নাজমুল ইসলাম
শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের ডক্টর অব ফার্মেসি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। দেশে ফার্মেসি শিক্ষার অগ্রগতিতে এটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে কালবিলম্ব না করে দেশের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই প্রোগ্রাম চালু করা জরুরি। ফার্মেসি একটি বিশেষায়িত ও যুগোপযোগী বিশ্বমানের শিক্ষা ও পেশা। কিন্তু হতাশাজনক হলেও সত্যি যে, দেশের উচ্চশিক্ষার এই শাখাটি এখনো খুঁড়িয়ে চলছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার বছর মেয়াদি বি.ফার্ম (অনার্স) ও পাঁচ বছর মেয়াদি বি.ফার্ম (প্রফেশনাল) প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, যা অনেকটাই পুরনো ধাঁচের সিলেবাসে মোড়ানো।
দেশের ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল’কে অনেকটা নিষ্ক্রিয় যন্ত্র বললেও ভুল হবে না। শুধু রেজিষ্ট্রেশন দেয়া ছাড়া সংস্থাটি ফার্মেসি শিক্ষা-পেশার মানোন্নয়নে কোনো কাজই করছে না। দেশের প্রচলিত ফার্মেসিতে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দেশের বাহিরে এসে পড়ছেন বিপাকে। কারণ এই ডিগ্রি পুরোটাই পুরনো ধাঁচের সিলেবাসে মোড়ানো, যা বিদেশে অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়। এই ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে এভাবেই শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। অনেকেই বিদেশে চাকরি করতে পুনরায় নতুন করে ডক্টর অব ফার্মেসি প্রোগ্রামে ভর্তি হচ্ছেন। আবার অনেকে দেশে স্নাতকোত্তর করো এসেও পুনরায় নতুন করে স্নাতকোত্তর করছেন, যা সময় ও অর্থ উভয়েরই অপচয়।
এদিকে দেশে পেশাজীবী ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে রয়েছে হাজারো সমস্যা ও অভিযোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক ফার্মাসিস্টদের প্রধান কাজ মূলত হাসপাতালে রোগীদের ওষুধের ব্যবহারবিধি, ডোজ নির্ধারণ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিরোধন। অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের হাসপাতালে কোনো গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টই নিয়োগ দেয়া হয় না! ফলে দেশে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয় ওষুধের ভুল প্রয়োগে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা। কীভাবে চলছে দেশের স্বাস্থ্য খাত! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশের মোট ফার্মাসিস্টদের ৫৫ শতাংশ কাজ করবে ‘কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট’ হিসেবে, ৩০ শতাংশ কাজ করবে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায়, ৫ শতাংশ কাজ করবে সরকারি সংস্থায়, ৫ শতাংশ শিক্ষাকার্যক্রমে এবং ৫ শতাংশ কাজ করবে ওষুধ কারখানায়।
অথচ বাংলাদেশের ৯০-৯৫ শতাংশ ফার্মাসিস্টই ওষুধের কারখানায় ওষুধ প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশের ফার্মেসি শিক্ষার ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ চালুর মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। এরপর ১৯৭৬ সালে তৎকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার ‘ফার্মেসি অধ্যাদেশ’ জারি করে ফার্মেসিকে একটি পেশাগত বিষয় এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯৮২ সালে ‘ওষুধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ’ জারির মাধ্যমে জাতীয় ওষুধ নীতি ঘোষণা করা হয়। জাতীয় ওষুধ নীতির ১৩ নং ধারায় ওষুধ কোম্পানিগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৬০ বছর পরে এসেও ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশা ওই জায়গাতেই রয়ে গেছে। সবাই ফার্মেসি পড়ছে আর ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করছে।
কর্মক্ষেত্রের আর সুযোগ না থাকায় কোম্পানিগুলোতেই ইতিহাস রচনা করছে দেশের ফার্মাসিস্টরা। দেশের ওষুধশিল্প আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার নেপথ্যের কারিগর এই ফার্মাসিস্টরা। বাংলাদেশ আজ ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৩ টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ওষুধ রপ্তানিতে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে। স্বল্পোন্নত ওষুধ রপ্তানিকারক দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ২৯৬ কোটি টাকার রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আয় বেড়েছে সাড়ে ছয়গুণেরও বেশি। দেশের বৃহত্তর এই শিল্পটির এই অবস্থানে উন্নীত করার নায়ক আমাদের ফার্মাসিস্ট বন্ধুরা।
