অবশেষে সেই বিশ্বকাপ হাতে ধরা দিলো আর্জেন্টিনার হাতে। শেষ হলো ছত্রিশ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার।
দিয়েগো মারাদোনার সেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর এবার ছত্রিশ বছরের লিওনেল মেসির হাত ধরে বিশ বাইশের কাতার বিশ্বকাপের রূপকথা লিখলো আর্জেন্টিনা।
নানা নাকীয়তা এবং রেকর্ডের ভরপুর বিশ্বকাপ ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ান ফ্রান্সকে ট্রাইব্রেকারে ৪:২ গোলে হারিয়ে এই শিরোপা জিতে নেয় ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি।
ফলে এশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বকাপটিও দখলে গেলো একই মহাদেশে। ২০০২ সালে আগেরবার এশিয়ার বিশ্বকাপ ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিল পঞ্চম শিরোপা নেয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব মুকুটের আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল ইউরোপের দেশগুলো।
ইতালির চতুর্থ,স্পেনের প্রথম আর জার্মানি চতুর্থ ও ফ্রান্সের দ্বিতীয়। রোববার কাতারের লুসেল স্টেডিয়ামে ইউরোপের টানা জয়ের ইতি ঘটিয়েছে তৃতীয় শিরোপা জয়ের মধ্যদিয়ে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
দোহার লুসেল স্টেডিয়াম, সাক্ষী থাকল বিশ্বকাপের ইতিহাসের রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনালের। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা যতবারই এগিয়েছে ততই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। যে পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই ছন্দে ছিল, তবে আজ ম্যাচের শেষ সময়ে জ্বলে উঠার আগে অনেকটাই নিষ্প্রাণ ছিলেন এমবাপ্পে।
ফাইনালের পুরো প্রথমার্ধে তথা শুরু থেকে দারুণ সব আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণভাগের পরীক্ষা নিচ্ছিল মেসিরা। ২১তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে আলভারেসের পাওয়া বল বক্স থেকে বাইলাইন দিয়ে শট নিতে যাওয়ার মুহূর্তে ওসমান দেম্বেলের ফাউলের শিকার হন ডি মারিয়া। আর তাতেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিকে আর্জেন্টিনাকে প্রথম লিড এনে দিতে ভুল করেননি মেসি।
প্রথম গোলের পর ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সের উপমেকানোর ভুলে নিজেদের অর্ধে বল পায় মেসি। দারুণ দক্ষতায় মাক আলিস্তারকে বল বাড়ান তিনি। টেনে নিয়ে বক্সে আলিস্তার নিখুঁত পাস দেন ডি মারিয়াকে। দুর্দান্ত এক শটে গোলরক্ষক লরিসকে পরাস্ত করে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে এগিয়ে নেন ডি মারিয়া। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর কোনো গোল না হলে ২-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় মেসিরা।
শুরুতেই দেয়া দুই গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। নিষ্প্রাণ খেলা চলছিল। ম্যাচের দুই তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহিত হলেও ফ্রান্সের পারফরম্যান্সে শুরু হচ্ছিল তুমুল সমালোচনার ঝড়। খেলাও শেষ সময়ে। শেষ দশ মিনিটের খেলা শুরু হতেই হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যায় মাঠের।
পরপর দুই মিনিটে এমবাপ্পের জোড়া গোলে নাটকীয়ভাবে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধের ৮০ মিনিটে বদলে যায় ম্যাচের মোড়। পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল করেন এমবাপে। মিনিটখানেকের মধ্যে তার দ্বিতীয় গোল। এরপর ম্যাচ গড়িয়েছে পেন্ডুলামের মতো।
নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ২-২ ছিল। অতিরিক্ত সময়ে মেসি ও এমবাপে দু’জনের পায়ে গোল আসে। কাতার আসরের সর্বোচ্চ গোল দাতার দখল একবার নেন মেসি। আবার দখলে চলে যায় এমবাপ্পের হাতে।
নির্ধারিত সময়ে সমতা ফেরার দুই গোলে সর্বোচ্চ ৭ গোলের মালিক হোন এমবাপ্পে। ইনজুরি টাইমের প্রথম ১৫ মিনিট কোনও গোল না হলেও পরের মিনিটে দুর্দান্ত গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামা লিওনেল মেসি। তখন সর্বোচ্চ ৭ গোল ও সহায়তার বিবেচনায় এগিয়ে যায় মেসি। ম্যাচের তখন ১০৮ মিনিট।
