alt

উপ-সম্পাদকীয়

আধিপত্যের রাজনীতি আর ঢালাও মামলা

তারেক আজিজ

: সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তিন দিন কার্যত কোন সরকার ছিল না দেশে। চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি উতরে যখন স্বাভাবিক হতে শুরু হলো তখন থেকেই প্রতিপক্ষ দমনে সেই পুরনো ধারার আশ্রয়। ভুয়া মামলা, গায়েবি মামলার আদলে ঢালাও মামলা। যেসব মামলায় ঢালাও আসামি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সেসব মামলায় ঘটনার সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও চলতে থাকে এসব মামলায় বাণিজ্য। আর মামলা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজনীতির মাঠে সোচ্চার থাকা জামায়াত-বিএনপি। তেমনই জানা যায় দেশের পত্রিকা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে। বিগত ষোলো বছরের দোহাই দিয়ে চলে এহেন কার্যক্রম। পাশাপাশি নিরীহ ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করেও চলে মৌসুমি এ বাণিজ্যের বিস্তার। বিগত সরকারের আমলে যে অভিযোগ করেছে তৎকালীন বিরোধী দলগুলো, এখন সেই একই কাজ করে প্রতিপক্ষ দমনে ব্যস্ত। আদতে এখন প্রতিপক্ষ কারা? যারা রাজনীতিতে কখনোই বেনিফিশিয়ারি না তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কি ফায়দা ওঠানো যাবে? মূলত অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতেই তেমনটি করা হচ্ছে বলেও পত্রিকায় খবরে প্রকাশ।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল ঢালাও মামলা হলেও যেনতেন গ্রেপ্তার নয়। যদিও সে কথা খুব একটা মানা হচ্ছে বলেও মনে হয় না। আরও বলা হয়েছিল সম্পৃক্ততা না থাকলে গ্রেপ্তার নয়। সেটাও রক্ষা করা হচ্ছে না। যেহেতু পতিত সরকারের কর্মী-সমর্থক, নেতা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে। তারা সবাই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে ধরে নেয়ার যুক্তিযুক্ত কোন কারণও নেই তাহলে কেন এত এত ঢালাও মামলা। শুধুই কি পদ-পদবির কারণে মামলায় জড়ানো হচ্ছে? যেসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ কিংবা এজাহার প্রদান করা হয় সেসব মামলায় অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট না হয় তবে এইসব মামলার ভবিষ্যৎই বা কী? যদিও মামলার তদারকি কিংবা মামলা করতে অভিযোগ লেখাÑ সবই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা বিএনপি-জামায়তই করেছে বলেও জানা গেছে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় বাদী বা এজাহারকারী কি এত এত লোকের নাম-ধাম সংগ্রহ কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা আসামিদের সবাইকে চেনেন? যেহেতু আন্দোলনে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছিল সেক্ষেত্রে কজনকে চিনতে পারবেন? আর কয়জনেরই বা নাম জানেন? যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি বা তারা চিনবেন বা চিনেছেন, তাহলে কী দাঁড়ায়! যারা আন্দোলনের সময় মিটিং, প্রতিবাদ সভা কিংবা অস্ত্রবাজি করেনি তাদের নাম কে বা কারা সরবরাহ করল? আন্দোলনে কারা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে সেটা নিশ্চয়ই এতদিনে পরিষ্কার কিংবা খোলাসা হয়েছে।

যদি না-ও হয় তবে সেটাও তদন্তে প্রকাশ পাবে বলেও যারা বিশ্বাস রাখছেন তাদের কি আদতে সঠিক তদন্তে নট-সেন্ট-আপ করা হবে? যদি না হয় তবে গৎবাঁধা তদন্তে দায়সারা প্রতিবেদন দাখিলের অর্থই বা তাহলে কী? একটা মামলা দেখা যায় অনেককে আসামি শ্রেণীভুক্ত করা হয়। সেইসব মামলায় যদি রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে আর পুলিশ নির্মোহ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করে আসামি হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১০-২০ জন। আর এসব মামলায় ঘটনাস্থল অনেকটা কাছাকাছি বা সন্নিকটে তাই বলে সব এজাহারের বক্তব্য অনেকটা একই হওয়া সত্ত্বেও শুধু এজাহারকারীর নামই পরিবর্তিত হয়েছে। আর প্রায় সব মামলায় আসামিও ঘুরেফিরে একই, যা নিছকই হঠকারী। কারণ, ক্রিমিনাল মামলায় কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মামলার অভিযোগ লিখতে হয়। তার ব্যত্যয় ঘটলে মামলা প্রমাণ করাও দুষ্কর। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৫ শতাধিক মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ১০-২০ হাজার। অজ্ঞাত রয়েছে তারও বেশি। এসব মামলায় বেশির ভাগ আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যরা। সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। পাশাপাশি নিরীহ কিছু লোককে আসামি করার খবর পাওয়া গেছে। অন্তর্র্বতী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরও হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি। এ মামলাটি রুজু হয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালতের রামপুরা থানার আমলি আদালতে। যার নম্বর সিআর ৯৯/২০২৪। এই হত্যা মামলার বাদী মোছা. সুফিয়া বেগম। তিনি বলছেন ৪৯নং আসামিকে চেনেন না।

যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন তারপরও তিনি অভিযুক্ত। আর ফৌজদারি মামলার আসামি সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ায় সাধারণের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করার অবকাশ রয়েছে। তিনি যদি পদে থাকা অবস্থায় আসামি হতেন তা হতো ভিন্ন। কিন্তু ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শপথ নিলেন পুলিশের নাকের ডগায়! তাহলে কি আইন মানুষভেদে ভিন্ন? সবার জন্য সমান সুযোগের যে দাবি তা কি ভূলুণ্ঠিত হয় না? সরল মনে এ আমারও জিজ্ঞাসা। জানি না মামলায় কী আদেশ দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। স্বাভাবিক নিয়মে এই মামলা এফআইআর হিসেবে রুজুর আদেশ হওয়ার কথা। অথবা পিবিআই বা অন্য কোন সংস্থাকে তদন্তের আদেশ হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। বাদী যদি না-ই চেনেন তবে নাম কীভাবে এলো তালিকায় তা-ও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। এতে করে সারাদেশের চিত্র ফুটে উঠবে। কারণ, আন্দোলন ও সরকার পতনের পর যত মামলা হয়েছে কে কাকে আসামি করল তা অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যাবে অনেক কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে হয়তো শুনতে পাব। সরকার থেকে যদিও স্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার কোন মামলা করছে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করছেন। আর সেক্ষেত্রে বিগত সরকারের ন্যায় গায়েবি মামলা হচ্ছে; যা ঢালাও মামলা হিসেবে অভিহিত করে বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে সরকার বিব্রত! এক্ষেত্রে আইন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ নজরুলের কথাই ধরে নেয়া যায় সরকারের বক্তব্য। সেক্ষেত্রে সরকারের কি কিছুই করণীয় নেই? আমার তো মনে হয় সরকার এই ক্ষেত্রে একটা সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে পারে। আনিত মামলায় তদন্তসাপেক্ষে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের। নচেৎ দেখা যাবে একই ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। আর এজাহারকারী কিংবা বাদী যা-ই বলি না কেন কেউ কাউকে না চিনেও মামলায় বাদী হয়ে বসে আছেন। যদিও আইনে একই ঘটনার একাধিক মামলার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু যদি আসামি ভিন্ন ভিন্ন হয়? সেক্ষেত্রে কি উপায় অবলম্বন করবে? যদি থানায় এফআইআর রুজু হয় সেক্ষেত্রে দুটি মামলা বা একাধিক মামলা হলে একসঙ্গে কিংবা একই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করার বিধান আছে।

