জাঁ-নেসার ওসমান
“কি ব্যাপার, চামে চামে বাংলা সাহিত্য ছাইড়া আরব্য রজনীতে দিন কাটাইতাছেন?”
“ও মা, বলছিস আরব্য রজনী, আবার বলছিস আরব্য রজনীতে দিন কাটাইতাছেন! ওই ব্যাটা, রজনী মানে রাইতে আবার দিন কাটাই ক্যামনে?”
“বুঝলেন না, ব্যাপারটা রাইত আর দিন ভাই রাইত আর দিন! মধুমতি লবণে আছে আয়োডিন!”
“কি সব আজগুবী, উদাহরণ, লবণ, আয়োডিন!”
“ক্যান আপনে যেমন, আরব্য রজনীর উপন্যাস সিন্দাবাদ নাবিকের ভ্রমণ কাহিনী ফাঁদলেন, আমিও তেমনি, আপনের রজনীতে একটু আয়োডিন মাইক্কা রোগ মুক্ত করলাম আর কি?”
“আরে ভাই আমার কথারতো মানে আছে। আমি যে সিন্দাবাদের বুড়োর কথা বলছি, তার সাথে আমাদের একটু যোগাযোগ রয়েছে।”
“কি এমন যোগাযোগ?”
“আচ্ছা সিন্দাবাদের বুড়োর গল্পটা তোর জানা আছে?”
“জানা আছে মানে!! এটাতো বহুল পঠিত এক উপন্যাস; “এক বুড়া, হাঁটতে পারে না। ওই বুইড়া জনমানবহীন দ্বীপে নাবিক সিন্দাবাদের ঘাড়ে উইঠা তারে কইলো আমারে ইকটু কান্ধেলও আমি ওই গাছ থেইক্কা ফল পাড়–ম। ব্যাস সিন্দাবাদ সরল মনে বুইড়ারে কান্ধে উঠাইছে। ব্যাস এরপর থ্যেইক্কা বুইড়া দিনকা দিন, মাসকা মাস, আর নাবিক সিন্দাবাদের ঘাড় থেইক্কা নামে না। নামতে কইলেই বুইড়া সিন্দাবাদের গলা টিইপ্পা দম বন্ধ কইরা দিতে চায়। নাবিক সিন্দাবাদ লগে লগে মাপ চায়া জান বাঁচায়।”
“তয় নাবিক সিন্দাবাদ ওই বুড়ার হাত থেইক্কা বাঁচল ক্যেমনে?”
“ওয়াইন মানে, মদ। সিন্দাবাদ নাবিক দেখে কি, দ্বীপের মাঝে প্রচুর আঙুর ফল রয়েছে। তখন নাবিক সিন্দাবাদ ওই আঙুর পচায়া মদ বানায়া বুইড়ারে, মদ খাওইয়া বেহুঁশ কইরা জানে পলাইছে।”
“ ও কে, তোর গল্প ঠিক আছে।”
“কিন্তু প্রশ্ন হইলো, সিন্দাবাদ নাবিকের বুইড়ার সাথে আমাদের কি সম্পর্ক ??”
“ক্যা মনু হেইয়া তুমি বোজো না!!”
“আরে ভাই আমি তো ভাবছি, আপনে এখন সকল কিছুর মইধ্যে এডিট কইরা বাংলা, হিন্দি, উড়িয়া, সবগুলারে ফারসি ভাষায় তর্জমা কইরা বাজারে ছাড়বেন।”
“আরে গদর্ভ বাংলাদেশে ক’জন ফারসি ভাষা জানে, যে আমি ফারসি ভাষা শিখাবো?”
“ধুর, আপনে হালায় এতো প্যাঁচায়েন না তো, আসলে কনতো নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়ার লগে আমাগো সম্পর্ক কী?”
“আচ্ছা ভাই বলতো বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব মহামতি সিরাজউদ্দৌলা কি বলেছিলেন?”
“বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা বলেছিলেন বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ ঘোর ঘনঘটা, কে তাকে আশা দেবে, কে তাকে ভরসা দেবে, কে শোনাবে জাগরণের সেই অমোঘ বাণী”
“ঠিক আছে ঠিক আছে, তারপর কি হলো?”