৩-২ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। আবার স্বরূপে ফেরে আর্জেন্টিনা। গতি বাড়ায় ফ্রান্সও। খেলায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। অতিরিক্ত টাইমেরও প্রায় শেষ। আবার নাটকীয়তা। সেই এমবাপ্পে। ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ ফাইনালের হেট্রিক। গোল্ডেন বোটে অধরা থাকা মেসিকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলে তথা অষ্টম গোলের নাম লিখান এমবাপ্পে। এ গোলেই ম্যাচে আবারও জিবন পায় বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানরা। অতিরিক্ত মিনিটের দ্বিতীয়ার্ধের মেসির দ্বিতীয়গোলের গোলের দশ পর ম্যাচের ১১৮ মিনিটে এমবাপ্পের তৃতীয় গোলে স্কোর দাঁড়ায় ৩-৩। সমতায়।
শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সাল জার্মানি বিশ্বকাপের পর আবারও শিরোপা নির্ধারণে টাইব্রেকারে গড়াল। সেই বিশ্বকাপে ট্রাইবেকারে হাসা দল ইতালী এবার বাছাই পর্বেই বাদ পড়েছে, তাদের সমান চারবারের চ্যাম্পিয়ান জামানি গ্রুপ পর্বে বিদায় নিয়েছে কাতার থেকো। নকআউট পর্বের শুরুতেই স্পেনের বিদায়। কোয়াটারে ব্রাজিলের বিদায়। শেষমুহুর্তে কাতারের ফাইনাল পরিনত হয় রোমাঞ্চকরে। জিনেদিন জিদানদের পর উত্তেজনাপূর্ণ এবারের ফাইনালেও কাঁদতে হয় ফ্রান্সের এমবাপ্পেদের।
টানা দ্বিতীয় শিরোপা তথা তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলতে না পারলেও ৩৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব উঠলো আর্জেন্টিনার মাথায়। কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা বর্ণময় হয়ে থাকল লিওনেল আন্দ্রেস মেসির। রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনাল শেষে কাপ উঠল ফুটবল ম্যাজিশিয়ানের হাতে।
সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
অবশেষে সেই বিশ্বকাপ হাতে ধরা দিলো আর্জেন্টিনার হাতে। শেষ হলো ছত্রিশ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার।
দিয়েগো মারাদোনার সেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর এবার ছত্রিশ বছরের লিওনেল মেসির হাত ধরে বিশ বাইশের কাতার বিশ্বকাপের রূপকথা লিখলো আর্জেন্টিনা।
নানা নাকীয়তা এবং রেকর্ডের ভরপুর বিশ্বকাপ ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ান ফ্রান্সকে ট্রাইব্রেকারে ৪:২ গোলে হারিয়ে এই শিরোপা জিতে নেয় ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি।
ফলে এশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বকাপটিও দখলে গেলো একই মহাদেশে। ২০০২ সালে আগেরবার এশিয়ার বিশ্বকাপ ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিল পঞ্চম শিরোপা নেয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব মুকুটের আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল ইউরোপের দেশগুলো।
ইতালির চতুর্থ,স্পেনের প্রথম আর জার্মানি চতুর্থ ও ফ্রান্সের দ্বিতীয়। রোববার কাতারের লুসেল স্টেডিয়ামে ইউরোপের টানা জয়ের ইতি ঘটিয়েছে তৃতীয় শিরোপা জয়ের মধ্যদিয়ে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
দোহার লুসেল স্টেডিয়াম, সাক্ষী থাকল বিশ্বকাপের ইতিহাসের রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনালের। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা যতবারই এগিয়েছে ততই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। যে পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই ছন্দে ছিল, তবে আজ ম্যাচের শেষ সময়ে জ্বলে উঠার আগে অনেকটাই নিষ্প্রাণ ছিলেন এমবাপ্পে।
