মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
দুর্নীতি আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। এমন কোনো সেক্টর নেই যে, জোর দিয়ে বলতে পারি এটা একদম ‘ক্লিন এন্ড ক্লিয়ার’। আর এই দুর্নীতির সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে। অসৎ চিকিৎসক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যোগসাজশে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজারো অসহায় রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজন। চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের নামে প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় একগাদা পরীক্ষা নিরীক্ষার তালিকা ধরিয়ে দিয়ে তার পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাজেস্ট করেন। যন্ত্রণায় কাতর রোগী কষ্ট থেকে মুক্তির আশায় ভিটেমাটি বিক্রি করে হলেও ছুটে যায় সেই নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিকে। আবার যেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার বসেন তাদের মধ্যেও অনেকে ধান ভানতে শিবের গীতের মতো অহেতুক কতগুলো পরীক্ষার তালিকা দিয়ে নিচে ডিসকাউন্ট লিখে স্বাক্ষর করে দেন। রোগী ভাবে নিশ্চয়ই কম খরচে এই বৈতরণী পার হয়ে যাবে। আসলে এই ডিসকাউন্ট হলো ‘শো-অফ’। সেই যে রাজার এক প্রজা হঠাৎ করে রুটির দাম পাঁচ টাকা থেকে পনেরো টাকা করে ফেলে পরে সবাই অভিযোগ করলে রাজা রুটির দোকানীকে দাম কমিয়ে দশ টাকা করতে বলার সেই গল্পের মতো। তবে কিছু ‘স্পেশাল’ পরীক্ষা নিরীক্ষা আবার এই ডিসকাউন্টের সাজানো নাটকের বাইরে। অর্থাৎ মোটা অংকের ডায়াগনোসিসে কোনো ডিসকাউন্ট নেই।
সম্প্রতি পায়ের ব্যথার জন্য বাসার কাছেই একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। তিনি রাজধানীর স্বনামধন্য একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন। উনি আমার নাম ঠিকানা সব জিজ্ঞেস করে পরে চিকিৎসায় মনোযোগ দেন। আমার মূল সমস্যা ছিলো পায়ে এবং তিনি আমার পা ভালো করেই দেখলেন। এবার জানতে চাইলেন গ্যাসট্রিকের সমস্যা আছে কিনা। বললাম, হ্যাঁ মাঝেমাঝে সন্ধ্যার দিকে বুক জ্বালা করে। তিনি আমাকে ব্লাড টেস্ট, এক্স-রের সঙ্গে এন্ডোসকপি করতে দিলেন। ভাবলাম উনি হয়তো পেটে সমস্যা আঁচ করেছেন। তাই এন্ডোসকপি করতে বললেন। বিল কাউন্টারে আসলে বলা হলো অন্য পরীক্ষা এখন করা যাবে তবে এন্ডোসকপির জন্য সকালে খালি পেটে আসতে হবে। সব গুছিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম একজন স্টাফ অন্য রোগীকে বলছেন, ‘এন্ডোসকপিতে কোনো ডিসকাউন্ট নেই, তিন হাজার টাকাই দিতে হবে।’
আমার এই ‘ফ্রেন্ডলি’(!) ডাক্তারও যে অহেতুক আমাকে এন্ডোসকপির মতো কষ্টকর পরীক্ষা করাতে বললেন সেটা বুঝতে পেরেছি পরদিন সকালে। এন্ডোসকপির রুম থেকে প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর মুখে টিস্যু চেপে একজন একজন বের হচ্ছে। এর আগে সবাইকে একটা সিরাপ খেতে বললো। আয়া এসে একজন একজন করে ডেকে নিচ্ছে। তবে সিরাপ খাওয়ার প্রসেসটা বলতে তাদের চরম অনীহা। ভাবখানা এমন রোগীরা নিয়মকানুন সব আগে থেকে কেন