alt

উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : কানামাছির রাজনীতি

জাঁ-নেসার ওসমান

: রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

“ভাই না ভালা, তায়লে এই বুইড়া বয়সে, পোলাপান গো লগে চক্ষু বাইন্ধা কানামাছি খেলনের খায়েস জানাইলেন, ব্যাপারটা কী?”

“আমি তো তোর ভাষায় কানামাছি খেলনের খায়েস জানাইনি আমি বলছিলাম কানামাছি রাজনীতির কথা। তোরা কিছু পোলাপান মিলে রাজনীতির নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে জয়লাভে সিক্ত হয়ে দেশ চালানোর ব্রত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বি, ভালোকথা।”

“এইডা কী কন, পোলাপানের নাই কুনো অভিজ্ঞতা, হ্যেরা নীতির রাজা রাজনীতির বুঝবো কী? আর দ্যেশ চালাইবো ক্যেমনে!”

“তোদের ওই এক দোষ, কেউ নতুন কিছু করতে গেলেই পারবে কী পারবে না দোদুল্যমানাতায় ভুগিস। আরে ভাই গত তিপান্ন বছর ধরে তোদের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা যা দেশ চালালি! ওহ্ সাধু সাধু, পাঁচ হাজার টাকার বালিশ, বত্রিশ হাজার টাকার পর্দা, তিন হাজার টাকার বিরিয়ানির প্যাকেট, বার লক্ষ টাকার ছাগল, পিকে হালদারের তিন হজার কোটি টাকা, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা, কিছুই না...”

“থাক থাক চুলের এ্যতো লিস্ট বাড়াইনের কাম নাই, আসল কতা কন কী কইতে চান?”

“না বলছিলাম, পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোতো নীতির রাজাকে, রাজার নীতি, বানিয়ে কেবল নিজেদের বিলাস বৈভবে কালক্ষেপণ করে দেশের, জাতির, প্রজন্মের সঙ্গে বেইমানি করে শেষে নিজেরাও জান নিয়ে পালিয়ে ব্যেড়াচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে তো দেখলাম তোদের কারিশমাতি। এখন এই নতুন ছেলেদের নতুন রাজনৈতিক দলটা যদি ভালো কিছু করে তার একটা সুযোগ দেয়া দরকার কিনা বল?”

“ভাইরে আপনে এইডা বুঝেন না ক্যান!! বন্যা শেষ হোইছে কবে, কিন্তুক বন্যার ট্যাকা অহনোও ব্যাংকে থুইছে। এই অপরিপক্ক পোলাপান, রিশকা পাইতোনা হালারা অহন হেলিকপ্টারে ঘুইরা ব্যেড়াইতেছে। ক্ষমতায় যাওনের আগেই লোভ সামলাইতে পারতেছে না তয় ক্ষমতায় গেলে কী করব কন??”

“দায়িত্ব পেলে হয়তো ওদের কানামাছি খেলার চোখের বাঁধন খুলে যাবে লোভ লালসা জয়ও করতে পারে। একটা সুযোগ তো দেয়া যেতেই পারে।”

“আচ্ছা ভাই কন, আপনে কাঁঠালের ভিতরে যতই চিনি ইনজেক্ট করেন, যতই সৌরভ হান্দান এইডা কি কুনোদিনও আঙুরের স্বাদ দিব?”

“না না, তা ক্যেনো, কাঁঠাল কাঁঠালই, আঙুর আঙুরই। কোনোটার সাথে কোনোটার তুলনা হয় না, আর হাজার চেষ্টা করলেও কাঁঠাল আঙুর হবে না আর আঙুর কাঁঠাল হবে না!!”

“জ্বি, আমিভী হ্যেইডাই কইতা ছিলাম, এই সব নি¤œ মধ্যবিত্তের পোলাপান আর যাইহোক, আপনে যেই সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতাছেন এই সব স্যান্ডেল পিন্দনি, প্রাইভেট টিউশনি করা পোলাপান দেশ চালাইতে পারব না। আপনে কি মনে করেন, হ্যেগোরে সুযোগ দিলে হ্যেগো ডিএনএ, বদলায়া যাইব গা?”

“তাহলে আমাদের সাধারণ জনগণের কী হবে? আর কতকাল জনগণ তোদের হাতের ক্রীড়নক হয়ে সময় পার করবে?”

