মোহাম্মদ শাজালাল
বর্তমান বাংলাদেশ প্রযুক্তির রূপান্তরের এক মহাযাত্রায় রয়েছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ডিজিটাল ব্যাংকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- এই সবকিছু আমাদের জীবনযাত্রাকে দ্রুত ও সহজতর করেছে; কিন্তু প্রযুক্তির এ সুবিধা আমাদের নিয়ে এসেছে এক অদৃশ্য যুদ্ধের মধ্যে, সেটি হচ্ছে সাইবার অপরাধ ও তথ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ।
প্রতিদিন আমাদের মোবাইল ফোনে আসে নানা রকমের মেসেজ- ‘আপনি ১০,০০০ টাকা জিতেছেন’, ‘এই লিংকে ক্লিক করুন’ এবং ‘পুরস্কার জিতে নিন’, বা হঠাৎ করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে আসে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির লিংক। অনেকেই না বুঝেই এসব লিংকে ক্লিক করে নিজের তথ্য তুলে দেন অপরাধীর হাতে। আর তখনই শুরু হয় বিপদ-ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস, অর্থ চুরি, বা পরিচয় চুরি করে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-।
বর্তমান প্রেক্ষাপট : বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু ২০২৪ সালেই দেশে লক্ষাধিক সাইবার হামলার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া, ভুয়া ফেসবুক আইডি বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল- এসব ঘটনা এখন আর শুধু খবরের কাগজে সীমাবদ্ধ নয়, এগুলো আমাদের ঘরের ঘটনা হয়ে দাঁডিয়েছে।
সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন সাইবার নিরাপত্তা আইন, সাইবার সিকিউরিটি সেল, ই-গভ সার্ভিস; কিন্তু সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন বা প্রযুক্তি দিয়ে এ যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। এখানে জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধই আসল অস্ত্র।
সাধারণ মানুষের জন্য সাইবার ঝুঁকি : ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ায় ‘নিজের পরিচয় নিজেই বিপদে ফেলি’। আমরা অনেক সময় না বুঝেই আমাদের ফোন নম্বর, এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, ঠিকানা কিংবা পরিবারের সদস্যদের নাম-ছবি ফেসবুকে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দিয়ে ফেলি। এগুলো মূলত আমাদের ডিজিটাল পরিচয়ের অংশ। প্রতারকরা এসব তথ্য নিয়ে খুব সহজেই আপনার নামে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে বা এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলে আর্থিক প্রতারণা করতে পারে। শুধু তাই নয়, এসব তথ্য দিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন, ফেইক লোন আবেদন এমনকি অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও আপনার নাম ব্যবহার হতে পারে।
ফিশিং ও স্ক্যাম লিংক ‘এক ক্লিকেই সর্বনাশ’। আপনার মেসেজে বা ইমেইলে হঠাৎ করে আসে একটি লিংক- যেখানে লেখা- ‘আপনার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হতে যাচ্ছে’, ‘এই লিংকে ক্লিক করে লগইন করুন’, ‘আপনার টাকা আটকে গেছে’Ñ এগুলো আসলে প্রতারকদের ফাঁদ। আপনি যখনই ওই লিংকে ক্লিক করে আপনার ইমেইল, পাসওয়ার্ড, বা কার্ড ডিটেইলস দেন- তখনই তারা সেটা কপি করে নিয়ে যায় এবং আপনি বুঝে ওঠার আগেই আপনার টাকা বা এক্সেস চলে যায় তাদের হাতে।
ভুয়া লটারি ও অফার ‘বিনা পয়সায় কিছুই আসে না’। ‘আপনি লটারি জিতেছেন!’, ‘এই অফার শুধুমাত্র আপনার জন্য!’, ‘একটি ফোন ফ্রি!’ এসব শিরোনাম দিয়ে ইউটিউব বা ফেসবুকে অনেক পোস্ট বা ভিডিও ভাইরাল হয়। তারা চায় আপনি একটি ফরম পূরণ করুন, যেখানে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, এমনকি এনআইডি চাওয়া হয়। এসব তথ্য সংগ্রহ করে প্রতারক চক্র ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে, অথবা ভবিষ্যতে অন্য প্রতারণায় ব্যবহার করে।