জানে না। তবে অপেক্ষমান রোগীরা নিজের গরজে একজনের থেকে আরেকজন জেনে নিচ্ছিল। এবং আমার মতো অনেকেই এই পরীক্ষা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিলো। দু-একজনকে জিজ্ঞেস করলাম তাদের কী সমস্যা? সবাই বললো গুরুতর কোনো সমস্যা নেই কিন্তু এই পরীক্ষা করতে বললো। আবার না করলেও ভয় পাচ্ছে যদি খারাপ কিছু হয়! রোগীর এই ভয়টাকে পুঁজি করে ডাক্তার এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো প্রতিনিয়ত ফুলেফেঁপে উঠছে। কারো কিছু বলার নেই। কিছু করার নেই। যাদের গায়ে ‘নামকরা’ ছাপ লেগে গেছে তারা তো আরও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয় দূরদূরান্ত থেকে আসা নিম্নবিত্ত রোগীগুলো।
যাইহোক একটু পর আমাকে যখন এন্ডোসকপির বেডে তোলা হলো তখন আমার সন্দেহ যে অমূলক ছিল না সেটা পরিষ্কার বোঝা গেলো। কর্তব্যরত প্যাথলজিস্টরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, লোকজন বলছে এটা নাকি এখানকার ব্যবসা। তাই গণহারে সবাইকে ডাক্তার এন্ডোসকপি করতে প্রেসক্রাইব করছেন। প্রধান প্যাথলজিস্ট উত্তর দিলেন, ‘অনেকে অনেক কিছু বলবে, সেগুলো আমাদের না শুনলেই হলো।’ তার মানে বিষয়টা নিয়ে লোকজন সন্দেহ প্রকাশ করছে এটা তারা জানেন। ব্যাপারটাতে যে সম্পূর্ণ ব্যাবসায়ীক উদ্দেশ্য আছে এটা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যখন দেখি আমার রিপোর্ট সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
সাজেদা সুলতানা কলি
৬/২০ পপুলার হাউজিং, বড়বাগ, মিরপুর-২, ঢাকা
 ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
রোববার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪
দুর্নীতি আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। এমন কোনো সেক্টর নেই যে, জোর দিয়ে বলতে পারি এটা একদম ‘ক্লিন এন্ড ক্লিয়ার’। আর এই দুর্নীতির সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে। অসৎ চিকিৎসক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যোগসাজশে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজারো অসহায় রোগী এবং রোগীর আত্মীয়স্বজন। চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের নামে প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় একগাদা পরীক্ষা নিরীক্ষার তালিকা ধরিয়ে দিয়ে তার পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাজেস্ট করেন। যন্ত্রণায় কাতর রোগী কষ্ট থেকে মুক্তির আশায় ভিটেমাটি বিক্রি করে হলেও ছুটে যায় সেই নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিকে। আবার যেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার বসেন তাদের মধ্যেও অনেকে ধান ভানতে শিবের গীতের মতো অহেতুক কতগুলো পরীক্ষার তালিকা দিয়ে নিচে ডিসকাউন্ট লিখে স্বাক্ষর করে দেন। রোগী ভাবে নিশ্চয়ই কম খরচে এই বৈতরণী পার হয়ে যাবে। আসলে এই ডিসকাউন্ট হলো ‘শো-অফ’। সেই যে রাজার এক প্রজা হঠাৎ করে রুটির দাম পাঁচ টাকা থেকে পনেরো টাকা করে ফেলে পরে সবাই অভিযোগ করলে রাজা রুটির দোকানীকে দাম কমিয়ে দশ টাকা করতে বলার সেই গল্পের মতো। তবে কিছু ‘স্পেশাল’ পরীক্ষা নিরীক্ষা আবার এই ডিসকাউন্টের সাজানো নাটকের বাইরে। অর্থাৎ মোটা অংকের ডায়াগনোসিসে কোনো ডিসকাউন্ট নেই।
