বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্ক এক গভীর সমস্যা। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা একটি স্থায়ী ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যাবস্থার অন্যতম দুর্বলতা। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা, বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা আর নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক নিয়মিত ঘটনা। এসব কারণে দেশ প্রায়ই রাজনৈতিক সংকটে পড়ে। আর এসব সংকটই আমাদের বারবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে দেশে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরেছে। যদিও এটি কার্যকর হবে এবার নয়, এর পরের নির্বাচনে।
সুস্থ গণতন্ত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় না। পৃথিবীর যেসব দেশে এই ব্যাবস্থা সেখানে কোথাও টেকসই গণতন্ত্র নেই। স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতা হস্তান্তর বা নির্দলীয় সরকারের দরকার পড়ে না। কারণ সেখানে সরকার ও বিরোধী-দুই পক্ষই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত, আর রাষ্ট্রযন্ত্র দলবদলে নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র দুর্বল, অনাস্থা বেশি, সেসব দেশে বিকল্প পদ্ধতির প্রয়োজন দেখা দেয়।
লক্ষণীয়, আওয়ামী লীগ একসময় এই ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করেছে। পরে ক্ষমতায় এসে এটি বাতিল করেছে। এখন ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে গ্রহণযোগ্য মনে করছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশ চারটি তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পেয়েছে। কিন্তু সেসব নির্বাচনের ফলও পরাজিত দল বা তাদের সমর্থকরা মেনে নেয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এসেছে। আমরা সতর্কতার সাথে একে স্বাগত জানাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানো মূলত নির্বাচন নিয়ে মানুষের আস্থার সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটি উপায়। তবে এটিকে চূড়ান্ত সমাধান বলা যায় না। এই ব্যবস্থা যেন নতুন কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি না করে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ অতীতে এ ব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা ছিল। অনেকে মনে করেন, ১/১১’র সৃষ্টি হয়েছিল এই ব্যবস্থার দুর্বলতার ফাঁকফোকর দিয়ে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো পক্ষ এই ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা দখল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিচারবিভাগকে সরাসরি এই ব্যবস্থার সঙ্গে না জড়ানোই ভালো।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন পড়বে না। গণতন্ত্রের আসল শক্তি এখানেই। সে জন্য দরকার শক্তিশালী, নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রোববার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্ক এক গভীর সমস্যা। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা একটি স্থায়ী ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। এটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যাবস্থার অন্যতম দুর্বলতা। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা, বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা আর নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক নিয়মিত ঘটনা। এসব কারণে দেশ প্রায়ই রাজনৈতিক সংকটে পড়ে। আর এসব সংকটই আমাদের বারবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে দেশে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরেছে। যদিও এটি কার্যকর হবে এবার নয়, এর পরের নির্বাচনে।
সুস্থ গণতন্ত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় না। পৃথিবীর যেসব দেশে এই ব্যাবস্থা সেখানে কোথাও টেকসই গণতন্ত্র নেই। স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতা হস্তান্তর বা নির্দলীয় সরকারের দরকার পড়ে না। কারণ সেখানে সরকার ও বিরোধী-দুই পক্ষই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত, আর রাষ্ট্রযন্ত্র দলবদলে নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র দুর্বল, অনাস্থা বেশি, সেসব দেশে বিকল্প পদ্ধতির প্রয়োজন দেখা দেয়।
লক্ষণীয়, আওয়ামী লীগ একসময় এই ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করেছে। পরে ক্ষমতায় এসে এটি বাতিল করেছে। এখন ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে গ্রহণযোগ্য মনে করছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশ চারটি তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পেয়েছে। কিন্তু সেসব নির্বাচনের ফলও পরাজিত দল বা তাদের সমর্থকরা মেনে নেয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এসেছে। আমরা সতর্কতার সাথে একে স্বাগত জানাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানো মূলত নির্বাচন নিয়ে মানুষের আস্থার সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একটি উপায়। তবে এটিকে চূড়ান্ত সমাধান বলা যায় না। এই ব্যবস্থা যেন নতুন কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি না করে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ অতীতে এ ব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা ছিল। অনেকে মনে করেন, ১/১১’র সৃষ্টি হয়েছিল এই ব্যবস্থার দুর্বলতার ফাঁকফোকর দিয়ে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো পক্ষ এই ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা দখল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিচারবিভাগকে সরাসরি এই ব্যবস্থার সঙ্গে না জড়ানোই ভালো।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন পড়বে না। গণতন্ত্রের আসল শক্তি এখানেই। সে জন্য দরকার শক্তিশালী, নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা।