ছলিম উল্লাহ আজাদ
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে বাকি ছয়টি স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষার ফলাফল তাদের এসএসসি পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে প্রকাশিত হয়েছে। মূলত ফলাফলে পাশ-ফেল নির্ভর করেছে ইংরেজি বিষয়ের ওপর। ইংরেজি বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাশের হার ছিল মাত্র ৬৮.৮৯%। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামগ্রিক পাশের হার ৭০%।
পুরো বাংলাদেশের চিত্রই কম-বেশি অনেকটা এই রকম। ইদানীং এটা নিয়ে চারদিকে হইচই শুরু হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডসমূহে এবং সচিবালয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগসহ ভাঙচুরের ঘটনা পর্যন্ত পত্র-পত্রিকার খবর হয়েছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষকেও তাদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মানববন্ধন করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে গত দুই দশকে যেখানে এ+ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতার মহড়া চলছে, সেখানে চট্টগ্রাম বোর্ডের ইংরেজির একটি বিষয়ে ৩১% (প্রায়) পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। রীতিমতো ডিজাস্টার বলা যায়। যে সময়ে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং একাডেমিসমূহ ঊহমষরংয ঢ়যড়হবঃরপং, ইধংরপং, ঋড়ঁৎ ংশরষষং, ঈখঞ, জযবঃড়ৎরপ ঊহমষরংয ইত্যাদি নিয়ে মাতামাতি সেখানে আমাদের একশ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ১০০ নাম্বারে ৩৩ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণই হতে পারেনি। অথচ ইবহবভরঃ ড়ভ উড়ঁনঃ সবসময় পরিক্ষার্থীদের পক্ষে যায়। তা সত্ত্বেও ইংরেজি বিষয়ে আমাদের শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ ইংরেজি ভীতির যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অ্যালার্মিং নিউজ। মনে হচ্ছে ইংরেজি বিষয়ের মানটা নির্দিষ্ট স্কুল-কলেজের ভেতর সীমাবদ্ধ- একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর ভেতর আবদ্ধ। অনেক আগের এই কনসেপ্ট থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যের ব্যবধানটা দিন দিন বাড়ছে।
২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজিতে এ+ এর সংখ্যা বাড়ছে, অপরদিকে ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণের সংখ্যাও বাড়ছে। জেলা শহর এবং মহানগরের অনেক স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দখল অনেক ভালো। শহর থেকে একটু দূরে গেলেই এর সূচক অনেক নি¤œগামী। ভালো স্কুল-কলেজগুলো আরো ভালো করছে, অন্যদিকে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো আরো দুর্বল হচ্ছে। এইচএসসি পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর ইংরেজি বিষয়ের বেইসিক লেভেল খুবই প্রশ্নসাপেক্ষ। বিভিন্ন সময় তাদের প্রাথমিক স্তর এবং মাধ্যমিক স্তরের উত্তীর্ণের বিষয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আসছে। ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ দুই-তিন মাসে পুরো শিক্ষা বর্ষের সিলেবাস শেষ করে ৯০% এর ওপর নাম্বার পেয়ে যায়। অন্যদিকে পুরো শিক্ষা বর্ষে ইংরেজি পড়ে অনেক শিক্ষার্থীদের পাস নাম্বার তুলতে হিমশিম খেতে হয়।
প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি বিষয় নিয়ে আগেও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। কেন ইংরেজি বিষয়ের কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়? এটা কি করোনা মহামারীর ভয়াবহতা নাকি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষা পদ্ধতির বিফলতা? প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত টানা ১২ বছর ইংরেজি পড়ে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন তো দূরের কথা, পাশও করতে পারছে না। তাও আবার জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার অনেকগুলো কমন আইটেমস/কম্পোনেন্টস এ পরীক্ষা হয়। যেমন- ঝববহ চধংংধমব থেকে গঈছ, ছঁবংঃরড়হ অহংবিৎ, ঈষড়ুব ঞবংঃ রিঃয ঈষঁবং, ঈষড়ুব ঞবংঃ রিঃযড়ঁঃ পষঁবং, জব-ধৎৎধহমব, খবঃঃবৎ, চধৎধমৎধঢ়য, অঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হ, অৎঃরপষব, চৎবঢ়ড়ংরঃরড়হ, জরমযঃ ভড়ৎস ড়ভ ঠবৎন, ঘধৎৎধঃরড়হ, চঁহপঃঁধঃরড়হ ধহফ ঈধঢ়রঃধষরুধঃরড়হ, এৎধঢ়য/ঈযধৎঃ, ঈড়সঢ়ষবঃরহম ঝবহঃবহপব, ঞৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ ড়ভ ঝবহঃবহপব, বলতে গেলে ৬০-৭০% সিলেবাস জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় একই।