“তারপর আর কি হইবো, ব্রিটিশরা, আমাগো ঘাড়ের ওপর চাইপ্পা বসলো;”
“জি, আমি সে কথাই বলছিলাম, তোমারা জনগন দুই’শ বছর মোঘল গো গোলামি করলা। তারপর ব্রিটিশের গোলামি আরো দুই’শ বছর। এই ভাবে তোমাদের ঘাড়ের উপর চার’শ বছর বিদেশিরা সিন্দাবাদের বুইড়ার মতো চাইপ্পা বইসাছিলো। এরপর মহাত্মাগান্ধী, জহরলাল নেহেরু, কায়দে আজম, শওকত আলী, মহম্মদ আলী, বল্লভ-ভাই প্যাটেল সবাই মিল্লা ওই ব্রিটিশ বুইড়ারে ঘাড় থেইক্কা নামাইলো। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তোমার বাংলাদেশে গত তিপান্ন বছর যে যে সরকার আসছে ব্যেবাগতেই ওই নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়ার মতুন তোমাগো ঘেডির উপর বয়া তোমাগোই কোপাইছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তোমরা আর কতদিন ওই সিন্দাবাদের বুইড়ারে কান্ধে নিয়া ঘুরবা?”
“এইডা আপনে কি কন? বুইড়ার দিনতো শেষ। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইসা গেছে, হ্যেরা একটু সংস্কার কইরা নির্বাচন দিয়া দিবো, ব্যাস তারপরই নির্বাচিত সরকার দেশ চালাইবো। আর আপনে এবার নিশ্চিন্তে থাকেন যে এবার হবে “ফ্রি-অ্যান্ড-ফেয়ার ইলেকশন”। কোনো প্রকার দুই নাম্বারি ভুট চলবো না।
আপনে ঘরে বয়া থাকবেন আর স্বৈরাচারের গু-ারা সিল মারবো সেই দিন খতম।”
“ভাইনা ভালা, তোমার নির্বাচন কমিশনে, ওই আগের অফিসার, তোমার রিটার্নিং অফিসার তোর ভাষায় ওই স্বৈরাচারের নিয়োগকৃত কর্মচারী। পুলিশ তো হাজার হাজার তোর ওই স্বৈরাচারের পুরানো ক্যাডার, তাহলে সোনা তুমি কিভাবে এতো নিশ্চিত হয়ে বলছো যে এবারের নির্বাচন হবে ‘ফ্রি-অ্যান্ড-ফেয়ার’??”
“ক্যান আলামত দেইক্কা বুঝেন না!!”
“কী আলামত দেখেছেন স্যার যে, এবার আর জনগণের ওপর নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়া ভর করবে না!!”
“এই যে, ইস্তেমায় দুই দলের মার্ডার ব্যাস লগে লগে প্রশাসন আইসা মাঠ দখলে নিলো, কাউরেও আর মাঠে আইতে দিবো না।
মাঠ কোনো দলের দখলে যাইবো না। মাঠ থাকবো প্রশাষণের দখলে।”
“গুরু সাধু সাধু, মাঠ থাকবে প্রশাসণের দখলে, তাহলে অনুষ্ঠান হবে কোথায়। এ যেন মাথাব্যথা হইয়াছে,
অতএব মাথা কাটিয়া ফেলো।
আরে গাড়ল মাঠতো অনুষ্ঠানের জন্য, অনুষ্ঠানই যদি না হয় তা হলে মাঠের দরকার কী!!”
“কিন্তু স্যার আপনে যাই বলেন, আপনে নিশ্চিন্তে থাকেন, অতি শীঘ্রই জনগণের ভুটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে।
তখন নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়াও যদি ঘাড়ে চাইপ্পা বসে সেটা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়াই বসপে, আমাদের বলার কিছুই থাকপে না।”
“ঠিক আচে ভাই তুই ভুটাভুটি কইরে আরব্য রজনীর নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়ারে ঘাড়ে বসা, তাও সই, তবে যা করার জলদি কর, নাইলে সিন্দাবাদের বুইড়া কিন্তু জনগণের গলা টিইপ্পা দম বাইর কইরা দিবো”।
[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]
জাঁ-নেসার ওসমান
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
“কি ব্যাপার, চামে চামে বাংলা সাহিত্য ছাইড়া আরব্য রজনীতে দিন কাটাইতাছেন?”