সিআর মামলা থানায় আসার আগেই তো আসামির তালিকায় নাম দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে চক্র। থানার মামলার ক্ষেত্রেও তেমন হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আবার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে কেউ যদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে কোন রিট করে বসেন সেক্ষেত্রে কী হতে পারে বলে ধারণা করা যেতে পারে। যদিও ভুক্তভোগী উচ্চ আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে ক্ষান্ত দিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। যারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আসামি হয়েছেন অথবা অন্য কোন ব্যক্তিস্বার্থের চরিতার্থের জন্যই আসামি করা হয়েছে সঙ্গত কারণেই তারা নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিনপ্রার্থী হতে পারছেন না। আইনগত চর্চার কারণে নিম্ন আদালত জামিন না দেয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। উচ্চ আদালত অধিকাংশ মামলায় শুনতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। শুধু একটা বেঞ্চ শুনানির জন্য ফাইল গ্রহণ করলেও এত বেশি ফাইলের স্তূপ যে যারা জমা দিচ্ছেন তারা হয়তো আসামি ছয় মাসের মধ্যেও তারিখ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর মধ্যে যদি কেউ গ্রেপ্তার হয়ে যান তবে আইনি মারপ্যাঁচে পড়ে অন্যূন তিন মাস হয়তো জেল খেটে ফেলবেন। আর এই অবস্থা যদি নিরপরাধ কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘটে থাকে, তবে এর দায় কে নেবে? ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির শুধু শারীরিক-মানসিক কিংবা আর্থিক নয়, সামাজিক-পারিবারিক মর্যাদাহানি ঘটলে যে কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রেশ বয়ে বেড়াতে হবে যুগযুগ। আবার পুলিশ যে যথাযথ তদন্ত করে সেই ব্যক্তি বিশেষকে নট-সেন্ট-আপ করবে সে আশাও ক্ষীণ। কারণ ঠিক পরবর্তী সরকার যদি বিএনপি গঠন করে ধরে নেই। এসব মামলার চালিকাশক্তিও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব। তাহলে সেই অবস্থায় সরকারি দলের নেতাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পুলিশ সত্য প্রকাশ করবে এমনটা ধারণা করাও যে বোকামি। আদতে সরকার পরিবর্তন হলেও পুলিশ সেই একই আছে। নৈতিক কোন পরিবর্তন দেখা যাবে বলে মনে হয় না। এই আলোচনার অর্থ এই নয়, যেসব হত্যা সংঘটিত হয়েছে সেগুলো হয়নি। মূলত হত্যা হয়েছে যেমন সত্য, তেমন এজাহারকারীও এত এত অভিযুক্ত আসামি চেনা দুঃসাধ্য। তাই বলে এতসব নাম-ধাম সংগ্রহ করে থানায় কিংবা আদালতে নালিশ আনায়ন মোটেই সহজসাধ্য নয়। আর কিছু দুষ্কৃতকারী সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফায়দা ওঠাতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ তদন্তকালীন সময়ে নাম বাদ দিতে লেনদেন করতে ছক কষছেন।

তাহলে কী দাঁড়ায়! সোজাসাপ্টা কথা হচ্ছে ‘মেলার কারবার, ধুলায় অন্ধকার’। কেউ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে আর কেউ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। এরই মধ্যে দিয়ে ভুক্তভোগীর যা হওয়ার হয়ে যায়। একদিকে সরকারের কাছে নিত্যনতুন দাবি। যে দাবি আদায়ে উপর্যুপরি চাপ। অন্যদিকে সরকারের কাজেও মানুষ সন্তুষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। শুরু থেকেই বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না এই সরকারের। যতটুকু আশা নিয়ে মানুষ সরকার পরিবর্তন চেয়েছে ঠিক ততটুকুই হতাশ করেছে। যেটা উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথায়ও স্পষ্ট হয়। যিনি অকপটে বলে ফেললেন, আগে সরকারের সমালোচনা করতাম আর মানুষ মাথায় তুলে নাচত। এখন এত কাজ করি শুধু সমালোচনা পাই। তিনি অনেকটা অনুযোগ নিয়েই মিডিয়ায় কথাগুলো বললেন। তাতে কী বোঝা যায়? যত যা-ই কাজ করুক সমালোচনা থাকবে। সমালোচনা কেউ বন্ধ করতে পারবেও না। আর এতে করেই সরকার সঠিক পথে পরিচালিত হবে। নতুন তিন উপদেষ্টার মধ্যে দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাদের অপসারণ চেয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সরকারের অন্য কেউ এতে মুখ খুলছেন না। শুধু মিডিয়ার চাপাচাপিতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। তাতে কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সন্তুষ্ট? তাদের কর্মকা- এবং বক্তব্যে পরিষ্কার তারা সরকারের এই উপদেষ্টাকে ফ্যাসিবাদের দোসর মনে করে। আর তাকে অপসারণের প্রতিবাদে আয়োজিত সভা থেকে চট্টগ্রামে পাঁচজন আটক করায় ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষেপেছেন।

