মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। এখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর আত্মসচেতনতার অভাব ও স্থানীয় প্রশাসনের আইন প্রয়োগে শৈথিল্য এ জন্য অনেকাংশে দায়ী। ক্রমাগত পরিবেশ-প্রতিবেশ বিরুদ্ধ নানা বিধ্বংসী কর্মকান্ডে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য বনভূমিগুলো এখন ক্ষতবিক্ষত।
কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে বন্যপ্রাণীদের আবাস স্থল। ফলে দিশেহারা প্রাণিকুল লোকালয়ে ঢুকে বেঘোরে মরছে। আবার ওৎ পাতা ধূর্তশিকারির দল বিরল প্রজাতির জীবজন্তু বাইরে করছে পাচার। এজন্য চিরতরে হারিয়ে গেছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ এ বলা হয়েছে অনুমতি ছাড়া যে কোন ধরনের বন্য প্রাণী হত্যা ও বিক্রি নিষিদ্ধ।
পার্বত্যাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা, পাহাড় ও ধানি জমির টপসয়েলনিধন, বন উজাড় করে গাছপালাসহ মূল্যবান উদ্ভিদ পাচার, যত্রতত্র জলাশয় ভরাটের পাশাপাশি ক্ষতিকর তামাক, কাসাবা ও জুমচাষসহ অন্যান্য ফসলের অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ পদ্বতি প্রভৃতি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্যধ্বংসের জন্য বহুলাংশে দায়ী।
গত কয়েক বছরে অসংখ্য পুকুর জলাশয় ভরাট করে বাড়িঘর, দোকানপাট ও বানিজ্যিক পট তৈরি হয়েছে। পাহাড়-টিলা সাবাড় হয়েছে কয়েক শ। জুম চাষের নামে পাহাড়ি টিলা, উপত্যকা জ্বলছে অবিরত। পরিবেশ দূষণসহধ্বংস হয়েছে বন্য প্রাণীদের আশ্রয়স্থল। আগুনে পুড়ে মরছে পরিবেশ বান্ধব অযুত জীবজন্তু, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ।
পরিবেশ বিপর্যয়ের আরও ধরন, অবৈধ বালুমহালগুলোয়ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলিত বালু ভর্তি ট্রাকের দাপটে নদী তীর, খাল বিল ছড়াসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আজ ধ্বংসের মুখে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমনিতেইসুপেয় পানির উৎস কম। নৃগোষ্ঠী ও প্রান্তিক শ্রেণির জনগণ বহুকাল ধরে ডোবা নালা ঝিরি ঝরনার পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত। বালু ও পাথর উত্তোলন করায় বহু প্রাকৃতিক জলাশয় শুকিয়ে গেছে। ফলে পানির কষ্টে ভুগছেন এখানে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ।
সরকারি উদ্যোগেও অনেক সময় পাহাড়ের গঠন ও বিন্যাস বিবেচনায় না নিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি-সংস্কার ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে পাহাড় কাটা হয়। মনে রাখতে হবে সমতল ও পার্বত্যাঞ্চলের মাটির মধ্যে পার্থক্য আছে। গবেষকদের মতে, বালুমাটি, বালু ও মাটি মিশ্রিত এবং কাদা এ তিন বৈশিষ্টের মাটির সংমিশ্রণে পাহাড়-টিলা গঠিত। এসব বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিচেনায় নিতে হবে। তবেই যদি রক্ষা পায় মানব সভ্যতার ধারক-বাহক এই প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
বিধ্বংসী কর্মকান্ড বন্ধ না হলে প্রকৃতির ভয়ংকর প্রতিশোধের শিকার হবে আগামী প্রজন্ম। এ করুণ পরিণতি দেখতে হয়ত বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। নিকট অতীতে পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ব্যাপকতা দেখেছি। তবুও বোধোদয় নেই। এ অপরিণামদর্শিতার মাশুল গুনতে হবে অতীতের চেয়ে বহুগুণ বেশি। সুদূরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে আমাদের।
শ্যামল রুদ্র