ভুয়া অ্যাপস ও ভাইরাস ‘মুখোশের আড়ালে ডাটা চোর’। অনেক অ্যাপ দেখতে নিরীহ বা দরকারি মনে হলেও, ইনস্টল করলেই আপনার ফোন থেকে কন্টাক্ট, গ্যালারির ছবি, কল হিস্টারি, লোকেশন এমনকি মাইক্রোফোনে কথোপকথন পর্যন্ত তুলে নিচ্ছে। এইসব অ্যাপ অনেক সময় গুগল প্লে স্টোর বা ফেসবুক অ্যাডে ঘুরে বেড়ায়। এগুলো স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার দিয়ে তৈরি। একবার ইনস্টল করলেই আপনার পুরো ফোনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারদের হাতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা ‘বন্ধু সেজে ব্ল্যাকমেইলার’ : আপনার ফেসবুকে অচেনা কেউ খুব সুন্দর ছবি দিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাল। আপনি ভাবলেন, ‘নতুন বন্ধু হোক’ কিন্তু এটাই হতে পারে ফাঁদ। সে ধীরে ধীরে চ্যাটে ব্যক্তিগত আলাপ করে, বিশ^াস অর্জন করে। এরপর হয়তো ভিডিও চ্যাটে কিছু গোপন মুহূর্ত রেকর্ড করে এবং পরে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। অনেক কিশোর/তরুণ-তরুণী এই প্রতারণার শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
বিকাশ/নগদ ভেরিফিকেশন প্রতারণা ‘এক কোডে সব শেষ’ : প্রতারক নিজেকে বিকাশ বা নগদের কর্মী পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলে, ‘আপনার একাউন্ট ভেরিফিকেশন বাকি, এখনই করুন না হলে বন্ধ হবে।’ তারপর একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠায় এবং বলেÑ ‘এই কোডটি বলুন’ আপনি যদি সেই কোড শেয়ার করেন, সাথে সাথেই তারা আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়।
এমনকি অনেক সময় আপনি যদি মোবাইল স্ক্রিন শেয়ার অ্যাপ (যেমন অহুউবংশ) ইনস্টল করেন, তারা সরাসরি আপনার ফোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কিভাবে নিরাপদ থাকবেন : শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। বড় অক্ষর, ছোট অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন মিলিয়ে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
টু-ফেক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন : ফেসবুক, গুগল, ব্যাংকিং অ্যাপ- যেখানে সম্ভব, সেখানে দুই স্তরের নিরাপত্তা সক্রিয় রাখুন। এতে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জানলেও অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না।
অপরিচিত লিংকে ক্লিক করবেন না : কোনো মেসেজ, ইমেইল বা বিজ্ঞাপন থেকে আসা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করবেন না। গুগল বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট যাচাই করে নিন।
নিজের তথ্য শেয়ারে সতর্কতা : সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের জন্ম তারিখ, বাসার ঠিকানা, এনআইডি নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এসব তথ্য শেয়ার করবেন না।
সফটওয়্যার আপডেট রাখুন : মোবাইল বা কম্পিউটারে নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন- পুরাতন ভার্সনে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকতে পারে।
সাবধানে অ্যাপস ইনস্টল করুন : শুধু গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপস ইনস্টল করুন। অচেনা ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ নামাবেন না।
প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব : ব্যাংক, টেলিকম কোম্পানি, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান- সবাইকে নিজেদের গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বিজ্ঞাপন বা অফারের পাশাপাশি তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনাও প্রচার করতে হবে।
আইন প্রয়োগ ও সরকারের করণীয় : জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমে প্রচার চালানো; স্কুল-কলেজে সাইবার নিরাপত্তা শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি; প্রতিটি থানায় সাইবার ক্রাইম হেল্প ডেস্ক; আইন সংশোধন করে আইনের অপব্যবহার রোধ।
সাইবার অপরাধ কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, এটি আজকের বাস্তবতা। এটি রোধ করতে চাইলে আমাদের শুধু প্রযুক্তি নয়, সচেতন মনও থাকতে হবে। আজ থেকে শুরু হোক নিজেকে নিরাপদ রাখার যাত্রা। মনে রাখবেন, আপনি যদি নিজের তথ্যের রক্ষক হতে পারেন, তাহলে অনলাইন জগৎ আপনার জন্যই নিরাপদ হয়ে উঠবে।
[লেখক : পরিচালক (লোকাল অপারেশনস অ্যান্ড অ্যাডমিন), স্টারটাইজ লিমিটেড]
মোহাম্মদ শাজালাল