মাধ্যমিক পর্যায়ে এতগুলো আইটেমস এর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরও এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে এত অকৃতকার্য কেন? মূলত ভার্সিটি এবং মেডিকেল এডমিশন টেস্টের সময় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ের দুর্বলতার চিত্রটি ভালোভাবে ফুটে ওঠে। এডমিশন টেস্টের প্রশ্ন মূলত বেসিক লেবেলের। এই সময় এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় অ এবং অ+ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ মার্ক নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। গত বছর পাশের হার ৭০% এর উপরে থাকা অনেক কলেজ এ বছর পাশের হার ৫০% এর নিচে। তাছাড়া অনেকগুলো কলেজের পাশের হার ৪০% নিচে। বছর বছর ফলাফলে এত নাটকীয় পরিবর্তনের কারণ কি? শিক্ষা বোর্ড ইংরেজি বিষয়ের ফলাফল বিপর্যয়কে একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। অথচ ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন বিগত সাত-আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন ছিল।
এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরছিÑ
১. ইংরেজি বিদেশি ভাষা হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের নাম। তার ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব। এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীর বদ্ধমূল ধারণা- ইংরেজি পড়ে তারা কোন অবস্থাতেই আয়ত্তে আনতে পারবে না। কলেজের শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই অনেক দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের যথেষ্ট আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। অনেক শিক্ষার্থী মাসের পর মাস কলেজে উপস্থিত হয় না। এসএসসি পাশের পর অনেক অসচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা চাকরিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সারা বছর পড়াশোনায় সম্পৃক্ত না থেকে পরীক্ষার ভেন্যু-হলের ভাগ্যের ওপর তীর্থের কাকের মতো বসে থাকে। (তাছাড়া ইংরেজি বিষয়ের বেশিরভাগ উত্তর এক শব্দের/শব্দগুচ্ছ/বাক্যাংশ হওয়ার কারণে পরীক্ষার হলের সুবিধা নিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী ভালো নাম্বারও পেয়ে যায়)। তাদের মূল্যায়নের ক্রেডিবিলিটি এবং রিলাইবিলিটি নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
২. ছাত্রছাত্রীদের বড় একটা অংশ শ্রেণীকক্ষে শেখার চেয়ে কোচিং সেন্টারের পড়াশোনাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ এখন কোচিং সেন্টারের হাতে!
৩. ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটা মিস-কনসেপশন কাজ করে- পরীক্ষার খাতায় কিছু একটা লিখলেই নাম্বার পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় প্রশ্নে থাকা প্যাসেজগুলোর মাঝখানে তারা প্যারাগ্রাফ এবং কম্পোজিশনের নামটা লিখে দেয়। পরীক্ষার্থীরা এতে নাম্বার পাওয়ার দাবি করে এবং পরবর্তীতে শিক্ষকদের/পরীক্ষকদের দোষারোপ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অনেক শিক্ষার্থী মনে করে তারা একই মানের লিখে জেএসসি, এসএসসি তথা পুরো মাধ্যমিক স্তর পার করে আসছে। পরবর্তীতে তারা অসন্তুষ্টি নিয়ে রি-স্কুটিনির (রি-চেক) আবেদন করে।
৪. একশ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কথিত কিছু গাইড ঞড়ঁপয ধহফ চধংং, গধমরপ ঊহমষরংয এবং একটা শিখলে অনেকগুলো শেখার নিজা টেকনিক টাইপের বই খুঁজে শিক্ষাজীবন পার করিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে এ ধরনের টেকনিক কিম্ভুতকিমাকার মনে হয়। যদি একজন স্টুডেন্ট ঝসধৎঃ ইধহমষধফবংয প্যারাগ্রাফে এভাবে লিখে- ঝসধৎঃ ইধহমষধফবংয রং ড়হব ড়ভ ঃযব মৎবধঃবংঃ ঢ়ৎড়নষবসং রহ ড়ঁৎ পড়ঁহঃৎু. ওঃ রং াবৎু ফবঃৎরসবহঃধষ ভড়ৎ ড়ঁৎ পড়ঁহঃৎু. এড়াবৎহসবহঃ ংযড়ঁষফ ঃধশব ংঃবৎহ ংঃবঢ়ং ধমধরহংঃ রঃ...