“ও মা, বলছিস আরব্য রজনী, আবার বলছিস আরব্য রজনীতে দিন কাটাইতাছেন! ওই ব্যাটা, রজনী মানে রাইতে আবার দিন কাটাই ক্যামনে?”
“বুঝলেন না, ব্যাপারটা রাইত আর দিন ভাই রাইত আর দিন! মধুমতি লবণে আছে আয়োডিন!”
“কি সব আজগুবী, উদাহরণ, লবণ, আয়োডিন!”
“ক্যান আপনে যেমন, আরব্য রজনীর উপন্যাস সিন্দাবাদ নাবিকের ভ্রমণ কাহিনী ফাঁদলেন, আমিও তেমনি, আপনের রজনীতে একটু আয়োডিন মাইক্কা রোগ মুক্ত করলাম আর কি?”
“আরে ভাই আমার কথারতো মানে আছে। আমি যে সিন্দাবাদের বুড়োর কথা বলছি, তার সাথে আমাদের একটু যোগাযোগ রয়েছে।”
“কি এমন যোগাযোগ?”
“আচ্ছা সিন্দাবাদের বুড়োর গল্পটা তোর জানা আছে?”
“জানা আছে মানে!! এটাতো বহুল পঠিত এক উপন্যাস; “এক বুড়া, হাঁটতে পারে না। ওই বুইড়া জনমানবহীন দ্বীপে নাবিক সিন্দাবাদের ঘাড়ে উইঠা তারে কইলো আমারে ইকটু কান্ধেলও আমি ওই গাছ থেইক্কা ফল পাড়–ম। ব্যাস সিন্দাবাদ সরল মনে বুইড়ারে কান্ধে উঠাইছে। ব্যাস এরপর থ্যেইক্কা বুইড়া দিনকা দিন, মাসকা মাস, আর নাবিক সিন্দাবাদের ঘাড় থেইক্কা নামে না। নামতে কইলেই বুইড়া সিন্দাবাদের গলা টিইপ্পা দম বন্ধ কইরা দিতে চায়। নাবিক সিন্দাবাদ লগে লগে মাপ চায়া জান বাঁচায়।”
“তয় নাবিক সিন্দাবাদ ওই বুড়ার হাত থেইক্কা বাঁচল ক্যেমনে?”
“ওয়াইন মানে, মদ। সিন্দাবাদ নাবিক দেখে কি, দ্বীপের মাঝে প্রচুর আঙুর ফল রয়েছে। তখন নাবিক সিন্দাবাদ ওই আঙুর পচায়া মদ বানায়া বুইড়ারে, মদ খাওইয়া বেহুঁশ কইরা জানে পলাইছে।”
“ ও কে, তোর গল্প ঠিক আছে।”
“কিন্তু প্রশ্ন হইলো, সিন্দাবাদ নাবিকের বুইড়ার সাথে আমাদের কি সম্পর্ক ??”
“ক্যা মনু হেইয়া তুমি বোজো না!!”
“আরে ভাই আমি তো ভাবছি, আপনে এখন সকল কিছুর মইধ্যে এডিট কইরা বাংলা, হিন্দি, উড়িয়া, সবগুলারে ফারসি ভাষায় তর্জমা কইরা বাজারে ছাড়বেন।”
“আরে গদর্ভ বাংলাদেশে ক’জন ফারসি ভাষা জানে, যে আমি ফারসি ভাষা শিখাবো?”
“ধুর, আপনে হালায় এতো প্যাঁচায়েন না তো, আসলে কনতো নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়ার লগে আমাগো সম্পর্ক কী?”
“আচ্ছা ভাই বলতো বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব মহামতি সিরাজউদ্দৌলা কি বলেছিলেন?”
“বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা বলেছিলেন বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ ঘোর ঘনঘটা, কে তাকে আশা দেবে, কে তাকে ভরসা দেবে, কে শোনাবে জাগরণের সেই অমোঘ বাণী”
“ঠিক আছে ঠিক আছে, তারপর কি হলো?”
