মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
শোকের মাস আগস্টে আমরা হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরই খন্দকার মোশতাক আহমেদ যে কিনা বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, সে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয় এবং খুনিদের বাঁচানোর জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। এরপর ক্ষমতায় আসে সামরিক শাসক মেজর জিয়া। মেজর জিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে বৈধতা দেন। এভাবেই এ দেশে খুনের রাজনীতিকে বৈধতা পায়। এর পরবর্তী ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। সব বাধা উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। এখনো পলাতক রয়েছে কর্ণেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্ণেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্ণেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিন এবং লে. কর্ণেল এস এইচ নূর চৌধুরী। আমাদের দাবি হলো পলাতক সকল খুনিকে গ্রেফতার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। ঘাতকরা কতটা নির্মম হলে এমন হত্যাকান্ড সংগঠিত করতে পারে যেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু কেউই রেহাই পায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিসাৎ করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা মাফিক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার পরেও পাকিস্তানী ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী মৌলবাদী, জঙ্গী গোষ্ঠী তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামালা চালায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতি ধারার রাজনীতিকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হামলা চালানো হয়। এই হামলার পরবর্তীতে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করার পরিবর্তে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয় এবং হামলার শিকার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়।
বিএনপি-জামাত ও স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী-জঙ্গী গোষ্ঠী যে এই হামলার সাথে জড়িত তা আজ আদালতে প্রমাণিত। তাই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে স্বাধীনতা বিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরন্তর সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের ন্যায় মৌলবাদী শক্তির অশুভ ছায়া থেকে মুক্ত রাখতে সর্বদাই সর্তক থাকতে হবে।
আগস্ট হোক স্বাধীনতা বিরোধী চক্রান্তকারীদের রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয়। একই সাথে আমাদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যগণ বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন, জীবন দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসতেন বলেই ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে নির্বিচারে হত্যা করে। আমরা কোনো দিন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের রক্তের ঋণ শোধ করতে পারবো না। কিন্তু আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, মানুষকে ভালোবাসা, দেশপ্রেম ও ত্যাগের নীতিকে অনুসরণ করা তথা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কিছুটা হলেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবো।
[লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ; কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়]
মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০২২
শোকের মাস আগস্টে আমরা হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরই খন্দকার মোশতাক আহমেদ যে কিনা বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, সে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয় এবং খুনিদের বাঁচানোর জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। এরপর ক্ষমতায় আসে সামরিক শাসক মেজর জিয়া। মেজর জিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে বৈধতা দেন। এভাবেই এ দেশে খুনের রাজনীতিকে বৈধতা পায়। এর পরবর্তী ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। সব বাধা উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। এখনো পলাতক রয়েছে কর্ণেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্ণেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্ণেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিন এবং লে. কর্ণেল এস এইচ নূর চৌধুরী। আমাদের দাবি হলো পলাতক সকল খুনিকে গ্রেফতার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। ঘাতকরা কতটা নির্মম হলে এমন হত্যাকান্ড সংগঠিত করতে পারে যেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু কেউই রেহাই পায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিসাৎ করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা মাফিক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার পরেও পাকিস্তানী ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী মৌলবাদী, জঙ্গী গোষ্ঠী তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামালা চালায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতি ধারার রাজনীতিকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হামলা চালানো হয়। এই হামলার পরবর্তীতে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করার পরিবর্তে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয় এবং হামলার শিকার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিদ্রুপ করা হয়।
বিএনপি-জামাত ও স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী-জঙ্গী গোষ্ঠী যে এই হামলার সাথে জড়িত তা আজ আদালতে প্রমাণিত। তাই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে স্বাধীনতা বিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরন্তর সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের ন্যায় মৌলবাদী শক্তির অশুভ ছায়া থেকে মুক্ত রাখতে সর্বদাই সর্তক থাকতে হবে।
আগস্ট হোক স্বাধীনতা বিরোধী চক্রান্তকারীদের রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয়। একই সাথে আমাদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যগণ বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন, জীবন দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসতেন বলেই ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে নির্বিচারে হত্যা করে। আমরা কোনো দিন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের রক্তের ঋণ শোধ করতে পারবো না। কিন্তু আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, মানুষকে ভালোবাসা, দেশপ্রেম ও ত্যাগের নীতিকে অনুসরণ করা তথা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শনকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কিছুটা হলেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবো।
[লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ; কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়]