৫. ছাত্রছাত্রীরা মেমোরাইজেশনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়। পরীক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ প্রশ্নই বুঝে না- বোঝার চেষ্টাও করে না। মুখস্ত বিদ্যার ওপর নির্ভর করা এসব দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন সহজ আর কঠিন একই কথা।
৬. এইচএসসিতে আবশ্যিক বিষয় বাংলা এবং আইসিটির তুলনায় ইংরেজি ছাত্রছাত্রীদের কাছে অনেক কঠিন। আইসিটি বিষয়ে প্রথম তিন অধ্যায় (প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষে) পড়লে মোটামুটি কমন পড়ে যায় এবং ৬০%-৭০% নাম্বার অনায়াসেই পাওয়া যায়। বাংলা বিষয়ের বিগত ২-৩ বছরের বোর্ডের প্রশ্নগুলো আয়ত্ত করে অনধিক ৬০% নাম্বার সহজে পাওয়া যায়। পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন সহজের চেয়ে কমন পড়াটায় একটা বড় ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা এবং আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নে অপশন দেয়া থাকে। যেমন- বাংলা দ্বিতীয়পত্রে পাঁচটি রচনার মধ্যে একটি রচনা লিখতে হয় এবং প্রতিটি প্রশ্নের মধ্যে অপশন দেয়া থাকে। ইংরেজি বিষয়ে কোনো প্রশ্নের মধ্যে অপশন থাকে না। তাছাড়া বিগত ১০ বছরের বোর্ডের প্রশ্ন পড়ে যে কোন কিছু হুবহু কমন আসবে এর কোন গ্যারান্টি নেই। প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি বিষয়টি বেসিকনির্ভর।
৭. তাছাড়া এইচএসসির ফরম পূরণের সময় শিক্ষা বোর্ডের নিয়মবহির্ভূতভাবে (ঢালাওভাবে) ফরম পূরণ ও ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৮. শিক্ষা বোর্ডে নিয়োজিত পরীক্ষকদের মধ্যে নাম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম মেন্টালিটি কাজ করে।
৯. জেলা শহর এবং মহানগরের বেশির ভাগ কলেজগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগে উপচেপড়া ভিড় থাকে। বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের কারণে এসব কলেজগুলোতে পাশের হার অনেক বেশি। কিন্তু মফস্বলের অনেক বড় বড় কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের কাম্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নেই। ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগকেন্দ্রিক এসব কলেজে ইংরেজিতে অকৃতকার্যের হার বেশি থাকে।
২০২৪ সালের (চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের) এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানবিক বিভাগের পাশের হার ৫৭.১১%, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাশের হার ৭৩.৫২% এবং বিজ্ঞান বিভাগের পাশের হার ৯১.৩৩%। বিজ্ঞান বিভাগ ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
সম্ভাব্য প্রতিকারসমূহ :
১. ফলাফল উত্তরণ তথা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর) এবং শিক্ষাবোর্ডসমূহ ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি, শ্রেণী কার্যক্রম মনিটরিং এবং অভিভাবক সমাবেশ ফলপ্রসূ করার ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোরারোপ করতে পারেন।
২. ফরম পূরণের সময় শিক্ষা বোর্ডের বিধি-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলা। নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা যাতে ফরম পূরণের আওতায় না আসে সেদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি রাখা।
৩. ইংরেজি বিষয়কে আরো ফ্লেক্সিবল করার জন্য বিশেষ করে কম্পোজিশন পার্ট এ অপশনের (২/৩) ব্যবস্থা করা
৪. সম্মানিত পরীক্ষকগণের মধ্যে নাম্বারের তারতম্য কমানোর জন্য শিক্ষা বোর্ডের আলোচনার (কর্মশালা) পাশাপাশি প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি পত্রের জন্য একটি করে ডঐঅঞঝঅচচ গ্রুপ (অন্য কোন অ্যাপস) এর মাধ্যম থাকলে নবীন, প্রবীণ সম্মানিত পরীক্ষকগন দুই মাস ব্যাপী কর্মযজ্ঞে প্রতিনিয়ত তাদের মতামত শেয়ার করতে পারবেন।
৫. যে সমস্ত কলেজের ফলাফল ৫০% এর নিচে সে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ে শিক্ষা বোর্ডসমূহ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ফলাফল উত্তরণ শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করতে পারেন। ২০২০ সালের আগে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডসহ কয়েকটি বোর্ডে ফলাফল পরবর্তী (ইংরেজি এবং আইসিটি শিক্ষকদের নিয়ে) এ ধরনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো।
