অ্যান্টিবায়োটিক একসময় ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের ‘বিস্ময়’। অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে যে, এই ‘বিস্ময়’ ধীরে ধীরে রোগ নিরাময়ের শক্তি হারাচ্ছে। আইইডিসিআর জানিয়েছে, দেশের আইসিইউতে ভর্তি ৪১ শতাংশ রোগীর শরীরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করছে না।
গত এক বছরে ৯৬ হাজারের বেশি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। কিছু ওষুধে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও সামগ্রিক চিত্র ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতা নয়, নাগরিকদের অভ্যাসগত ভুলেরও প্রতিফলন। সামান্য জ্বর-সর্দিতেই মানুষ নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় না। আবার অনেক চিকিৎসকও অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখে থাকেন। সব মিলিয়ে রোগ প্রতিরোধী অণুজীবগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে প্যান-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্স। অর্থাৎ একটি রোগের জন্য ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধই ওই অণুজীবের ওপর ব্যর্থ। আইসিইউতে এই হার ৪১ শতাংশ। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে এমন দেশেও এ ধরনের পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে বিবেচিত হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এটি বড় জনস্বাস্থ্য দুর্যোগের পূর্বাভাস।
ঢাকায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি। সারা দেশে যত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় তার ৫৭ শতাংশ ব্যবহৃত হয় রাজধানীতে। গবষেণায় জানা যাচ্ছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি। কারণ সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই তুলনাই প্রমাণ করে যে নিয়ম মেনে ওষুধ ব্যবহার করলে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর থাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র কী করছে? অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কঠোর জাতীয় নীতিমালা এখনো কার্যকর হয়নি। ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ হয়নি। জনসচেতনতা এখনো সীমিত। এভাবে চললে আগামী এক দশকে আমরা এমন এক চিকিৎসা-সংকটের মুখে দাঁড়াব, যেখানে সাধারণ সংক্রমণেও হয়তো কার্যকর ওষুধ পাওয়া যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে কঠোরভাবে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের গাইডলাইন অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি। পাশাপাশি গবেষণা ও নজরদারি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
অ্যান্টিবায়োটিক একসময় ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের ‘বিস্ময়’। অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে যে, এই ‘বিস্ময়’ ধীরে ধীরে রোগ নিরাময়ের শক্তি হারাচ্ছে। আইইডিসিআর জানিয়েছে, দেশের আইসিইউতে ভর্তি ৪১ শতাংশ রোগীর শরীরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করছে না।
গত এক বছরে ৯৬ হাজারের বেশি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। কিছু ওষুধে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও সামগ্রিক চিত্র ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতা নয়, নাগরিকদের অভ্যাসগত ভুলেরও প্রতিফলন। সামান্য জ্বর-সর্দিতেই মানুষ নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় না। আবার অনেক চিকিৎসকও অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখে থাকেন। সব মিলিয়ে রোগ প্রতিরোধী অণুজীবগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে প্যান-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্স। অর্থাৎ একটি রোগের জন্য ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধই ওই অণুজীবের ওপর ব্যর্থ। আইসিইউতে এই হার ৪১ শতাংশ। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে এমন দেশেও এ ধরনের পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে বিবেচিত হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এটি বড় জনস্বাস্থ্য দুর্যোগের পূর্বাভাস।
ঢাকায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি। সারা দেশে যত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয় তার ৫৭ শতাংশ ব্যবহৃত হয় রাজধানীতে। গবষেণায় জানা যাচ্ছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা তুলনামূলক বেশি। কারণ সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই তুলনাই প্রমাণ করে যে নিয়ম মেনে ওষুধ ব্যবহার করলে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর থাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র কী করছে? অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কঠোর জাতীয় নীতিমালা এখনো কার্যকর হয়নি। ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ হয়নি। জনসচেতনতা এখনো সীমিত। এভাবে চললে আগামী এক দশকে আমরা এমন এক চিকিৎসা-সংকটের মুখে দাঁড়াব, যেখানে সাধারণ সংক্রমণেও হয়তো কার্যকর ওষুধ পাওয়া যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে হবে কঠোরভাবে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের গাইডলাইন অনুসরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি। পাশাপাশি গবেষণা ও নজরদারি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।