alt

উপ-সম্পাদকীয়

সুখ খুঁজতে গিয়ে অসুখে ভুগছি

লতিফা নিলুফার পাপড়ি

: বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

ছোটবেলা মনে হতো পৃথিবীর সব সুখ মনে হয় আমাদের। সকালে ঘুম থেকে উঠে ডিমভর্তা, আলু ভাজি, ঘি দিয়ে পেট ভরে ভাত খাওয়া। এক সুখকর স্মৃতি।

চাহিদা বলতে বিকেলে খেলতে পারলেই ষোলোকলা পূর্ণ হতো। প্রয়োজন ছিল না দামি জামা, দামি জুতো, দামি গহনার। তখনতো আধুনিকতা গায়ে লাগেনি। বিকেল বেলা খেলতে পারার মাঝেই লুকিয়ে ছিল সব সুখ। ছিল না কে ধনী, কে গরিব সেই তার বৈষম্যবোধ। বন্ধু তো বন্ধুই। ছিল না কোনো প্রেসটিজ ইস্যু। শিক্ষিত-মূর্খ ছিল না বিভেদ। কার কোন ধর্ম, তা নিয়েও ছিল না মাথাব্যথা।

এত এত পাঠ্যবই পড়ার আমাদের এত সময়ও ছিল না। গল্পের বই এখান পেলে পালা করে এ-বন্ধু, ও-বন্ধু পড়ে আনন্দ নিতাম। সে বইয়ের গল্প নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতাম।

ধীরে ধীরে বুঝতে শিখলাম বড় হয়ে বড় মানুষ হলে নাকি সুখ অনেক বেশি। লোকের মুখে শুনতাম বড় হয়ে বড় মানুষ হতে হবে। তবে আবার ভাবনার জগতে ছুটে গেলে নিজে নিজে বলতাম, ‘অত বড় হয়ে কী হবে? সুখ তো ওই পেট ভরে ভাত খাওয়ার মাঝে লুকিয়ে আছে।’ দিনে দিনে বড় হলাম। সুখগুলো লুকিয়ে গেল। আহা, বয়স বাড়ছে এই আর কি!

তবে ছোটবেলার সে সুখ এখন আর খুঁজে পাই না। সেই দুরন্তপনা এখন আর আমাকে ডাকে না। চারিদিকে শুধু স্বার্থপরতার গল্প। কে কাকে ঠকিয়ে বড় হবে সে চিন্তায় ব্যস্ত। প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, একা খাও-একা বাঁচো নীতিতে।

একদিন দেখলাম, এক মহিলা তার স্বামীকে বলছেÑ ‘শোন,আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যা কিনবে তা তোমার ভাইবোনের ছেলে মেয়ের জন্য কিনবে না। আমরা যা খাব ভুলেও ওদের খাওয়াবে না। আমরা একা খাব। আমি ভাবলাম, আহারে! মানুষটার সুখগুলো সব ধুলায় মিশিয়ে দিল। সে হয়তো একসময় বাধ্য হয়ে একা খাও-একা বাঁচো নীতিই অনুসরণ করবে। ধুর ছাই, আমি তো সুখী।

একদিন স্কুলে মাস্টারি করতে গিয়ে এক মাকে দেখলাম নিজেন সন্তানকে শেখাচ্ছেন, যার-তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবি না। যে দেখবি ভালো পড়া পারে, তাকে বন্ধু বানাবি। আহারে, বেচারার সুখটা মাটিতে মিশিয়ে দিল। সব পড়া পারা বন্ধু কি ভালো বন্ধু হতে পারে? শেষ বেঞ্চের শিক্ষার্থীও তো ভালো বন্ধু হতে পারে। আর যা-ই হোক, সে কিন্তু সারাদিন পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত নয়, সে জিপিএ-৫ নয়, সে কোনরকম পাসের জন্যই ছোটে। অন্ততপক্ষে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অন্যায় পথ তো সে অবলম্বন করবে না।

একদিন এক পরিচিত বাসায় গিয়ে দেখি সংসারের কম রোজকার করা ছেলের বউকে আপনজনরা শেখাচ্ছেন কম আয়ের স্বামীর স্ত্রী-সন্তানের কম খেতে হয়।

আচ্ছা, মানুষ সুখ কোথায় খোঁজে? দিন দিন আমি কেমন যেন সুখ খুঁজতে গিয়ে অসুখে ভুগছি।