ওষুধশিল্পকে শিখরে পৌঁছানো নায়কেরা অবদান রাখতে পারছে না দেশের হাসপাতালগুলোতে জনগণের স্বাস্থ্যসেবাতে। বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। এছাড়া বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর গড়ে চার হাজার ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট বের হয়।
জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর ৪.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ৪.৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ (ব) উপ-অনুচ্ছেদে দেশে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের হসপিটাল ফার্মেসি ও কমিউনিটি ফার্মেসি পদে নিয়োগ/পদায়ন অনিশ্চিত হয়ে আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি খাতে পদায়ন না হওয়ায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা সেবা প্রদান করে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সমৃদ্ধ করতে পারছে না। ফলে দেশের আপাময় জনগণ উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে ডাক্তার, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্টদের ভূমিকা যেমন অপরিসীম; ঠিক তেমনিভাবে হাসপাতালে সঠিক পদ্ধতিতে ওষুধ সংরক্ষণ, রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ ও ডোজ নির্ধারণ, ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজরদারি ও প্রতিরোধকরণে বিশেষ পারদর্শী একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। সর্বোপরি রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ফার্মেসি সেবা প্রদান করতে হলে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান দেশ সংস্কারের এই সময়ে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্কারে স্বাস্থ্য খাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ফার্মাসিস্ট ছাড়া অসম্ভব। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান, দেশের স্বাস্থ্য খাতকে পরিপূর্ণ সংস্কার করে জনগণের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করুন।
[লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]
নাজমুল ইসলাম
শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪
শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের ডক্টর অব ফার্মেসি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। দেশে ফার্মেসি শিক্ষার অগ্রগতিতে এটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে কালবিলম্ব না করে দেশের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই প্রোগ্রাম চালু করা জরুরি। ফার্মেসি একটি বিশেষায়িত ও যুগোপযোগী বিশ্বমানের শিক্ষা ও পেশা। কিন্তু হতাশাজনক হলেও সত্যি যে, দেশের উচ্চশিক্ষার এই শাখাটি এখনো খুঁড়িয়ে চলছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার বছর মেয়াদি বি.ফার্ম (অনার্স) ও পাঁচ বছর মেয়াদি বি.ফার্ম (প্রফেশনাল) প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, যা অনেকটাই পুরনো ধাঁচের সিলেবাসে মোড়ানো।
দেশের ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল’কে অনেকটা নিষ্ক্রিয় যন্ত্র বললেও ভুল হবে না। শুধু রেজিষ্ট্রেশন দেয়া ছাড়া সংস্থাটি ফার্মেসি শিক্ষা-পেশার মানোন্নয়নে কোনো কাজই করছে না। দেশের প্রচলিত ফার্মেসিতে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দেশের বাহিরে এসে পড়ছেন বিপাকে। কারণ এই ডিগ্রি পুরোটাই পুরনো ধাঁচের সিলেবাসে মোড়ানো, যা বিদেশে অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়। এই ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে এভাবেই শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। অনেকেই বিদেশে চাকরি করতে পুনরায় নতুন করে ডক্টর অব ফার্মেসি প্রোগ্রামে ভর্তি হচ্ছেন। আবার অনেকে দেশে স্নাতকোত্তর করো এসেও পুনরায় নতুন করে স্নাতকোত্তর করছেন, যা সময় ও অর্থ উভয়েরই অপচয়।
এদিকে দেশে পেশাজীবী ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে রয়েছে হাজারো সমস্যা ও অভিযোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক ফার্মাসিস্টদের প্রধান কাজ মূলত হাসপাতালে রোগীদের ওষুধের ব্যবহারবিধি, ডোজ নির্ধারণ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিরোধন। অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের হাসপাতালে কোনো গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টই নিয়োগ দেয়া হয় না! ফলে দেশে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয় ওষুধের ভুল প্রয়োগে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা। কীভাবে চলছে দেশের স্বাস্থ্য খাত! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশের মোট ফার্মাসিস্টদের ৫৫ শতাংশ কাজ করবে ‘কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট’ হিসেবে, ৩০ শতাংশ কাজ করবে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায়, ৫ শতাংশ কাজ করবে সরকারি সংস্থায়, ৫ শতাংশ শিক্ষাকার্যক্রমে এবং ৫ শতাংশ কাজ করবে ওষুধ কারখানায়।