দেখা যাক এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী হয়? যদিও এতদিন যা দাবি করেছে তা-ই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার ব্যানারকে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন মাঠে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে থেকে সরকারের কাজকে বেগবান করতে সহায়তা করবেন তারা। কার্যত হলো উল্টো, প্রথম হোঁচট খেল রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণ ইস্যুতে। এতে সরকার দাবি কানেই তোলেনি। মাঠের আরেক সক্রিয় গ্রুপ রাজনৈতিক দল হিসেবে শক্তপোক্ত অবস্থানে থাকায় সাংবিধানিক সংকটের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রপতি অপসারণে বাদ সাধে। আর দ্বিতীয় হোঁচট খেলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আকিজ গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সেখ বশির ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উপদেষ্টা পরিষদে যোগদান। দেখা যাক এখন কী ঘটে। আদতে কি সরকার পরিচালনা করছেন উপদেষ্টা পরিষদ নাকি প্রেসার গ্রুপ ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আমরা দেখতে চাই সুস্থির বাংলাদেশ। রাজনীতির পটপরিবর্তন যেন মানুষের কল্যাণে হয়। মানুষ যেন আর দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করতে না হয়। সরকার আসবে-যাবে জনগণ থাকবে। কেউ যেন জনগণকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। শাসক নয়, প্রকৃত সেবকের হাতেই উঠুক দেশ পরিচালনার ভার। এর মধ্যে যাতে কেউ অনাচার কিংবা অবিচারের শিকার না হন। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, যা কখনোই কাম্য নয়। ঘটনাকেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার হোক আর প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পাক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক।

[লেখক : অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী]

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

মুজিব কি কেবলই ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন

বিচারের আগে মিডিয়া ট্রায়াল

ছবি

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক

শাসনব্যবস্থার যে সংস্কার না করলেই নয়

প্রকৃতির বৈরী আচরণ এবং আমাদের প্রস্তুতি

নবান্ন এবং বিশেষ কিছু ধানের কথা

নিজের পায়ে দাঁড়াও

দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি বন্ধে করণীয় কী

রঙ্গব্যঙ্গ : ভুল সবই ভুল

লালন ফকির : শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

ঘরছাড়া করা হয়েছে মুংলু বেসরাকে, দেশে কী তিনি থাকতে পারবেন?

ছবি

জলবায়ু সম্মেলনে সমাধানের আলো দেখতে চাই

ফার্মাসিউটিক্যাল প্যাকেজিংয়ে গ্লাস ব্যবহারের সুবিধা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

হৃদয়ে বাংলাদেশ

এত রক্ত এত অশ্রু, তাও কি স্বর্গ হবে না কেনা!

নদ-নদী দূষণমুক্ত রাখতে হবে

বিব্রত হই, বিব্রত নই

ছবি

ট্রাম্পের বিজয় ও কিছু প্রশ্ন

পোশাক শিল্পের সংকট

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বিশ্বব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনবেন ডনাল্ড ট্রাম্প?

ফুসফুসের ক্যান্সার ও জনসচেতনতা

বেলাই বিল : জীববৈচিত্র্যের এক আধার

ছাত্র রাজনীতি ও দলীয় লেজুড়বৃত্তি : কোন পথে হাঁটবে শিক্ষার্থীরা?

রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার জরুরি

নদী কখনো একা মরে না

রম্যগদ্য : দারিদ্র্য নয়, শিল্পকলা জাদুঘরে...