৬. শিক্ষা বোর্ডসমূহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের সুষম বিতরণ ব্যবস্থা (লটারির মাধ্যমে) নিশ্চিত করতে পারেন। অনেক এমপিওভুক্ত কলেজে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১২০০, ২৪০০ জন ছাত্রছাত্রী। অপরদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীর অভাবে (ভর্তির ক্ষেত্রে রিকোয়ারমেন্ট জিপিএ ১/২ দেয়ার পরও) অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে যদিও একই মানের শিক্ষকেরা পাঠদান করে আসছেন। ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে যদি সুষম বণ্টন হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে উপকৃত হবে, ছাত্র সংকটে পড়া প্রতিষ্ঠানসমূহও নতুন গতি পাবে। সর্বোপরি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি; চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষক, নিরীক্ষক, পুনঃনিরীক্ষক]
ছলিম উল্লাহ আজাদ
শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে বাকি ছয়টি স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষার ফলাফল তাদের এসএসসি পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে প্রকাশিত হয়েছে। মূলত ফলাফলে পাশ-ফেল নির্ভর করেছে ইংরেজি বিষয়ের ওপর। ইংরেজি বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাশের হার ছিল মাত্র ৬৮.৮৯%। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সামগ্রিক পাশের হার ৭০%।
পুরো বাংলাদেশের চিত্রই কম-বেশি অনেকটা এই রকম। ইদানীং এটা নিয়ে চারদিকে হইচই শুরু হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডসমূহে এবং সচিবালয়ে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগসহ ভাঙচুরের ঘটনা পর্যন্ত পত্র-পত্রিকার খবর হয়েছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষকেও তাদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মানববন্ধন করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে গত দুই দশকে যেখানে এ+ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতার মহড়া চলছে, সেখানে চট্টগ্রাম বোর্ডের ইংরেজির একটি বিষয়ে ৩১% (প্রায়) পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। রীতিমতো ডিজাস্টার বলা যায়। যে সময়ে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং একাডেমিসমূহ ঊহমষরংয ঢ়যড়হবঃরপং, ইধংরপং, ঋড়ঁৎ ংশরষষং, ঈখঞ, জযবঃড়ৎরপ ঊহমষরংয ইত্যাদি নিয়ে মাতামাতি সেখানে আমাদের একশ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ১০০ নাম্বারে ৩৩ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণই হতে পারেনি। অথচ ইবহবভরঃ ড়ভ উড়ঁনঃ সবসময় পরিক্ষার্থীদের পক্ষে যায়। তা সত্ত্বেও ইংরেজি বিষয়ে আমাদের শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ ইংরেজি ভীতির যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অ্যালার্মিং নিউজ। মনে হচ্ছে ইংরেজি বিষয়ের মানটা নির্দিষ্ট স্কুল-কলেজের ভেতর সীমাবদ্ধ- একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর ভেতর আবদ্ধ। অনেক আগের এই কনসেপ্ট থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যের ব্যবধানটা দিন দিন বাড়ছে।
২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজিতে এ+ এর সংখ্যা বাড়ছে, অপরদিকে ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণের সংখ্যাও বাড়ছে। জেলা শহর এবং মহানগরের অনেক স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি দখল অনেক ভালো। শহর থেকে একটু দূরে গেলেই এর সূচক অনেক নি¤œগামী। ভালো স্কুল-কলেজগুলো আরো ভালো করছে, অন্যদিকে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো আরো দুর্বল হচ্ছে। এইচএসসি পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর ইংরেজি বিষয়ের বেইসিক লেভেল খুবই প্রশ্নসাপেক্ষ। বিভিন্ন সময় তাদের প্রাথমিক স্তর এবং মাধ্যমিক স্তরের উত্তীর্ণের বিষয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আসছে। ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ দুই-তিন মাসে পুরো শিক্ষা বর্ষের সিলেবাস শেষ করে ৯০% এর ওপর নাম্বার পেয়ে যায়। অন্যদিকে পুরো শিক্ষা বর্ষে ইংরেজি পড়ে অনেক শিক্ষার্থীদের পাস নাম্বার তুলতে হিমশিম খেতে হয়।