অথচ বাংলাদেশের ৯০-৯৫ শতাংশ ফার্মাসিস্টই ওষুধের কারখানায় ওষুধ প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশের ফার্মেসি শিক্ষার ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগ চালুর মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। এরপর ১৯৭৬ সালে তৎকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার ‘ফার্মেসি অধ্যাদেশ’ জারি করে ফার্মেসিকে একটি পেশাগত বিষয় এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯৮২ সালে ‘ওষুধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ’ জারির মাধ্যমে জাতীয় ওষুধ নীতি ঘোষণা করা হয়। জাতীয় ওষুধ নীতির ১৩ নং ধারায় ওষুধ কোম্পানিগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর দীর্ঘ ৬০ বছর পরে এসেও ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশা ওই জায়গাতেই রয়ে গেছে। সবাই ফার্মেসি পড়ছে আর ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করছে।
কর্মক্ষেত্রের আর সুযোগ না থাকায় কোম্পানিগুলোতেই ইতিহাস রচনা করছে দেশের ফার্মাসিস্টরা। দেশের ওষুধশিল্প আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার নেপথ্যের কারিগর এই ফার্মাসিস্টরা। বাংলাদেশ আজ ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে বিশ্বের প্রায় ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৩ টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। ওষুধ রপ্তানিতে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে। স্বল্পোন্নত ওষুধ রপ্তানিকারক দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ২৯৬ কোটি টাকার রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আয় বেড়েছে সাড়ে ছয়গুণেরও বেশি। দেশের বৃহত্তর এই শিল্পটির এই অবস্থানে উন্নীত করার নায়ক আমাদের ফার্মাসিস্ট বন্ধুরা।
ওষুধশিল্পকে শিখরে পৌঁছানো নায়কেরা অবদান রাখতে পারছে না দেশের হাসপাতালগুলোতে জনগণের স্বাস্থ্যসেবাতে। বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। এছাড়া বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর গড়ে চার হাজার ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট বের হয়।
জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর ৪.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ৪.৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ (ব) উপ-অনুচ্ছেদে দেশে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের হসপিটাল ফার্মেসি ও কমিউনিটি ফার্মেসি পদে নিয়োগ/পদায়ন অনিশ্চিত হয়ে আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি খাতে পদায়ন না হওয়ায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা সেবা প্রদান করে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সমৃদ্ধ করতে পারছে না। ফলে দেশের আপাময় জনগণ উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতে ডাক্তার, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্টদের ভূমিকা যেমন অপরিসীম; ঠিক তেমনিভাবে হাসপাতালে সঠিক পদ্ধতিতে ওষুধ সংরক্ষণ, রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ ও ডোজ নির্ধারণ, ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজরদারি ও প্রতিরোধকরণে বিশেষ পারদর্শী একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। সর্বোপরি রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ফার্মেসি সেবা প্রদান করতে হলে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান দেশ সংস্কারের এই সময়ে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্কারে স্বাস্থ্য খাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ফার্মাসিস্ট ছাড়া অসম্ভব। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান, দেশের স্বাস্থ্য খাতকে পরিপূর্ণ সংস্কার করে জনগণের পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করুন।
[লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]