সম্প্রতি পায়ের ব্যথার জন্য বাসার কাছেই একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। তিনি রাজধানীর স্বনামধন্য একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন। উনি আমার নাম ঠিকানা সব জিজ্ঞেস করে পরে চিকিৎসায় মনোযোগ দেন। আমার মূল সমস্যা ছিলো পায়ে এবং তিনি আমার পা ভালো করেই দেখলেন। এবার জানতে চাইলেন গ্যাসট্রিকের সমস্যা আছে কিনা। বললাম, হ্যাঁ মাঝেমাঝে সন্ধ্যার দিকে বুক জ্বালা করে। তিনি আমাকে ব্লাড টেস্ট, এক্স-রের সঙ্গে এন্ডোসকপি করতে দিলেন। ভাবলাম উনি হয়তো পেটে সমস্যা আঁচ করেছেন। তাই এন্ডোসকপি করতে বললেন। বিল কাউন্টারে আসলে বলা হলো অন্য পরীক্ষা এখন করা যাবে তবে এন্ডোসকপির জন্য সকালে খালি পেটে আসতে হবে। সব গুছিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম একজন স্টাফ অন্য রোগীকে বলছেন, ‘এন্ডোসকপিতে কোনো ডিসকাউন্ট নেই, তিন হাজার টাকাই দিতে হবে।’
আমার এই ‘ফ্রেন্ডলি’(!) ডাক্তারও যে অহেতুক আমাকে এন্ডোসকপির মতো কষ্টকর পরীক্ষা করাতে বললেন সেটা বুঝতে পেরেছি পরদিন সকালে। এন্ডোসকপির রুম থেকে প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর মুখে টিস্যু চেপে একজন একজন বের হচ্ছে। এর আগে সবাইকে একটা সিরাপ খেতে বললো। আয়া এসে একজন একজন করে ডেকে নিচ্ছে। তবে সিরাপ খাওয়ার প্রসেসটা বলতে তাদের চরম অনীহা। ভাবখানা এমন রোগীরা নিয়মকানুন সব আগে থেকে কেন জানে না। তবে অপেক্ষমান রোগীরা নিজের গরজে একজনের থেকে আরেকজন জেনে নিচ্ছিল। এবং আমার মতো অনেকেই এই পরীক্ষা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিলো। দু-একজনকে জিজ্ঞেস করলাম তাদের কী সমস্যা? সবাই বললো গুরুতর কোনো সমস্যা নেই কিন্তু এই পরীক্ষা করতে বললো। আবার না করলেও ভয় পাচ্ছে যদি খারাপ কিছু হয়! রোগীর এই ভয়টাকে পুঁজি করে ডাক্তার এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো প্রতিনিয়ত ফুলেফেঁপে উঠছে। কারো কিছু বলার নেই। কিছু করার নেই। যাদের গায়ে ‘নামকরা’ ছাপ লেগে গেছে তারা তো আরও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয় দূরদূরান্ত থেকে আসা নিম্নবিত্ত রোগীগুলো।
যাইহোক একটু পর আমাকে যখন এন্ডোসকপির বেডে তোলা হলো তখন আমার সন্দেহ যে অমূলক ছিল না সেটা পরিষ্কার বোঝা গেলো। কর্তব্যরত প্যাথলজিস্টরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, লোকজন বলছে এটা নাকি এখানকার ব্যবসা। তাই গণহারে সবাইকে ডাক্তার এন্ডোসকপি করতে প্রেসক্রাইব করছেন। প্রধান প্যাথলজিস্ট উত্তর দিলেন, ‘অনেকে অনেক কিছু বলবে, সেগুলো আমাদের না শুনলেই হলো।’ তার মানে বিষয়টা নিয়ে লোকজন সন্দেহ প্রকাশ করছে এটা তারা জানেন। ব্যাপারটাতে যে সম্পূর্ণ ব্যাবসায়ীক উদ্দেশ্য আছে এটা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম যখন দেখি আমার রিপোর্ট সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
সাজেদা সুলতানা কলি
৬/২০ পপুলার হাউজিং, বড়বাগ, মিরপুর-২, ঢাকা