প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি বিষয় নিয়ে আগেও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। কেন ইংরেজি বিষয়ের কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়? এটা কি করোনা মহামারীর ভয়াবহতা নাকি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষা পদ্ধতির বিফলতা? প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত টানা ১২ বছর ইংরেজি পড়ে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন তো দূরের কথা, পাশও করতে পারছে না। তাও আবার জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার অনেকগুলো কমন আইটেমস/কম্পোনেন্টস এ পরীক্ষা হয়। যেমন- ঝববহ চধংংধমব থেকে গঈছ, ছঁবংঃরড়হ অহংবিৎ, ঈষড়ুব ঞবংঃ রিঃয ঈষঁবং, ঈষড়ুব ঞবংঃ রিঃযড়ঁঃ পষঁবং, জব-ধৎৎধহমব, খবঃঃবৎ, চধৎধমৎধঢ়য, অঢ়ঢ়ষরপধঃরড়হ, অৎঃরপষব, চৎবঢ়ড়ংরঃরড়হ, জরমযঃ ভড়ৎস ড়ভ ঠবৎন, ঘধৎৎধঃরড়হ, চঁহপঃঁধঃরড়হ ধহফ ঈধঢ়রঃধষরুধঃরড়হ, এৎধঢ়য/ঈযধৎঃ, ঈড়সঢ়ষবঃরহম ঝবহঃবহপব, ঞৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ ড়ভ ঝবহঃবহপব, বলতে গেলে ৬০-৭০% সিলেবাস জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় একই।
মাধ্যমিক পর্যায়ে এতগুলো আইটেমস এর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরও এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে এত অকৃতকার্য কেন? মূলত ভার্সিটি এবং মেডিকেল এডমিশন টেস্টের সময় শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ের দুর্বলতার চিত্রটি ভালোভাবে ফুটে ওঠে। এডমিশন টেস্টের প্রশ্ন মূলত বেসিক লেবেলের। এই সময় এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় অ এবং অ+ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ মার্ক নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। গত বছর পাশের হার ৭০% এর উপরে থাকা অনেক কলেজ এ বছর পাশের হার ৫০% এর নিচে। তাছাড়া অনেকগুলো কলেজের পাশের হার ৪০% নিচে। বছর বছর ফলাফলে এত নাটকীয় পরিবর্তনের কারণ কি? শিক্ষা বোর্ড ইংরেজি বিষয়ের ফলাফল বিপর্যয়কে একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। অথচ ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন বিগত সাত-আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন ছিল।
এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরছিÑ
১. ইংরেজি বিদেশি ভাষা হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের নাম। তার ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব। এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীর বদ্ধমূল ধারণা- ইংরেজি পড়ে তারা কোন অবস্থাতেই আয়ত্তে আনতে পারবে না। কলেজের শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই অনেক দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের যথেষ্ট আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। অনেক শিক্ষার্থী মাসের পর মাস কলেজে উপস্থিত হয় না। এসএসসি পাশের পর অনেক অসচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা চাকরিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সারা বছর পড়াশোনায় সম্পৃক্ত না থেকে পরীক্ষার ভেন্যু-হলের ভাগ্যের ওপর তীর্থের কাকের মতো বসে থাকে। (তাছাড়া ইংরেজি বিষয়ের বেশিরভাগ উত্তর এক শব্দের/শব্দগুচ্ছ/বাক্যাংশ হওয়ার কারণে পরীক্ষার হলের সুবিধা নিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী ভালো নাম্বারও পেয়ে যায়)। তাদের মূল্যায়নের ক্রেডিবিলিটি এবং রিলাইবিলিটি নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
২. ছাত্রছাত্রীদের বড় একটা অংশ শ্রেণীকক্ষে শেখার চেয়ে কোচিং সেন্টারের পড়াশোনাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ এখন কোচিং সেন্টারের হাতে!