tab

উপ-সম্পাদকীয়

আধিপত্যের রাজনীতি আর ঢালাও মামলা

তারেক আজিজ

সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তিন দিন কার্যত কোন সরকার ছিল না দেশে। চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি উতরে যখন স্বাভাবিক হতে শুরু হলো তখন থেকেই প্রতিপক্ষ দমনে সেই পুরনো ধারার আশ্রয়। ভুয়া মামলা, গায়েবি মামলার আদলে ঢালাও মামলা। যেসব মামলায় ঢালাও আসামি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সেসব মামলায় ঘটনার সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও চলতে থাকে এসব মামলায় বাণিজ্য। আর মামলা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজনীতির মাঠে সোচ্চার থাকা জামায়াত-বিএনপি। তেমনই জানা যায় দেশের পত্রিকা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে। বিগত ষোলো বছরের দোহাই দিয়ে চলে এহেন কার্যক্রম। পাশাপাশি নিরীহ ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করেও চলে মৌসুমি এ বাণিজ্যের বিস্তার। বিগত সরকারের আমলে যে অভিযোগ করেছে তৎকালীন বিরোধী দলগুলো, এখন সেই একই কাজ করে প্রতিপক্ষ দমনে ব্যস্ত। আদতে এখন প্রতিপক্ষ কারা? যারা রাজনীতিতে কখনোই বেনিফিশিয়ারি না তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কি ফায়দা ওঠানো যাবে? মূলত অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতেই তেমনটি করা হচ্ছে বলেও পত্রিকায় খবরে প্রকাশ।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল ঢালাও মামলা হলেও যেনতেন গ্রেপ্তার নয়। যদিও সে কথা খুব একটা মানা হচ্ছে বলেও মনে হয় না। আরও বলা হয়েছিল সম্পৃক্ততা না থাকলে গ্রেপ্তার নয়। সেটাও রক্ষা করা হচ্ছে না। যেহেতু পতিত সরকারের কর্মী-সমর্থক, নেতা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে। তারা সবাই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে ধরে নেয়ার যুক্তিযুক্ত কোন কারণও নেই তাহলে কেন এত এত ঢালাও মামলা। শুধুই কি পদ-পদবির কারণে মামলায় জড়ানো হচ্ছে? যেসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ কিংবা এজাহার প্রদান করা হয় সেসব মামলায় অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট না হয় তবে এইসব মামলার ভবিষ্যৎই বা কী? যদিও মামলার তদারকি কিংবা মামলা করতে অভিযোগ লেখাÑ সবই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা বিএনপি-জামায়তই করেছে বলেও জানা গেছে। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় বাদী বা এজাহারকারী কি এত এত লোকের নাম-ধাম সংগ্রহ কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা আসামিদের সবাইকে চেনেন? যেহেতু আন্দোলনে হাজার হাজার লোক জড়ো হয়েছিল সেক্ষেত্রে কজনকে চিনতে পারবেন? আর কয়জনেরই বা নাম জানেন? যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি বা তারা চিনবেন বা চিনেছেন, তাহলে কী দাঁড়ায়! যারা আন্দোলনের সময় মিটিং, প্রতিবাদ সভা কিংবা অস্ত্রবাজি করেনি তাদের নাম কে বা কারা সরবরাহ করল? আন্দোলনে কারা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে সেটা নিশ্চয়ই এতদিনে পরিষ্কার কিংবা খোলাসা হয়েছে।

যদি না-ও হয় তবে সেটাও তদন্তে প্রকাশ পাবে বলেও যারা বিশ্বাস রাখছেন তাদের কি আদতে সঠিক তদন্তে নট-সেন্ট-আপ করা হবে? যদি না হয় তবে গৎবাঁধা তদন্তে দায়সারা প্রতিবেদন দাখিলের অর্থই বা তাহলে কী? একটা মামলা দেখা যায় অনেককে আসামি শ্রেণীভুক্ত করা হয়। সেইসব মামলায় যদি রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে আর পুলিশ নির্মোহ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করে আসামি হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১০-২০ জন। আর এসব মামলায় ঘটনাস্থল অনেকটা কাছাকাছি বা সন্নিকটে তাই বলে সব এজাহারের বক্তব্য অনেকটা একই হওয়া সত্ত্বেও শুধু এজাহারকারীর নামই পরিবর্তিত হয়েছে। আর প্রায় সব মামলায় আসামিও ঘুরেফিরে একই, যা নিছকই হঠকারী। কারণ, ক্রিমিনাল মামলায় কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মামলার অভিযোগ লিখতে হয়। তার ব্যত্যয় ঘটলে মামলা প্রমাণ করাও দুষ্কর। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৫ শতাধিক মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ১০-২০ হাজার। অজ্ঞাত রয়েছে তারও বেশি। এসব মামলায় বেশির ভাগ আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যরা। সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। পাশাপাশি নিরীহ কিছু লোককে আসামি করার খবর পাওয়া গেছে। অন্তর্র্বতী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরও হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি। এ মামলাটি রুজু হয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালতের রামপুরা থানার আমলি আদালতে। যার নম্বর সিআর ৯৯/২০২৪। এই হত্যা মামলার বাদী মোছা. সুফিয়া বেগম। তিনি বলছেন ৪৯নং আসামিকে চেনেন না।

যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন তারপরও তিনি অভিযুক্ত। আর ফৌজদারি মামলার আসামি সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ায় সাধারণের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করার অবকাশ রয়েছে। তিনি যদি পদে থাকা অবস্থায় আসামি হতেন তা হতো ভিন্ন। কিন্তু ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শপথ নিলেন পুলিশের নাকের ডগায়! তাহলে কি আইন মানুষভেদে ভিন্ন? সবার জন্য সমান সুযোগের যে দাবি তা কি ভূলুণ্ঠিত হয় না? সরল মনে এ আমারও জিজ্ঞাসা। জানি না মামলায় কী আদেশ দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। স্বাভাবিক নিয়মে এই মামলা এফআইআর হিসেবে রুজুর আদেশ হওয়ার কথা। অথবা পিবিআই বা অন্য কোন সংস্থাকে তদন্তের আদেশ হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। বাদী যদি না-ই চেনেন তবে নাম কীভাবে এলো তালিকায় তা-ও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। এতে করে সারাদেশের চিত্র ফুটে উঠবে। কারণ, আন্দোলন ও সরকার পতনের পর যত মামলা হয়েছে কে কাকে আসামি করল তা অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যাবে অনেক কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে হয়তো শুনতে পাব। সরকার থেকে যদিও স্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার কোন মামলা করছে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মামলা করছেন। আর সেক্ষেত্রে বিগত সরকারের ন্যায় গায়েবি মামলা হচ্ছে; যা ঢালাও মামলা হিসেবে অভিহিত করে বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে সরকার বিব্রত! এক্ষেত্রে আইন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ নজরুলের কথাই ধরে নেয়া যায় সরকারের বক্তব্য। সেক্ষেত্রে সরকারের কি কিছুই করণীয় নেই? আমার তো মনে হয় সরকার এই ক্ষেত্রে একটা সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে পারে। আনিত মামলায় তদন্তসাপেক্ষে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের। নচেৎ দেখা যাবে একই ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। আর এজাহারকারী কিংবা বাদী যা-ই বলি না কেন কেউ কাউকে না চিনেও মামলায় বাদী হয়ে বসে আছেন। যদিও আইনে একই ঘটনার একাধিক মামলার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু যদি আসামি ভিন্ন ভিন্ন হয়? সেক্ষেত্রে কি উপায় অবলম্বন করবে? যদি থানায় এফআইআর রুজু হয় সেক্ষেত্রে দুটি মামলা বা একাধিক মামলা হলে একসঙ্গে কিংবা একই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করার বিধান আছে।

সিআর মামলা থানায় আসার আগেই তো আসামির তালিকায় নাম দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে চক্র। থানার মামলার ক্ষেত্রেও তেমন হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। আবার মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে কেউ যদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে কোন রিট করে বসেন সেক্ষেত্রে কী হতে পারে বলে ধারণা করা যেতে পারে। যদিও ভুক্তভোগী উচ্চ আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে ক্ষান্ত দিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। যারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আসামি হয়েছেন অথবা অন্য কোন ব্যক্তিস্বার্থের চরিতার্থের জন্যই আসামি করা হয়েছে সঙ্গত কারণেই তারা নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিনপ্রার্থী হতে পারছেন না। আইনগত চর্চার কারণে নিম্ন আদালত জামিন না দেয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। উচ্চ আদালত অধিকাংশ মামলায় শুনতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। শুধু একটা বেঞ্চ শুনানির জন্য ফাইল গ্রহণ করলেও এত বেশি ফাইলের স্তূপ যে যারা জমা দিচ্ছেন তারা হয়তো আসামি ছয় মাসের মধ্যেও তারিখ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর মধ্যে যদি কেউ গ্রেপ্তার হয়ে যান তবে আইনি মারপ্যাঁচে পড়ে অন্যূন তিন মাস হয়তো জেল খেটে ফেলবেন। আর এই অবস্থা যদি নিরপরাধ কোন ব্যক্তির সঙ্গে ঘটে থাকে, তবে এর দায় কে নেবে? ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির শুধু শারীরিক-মানসিক কিংবা আর্থিক নয়, সামাজিক-পারিবারিক মর্যাদাহানি ঘটলে যে কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রেশ বয়ে বেড়াতে হবে যুগযুগ। আবার পুলিশ যে যথাযথ তদন্ত করে সেই ব্যক্তি বিশেষকে নট-সেন্ট-আপ করবে সে আশাও ক্ষীণ। কারণ ঠিক পরবর্তী সরকার যদি বিএনপি গঠন করে ধরে নেই। এসব মামলার চালিকাশক্তিও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব। তাহলে সেই অবস্থায় সরকারি দলের নেতাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পুলিশ সত্য প্রকাশ করবে এমনটা ধারণা করাও যে বোকামি। আদতে সরকার পরিবর্তন হলেও পুলিশ সেই একই আছে। নৈতিক কোন পরিবর্তন দেখা যাবে বলে মনে হয় না। এই আলোচনার অর্থ এই নয়, যেসব হত্যা সংঘটিত হয়েছে সেগুলো হয়নি। মূলত হত্যা হয়েছে যেমন সত্য, তেমন এজাহারকারীও এত এত অভিযুক্ত আসামি চেনা দুঃসাধ্য। তাই বলে এতসব নাম-ধাম সংগ্রহ করে থানায় কিংবা আদালতে নালিশ আনায়ন মোটেই সহজসাধ্য নয়। আর কিছু দুষ্কৃতকারী সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফায়দা ওঠাতে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ তদন্তকালীন সময়ে নাম বাদ দিতে লেনদেন করতে ছক কষছেন।