ফাইনালের পুরো প্রথমার্ধে তথা শুরু থেকে দারুণ সব আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণভাগের পরীক্ষা নিচ্ছিল মেসিরা। ২১তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে আলভারেসের পাওয়া বল বক্স থেকে বাইলাইন দিয়ে শট নিতে যাওয়ার মুহূর্তে ওসমান দেম্বেলের ফাউলের শিকার হন ডি মারিয়া। আর তাতেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিকে আর্জেন্টিনাকে প্রথম লিড এনে দিতে ভুল করেননি মেসি।
প্রথম গোলের পর ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সের উপমেকানোর ভুলে নিজেদের অর্ধে বল পায় মেসি। দারুণ দক্ষতায় মাক আলিস্তারকে বল বাড়ান তিনি। টেনে নিয়ে বক্সে আলিস্তার নিখুঁত পাস দেন ডি মারিয়াকে। দুর্দান্ত এক শটে গোলরক্ষক লরিসকে পরাস্ত করে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে এগিয়ে নেন ডি মারিয়া। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর কোনো গোল না হলে ২-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় মেসিরা।
শুরুতেই দেয়া দুই গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। নিষ্প্রাণ খেলা চলছিল। ম্যাচের দুই তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহিত হলেও ফ্রান্সের পারফরম্যান্সে শুরু হচ্ছিল তুমুল সমালোচনার ঝড়। খেলাও শেষ সময়ে। শেষ দশ মিনিটের খেলা শুরু হতেই হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যায় মাঠের।
পরপর দুই মিনিটে এমবাপ্পের জোড়া গোলে নাটকীয়ভাবে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধের ৮০ মিনিটে বদলে যায় ম্যাচের মোড়। পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল করেন এমবাপে। মিনিটখানেকের মধ্যে তার দ্বিতীয় গোল। এরপর ম্যাচ গড়িয়েছে পেন্ডুলামের মতো।
নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ২-২ ছিল। অতিরিক্ত সময়ে মেসি ও এমবাপে দু’জনের পায়ে গোল আসে। কাতার আসরের সর্বোচ্চ গোল দাতার দখল একবার নেন মেসি। আবার দখলে চলে যায় এমবাপ্পের হাতে।
নির্ধারিত সময়ে সমতা ফেরার দুই গোলে সর্বোচ্চ ৭ গোলের মালিক হোন এমবাপ্পে। ইনজুরি টাইমের প্রথম ১৫ মিনিট কোনও গোল না হলেও পরের মিনিটে দুর্দান্ত গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নামা লিওনেল মেসি। তখন সর্বোচ্চ ৭ গোল ও সহায়তার বিবেচনায় এগিয়ে যায় মেসি। ম্যাচের তখন ১০৮ মিনিট।
৩-২ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। আবার স্বরূপে ফেরে আর্জেন্টিনা। গতি বাড়ায় ফ্রান্সও। খেলায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। অতিরিক্ত টাইমেরও প্রায় শেষ। আবার নাটকীয়তা। সেই এমবাপ্পে। ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ ফাইনালের হেট্রিক। গোল্ডেন বোটে অধরা থাকা মেসিকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলে তথা অষ্টম গোলের নাম লিখান এমবাপ্পে। এ গোলেই ম্যাচে আবারও জিবন পায় বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানরা। অতিরিক্ত মিনিটের দ্বিতীয়ার্ধের মেসির দ্বিতীয়গোলের গোলের দশ পর ম্যাচের ১১৮ মিনিটে এমবাপ্পের তৃতীয় গোলে স্কোর দাঁড়ায় ৩-৩। সমতায়।
শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সাল জার্মানি বিশ্বকাপের পর আবারও শিরোপা নির্ধারণে টাইব্রেকারে গড়াল। সেই বিশ্বকাপে ট্রাইবেকারে হাসা দল ইতালী এবার বাছাই পর্বেই বাদ পড়েছে, তাদের সমান চারবারের চ্যাম্পিয়ান জামানি গ্রুপ পর্বে বিদায় নিয়েছে কাতার থেকো। নকআউট পর্বের শুরুতেই স্পেনের বিদায়। কোয়াটারে ব্রাজিলের বিদায়। শেষমুহুর্তে কাতারের ফাইনাল পরিনত হয় রোমাঞ্চকরে। জিনেদিন জিদানদের পর উত্তেজনাপূর্ণ এবারের ফাইনালেও কাঁদতে হয় ফ্রান্সের এমবাপ্পেদের।
টানা দ্বিতীয় শিরোপা তথা তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলতে না পারলেও ৩৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব উঠলো আর্জেন্টিনার মাথায়। কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপটা বর্ণময় হয়ে থাকল লিওনেল আন্দ্রেস মেসির। রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনাল শেষে কাপ উঠল ফুটবল ম্যাজিশিয়ানের হাতে।