৩. ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটা মিস-কনসেপশন কাজ করে- পরীক্ষার খাতায় কিছু একটা লিখলেই নাম্বার পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় প্রশ্নে থাকা প্যাসেজগুলোর মাঝখানে তারা প্যারাগ্রাফ এবং কম্পোজিশনের নামটা লিখে দেয়। পরীক্ষার্থীরা এতে নাম্বার পাওয়ার দাবি করে এবং পরবর্তীতে শিক্ষকদের/পরীক্ষকদের দোষারোপ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অনেক শিক্ষার্থী মনে করে তারা একই মানের লিখে জেএসসি, এসএসসি তথা পুরো মাধ্যমিক স্তর পার করে আসছে। পরবর্তীতে তারা অসন্তুষ্টি নিয়ে রি-স্কুটিনির (রি-চেক) আবেদন করে।
৪. একশ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কথিত কিছু গাইড ঞড়ঁপয ধহফ চধংং, গধমরপ ঊহমষরংয এবং একটা শিখলে অনেকগুলো শেখার নিজা টেকনিক টাইপের বই খুঁজে শিক্ষাজীবন পার করিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে এ ধরনের টেকনিক কিম্ভুতকিমাকার মনে হয়। যদি একজন স্টুডেন্ট ঝসধৎঃ ইধহমষধফবংয প্যারাগ্রাফে এভাবে লিখে- ঝসধৎঃ ইধহমষধফবংয রং ড়হব ড়ভ ঃযব মৎবধঃবংঃ ঢ়ৎড়নষবসং রহ ড়ঁৎ পড়ঁহঃৎু. ওঃ রং াবৎু ফবঃৎরসবহঃধষ ভড়ৎ ড়ঁৎ পড়ঁহঃৎু. এড়াবৎহসবহঃ ংযড়ঁষফ ঃধশব ংঃবৎহ ংঃবঢ়ং ধমধরহংঃ রঃ...
৫. ছাত্রছাত্রীরা মেমোরাইজেশনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়। পরীক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ প্রশ্নই বুঝে না- বোঝার চেষ্টাও করে না। মুখস্ত বিদ্যার ওপর নির্ভর করা এসব দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন সহজ আর কঠিন একই কথা।
৬. এইচএসসিতে আবশ্যিক বিষয় বাংলা এবং আইসিটির তুলনায় ইংরেজি ছাত্রছাত্রীদের কাছে অনেক কঠিন। আইসিটি বিষয়ে প্রথম তিন অধ্যায় (প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষে) পড়লে মোটামুটি কমন পড়ে যায় এবং ৬০%-৭০% নাম্বার অনায়াসেই পাওয়া যায়। বাংলা বিষয়ের বিগত ২-৩ বছরের বোর্ডের প্রশ্নগুলো আয়ত্ত করে অনধিক ৬০% নাম্বার সহজে পাওয়া যায়। পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন সহজের চেয়ে কমন পড়াটায় একটা বড় ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা এবং আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নে অপশন দেয়া থাকে। যেমন- বাংলা দ্বিতীয়পত্রে পাঁচটি রচনার মধ্যে একটি রচনা লিখতে হয় এবং প্রতিটি প্রশ্নের মধ্যে অপশন দেয়া থাকে। ইংরেজি বিষয়ে কোনো প্রশ্নের মধ্যে অপশন থাকে না। তাছাড়া বিগত ১০ বছরের বোর্ডের প্রশ্ন পড়ে যে কোন কিছু হুবহু কমন আসবে এর কোন গ্যারান্টি নেই। প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি বিষয়টি বেসিকনির্ভর।
৭. তাছাড়া এইচএসসির ফরম পূরণের সময় শিক্ষা বোর্ডের নিয়মবহির্ভূতভাবে (ঢালাওভাবে) ফরম পূরণ ও ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৮. শিক্ষা বোর্ডে নিয়োজিত পরীক্ষকদের মধ্যে নাম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম মেন্টালিটি কাজ করে।
