alt

উপ-সম্পাদকীয়

নিজের পথে ইউরোপ

এম এ হোসাইন

: সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইউরোপীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের হতবাক করে দিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে ইউরোপের নিরাপত্তা আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অগ্রাধিকার নয়। হেগসেথের এই সুস্পষ্ট বক্তব্য দীর্ঘদিন ধরে চলা বাস্তবতাকেই নিশ্চিত করল। এখন ওয়াশিংটন তার ইউরোপের প্রতি কৌশলগত লক্ষ্য পরিবর্তিত করছে এবং ইউরোপ আর আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির ওপর নির্ভর করতে পারবে না, যেমনটা তারা শীতল যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে করে এসেছে। তবে এটি আকস্মিক কোনো সিদ্ধান্ত নয়; বরং এটি দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পুনর্গঠনের ধারাবাহিক ফলাফল, যা বহু বছর ধরে বিকাশ লাভ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলগত স্বার্থ পুনর্বিন্যাসের পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে নতুন হুমকির উত্থান, বিশেষত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। গত দুই দশকে চীন দ্রুত বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, তার অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সামরিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের আগ্রাসী মনোভাব, পিপলস লিবারেশন আর্মির আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করেছে তার সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পদ চীনের উত্থান প্রতিরোধে ব্যবহার করতে।

এই পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রথম আসে ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়ার দিকে মনোনিবেশ’ নীতির মাধ্যমে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদের শক্তিশালী করার পাশাপাশি ইউরোপে মার্কিন সামরিক প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করে ন্যাটোর গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং মিত্র দেশগুলোর মধ্যে দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে। বাইডেন প্রশাসন ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইউরোপীয় দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। এখন, ২০২৫ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ইউরোপকে নিরাপত্তার অগ্রাধিকার থেকে সরিয়ে রাখার নীতি পুরোপুরি কার্যকর করতে শুরু করেন।

দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের সামরিক সক্ষমতা বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্মিলিতভাবে বিপুল অর্থনৈতিক সম্পদ থাকলেও, মহাদেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীন সামরিক সক্ষমতা প্রশ্নসাপেক্ষ রয়ে গেছে। ন্যাটোর উপস্থিতি সত্ত্বেও, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থ হয়েছে এবং কেবল মার্কিন সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করেছে। যদিও ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার তুলনায় চার গুণ বেশি ব্যয় করে, তবুও ইউরোপ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীলÑ বিশেষ করে লজিস্টিকস, গোয়েন্দা তথ্য এবং পারমাণবিক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে।

১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতি ইইউকে স্বয়ংসম্পূর্ণ সামরিক সক্ষমতা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত হলেও, এর কার্যকারিতা বরাবরই সীমিত থেকেছে। ইউরোপের কোনো অভিন্ন সামরিক কমান্ড কাঠামো নেই, এবং প্রতিটি দেশ আলাদা কৌশলগত স্বার্থ নিয়ে পরিচালিত হয়। ইউরোপের দুই প্রধান সামরিক শক্তি ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য, মহাদেশের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানোর পক্ষে সোচ্চার হলেও অগ্রগতি হয়েছে অত্যন্ত ধীরগতির। অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ ন্যাটোর নির্ধারিত মোট জিডিপির ২% প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বরাদ্দ দিতে অনাগ্রহী, যা ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে ইউরোপের নিরাপত্তার দায়িত্ব যথাযথভাবে গ্রহণে অনীহা প্রদর্শনের স্পষ্ট প্রমাণ।

এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাসেলসে হেগসেথের বক্তব্য কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইউরোপ যে মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির ওপর ‘ফ্রি-লোডিং’ করছেÑ এ ধারণাটি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে। শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ন্যাটো যৌথ প্রতিরক্ষা সংস্থা থেকে যৌথ নিরাপত্তা সংস্থায় পরিণত হয়েছে এবং কসোভো, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার মতো ইউরোপের বাইরের সংঘাতেও জড়িয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত মনোযোগ দিতে শুরু করে, তখন ইউরোপে ব্যাপক মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। চীনের উত্থানের ফলে মার্কিন সম্পদ ও মনোযোগের সিংহভাগ এশিয়ায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় ইউরোপে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমে আসছে। মহাদেশজুড়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করা এবং সেনা প্রত্যাহারের ঘটনাগুলো এই পরিবর্তনেরই প্রতিফলন, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ইউরোপকে এখন তার নিজস্ব নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।

এই পরিবর্তনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাও বড় ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন জনগণের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে সন্দেহ বেড়েছে। ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সম্পৃক্ততা ও ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঋণের কারনে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে। পরপর কয়েকটি মার্কিন প্রশাসন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে।

