মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
মানুষের কাছে দয়ার সাগর উপাধি পাওয়া শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিবিসির জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গদ্যকার। বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় তার আগমনের বহুপূর্বেই গদ্যরচনার সূত্রপাত ঘটেছিল। তবুও তাকেই বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গদ্যকার হিসেবে মনে করা হয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পূর্বে যে সবাই গদ্য রচিত হয়েছিল, সেইসব গদ্য ছিল শিল্পগুণবিবর্জিত নীরস এবং অনেক ক্ষেত্রেই অসংলগ্ন বাক্যসমষ্টি। বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেন। পয়োজনবোধে সেই গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতাও যুক্ত করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা আধুনিক গদ্যের জনক। বাংলা গদ্যের শিল্পরূপটি ঠিক কি রকম হতে পারে, তার প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল, সংস্কৃত সাহিত্য থেকে অনূদিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাংলা রচনাগুলোতে।
বিদ্যাসাগর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনেন কলেজের পাঠ্যক্রমে। পূর্বে ব্যাকরণ এবং বীজগণিত ও গণিত শেখানো হতো সংস্কৃতে, কিন্তু তিনি সংস্কৃতের বদলে ব্যাকরণ বাংলার মাধ্যমে এবং গণিত ইংরেজির মাধ্যমে পড়ানোর নিয়ম চালু করেন।
ইংরেজি ভাষা শেখাকে তিনি বাধ্যতামূলক করেন এবং ইংরেজি বিভাগকে উন্নত করেন। বাংলা শিক্ষার ওপরও তিনি জোর দেন। তবে তারচেয়ে ব্যাপক পরিবর্তন করেন দর্শন পাঠ্যক্রমে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেবল পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে নয়, বরং তার অন্যান্য রচনা দিয়েও বাংলা গদ্যের সংস্কার এবং তার মান উন্নত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতগণ এবং রামমোহন রায় যে বাংলা গদ্যরীতি নির্মাণ করেছিলেন, তা ছিল আড়ষ্ট, কৃত্রিম এবং কোনোমতে ভাব প্রকাশের উপযোগী। তার আগেকার গদ্যে তথ্য প্রকাশের মতো শব্দাবলী ছিল কিন্তু তাতে এমন সৌন্দর্য, সাবলীলতা এবং গতির স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না, যাকে সাহিত্যিক গদ্য বলা যায় বা যা দিয়ে সাহিত্য রচনা করা যায়।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘জ্ঞান ও মনীষার জন্য ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি তিনি তার শিক্ষকদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন; কিন্তু তার সাধারণ দেশবাসী তাকে আরেকটি উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘দয়ার সাগর’ নামেই পরিচিত। ’ এই উপাধি যে নিছকই শুধু উপাধি নয়, সেটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুনীতিকুমার জানিয়েছিলেন, ‘এই একটি উপাধির মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের মস্ত বড় একটি দিক উদ্ঘাটিত হয়েছে। একদিকে তিনি সুপন্ডি ও শিক্ষাব্রতী, তার যুক্তিবাদী মননের ঔজ্জ্বল্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রত্যেকটি আন্দোলনের পুরোভাগে এসে দাঁড়িয়েছেন, অন্যদিকে তার হৃদয় দুস্থ মানবতার জন্য করুণায় বিগলিত। ’
এস ডি সুব্রত
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মানুষের কাছে দয়ার সাগর উপাধি পাওয়া শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিবিসির জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গদ্যকার। বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় তার আগমনের বহুপূর্বেই গদ্যরচনার সূত্রপাত ঘটেছিল। তবুও তাকেই বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক গদ্যকার হিসেবে মনে করা হয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পূর্বে যে সবাই গদ্য রচিত হয়েছিল, সেইসব গদ্য ছিল শিল্পগুণবিবর্জিত নীরস এবং অনেক ক্ষেত্রেই অসংলগ্ন বাক্যসমষ্টি। বিদ্যাসাগর সর্বপ্রথম বাংলা সাধু গদ্যের একটি মান্য ধ্রুবক নির্দেশনা করেন। পয়োজনবোধে সেই গদ্যে চলিত ভাষার গতিশীলতাও যুক্ত করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা আধুনিক গদ্যের জনক। বাংলা গদ্যের শিল্পরূপটি ঠিক কি রকম হতে পারে, তার প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল, সংস্কৃত সাহিত্য থেকে অনূদিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাংলা রচনাগুলোতে।
বিদ্যাসাগর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনেন কলেজের পাঠ্যক্রমে। পূর্বে ব্যাকরণ এবং বীজগণিত ও গণিত শেখানো হতো সংস্কৃতে, কিন্তু তিনি সংস্কৃতের বদলে ব্যাকরণ বাংলার মাধ্যমে এবং গণিত ইংরেজির মাধ্যমে পড়ানোর নিয়ম চালু করেন।
ইংরেজি ভাষা শেখাকে তিনি বাধ্যতামূলক করেন এবং ইংরেজি বিভাগকে উন্নত করেন। বাংলা শিক্ষার ওপরও তিনি জোর দেন। তবে তারচেয়ে ব্যাপক পরিবর্তন করেন দর্শন পাঠ্যক্রমে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেবল পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে নয়, বরং তার অন্যান্য রচনা দিয়েও বাংলা গদ্যের সংস্কার এবং তার মান উন্নত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতগণ এবং রামমোহন রায় যে বাংলা গদ্যরীতি নির্মাণ করেছিলেন, তা ছিল আড়ষ্ট, কৃত্রিম এবং কোনোমতে ভাব প্রকাশের উপযোগী। তার আগেকার গদ্যে তথ্য প্রকাশের মতো শব্দাবলী ছিল কিন্তু তাতে এমন সৌন্দর্য, সাবলীলতা এবং গতির স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না, যাকে সাহিত্যিক গদ্য বলা যায় বা যা দিয়ে সাহিত্য রচনা করা যায়।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘জ্ঞান ও মনীষার জন্য ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি তিনি তার শিক্ষকদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন; কিন্তু তার সাধারণ দেশবাসী তাকে আরেকটি উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘দয়ার সাগর’ নামেই পরিচিত। ’ এই উপাধি যে নিছকই শুধু উপাধি নয়, সেটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুনীতিকুমার জানিয়েছিলেন, ‘এই একটি উপাধির মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের মস্ত বড় একটি দিক উদ্ঘাটিত হয়েছে। একদিকে তিনি সুপন্ডি ও শিক্ষাব্রতী, তার যুক্তিবাদী মননের ঔজ্জ্বল্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রত্যেকটি আন্দোলনের পুরোভাগে এসে দাঁড়িয়েছেন, অন্যদিকে তার হৃদয় দুস্থ মানবতার জন্য করুণায় বিগলিত। ’
এস ডি সুব্রত