৯. জেলা শহর এবং মহানগরের বেশির ভাগ কলেজগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগে উপচেপড়া ভিড় থাকে। বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের কারণে এসব কলেজগুলোতে পাশের হার অনেক বেশি। কিন্তু মফস্বলের অনেক বড় বড় কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের কাম্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নেই। ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগকেন্দ্রিক এসব কলেজে ইংরেজিতে অকৃতকার্যের হার বেশি থাকে।
২০২৪ সালের (চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের) এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানবিক বিভাগের পাশের হার ৫৭.১১%, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাশের হার ৭৩.৫২% এবং বিজ্ঞান বিভাগের পাশের হার ৯১.৩৩%। বিজ্ঞান বিভাগ ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
সম্ভাব্য প্রতিকারসমূহ :
১. ফলাফল উত্তরণ তথা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর) এবং শিক্ষাবোর্ডসমূহ ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি, শ্রেণী কার্যক্রম মনিটরিং এবং অভিভাবক সমাবেশ ফলপ্রসূ করার ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোরারোপ করতে পারেন।
২. ফরম পূরণের সময় শিক্ষা বোর্ডের বিধি-নিষেধ পুরোপুরি মেনে চলা। নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা যাতে ফরম পূরণের আওতায় না আসে সেদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি রাখা।
৩. ইংরেজি বিষয়কে আরো ফ্লেক্সিবল করার জন্য বিশেষ করে কম্পোজিশন পার্ট এ অপশনের (২/৩) ব্যবস্থা করা
৪. সম্মানিত পরীক্ষকগণের মধ্যে নাম্বারের তারতম্য কমানোর জন্য শিক্ষা বোর্ডের আলোচনার (কর্মশালা) পাশাপাশি প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি পত্রের জন্য একটি করে ডঐঅঞঝঅচচ গ্রুপ (অন্য কোন অ্যাপস) এর মাধ্যম থাকলে নবীন, প্রবীণ সম্মানিত পরীক্ষকগন দুই মাস ব্যাপী কর্মযজ্ঞে প্রতিনিয়ত তাদের মতামত শেয়ার করতে পারবেন।
৫. যে সমস্ত কলেজের ফলাফল ৫০% এর নিচে সে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ে শিক্ষা বোর্ডসমূহ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ফলাফল উত্তরণ শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করতে পারেন। ২০২০ সালের আগে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডসহ কয়েকটি বোর্ডে ফলাফল পরবর্তী (ইংরেজি এবং আইসিটি শিক্ষকদের নিয়ে) এ ধরনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো।
৬. শিক্ষা বোর্ডসমূহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের সুষম বিতরণ ব্যবস্থা (লটারির মাধ্যমে) নিশ্চিত করতে পারেন। অনেক এমপিওভুক্ত কলেজে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১২০০, ২৪০০ জন ছাত্রছাত্রী। অপরদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীর অভাবে (ভর্তির ক্ষেত্রে রিকোয়ারমেন্ট জিপিএ ১/২ দেয়ার পরও) অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে যদিও একই মানের শিক্ষকেরা পাঠদান করে আসছেন। ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে যদি সুষম বণ্টন হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে উপকৃত হবে, ছাত্র সংকটে পড়া প্রতিষ্ঠানসমূহও নতুন গতি পাবে। সর্বোপরি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি; চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষক, নিরীক্ষক, পুনঃনিরীক্ষক]