তাহলে কী দাঁড়ায়! সোজাসাপ্টা কথা হচ্ছে ‘মেলার কারবার, ধুলায় অন্ধকার’। কেউ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে আর কেউ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। এরই মধ্যে দিয়ে ভুক্তভোগীর যা হওয়ার হয়ে যায়। একদিকে সরকারের কাছে নিত্যনতুন দাবি। যে দাবি আদায়ে উপর্যুপরি চাপ। অন্যদিকে সরকারের কাজেও মানুষ সন্তুষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। শুরু থেকেই বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না এই সরকারের। যতটুকু আশা নিয়ে মানুষ সরকার পরিবর্তন চেয়েছে ঠিক ততটুকুই হতাশ করেছে। যেটা উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথায়ও স্পষ্ট হয়। যিনি অকপটে বলে ফেললেন, আগে সরকারের সমালোচনা করতাম আর মানুষ মাথায় তুলে নাচত। এখন এত কাজ করি শুধু সমালোচনা পাই। তিনি অনেকটা অনুযোগ নিয়েই মিডিয়ায় কথাগুলো বললেন। তাতে কী বোঝা যায়? যত যা-ই কাজ করুক সমালোচনা থাকবে। সমালোচনা কেউ বন্ধ করতে পারবেও না। আর এতে করেই সরকার সঠিক পথে পরিচালিত হবে। নতুন তিন উপদেষ্টার মধ্যে দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাদের অপসারণ চেয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সরকারের অন্য কেউ এতে মুখ খুলছেন না। শুধু মিডিয়ার চাপাচাপিতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। তাতে কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সন্তুষ্ট? তাদের কর্মকা- এবং বক্তব্যে পরিষ্কার তারা সরকারের এই উপদেষ্টাকে ফ্যাসিবাদের দোসর মনে করে। আর তাকে অপসারণের প্রতিবাদে আয়োজিত সভা থেকে চট্টগ্রামে পাঁচজন আটক করায় ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষেপেছেন।

দেখা যাক এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী হয়? যদিও এতদিন যা দাবি করেছে তা-ই বাস্তবায়িত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার ব্যানারকে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন মাঠে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে থেকে সরকারের কাজকে বেগবান করতে সহায়তা করবেন তারা। কার্যত হলো উল্টো, প্রথম হোঁচট খেল রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণ ইস্যুতে। এতে সরকার দাবি কানেই তোলেনি। মাঠের আরেক সক্রিয় গ্রুপ রাজনৈতিক দল হিসেবে শক্তপোক্ত অবস্থানে থাকায় সাংবিধানিক সংকটের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রপতি অপসারণে বাদ সাধে। আর দ্বিতীয় হোঁচট খেলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আকিজ গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সেখ বশির ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উপদেষ্টা পরিষদে যোগদান। দেখা যাক এখন কী ঘটে। আদতে কি সরকার পরিচালনা করছেন উপদেষ্টা পরিষদ নাকি প্রেসার গ্রুপ ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আমরা দেখতে চাই সুস্থির বাংলাদেশ। রাজনীতির পটপরিবর্তন যেন মানুষের কল্যাণে হয়। মানুষ যেন আর দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করতে না হয়। সরকার আসবে-যাবে জনগণ থাকবে। কেউ যেন জনগণকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। শাসক নয়, প্রকৃত সেবকের হাতেই উঠুক দেশ পরিচালনার ভার। এর মধ্যে যাতে কেউ অনাচার কিংবা অবিচারের শিকার না হন। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, যা কখনোই কাম্য নয়। ঘটনাকেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার হোক আর প্রকৃত দোষী ব্যক্তিরা শাস্তি পাক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক।

[লেখক : অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী]

back to top