“তারপর আর কি হইবো, ব্রিটিশরা, আমাগো ঘাড়ের ওপর চাইপ্পা বসলো;”
“জি, আমি সে কথাই বলছিলাম, তোমারা জনগন দুই’শ বছর মোঘল গো গোলামি করলা। তারপর ব্রিটিশের গোলামি আরো দুই’শ বছর। এই ভাবে তোমাদের ঘাড়ের উপর চার’শ বছর বিদেশিরা সিন্দাবাদের বুইড়ার মতো চাইপ্পা বইসাছিলো। এরপর মহাত্মাগান্ধী, জহরলাল নেহেরু, কায়দে আজম, শওকত আলী, মহম্মদ আলী, বল্লভ-ভাই প্যাটেল সবাই মিল্লা ওই ব্রিটিশ বুইড়ারে ঘাড় থেইক্কা নামাইলো। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তোমার বাংলাদেশে গত তিপান্ন বছর যে যে সরকার আসছে ব্যেবাগতেই ওই নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়ার মতুন তোমাগো ঘেডির উপর বয়া তোমাগোই কোপাইছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তোমরা আর কতদিন ওই সিন্দাবাদের বুইড়ারে কান্ধে নিয়া ঘুরবা?”
“এইডা আপনে কি কন? বুইড়ার দিনতো শেষ। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইসা গেছে, হ্যেরা একটু সংস্কার কইরা নির্বাচন দিয়া দিবো, ব্যাস তারপরই নির্বাচিত সরকার দেশ চালাইবো। আর আপনে এবার নিশ্চিন্তে থাকেন যে এবার হবে “ফ্রি-অ্যান্ড-ফেয়ার ইলেকশন”। কোনো প্রকার দুই নাম্বারি ভুট চলবো না।
আপনে ঘরে বয়া থাকবেন আর স্বৈরাচারের গু-ারা সিল মারবো সেই দিন খতম।”
“ভাইনা ভালা, তোমার নির্বাচন কমিশনে, ওই আগের অফিসার, তোমার রিটার্নিং অফিসার তোর ভাষায় ওই স্বৈরাচারের নিয়োগকৃত কর্মচারী। পুলিশ তো হাজার হাজার তোর ওই স্বৈরাচারের পুরানো ক্যাডার, তাহলে সোনা তুমি কিভাবে এতো নিশ্চিত হয়ে বলছো যে এবারের নির্বাচন হবে ‘ফ্রি-অ্যান্ড-ফেয়ার’??”
“ক্যান আলামত দেইক্কা বুঝেন না!!”
“কী আলামত দেখেছেন স্যার যে, এবার আর জনগণের ওপর নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়া ভর করবে না!!”
“এই যে, ইস্তেমায় দুই দলের মার্ডার ব্যাস লগে লগে প্রশাসন আইসা মাঠ দখলে নিলো, কাউরেও আর মাঠে আইতে দিবো না।
মাঠ কোনো দলের দখলে যাইবো না। মাঠ থাকবো প্রশাষণের দখলে।”
“গুরু সাধু সাধু, মাঠ থাকবে প্রশাসণের দখলে, তাহলে অনুষ্ঠান হবে কোথায়। এ যেন মাথাব্যথা হইয়াছে,
অতএব মাথা কাটিয়া ফেলো।
আরে গাড়ল মাঠতো অনুষ্ঠানের জন্য, অনুষ্ঠানই যদি না হয় তা হলে মাঠের দরকার কী!!”
“কিন্তু স্যার আপনে যাই বলেন, আপনে নিশ্চিন্তে থাকেন, অতি শীঘ্রই জনগণের ভুটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে।
তখন নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়াও যদি ঘাড়ে চাইপ্পা বসে সেটা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়াই বসপে, আমাদের বলার কিছুই থাকপে না।”
“ঠিক আচে ভাই তুই ভুটাভুটি কইরে আরব্য রজনীর নাবিক সিন্দাবাদের বুইড়ারে ঘাড়ে বসা, তাও সই, তবে যা করার জলদি কর, নাইলে সিন্দাবাদের বুইড়া কিন্তু জনগণের গলা টিইপ্পা দম বাইর কইরা দিবো”।
[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]