“কেয়ামতসে কেয়ামত তাক। জনগণ মানে দেশের মালিক? আরে ভাই যে দেশের মালিক কর্মচারীর ভয়ে বাতকম্ব করে, কর্মচারীর দাপটে ঘরবাড়ি থুয়াই ভাইগ্গা যায়, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ হকার কোটি কোটি

পাবলিকের সামনে হাজার কোটি ট্যাকা চান্দা দ্যেয় তো হেই হিজলা জনগণের আর কী হোইবো!! হালারা কর্মচারীর লাত্থিগুঁতা খায়া মরার মতুন বাঁইচ্চা থাকবো!!”

“কিন্তু তুই না আশ্রাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরাজীব, যেই জনগণ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তোরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দুই হাজার চব্বিশের স্বৈরাচারের পতন ঘটালো তারা খালি আজীবন তোর ভাষায় কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত রক্ত দিয়েই যাবে, তাদের ভাগ্যের কোনোই পরিবর্তন হবে না!! তারা আজীবন তোদের গোলামিই করবে?”

“কি কমু কন। আপনের জনগণ ইসলামের আসল কথা ভুইল্লা ইবলিশের কথায় নাচতাছে! তয় হ্যের ভাইগ্যের পরিবর্তন ক্যেঠা করবো? ভারত, পাকিস্তান, চীন নাকি আমেরিকা!”

“যাহ্ বিদেশি শক্তির কি ঠ্যেকা পড়েছে তোদের ভাগ্য পরিবর্তনের! আমরা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলানোর জন্য চেষ্টা না করলে কেউ কোনোদিনও কিছু করতে পারবে না। একাত্তারের মুক্তিযুদ্ধে এই জনসাধারণ কোনো ট্রেনিং মেনিং ছাড়াই মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল বলেই না পরে ভারত আর রাশিয়ার সাহায্য পেয়েছিল। সবার আগে নিজের চেষ্টা।”

“জ্বি, ইসলামেভি কোইছে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা; তাহাকেই সাহায্য করেন, যে নিজেকে সাহায্য করে। তুমি হালায় ঘরে বয়া মধ্যবিত্তের গাঞ্জা খাইবা আর আসমান থ্যেইক্কা অ্যাঞ্জেল আয়া তোমারে প্রভু যিশুর ডলার বণ্টন করব, এই স্বপ্ন যতদিন দেখবা ততদিন তুমি তুমার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর লাত্থিগুঁতা খাইবা। এহান থ্যেইক্কা কেউ তুমারে বাঁচাইতে পারবো না। স্বয়ং মোজেসও না।”

“তাহলে এই নির্বচনের লাভ কী?”

“ওম্মাগো, এইডা কী কন। জনগণ তার ভোটিং রাইট তার ভুটাভুটির অধিকারের বলে জনগণের সরকার গঠন করব। জনগণ যদি ভালো লোকেরে ভুট দ্যেয় তায়লে হ্যের ভাইগ্যের পরিবর্তন হোইতেও পারে।”

“কিন্তু জনগণ তো মার্কাকে ভোট দ্যেয়। জনগণ তো কোনো সময় ক্যান্ডিডেট বা প্রার্থীকে ভোট দ্যেয় না, জনগণ তো দলকে ভোট দ্যেয়। সে অন্ধের মতো তার দলের প্রধানকে বিশ্বাস করে সে প্রতিবারই মনে করে তার নেতা এবার তার দারিদ্র দূর করবে।”

“তো, তিপান্ন বছর ধইরা দেখলেন, দল আপনেগো কুনো সাহায্যে আহে না। দল তার দলীয় কর্মী আর ক্যাডাররে মাল দ্যেয়, জনগণের লাইগ্যা ডু ডু ক্যেলা। তারপরও জনগণ যুদি ভালো লোক না দ্যেইক্ষা দলকানা হয়া থাকে তো, আমার কিছুই বলার নাই।”

“তাহলে, কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত জনগণ তোদের গোলামিই করবে? কোনো দিনই তাদের ভাগ্যের কোনোই পরিবর্তন হবে না?”

“আপনের জনগণ, দুঃখ-শোক-ঋণ-অভাব-ব্যাধি এইগুলার জ্বালায় কিছু করা পারে না। তয় চেষ্টাকরলে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে ওগো ভাগ্যের পরিবর্তন হইলেও হোইতে পারে দুই হাজার চব্বিশের পাঁচই

আগস্টের মতো...”

“ঠিক ঠিক কতবড় আশার কথা শুনালি, জনগণ দলকানা না হয়ে, মন-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করলে ওদের ভাগ্যের পরিবর্তন হইবেই হবে পাঁচই আগস্টের রাঙা প্রভাতের মতো...”

[লেখক: চলচ্চিত্রকার]

শিল্পে গ্যাস সংকট : দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিন

আমাদের লড়াইটা আমাদের লড়তে দিন

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

লই গো বুক পেতে অনল-বাণ!

