মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
উন্নয়নের অজুহাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সাত মসজিদ সড়কের পুরাতন গাছের অনেকগুলোই কেটে ফেলেছে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে গাছ কর্তনে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণী-পেশার মানুষ গাছ কর্তনের প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করছে।
গাছ কাটার প্রতিবাদে এবং বাকি গাছ রক্ষার দাবিতে পরিবেশবাদীদের উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কার্যালয় (নগর ভবন) ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে সম্প্রতি। ওই কর্মসূচি থেকে গাছ রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
গাছের প্রয়োজনীয়তা-গুরুত্ব সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই অবগত থাকার কথা। প্রাণ রক্ষার জন্য গাছ বাঁচানো-রক্ষা করা অতি আবশ্যাক। কে না জানেন যে, প্রাণীর জীবন রক্ষার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। গাছ অক্সিজেনের বড় উৎস। বলা হয়, গাছ অক্সিজেন উৎপাদনের ফ্যাক্টরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি মানুষের জন্য দিনে ৫৫০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ অন্তত ১৮ জন মানুষের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে।
তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে, পরিবেশ প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের অপরিহার্যতা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমানিত। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল তার তুলনায় দ্বিগুণ কার্বণ শুষে নেয় বনাঞ্চল। যে এলাকায় গাছ কম সে এলাকায় রেসপিরেটরি প্রবলেম (শ্বাসকষ্ট),স্কীন ডিজিজ বেড়ে যায়। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে স্কিন ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাছের ছায়া সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে স্কীন ক্যানসার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। বাড়ির আশপাশে ৩০০ মিটার বা এক মাইলের ৫ ভাগের একভাগ দূর পর্যন্ত সবুজ পরিবেশ থাকলে স্টোকের আশঙ্কা ১৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
জনবহুল-ঘনবসতিপূর্ণ নগরী ঢাকায় লোক সংখ্যা অনুপাতে যে সংখ্যক গাছ থাকা দরকার তার সিকিভাগও নেই। কথিত উন্নয়নের নামে ঢাকা নগরীতে ‘বৃক্ষ নিধন উৎসব’ চলছে বছরের পর বছর। ১৯৯৫ সালেও ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ছিল মোট আয়তনের ১৭ শতাংশ। কমতে কমতে বর্তমানে ঢাকায় সবুজ অঞ্চলের পরিমাণ এসে ঠেকেছে কমবেশি ৮ শতাংশে।
ঢাকা নগরী এখন বিশে^র অন্যতম উষ্ণ নগরী। আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে, গত ১০০ বছরে দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা দুই গুণের বেশি বেড়েছে।
ঢাকা নগরী তপ্ত ভূখন্ডে (হিট ল্যান্ড) পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ বৃক্ষ হ্রাস। ঢাকা নগরীতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের কুফল দৃশ্যমান। গাছ রক্ষা আন্দোলন বেগবান-শক্তিশালী করতে হবে পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, জনস্বাস্থ্য- প্রাণ রক্ষার প্রয়োজনেই। গাছ রক্ষা আন্দোলন পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রাণ বাঁচাতে হলে, মরুকরণ রুখতে চাইলে গাছ রক্ষা করতেই হবে। গাছ রক্ষায় চৈতন্যোদয় জরুরি। গাছ রক্ষার আন্দোলন সুসংগঠিত করে ছড়িয়ে দিতে হবে- এটাই সময়ের দাবি।
জহির চৌধুরী
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
রোববার, ০৪ জুন ২০২৩
উন্নয়নের অজুহাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সাত মসজিদ সড়কের পুরাতন গাছের অনেকগুলোই কেটে ফেলেছে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে গাছ কর্তনে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণী-পেশার মানুষ গাছ কর্তনের প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করছে।
গাছ কাটার প্রতিবাদে এবং বাকি গাছ রক্ষার দাবিতে পরিবেশবাদীদের উদ্যোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কার্যালয় (নগর ভবন) ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে সম্প্রতি। ওই কর্মসূচি থেকে গাছ রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
গাছের প্রয়োজনীয়তা-গুরুত্ব সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই অবগত থাকার কথা। প্রাণ রক্ষার জন্য গাছ বাঁচানো-রক্ষা করা অতি আবশ্যাক। কে না জানেন যে, প্রাণীর জীবন রক্ষার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। গাছ অক্সিজেনের বড় উৎস। বলা হয়, গাছ অক্সিজেন উৎপাদনের ফ্যাক্টরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি মানুষের জন্য দিনে ৫৫০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ অন্তত ১৮ জন মানুষের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে।
তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে, পরিবেশ প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের অপরিহার্যতা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমানিত। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল তার তুলনায় দ্বিগুণ কার্বণ শুষে নেয় বনাঞ্চল। যে এলাকায় গাছ কম সে এলাকায় রেসপিরেটরি প্রবলেম (শ্বাসকষ্ট),স্কীন ডিজিজ বেড়ে যায়। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে স্কিন ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাছের ছায়া সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে স্কীন ক্যানসার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। বাড়ির আশপাশে ৩০০ মিটার বা এক মাইলের ৫ ভাগের একভাগ দূর পর্যন্ত সবুজ পরিবেশ থাকলে স্টোকের আশঙ্কা ১৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
জনবহুল-ঘনবসতিপূর্ণ নগরী ঢাকায় লোক সংখ্যা অনুপাতে যে সংখ্যক গাছ থাকা দরকার তার সিকিভাগও নেই। কথিত উন্নয়নের নামে ঢাকা নগরীতে ‘বৃক্ষ নিধন উৎসব’ চলছে বছরের পর বছর। ১৯৯৫ সালেও ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ছিল মোট আয়তনের ১৭ শতাংশ। কমতে কমতে বর্তমানে ঢাকায় সবুজ অঞ্চলের পরিমাণ এসে ঠেকেছে কমবেশি ৮ শতাংশে।
ঢাকা নগরী এখন বিশে^র অন্যতম উষ্ণ নগরী। আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে, গত ১০০ বছরে দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা দুই গুণের বেশি বেড়েছে।
ঢাকা নগরী তপ্ত ভূখন্ডে (হিট ল্যান্ড) পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ বৃক্ষ হ্রাস। ঢাকা নগরীতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের কুফল দৃশ্যমান। গাছ রক্ষা আন্দোলন বেগবান-শক্তিশালী করতে হবে পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, জনস্বাস্থ্য- প্রাণ রক্ষার প্রয়োজনেই। গাছ রক্ষা আন্দোলন পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রাণ বাঁচাতে হলে, মরুকরণ রুখতে চাইলে গাছ রক্ষা করতেই হবে। গাছ রক্ষায় চৈতন্যোদয় জরুরি। গাছ রক্ষার আন্দোলন সুসংগঠিত করে ছড়িয়ে দিতে হবে- এটাই সময়ের দাবি।
জহির চৌধুরী