বাজেট সংকোচনও মিত্রদের মধ্যে নিরাপত্তার বোঝা ভাগ করে নেয়ার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করেছে। মার্কিন ভোটাররা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক কর্মসূচির ওপর বেশি মনোযোগ চাচ্ছেন, ফলে নীতিনির্ধারকদের জন্য বিদেশে প্রতিরক্ষা ব্যয় কমানো রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে, বিশেষত যেখানে মিত্র দেশগুলোরই বেশি দায়িত্ব গ্রহণ করা সম্ভব।

ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি মার্কিন মিত্রতার মৌলিক অনুমানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল, যুক্তি দিয়েছিল যে ন্যাটো একটি পুরনো এবং ব্যয়সাপেক্ষ ব্যবস্থা, যা ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য অন্যায্যভাবে লাভজনক। তার প্রশাসন বারবার ন্যাটো সদস্যদের আর্থিক অবদান বাড়ানোর জন্য বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ৫% করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল। এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল যে ইউরোপীয় মিত্ররা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ট্রাম্পের কড়া বক্তব্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি করেছিল, যারা আন্তঃআটলান্টিক জোটের সম্ভাব্য ভাঙনের বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাছাড়া এখানে উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ঠেকানোর আশায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক নেতা প্রকাশ্যে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছিলেন। তাই ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হয়ে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ফলে আন্তঃআটলান্টিক নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব পড়বে। ইউরোপীয় দেশগুলো এখন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্মূল্যায়ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ নিরাপত্তা কাঠামোয় বিনিয়োগ করার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দীর্ঘদিন ধরে যে ‘ইউরোপীয় কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের’ ধারণার ওপর জোর দিয়ে আসছেন, সেটিও নতুন গতি পাবে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করার প্রচেষ্টা চলমান, এবং আরও একীভূত ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কাঠামো নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ব্রিটেন ও ফ্রান্স গোপনে ইউক্রেনে যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ইউরোপ এখন ক্রমশ মার্কিন সহায়তা ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

তবে এই প্রচেষ্টার সামনে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইউরোপের বিচ্ছিন্ন প্রতিরক্ষা কাঠামো, রাজনৈতিক বিভক্তি এবং ন্যাটোর অবকাঠামোর ওপর চলমান নির্ভরতা, স্বয়ংসম্পূর্ণ কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অর্জনকে স্বল্প সময়ে কঠিন করে তুলেছে। এর পাশাপাশি, ক্রমাগত মার্কিন প্রশাসন গুলোর নীতিগত পরিবর্তন ইউরোপীয় নিরাপত্তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলছে। পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর মতো কিছু দেশ যেখানে ন্যাটোর শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলো আরও স্বাধীন ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য জোর দিচ্ছে। এই কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য ইউরোপের একটি সুসংহত নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধীর কিন্তু অবিচল পুনর্গঠন একটি মৌলিক বাস্তবতা তুলে ধরে: ইউরোপীয় নিরাপত্তার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ প্রতিশ্রুতির যুগ শেষ হয়ে গেছে। ন্যাটো রাতারাতি ভেঙে পড়বে না, তবে ইউরোপ যখন তার প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি দায়িত্ব নিচ্ছে, তখন এর ভূমিকা অবশ্যই বিবর্তিত হবে। চীনকে মোকাবিলা করা এবং অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো সামলানোয় ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, সে এখন তার মিত্রদের আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখতে চায়। আন্তঃআটলান্টিক জোটকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং সমন্বিত দায়িত্ব ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে একটি নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে। ইউরোপ যখন এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে, তখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার সক্ষমতাই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক নিরাপত্তার চিত্র।

[লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক]

অস্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক বায়ুদূষণ

আদিবাসীদের কাঁটাতারে বন্দি জীবন

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন : বাংলাদেশের কৌশল

শিক্ষক আন্দোলন প্রসঙ্গে

আর জি কর ঘিরে শাসক কৌশল প্রসঙ্গে

ছবি

এই দাহ্য আগুন কি বিপ্লবী হতাশার বাহ্য রূপ

ভূমিজ বাঁওড় মৎস্যজীবীদের সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানা

মব থামাবে কে?

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংস্কার

ফিরে দেখা বসন্ত উৎসব

এক যে ছিল স্বৈরাচারের আশির দশক!

রম্যগদ্য : কানামাছির রাজনীতি

চেকের মামলায় জেল খাটলেও টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া

প্রতিক্রিয়াশীলতার ছায়াতলে কেবলই অন্ধকার

স্মরণ : গুরু রবিদাস জী

মাঘী পূর্ণিমা : সম্প্রীতির মধুময় স্মৃতি

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার বিপজ্জনক বাস্তবতা

পুলিশে কেমন সংস্কার চাই?

সত্যিই কি ইউএসএআইডি বন্ধ হয়ে যাবে

রম্যগদ্য: “গো টু দ্য ডেভিল”

এত ক্রোধ, প্রতিহিংসা আর অস্থিরতাÑ সবই কি স্বৈরাচারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া!