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : কানামাছির রাজনীতি

জাঁ-নেসার ওসমান

রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

“ভাই না ভালা, তায়লে এই বুইড়া বয়সে, পোলাপান গো লগে চক্ষু বাইন্ধা কানামাছি খেলনের খায়েস জানাইলেন, ব্যাপারটা কী?”

“আমি তো তোর ভাষায় কানামাছি খেলনের খায়েস জানাইনি আমি বলছিলাম কানামাছি রাজনীতির কথা। তোরা কিছু পোলাপান মিলে রাজনীতির নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে জয়লাভে সিক্ত হয়ে দেশ চালানোর ব্রত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বি, ভালোকথা।”

“এইডা কী কন, পোলাপানের নাই কুনো অভিজ্ঞতা, হ্যেরা নীতির রাজা রাজনীতির বুঝবো কী? আর দ্যেশ চালাইবো ক্যেমনে!”

“তোদের ওই এক দোষ, কেউ নতুন কিছু করতে গেলেই পারবে কী পারবে না দোদুল্যমানাতায় ভুগিস। আরে ভাই গত তিপান্ন বছর ধরে তোদের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা যা দেশ চালালি! ওহ্ সাধু সাধু, পাঁচ হাজার টাকার বালিশ, বত্রিশ হাজার টাকার পর্দা, তিন হাজার টাকার বিরিয়ানির প্যাকেট, বার লক্ষ টাকার ছাগল, পিকে হালদারের তিন হজার কোটি টাকা, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা, কিছুই না...”

“থাক থাক চুলের এ্যতো লিস্ট বাড়াইনের কাম নাই, আসল কতা কন কী কইতে চান?”

“না বলছিলাম, পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোতো নীতির রাজাকে, রাজার নীতি, বানিয়ে কেবল নিজেদের বিলাস বৈভবে কালক্ষেপণ করে দেশের, জাতির, প্রজন্মের সঙ্গে বেইমানি করে শেষে নিজেরাও জান নিয়ে পালিয়ে ব্যেড়াচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে তো দেখলাম তোদের কারিশমাতি। এখন এই নতুন ছেলেদের নতুন রাজনৈতিক দলটা যদি ভালো কিছু করে তার একটা সুযোগ দেয়া দরকার কিনা বল?”

“ভাইরে আপনে এইডা বুঝেন না ক্যান!! বন্যা শেষ হোইছে কবে, কিন্তুক বন্যার ট্যাকা অহনোও ব্যাংকে থুইছে। এই অপরিপক্ক পোলাপান, রিশকা পাইতোনা হালারা অহন হেলিকপ্টারে ঘুইরা ব্যেড়াইতেছে। ক্ষমতায় যাওনের আগেই লোভ সামলাইতে পারতেছে না তয় ক্ষমতায় গেলে কী করব কন??”

“দায়িত্ব পেলে হয়তো ওদের কানামাছি খেলার চোখের বাঁধন খুলে যাবে লোভ লালসা জয়ও করতে পারে। একটা সুযোগ তো দেয়া যেতেই পারে।”

“আচ্ছা ভাই কন, আপনে কাঁঠালের ভিতরে যতই চিনি ইনজেক্ট করেন, যতই সৌরভ হান্দান এইডা কি কুনোদিনও আঙুরের স্বাদ দিব?”

“না না, তা ক্যেনো, কাঁঠাল কাঁঠালই, আঙুর আঙুরই। কোনোটার সাথে কোনোটার তুলনা হয় না, আর হাজার চেষ্টা করলেও কাঁঠাল আঙুর হবে না আর আঙুর কাঁঠাল হবে না!!”

“জ্বি, আমিভী হ্যেইডাই কইতা ছিলাম, এই সব নি¤œ মধ্যবিত্তের পোলাপান আর যাইহোক, আপনে যেই সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতাছেন এই সব স্যান্ডেল পিন্দনি, প্রাইভেট টিউশনি করা পোলাপান দেশ চালাইতে পারব না। আপনে কি মনে করেন, হ্যেগোরে সুযোগ দিলে হ্যেগো ডিএনএ, বদলায়া যাইব গা?”

“তাহলে আমাদের সাধারণ জনগণের কী হবে? আর কতকাল জনগণ তোদের হাতের ক্রীড়নক হয়ে সময় পার করবে?”