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। এখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর আত্মসচেতনতার অভাব ও স্থানীয় প্রশাসনের আইন প্রয়োগে শৈথিল্য এ জন্য অনেকাংশে দায়ী। ক্রমাগত পরিবেশ-প্রতিবেশ বিরুদ্ধ নানা বিধ্বংসী কর্মকান্ডে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য বনভূমিগুলো এখন ক্ষতবিক্ষত।
কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে বন্যপ্রাণীদের আবাস স্থল। ফলে দিশেহারা প্রাণিকুল লোকালয়ে ঢুকে বেঘোরে মরছে। আবার ওৎ পাতা ধূর্তশিকারির দল বিরল প্রজাতির জীবজন্তু বাইরে করছে পাচার। এজন্য চিরতরে হারিয়ে গেছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ এ বলা হয়েছে অনুমতি ছাড়া যে কোন ধরনের বন্য প্রাণী হত্যা ও বিক্রি নিষিদ্ধ।
পার্বত্যাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা, পাহাড় ও ধানি জমির টপসয়েলনিধন, বন উজাড় করে গাছপালাসহ মূল্যবান উদ্ভিদ পাচার, যত্রতত্র জলাশয় ভরাটের পাশাপাশি ক্ষতিকর তামাক, কাসাবা ও জুমচাষসহ অন্যান্য ফসলের অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ পদ্বতি প্রভৃতি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্যধ্বংসের জন্য বহুলাংশে দায়ী।
গত কয়েক বছরে অসংখ্য পুকুর জলাশয় ভরাট করে বাড়িঘর, দোকানপাট ও বানিজ্যিক পট তৈরি হয়েছে। পাহাড়-টিলা সাবাড় হয়েছে কয়েক শ। জুম চাষের নামে পাহাড়ি টিলা, উপত্যকা জ্বলছে অবিরত। পরিবেশ দূষণসহধ্বংস হয়েছে বন্য প্রাণীদের আশ্রয়স্থল। আগুনে পুড়ে মরছে পরিবেশ বান্ধব অযুত জীবজন্তু, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ।
পরিবেশ বিপর্যয়ের আরও ধরন, অবৈধ বালুমহালগুলোয়ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলিত বালু ভর্তি ট্রাকের দাপটে নদী তীর, খাল বিল ছড়াসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো আজ ধ্বংসের মুখে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমনিতেইসুপেয় পানির উৎস কম। নৃগোষ্ঠী ও প্রান্তিক শ্রেণির জনগণ বহুকাল ধরে ডোবা নালা ঝিরি ঝরনার পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত। বালু ও পাথর উত্তোলন করায় বহু প্রাকৃতিক জলাশয় শুকিয়ে গেছে। ফলে পানির কষ্টে ভুগছেন এখানে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ।
সরকারি উদ্যোগেও অনেক সময় পাহাড়ের গঠন ও বিন্যাস বিবেচনায় না নিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি-সংস্কার ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে পাহাড় কাটা হয়। মনে রাখতে হবে সমতল ও পার্বত্যাঞ্চলের মাটির মধ্যে পার্থক্য আছে। গবেষকদের মতে, বালুমাটি, বালু ও মাটি মিশ্রিত এবং কাদা এ তিন বৈশিষ্টের মাটির সংমিশ্রণে পাহাড়-টিলা গঠিত। এসব বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিচেনায় নিতে হবে। তবেই যদি রক্ষা পায় মানব সভ্যতার ধারক-বাহক এই প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
বিধ্বংসী কর্মকান্ড বন্ধ না হলে প্রকৃতির ভয়ংকর প্রতিশোধের শিকার হবে আগামী প্রজন্ম। এ করুণ পরিণতি দেখতে হয়ত বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। নিকট অতীতে পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ব্যাপকতা দেখেছি। তবুও বোধোদয় নেই। এ অপরিণামদর্শিতার মাশুল গুনতে হবে অতীতের চেয়ে বহুগুণ বেশি। সুদূরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে আমাদের।
শ্যামল রুদ্র