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
বর্তমান বাংলাদেশ প্রযুক্তির রূপান্তরের এক মহাযাত্রায় রয়েছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ডিজিটাল ব্যাংকিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- এই সবকিছু আমাদের জীবনযাত্রাকে দ্রুত ও সহজতর করেছে; কিন্তু প্রযুক্তির এ সুবিধা আমাদের নিয়ে এসেছে এক অদৃশ্য যুদ্ধের মধ্যে, সেটি হচ্ছে সাইবার অপরাধ ও তথ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ।
প্রতিদিন আমাদের মোবাইল ফোনে আসে নানা রকমের মেসেজ- ‘আপনি ১০,০০০ টাকা জিতেছেন’, ‘এই লিংকে ক্লিক করুন’ এবং ‘পুরস্কার জিতে নিন’, বা হঠাৎ করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে আসে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির লিংক। অনেকেই না বুঝেই এসব লিংকে ক্লিক করে নিজের তথ্য তুলে দেন অপরাধীর হাতে। আর তখনই শুরু হয় বিপদ-ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস, অর্থ চুরি, বা পরিচয় চুরি করে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-।
বর্তমান প্রেক্ষাপট : বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু ২০২৪ সালেই দেশে লক্ষাধিক সাইবার হামলার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া, ভুয়া ফেসবুক আইডি বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল- এসব ঘটনা এখন আর শুধু খবরের কাগজে সীমাবদ্ধ নয়, এগুলো আমাদের ঘরের ঘটনা হয়ে দাঁডিয়েছে।
সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন সাইবার নিরাপত্তা আইন, সাইবার সিকিউরিটি সেল, ই-গভ সার্ভিস; কিন্তু সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন বা প্রযুক্তি দিয়ে এ যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। এখানে জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধই আসল অস্ত্র।
সাধারণ মানুষের জন্য সাইবার ঝুঁকি : ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ায় ‘নিজের পরিচয় নিজেই বিপদে ফেলি’। আমরা অনেক সময় না বুঝেই আমাদের ফোন নম্বর, এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, ঠিকানা কিংবা পরিবারের সদস্যদের নাম-ছবি ফেসবুকে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দিয়ে ফেলি। এগুলো মূলত আমাদের ডিজিটাল পরিচয়ের অংশ। প্রতারকরা এসব তথ্য নিয়ে খুব সহজেই আপনার নামে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে বা এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলে আর্থিক প্রতারণা করতে পারে। শুধু তাই নয়, এসব তথ্য দিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন, ফেইক লোন আবেদন এমনকি অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও আপনার নাম ব্যবহার হতে পারে।
ফিশিং ও স্ক্যাম লিংক ‘এক ক্লিকেই সর্বনাশ’। আপনার মেসেজে বা ইমেইলে হঠাৎ করে আসে একটি লিংক- যেখানে লেখা- ‘আপনার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হতে যাচ্ছে’, ‘এই লিংকে ক্লিক করে লগইন করুন’, ‘আপনার টাকা আটকে গেছে’Ñ এগুলো আসলে প্রতারকদের ফাঁদ। আপনি যখনই ওই লিংকে ক্লিক করে আপনার ইমেইল, পাসওয়ার্ড, বা কার্ড ডিটেইলস দেন- তখনই তারা সেটা কপি করে নিয়ে যায় এবং আপনি বুঝে ওঠার আগেই আপনার টাকা বা এক্সেস চলে যায় তাদের হাতে।
ভুয়া লটারি ও অফার ‘বিনা পয়সায় কিছুই আসে না’। ‘আপনি লটারি জিতেছেন!’, ‘এই অফার শুধুমাত্র আপনার জন্য!’, ‘একটি ফোন ফ্রি!’ এসব শিরোনাম দিয়ে ইউটিউব বা ফেসবুকে অনেক পোস্ট বা ভিডিও ভাইরাল হয়। তারা চায় আপনি একটি ফরম পূরণ করুন, যেখানে আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, এমনকি এনআইডি চাওয়া হয়। এসব তথ্য সংগ্রহ করে প্রতারক চক্র ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে, অথবা ভবিষ্যতে অন্য প্রতারণায় ব্যবহার করে।