“কেয়ামতসে কেয়ামত তাক। জনগণ মানে দেশের মালিক? আরে ভাই যে দেশের মালিক কর্মচারীর ভয়ে বাতকম্ব করে, কর্মচারীর দাপটে ঘরবাড়ি থুয়াই ভাইগ্গা যায়, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ হকার কোটি কোটি

পাবলিকের সামনে হাজার কোটি ট্যাকা চান্দা দ্যেয় তো হেই হিজলা জনগণের আর কী হোইবো!! হালারা কর্মচারীর লাত্থিগুঁতা খায়া মরার মতুন বাঁইচ্চা থাকবো!!”

“কিন্তু তুই না আশ্রাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরাজীব, যেই জনগণ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তোরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দুই হাজার চব্বিশের স্বৈরাচারের পতন ঘটালো তারা খালি আজীবন তোর ভাষায় কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত রক্ত দিয়েই যাবে, তাদের ভাগ্যের কোনোই পরিবর্তন হবে না!! তারা আজীবন তোদের গোলামিই করবে?”

“কি কমু কন। আপনের জনগণ ইসলামের আসল কথা ভুইল্লা ইবলিশের কথায় নাচতাছে! তয় হ্যের ভাইগ্যের পরিবর্তন ক্যেঠা করবো? ভারত, পাকিস্তান, চীন নাকি আমেরিকা!”

“যাহ্ বিদেশি শক্তির কি ঠ্যেকা পড়েছে তোদের ভাগ্য পরিবর্তনের! আমরা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদলানোর জন্য চেষ্টা না করলে কেউ কোনোদিনও কিছু করতে পারবে না। একাত্তারের মুক্তিযুদ্ধে এই জনসাধারণ কোনো ট্রেনিং মেনিং ছাড়াই মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি সৈন্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল বলেই না পরে ভারত আর রাশিয়ার সাহায্য পেয়েছিল। সবার আগে নিজের চেষ্টা।”

“জ্বি, ইসলামেভি কোইছে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা; তাহাকেই সাহায্য করেন, যে নিজেকে সাহায্য করে। তুমি হালায় ঘরে বয়া মধ্যবিত্তের গাঞ্জা খাইবা আর আসমান থ্যেইক্কা অ্যাঞ্জেল আয়া তোমারে প্রভু যিশুর ডলার বণ্টন করব, এই স্বপ্ন যতদিন দেখবা ততদিন তুমি তুমার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর লাত্থিগুঁতা খাইবা। এহান থ্যেইক্কা কেউ তুমারে বাঁচাইতে পারবো না। স্বয়ং মোজেসও না।”

“তাহলে এই নির্বচনের লাভ কী?”

“ওম্মাগো, এইডা কী কন। জনগণ তার ভোটিং রাইট তার ভুটাভুটির অধিকারের বলে জনগণের সরকার গঠন করব। জনগণ যদি ভালো লোকেরে ভুট দ্যেয় তায়লে হ্যের ভাইগ্যের পরিবর্তন হোইতেও পারে।”

“কিন্তু জনগণ তো মার্কাকে ভোট দ্যেয়। জনগণ তো কোনো সময় ক্যান্ডিডেট বা প্রার্থীকে ভোট দ্যেয় না, জনগণ তো দলকে ভোট দ্যেয়। সে অন্ধের মতো তার দলের প্রধানকে বিশ্বাস করে সে প্রতিবারই মনে করে তার নেতা এবার তার দারিদ্র দূর করবে।”

“তো, তিপান্ন বছর ধইরা দেখলেন, দল আপনেগো কুনো সাহায্যে আহে না। দল তার দলীয় কর্মী আর ক্যাডাররে মাল দ্যেয়, জনগণের লাইগ্যা ডু ডু ক্যেলা। তারপরও জনগণ যুদি ভালো লোক না দ্যেইক্ষা দলকানা হয়া থাকে তো, আমার কিছুই বলার নাই।”

“তাহলে, কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত জনগণ তোদের গোলামিই করবে? কোনো দিনই তাদের ভাগ্যের কোনোই পরিবর্তন হবে না?”

“আপনের জনগণ, দুঃখ-শোক-ঋণ-অভাব-ব্যাধি এইগুলার জ্বালায় কিছু করা পারে না। তয় চেষ্টাকরলে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে ওগো ভাগ্যের পরিবর্তন হইলেও হোইতে পারে দুই হাজার চব্বিশের পাঁচই

আগস্টের মতো...”

“ঠিক ঠিক কতবড় আশার কথা শুনালি, জনগণ দলকানা না হয়ে, মন-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করলে ওদের ভাগ্যের পরিবর্তন হইবেই হবে পাঁচই আগস্টের রাঙা প্রভাতের মতো...”

[লেখক: চলচ্চিত্রকার]

back to top