কীভাবে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়?

কেন এই ধ্বংস?

প্রসঙ্গ: সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

পশ্চিমবঙ্গ : রাজনৈতিক হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : উত্তরণের উপায়

কুষ্ঠ : স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে ইস্যুটি কেন গুরুত্বপূর্ণ

ঔপনিবেশিকতা নাকি মানবতার অবমূল্যায়ন?

রম্যগদ্য : ‘নারী মানেই ব্যভিচারী...’

প্রসঙ্গ: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫

ছবি

নীরদ সি চৌধুরী : পেন্ডুলামের মতো দোলায়মান এক বাঙালি চরিত্র

ভোজবাজি ও ভানুমতির খেলা

সড়কে কিশোর মোটরবাইকার : নিয়ন্ত্রণ জরুরি

মব জাস্টিস আইনের শাসনের পরিপন্থি

ছবি

গভীর সংকট আর বড় সম্ভাবনা পাশাপাশি হাঁটছে

জ্ঞানদায়িনী মা সরস্বতী দেবী

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নিজের পথে ইউরোপ

এম এ হোসাইন

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইউরোপীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের হতবাক করে দিয়ে তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে ইউরোপের নিরাপত্তা আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অগ্রাধিকার নয়। হেগসেথের এই সুস্পষ্ট বক্তব্য দীর্ঘদিন ধরে চলা বাস্তবতাকেই নিশ্চিত করল। এখন ওয়াশিংটন তার ইউরোপের প্রতি কৌশলগত লক্ষ্য পরিবর্তিত করছে এবং ইউরোপ আর আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টির ওপর নির্ভর করতে পারবে না, যেমনটা তারা শীতল যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে করে এসেছে। তবে এটি আকস্মিক কোনো সিদ্ধান্ত নয়; বরং এটি দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির পুনর্গঠনের ধারাবাহিক ফলাফল, যা বহু বছর ধরে বিকাশ লাভ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলগত স্বার্থ পুনর্বিন্যাসের পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে নতুন হুমকির উত্থান, বিশেষত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। গত দুই দশকে চীন দ্রুত বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, তার অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সামরিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের আগ্রাসী মনোভাব, পিপলস লিবারেশন আর্মির আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করেছে তার সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পদ চীনের উত্থান প্রতিরোধে ব্যবহার করতে।

এই পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রথম আসে ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়ার দিকে মনোনিবেশ’ নীতির মাধ্যমে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদের শক্তিশালী করার পাশাপাশি ইউরোপে মার্কিন সামরিক প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য নিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করে ন্যাটোর গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং মিত্র দেশগুলোর মধ্যে দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে। বাইডেন প্রশাসন ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইউরোপীয় দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। এখন, ২০২৫ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ইউরোপকে নিরাপত্তার অগ্রাধিকার থেকে সরিয়ে রাখার নীতি পুরোপুরি কার্যকর করতে শুরু করেন।

দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের সামরিক সক্ষমতা বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্মিলিতভাবে বিপুল অর্থনৈতিক সম্পদ থাকলেও, মহাদেশটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীন সামরিক সক্ষমতা প্রশ্নসাপেক্ষ রয়ে গেছে। ন্যাটোর উপস্থিতি সত্ত্বেও, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থ হয়েছে এবং কেবল মার্কিন সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করেছে। যদিও ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার তুলনায় চার গুণ বেশি ব্যয় করে, তবুও ইউরোপ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীলÑ বিশেষ করে লজিস্টিকস, গোয়েন্দা তথ্য এবং পারমাণবিক প্রতিরোধের ক্ষেত্রে।

১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতি ইইউকে স্বয়ংসম্পূর্ণ সামরিক সক্ষমতা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত হলেও, এর কার্যকারিতা বরাবরই সীমিত থেকেছে। ইউরোপের কোনো অভিন্ন সামরিক কমান্ড কাঠামো নেই, এবং প্রতিটি দেশ আলাদা কৌশলগত স্বার্থ নিয়ে পরিচালিত হয়। ইউরোপের দুই প্রধান সামরিক শক্তি ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য, মহাদেশের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানোর পক্ষে সোচ্চার হলেও অগ্রগতি হয়েছে অত্যন্ত ধীরগতির। অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ ন্যাটোর নির্ধারিত মোট জিডিপির ২% প্রতিরক্ষা ব্যয়ে বরাদ্দ দিতে অনাগ্রহী, যা ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে ইউরোপের নিরাপত্তার দায়িত্ব যথাযথভাবে গ্রহণে অনীহা প্রদর্শনের স্পষ্ট প্রমাণ।

এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাসেলসে হেগসেথের বক্তব্য কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইউরোপ যে মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির ওপর ‘ফ্রি-লোডিং’ করছেÑ এ ধারণাটি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে। শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ন্যাটো যৌথ প্রতিরক্ষা সংস্থা থেকে যৌথ নিরাপত্তা সংস্থায় পরিণত হয়েছে এবং কসোভো, আফগানিস্তান ও লিবিয়ার মতো ইউরোপের বাইরের সংঘাতেও জড়িয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত মনোযোগ দিতে শুরু করে, তখন ইউরোপে ব্যাপক মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। চীনের উত্থানের ফলে মার্কিন সম্পদ ও মনোযোগের সিংহভাগ এশিয়ায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় ইউরোপে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমে আসছে। মহাদেশজুড়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করা এবং সেনা প্রত্যাহারের ঘটনাগুলো এই পরিবর্তনেরই প্রতিফলন, যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ইউরোপকে এখন তার নিজস্ব নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।

এই পরিবর্তনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাও বড় ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন জনগণের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে সন্দেহ বেড়েছে। ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সম্পৃক্ততা ও ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঋণের কারনে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে। পরপর কয়েকটি মার্কিন প্রশাসন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে।

বাজেট সংকোচনও মিত্রদের মধ্যে নিরাপত্তার বোঝা ভাগ করে নেয়ার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করেছে। মার্কিন ভোটাররা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক কর্মসূচির ওপর বেশি মনোযোগ চাচ্ছেন, ফলে নীতিনির্ধারকদের জন্য বিদেশে প্রতিরক্ষা ব্যয় কমানো রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে, বিশেষত যেখানে মিত্র দেশগুলোরই বেশি দায়িত্ব গ্রহণ করা সম্ভব।

ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি মার্কিন মিত্রতার মৌলিক অনুমানগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল, যুক্তি দিয়েছিল যে ন্যাটো একটি পুরনো এবং ব্যয়সাপেক্ষ ব্যবস্থা, যা ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য অন্যায্যভাবে লাভজনক। তার প্রশাসন বারবার ন্যাটো সদস্যদের আর্থিক অবদান বাড়ানোর জন্য বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ৫% করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিল। এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল যে ইউরোপীয় মিত্ররা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ট্রাম্পের কড়া বক্তব্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি করেছিল, যারা আন্তঃআটলান্টিক জোটের সম্ভাব্য ভাঙনের বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাছাড়া এখানে উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ঠেকানোর আশায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক নেতা প্রকাশ্যে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছিলেন। তাই ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হয়ে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ফলে আন্তঃআটলান্টিক নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব পড়বে। ইউরোপীয় দেশগুলো এখন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল পুনর্মূল্যায়ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ নিরাপত্তা কাঠামোয় বিনিয়োগ করার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দীর্ঘদিন ধরে যে ‘ইউরোপীয় কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের’ ধারণার ওপর জোর দিয়ে আসছেন, সেটিও নতুন গতি পাবে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করার প্রচেষ্টা চলমান, এবং আরও একীভূত ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কাঠামো নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ব্রিটেন ও ফ্রান্স গোপনে ইউক্রেনে যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ইউরোপ এখন ক্রমশ মার্কিন সহায়তা ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

তবে এই প্রচেষ্টার সামনে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইউরোপের বিচ্ছিন্ন প্রতিরক্ষা কাঠামো, রাজনৈতিক বিভক্তি এবং ন্যাটোর অবকাঠামোর ওপর চলমান নির্ভরতা, স্বয়ংসম্পূর্ণ কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অর্জনকে স্বল্প সময়ে কঠিন করে তুলেছে। এর পাশাপাশি, ক্রমাগত মার্কিন প্রশাসন গুলোর নীতিগত পরিবর্তন ইউরোপীয় নিরাপত্তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলছে। পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর মতো কিছু দেশ যেখানে ন্যাটোর শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশগুলো আরও স্বাধীন ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য জোর দিচ্ছে। এই কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য ইউরোপের একটি সুসংহত নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে।

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধীর কিন্তু অবিচল পুনর্গঠন একটি মৌলিক বাস্তবতা তুলে ধরে: ইউরোপীয় নিরাপত্তার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ প্রতিশ্রুতির যুগ শেষ হয়ে গেছে। ন্যাটো রাতারাতি ভেঙে পড়বে না, তবে ইউরোপ যখন তার প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি দায়িত্ব নিচ্ছে, তখন এর ভূমিকা অবশ্যই বিবর্তিত হবে। চীনকে মোকাবিলা করা এবং অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো সামলানোয় ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, সে এখন তার মিত্রদের আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখতে চায়। আন্তঃআটলান্টিক জোটকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং সমন্বিত দায়িত্ব ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে একটি নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে। ইউরোপ যখন এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে, তখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার সক্ষমতাই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক নিরাপত্তার চিত্র।

[লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক]

back to top