দূর, কে এসবে সুখ খোঁজে। আমি তো সুখ খুঁজি মনের ভেতরে। আমি তো সুখ খুঁজি মানুষের মাঝে। আমি তো সুখ খুঁজি অন্যের চোখের জল মুছে দেয়ার মাঝে। সুখ খুঁজি ভালোবাসার মাঝে, প্রকৃতির মাঝে।

আমি, আমিই থাকতে চাই। এর মাঝেই সুখের সন্ধান করি। লোকে পাগল বলেছে, আহাম্মক বলেছে। বলুক না। তাতে কী! পাগলের সুখ তো মনে মনে।

প্রকৃত সুখী মানুষ তো সে, যে কিনা নির্মল বাতাসের মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে পারেÑ ‘আমি ভালো আছি, তুমি ভালো থেকো।’

ভালোবাসার মাঝে যে সুখ লুকিয়ে আছে, তা-ও স্বার্থপরতার কাছে মাঝে মাঝে হার মেনে যায়। কখনো সংসারে অভাব, কখনো বা চাহিদা মেটানোর তাগিদ। সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা এক জীবন। যে জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখের ঘানি বেশি টানতে হয়। অতঃপর যখন সুখ এসে সত্যিই ধরা দেয়, ঠিক তখন নতুন কোনো অসুখে সেই সুখটাও বিনষ্ট হতে চলে। সুখ খোঁজার জন্য দুঃখকে বরণ করতে যেন মহাব্যস্ত গোটা পৃথিবী।

পৃথিবী এখন বৈষম্যের চাদরে ঢাকা। যে যেভাবে পারছে; সেভাবেই বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। সুখের সন্ধান করতে গিয়ে অন্যের জান-মাল নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে। নীতি নৈতিকতার বড়ই অবক্ষয়। সবাই শুধু গাড়ি-বাড়ির পেছনে ছুটতে গিয়ে সত্যিকারের সুখটাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তবুও পৃথিবীতে নেমে আসুক সুখ; এমনটাই এখন পরম করুণাময়ের কাছে প্রতিদিনের প্রার্থনা।

[লেখক : শিক্ষক, সাহিত্যিক]

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

লই গো বুক পেতে অনল-বাণ!

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সুখ খুঁজতে গিয়ে অসুখে ভুগছি

লতিফা নিলুফার পাপড়ি

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

ছোটবেলা মনে হতো পৃথিবীর সব সুখ মনে হয় আমাদের। সকালে ঘুম থেকে উঠে ডিমভর্তা, আলু ভাজি, ঘি দিয়ে পেট ভরে ভাত খাওয়া। এক সুখকর স্মৃতি।

চাহিদা বলতে বিকেলে খেলতে পারলেই ষোলোকলা পূর্ণ হতো। প্রয়োজন ছিল না দামি জামা, দামি জুতো, দামি গহনার। তখনতো আধুনিকতা গায়ে লাগেনি। বিকেল বেলা খেলতে পারার মাঝেই লুকিয়ে ছিল সব সুখ। ছিল না কে ধনী, কে গরিব সেই তার বৈষম্যবোধ। বন্ধু তো বন্ধুই। ছিল না কোনো প্রেসটিজ ইস্যু। শিক্ষিত-মূর্খ ছিল না বিভেদ। কার কোন ধর্ম, তা নিয়েও ছিল না মাথাব্যথা।

এত এত পাঠ্যবই পড়ার আমাদের এত সময়ও ছিল না। গল্পের বই এখান পেলে পালা করে এ-বন্ধু, ও-বন্ধু পড়ে আনন্দ নিতাম। সে বইয়ের গল্প নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতাম।

ধীরে ধীরে বুঝতে শিখলাম বড় হয়ে বড় মানুষ হলে নাকি সুখ অনেক বেশি। লোকের মুখে শুনতাম বড় হয়ে বড় মানুষ হতে হবে। তবে আবার ভাবনার জগতে ছুটে গেলে নিজে নিজে বলতাম, ‘অত বড় হয়ে কী হবে? সুখ তো ওই পেট ভরে ভাত খাওয়ার মাঝে লুকিয়ে আছে।’ দিনে দিনে বড় হলাম। সুখগুলো লুকিয়ে গেল। আহা, বয়স বাড়ছে এই আর কি!

