায়ান্টই কিলিয়ান ও তার বাবা-মাকে লন্ডন অথবা স্পেনে এসে থাকতে রাজি করাতে চেয়েছিল, যার জন্য তারা যেকোন অঙ্কের অর্থ খরচ করতেও প্রস্তুত ছিল।
কিন্তু এমবাপ্পে পরিবার শুধু চেয়েছিল তাদের ছেলের পরীক্ষা নিতে। কিলিয়ান যেখানেই গিয়েছে, সেখানেই সে সবার সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে
এমনকি ক্লেয়ারফঁতে অ্যাকাডেমিতেও, যেটিকে প্যারিসের তরুণ খেলোয়াড়দের সবচেয়ে অভিজাত অ্যাকাডেমি মনে করা হয়। সেখানে শত শত ১৩-বছর বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর দু’বছর থাকতে হয় এবং সপ্তাহের ছুটির দিনে খেলোয়াড়রা তৃণমূলের কোন ক্লাব বা পেশাদার ক্লাবের হয়ে ম্যাচ খেলে থাকেন।
এমবাপ্পেকে দলে নেয়ার জন্য অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখায়, কিন্তু অ্যাকাডেমির অন্য সতীর্থদের মতো কোন ক্লাবে যোগ না দিয়ে তিনি ক্লেয়ারফতেতে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ করেন।
ফরাসি ক্লাব ধরেই নিয়েছিল যে তারা কিলিয়ানকে পেয়ে গেছে। তবে কিলিয়ান পছন্দ করে মোনাকোকে, কারণ মোনাকো তাকে বলেছিল যে সে মূল দলে খেলতে পারবে।
সে সময় কিলিয়ানের বয়স ছিল ১৫ এবং তার স্বপ্ন ছিল শুধু ফুটবল খেলা। ফুটবলের জন্য তার আবেগ ছিল তুলনাহীন।
মোনাকো অ্যাকাডেমিতে যুব দলের হয়ে যখন তিনি নিয়মিত খেলছিলেন, তখনই তার আইডল রোনালদোর মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। তার পরিবারও তার সঙ্গে মোনাকোতে চলে আসে এবং সেখানেই থাকতে শুরু করে।
তাই এমবাপ্পের সাফল্যের রহস্য বুঝতে তার পরিবারকে বোঝাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরিবার হিসেবে তারা সব কাজ একসঙ্গে করে থাকেন।
এমবাপ্পে পরিবারের যখন মনে হয় যে প্রশিক্ষণে ভালো পারফর্ম করার পরও কিলিয়ানকে প্রথম একাদশে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না, তখন তারা প্রতিবাদ করে।
ফলস্বরূপ মোনাকোর কোচ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কিলিয়ানকে অভিষেকের সুযোগ করে দেন।
১৬ বছর ৩৪৭ দিন বয়সে মোনাকোতে খেলে মোনাকোর কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসি ফরোয়ার্ড থিয়েরি অঁরির রেকর্ড ভাঙেন এমবাপ্পে। ফেব্রুয়ারি ২০১৬তে ট্রয়ের বিপক্ষে গোল করে ১৭ বছর ৬২ দিন বয়সে মোনাকোর কনিষ্ঠতম গোলস্কোরার হিসেবেও অঁরির রেকর্ড ভাঙেন তিনি।
তারপর থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে আর কিছুই থামাতে পারেনি।
আর তার সেই ভালোবাসাকে লালন করে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পেছনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল তার পরিবারের।