ভুয়া অ্যাপস ও ভাইরাস ‘মুখোশের আড়ালে ডাটা চোর’। অনেক অ্যাপ দেখতে নিরীহ বা দরকারি মনে হলেও, ইনস্টল করলেই আপনার ফোন থেকে কন্টাক্ট, গ্যালারির ছবি, কল হিস্টারি, লোকেশন এমনকি মাইক্রোফোনে কথোপকথন পর্যন্ত তুলে নিচ্ছে। এইসব অ্যাপ অনেক সময় গুগল প্লে স্টোর বা ফেসবুক অ্যাডে ঘুরে বেড়ায়। এগুলো স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার দিয়ে তৈরি। একবার ইনস্টল করলেই আপনার পুরো ফোনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারদের হাতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা ‘বন্ধু সেজে ব্ল্যাকমেইলার’ : আপনার ফেসবুকে অচেনা কেউ খুব সুন্দর ছবি দিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাল। আপনি ভাবলেন, ‘নতুন বন্ধু হোক’ কিন্তু এটাই হতে পারে ফাঁদ। সে ধীরে ধীরে চ্যাটে ব্যক্তিগত আলাপ করে, বিশ^াস অর্জন করে। এরপর হয়তো ভিডিও চ্যাটে কিছু গোপন মুহূর্ত রেকর্ড করে এবং পরে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। অনেক কিশোর/তরুণ-তরুণী এই প্রতারণার শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
বিকাশ/নগদ ভেরিফিকেশন প্রতারণা ‘এক কোডে সব শেষ’ : প্রতারক নিজেকে বিকাশ বা নগদের কর্মী পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলে, ‘আপনার একাউন্ট ভেরিফিকেশন বাকি, এখনই করুন না হলে বন্ধ হবে।’ তারপর একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠায় এবং বলেÑ ‘এই কোডটি বলুন’ আপনি যদি সেই কোড শেয়ার করেন, সাথে সাথেই তারা আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়।
এমনকি অনেক সময় আপনি যদি মোবাইল স্ক্রিন শেয়ার অ্যাপ (যেমন অহুউবংশ) ইনস্টল করেন, তারা সরাসরি আপনার ফোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কিভাবে নিরাপদ থাকবেন : শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। বড় অক্ষর, ছোট অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন মিলিয়ে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
টু-ফেক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন : ফেসবুক, গুগল, ব্যাংকিং অ্যাপ- যেখানে সম্ভব, সেখানে দুই স্তরের নিরাপত্তা সক্রিয় রাখুন। এতে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জানলেও অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না।
অপরিচিত লিংকে ক্লিক করবেন না : কোনো মেসেজ, ইমেইল বা বিজ্ঞাপন থেকে আসা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করবেন না। গুগল বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট যাচাই করে নিন।
নিজের তথ্য শেয়ারে সতর্কতা : সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের জন্ম তারিখ, বাসার ঠিকানা, এনআইডি নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এসব তথ্য শেয়ার করবেন না।
সফটওয়্যার আপডেট রাখুন : মোবাইল বা কম্পিউটারে নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন- পুরাতন ভার্সনে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকতে পারে।
সাবধানে অ্যাপস ইনস্টল করুন : শুধু গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপস ইনস্টল করুন। অচেনা ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ নামাবেন না।
প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব : ব্যাংক, টেলিকম কোম্পানি, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান- সবাইকে নিজেদের গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। বিজ্ঞাপন বা অফারের পাশাপাশি তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনাও প্রচার করতে হবে।
আইন প্রয়োগ ও সরকারের করণীয় : জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমে প্রচার চালানো; স্কুল-কলেজে সাইবার নিরাপত্তা শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি; প্রতিটি থানায় সাইবার ক্রাইম হেল্প ডেস্ক; আইন সংশোধন করে আইনের অপব্যবহার রোধ।
সাইবার অপরাধ কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, এটি আজকের বাস্তবতা। এটি রোধ করতে চাইলে আমাদের শুধু প্রযুক্তি নয়, সচেতন মনও থাকতে হবে। আজ থেকে শুরু হোক নিজেকে নিরাপদ রাখার যাত্রা। মনে রাখবেন, আপনি যদি নিজের তথ্যের রক্ষক হতে পারেন, তাহলে অনলাইন জগৎ আপনার জন্যই নিরাপদ হয়ে উঠবে।
[লেখক : পরিচালক (লোকাল অপারেশনস অ্যান্ড অ্যাডমিন), স্টারটাইজ লিমিটেড]