তবে ছোটবেলার সে সুখ এখন আর খুঁজে পাই না। সেই দুরন্তপনা এখন আর আমাকে ডাকে না। চারিদিকে শুধু স্বার্থপরতার গল্প। কে কাকে ঠকিয়ে বড় হবে সে চিন্তায় ব্যস্ত। প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, একা খাও-একা বাঁচো নীতিতে।

একদিন দেখলাম, এক মহিলা তার স্বামীকে বলছেÑ ‘শোন,আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যা কিনবে তা তোমার ভাইবোনের ছেলে মেয়ের জন্য কিনবে না। আমরা যা খাব ভুলেও ওদের খাওয়াবে না। আমরা একা খাব। আমি ভাবলাম, আহারে! মানুষটার সুখগুলো সব ধুলায় মিশিয়ে দিল। সে হয়তো একসময় বাধ্য হয়ে একা খাও-একা বাঁচো নীতিই অনুসরণ করবে। ধুর ছাই, আমি তো সুখী।

একদিন স্কুলে মাস্টারি করতে গিয়ে এক মাকে দেখলাম নিজেন সন্তানকে শেখাচ্ছেন, যার-তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবি না। যে দেখবি ভালো পড়া পারে, তাকে বন্ধু বানাবি। আহারে, বেচারার সুখটা মাটিতে মিশিয়ে দিল। সব পড়া পারা বন্ধু কি ভালো বন্ধু হতে পারে? শেষ বেঞ্চের শিক্ষার্থীও তো ভালো বন্ধু হতে পারে। আর যা-ই হোক, সে কিন্তু সারাদিন পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত নয়, সে জিপিএ-৫ নয়, সে কোনরকম পাসের জন্যই ছোটে। অন্ততপক্ষে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অন্যায় পথ তো সে অবলম্বন করবে না।

একদিন এক পরিচিত বাসায় গিয়ে দেখি সংসারের কম রোজকার করা ছেলের বউকে আপনজনরা শেখাচ্ছেন কম আয়ের স্বামীর স্ত্রী-সন্তানের কম খেতে হয়।

আচ্ছা, মানুষ সুখ কোথায় খোঁজে? দিন দিন আমি কেমন যেন সুখ খুঁজতে গিয়ে অসুখে ভুগছি।

দূর, কে এসবে সুখ খোঁজে। আমি তো সুখ খুঁজি মনের ভেতরে। আমি তো সুখ খুঁজি মানুষের মাঝে। আমি তো সুখ খুঁজি অন্যের চোখের জল মুছে দেয়ার মাঝে। সুখ খুঁজি ভালোবাসার মাঝে, প্রকৃতির মাঝে।

আমি, আমিই থাকতে চাই। এর মাঝেই সুখের সন্ধান করি। লোকে পাগল বলেছে, আহাম্মক বলেছে। বলুক না। তাতে কী! পাগলের সুখ তো মনে মনে।

প্রকৃত সুখী মানুষ তো সে, যে কিনা নির্মল বাতাসের মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে পারেÑ ‘আমি ভালো আছি, তুমি ভালো থেকো।’

ভালোবাসার মাঝে যে সুখ লুকিয়ে আছে, তা-ও স্বার্থপরতার কাছে মাঝে মাঝে হার মেনে যায়। কখনো সংসারে অভাব, কখনো বা চাহিদা মেটানোর তাগিদ। সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা এক জীবন। যে জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখের ঘানি বেশি টানতে হয়। অতঃপর যখন সুখ এসে সত্যিই ধরা দেয়, ঠিক তখন নতুন কোনো অসুখে সেই সুখটাও বিনষ্ট হতে চলে। সুখ খোঁজার জন্য দুঃখকে বরণ করতে যেন মহাব্যস্ত গোটা পৃথিবী।

পৃথিবী এখন বৈষম্যের চাদরে ঢাকা। যে যেভাবে পারছে; সেভাবেই বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। সুখের সন্ধান করতে গিয়ে অন্যের জান-মাল নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে। নীতি নৈতিকতার বড়ই অবক্ষয়। সবাই শুধু গাড়ি-বাড়ির পেছনে ছুটতে গিয়ে সত্যিকারের সুখটাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তবুও পৃথিবীতে নেমে আসুক সুখ; এমনটাই এখন পরম করুণাময়ের কাছে প্রতিদিনের প্রার্থনা।

[লেখক : শিক্ষক, সাহিত্যিক]

back to top