মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
একটি দেশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাদের আত্মনিয়োগ করে থাকেন। দেশের ক্রান্তিকালে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ত্রাণকর্তা হিসেবে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করে থাকেন।
প্রবাস জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো সুখ-দুঃখের কান্না জড়িত গল্প। একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে তার পরিবারের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি দিতে হয় বিদেশে। তবে বিদেশ যাওয়ার এই যাত্রায় তাকে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন প্রকার বাঁধা ও দালাল শ্রেণির খপ্পরে।
একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার জন্য প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা। আর্থিক এই অসচ্ছলতার পরেই তাকে সম্মুখীন হতে হয় পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং জটিলতা, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য যেখান থেকে সমাধানের পথ হিসেবে উৎপত্তি হয় দালাল শ্রেণির। দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে অনেকের বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তবে বেশির ভাগ রেমিট্যান্স যোদ্ধা শেষ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরের প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে সক্ষম হন।
প্রবাস জীবন শুরুতে প্রতি মুহূর্তে অজানা পরিবেশে রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা ও পরিস্থিতির। এতো প্রতিকূলতার পরেও একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা তার নিজের সুখ-দুঃখকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে নিজেকে প্রবাস জীবনে আত্মনিয়োগ করেন।
বিভিন্ন আনন্দ উৎসব ঈদের খুশিতে যখন পরিবার-পরিজন অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসবময় সময় কাটায় তখন প্রবাসে পরিবার-পরিজনহীন প্রবাসীর সময় কাটে উৎসব-আমেজহীন একটি নিরানন্দ পরিবেশে। তবুও নিজের খুশিকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটাতে মাস শেষে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা তার উপার্জিত অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছেন পরিবারের কাছে। নিজের চাহিদা অপূর্ণ রেখে পরিবারের চাহিদা প্রতিনিয়ত পূরণ করে যাচ্ছেন; কিন্তু দিন শেষে তাদের কোনো অভিযোগ, আক্ষেপ নেই। তাদের কষ্টের কথাগুলো পরিবারের কাছে গোপন রেখে হাসি-মুখে পরিবারে সব চাহিদা পূরণ করে নিজেরা পরিতৃপ্ত হচ্ছেন।
একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্ত নেমে আসে যখন সে শুনতে পায় তার কাছে কোনো আপনজন মারা গেছেন কিন্তু শত চেষ্টা করলেও সেই মানুষটিকে শেষবারের মতো কাছে থেকে দেখা সম্ভব নয়। সেই হৃদয়বিদারক মুহূর্তে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এর নামই হচ্ছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এসব ব্যক্তিই হচ্ছেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক।
বলা যায় দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অনেকটা টিকে আছে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের রেমিট্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক কাঠামো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ডলার সংকট নিরসন, আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য ও দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে কঠোর পরিশ্রমী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই রাষ্ট্র এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যারা নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করে পরিবার ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন ও সম্মান নিশ্চিতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
মুজাহিদুল ইসলাম
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
একটি দেশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাদের আত্মনিয়োগ করে থাকেন। দেশের ক্রান্তিকালে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ত্রাণকর্তা হিসেবে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করে থাকেন।
প্রবাস জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো সুখ-দুঃখের কান্না জড়িত গল্প। একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে তার পরিবারের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি দিতে হয় বিদেশে। তবে বিদেশ যাওয়ার এই যাত্রায় তাকে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন প্রকার বাঁধা ও দালাল শ্রেণির খপ্পরে।
একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার জন্য প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা। আর্থিক এই অসচ্ছলতার পরেই তাকে সম্মুখীন হতে হয় পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং জটিলতা, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য যেখান থেকে সমাধানের পথ হিসেবে উৎপত্তি হয় দালাল শ্রেণির। দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে অনেকের বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তবে বেশির ভাগ রেমিট্যান্স যোদ্ধা শেষ পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরের প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে সক্ষম হন।
প্রবাস জীবন শুরুতে প্রতি মুহূর্তে অজানা পরিবেশে রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা ও পরিস্থিতির। এতো প্রতিকূলতার পরেও একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা তার নিজের সুখ-দুঃখকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে নিজেকে প্রবাস জীবনে আত্মনিয়োগ করেন।
বিভিন্ন আনন্দ উৎসব ঈদের খুশিতে যখন পরিবার-পরিজন অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসবময় সময় কাটায় তখন প্রবাসে পরিবার-পরিজনহীন প্রবাসীর সময় কাটে উৎসব-আমেজহীন একটি নিরানন্দ পরিবেশে। তবুও নিজের খুশিকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটাতে মাস শেষে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা তার উপার্জিত অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছেন পরিবারের কাছে। নিজের চাহিদা অপূর্ণ রেখে পরিবারের চাহিদা প্রতিনিয়ত পূরণ করে যাচ্ছেন; কিন্তু দিন শেষে তাদের কোনো অভিযোগ, আক্ষেপ নেই। তাদের কষ্টের কথাগুলো পরিবারের কাছে গোপন রেখে হাসি-মুখে পরিবারে সব চাহিদা পূরণ করে নিজেরা পরিতৃপ্ত হচ্ছেন।
একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্ত নেমে আসে যখন সে শুনতে পায় তার কাছে কোনো আপনজন মারা গেছেন কিন্তু শত চেষ্টা করলেও সেই মানুষটিকে শেষবারের মতো কাছে থেকে দেখা সম্ভব নয়। সেই হৃদয়বিদারক মুহূর্তে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এর নামই হচ্ছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এসব ব্যক্তিই হচ্ছেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক।
বলা যায় দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অনেকটা টিকে আছে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের রেমিট্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক কাঠামো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ডলার সংকট নিরসন, আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য ও দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে কঠোর পরিশ্রমী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই রাষ্ট্র এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যারা নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করে পরিবার ও দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন ও সম্মান নিশ্চিতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
মুজাহিদুল ইসলাম
ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