আনোয়ারুল হক
‘২৪-এর জুলাই আন্দোলনের সময়গুলোতে ভারতীয় মিডিয়া সাধারণভাবে আন্দোলনের সংবাদ পরিবেশন করেছে। সংবাদে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য এবং সরকারের বক্তব্য তুলে ধরেছে। সবটাই আমাদের মতো করে না হলেও মোটামুটি স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অতিরঞ্জিত প্রচার, ভারত সরকারের কিছু কর্তাব্যক্তি ও রাজনীতিকেরও তা নিয়ে সমালোচনা ও
বাড়তি মন্তব্য দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মন্তব্য করেছিলেন, ‘হয়তো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ভারতের কিছুটা সময় লাগছে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গত সরকারের সংগে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির সম্পর্কের বিষয়ে দূরত্ব রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই দূরত্ব ঘোচাতে কাজ করবে। মানুষ যেন ভাবে ভারত ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ঝানু কূটনীতিকের মতো ঠা-া মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের আগমনের পর থেকে পররাষ্ট্র সচিব কিছুটা কোণঠাসা হলেও এখনও সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে মনে হয়। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া ও ভারত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এবং তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে কাল্পনিক সব অভিযোগ উত্থাপন করেই চলেছেন।
সরকার পরিবর্তনের ১০ মাস পার হয়ে গেলেও তৌহিদ হোসেনের আশানুযায়ী ভারত সরকার এবং ভারতবর্ষের কিছু মিডিয়া বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না।
ধৈর্য হারিয়ে বাংলাদেশের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তিও অযাচিত মন্তব্য করেছেন। যেমন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারত স্থলবেষ্টিত এবং ঢাকা এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’
চীন সফরে যেয়ে ভারতবর্ষের স্পর্শকাতর ইস্যুতে খোঁচা দিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতের সামুদ্রিক যোগাযোগের অভিভাবকত্বের আকাক্সক্ষা পোষণ করাটা খুব জরুরি ছিল না। বা একজন উপদেষ্টার বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে কাল্পনিক ভাবনা ফেসবুকে পোস্ট দেয়াটাও অতি প্রয়োজনীয় ছিল না। বাংলাদেশের দিক থেকে এ দুটি বিষয়ে বিচ্যুতি ছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রতিবেশীর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেই মনে হয়। কিন্তু ভারতবর্ষের মোদি সরকার ও বিজেপি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্য প্রস্তুত। বিজেপি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে একটা ইস্যু সৃষ্টি করে আগামী বছরে পশ্চিম বাংলাসহ কয়েকটি রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভোট বিভাজনের রাজনীতিতে মরিয়া হয়ে নেমেছে। পশ্চিম বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির সাথে পাল্লা দেয়ার প্রচেষ্টায় অনেক সময় সস্তা রাজনীতি করছেন।
ভারতবর্ষে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অবৈধভাবে থাকলে আইনমতো, নিয়মমতো তাদের প্রস্থান করাতে হবে। একইভাবে বাংলাদেশে কোনো ভারতীয় নাগরিকও অবৈধভাবে থাকলে একই ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রতিদিন পুশব্যাক তো ওই পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মনোবৃত্তি। ভারতবর্ষ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সেই ভারতবর্ষকে আজ মোদি প্রতিবেশীদের কাছে ছোট মনের দেশ হিসাবে দাঁড় করাচ্ছেন। যে ঘটনা নিয়ে লেখা, তার আগে প্যাঁচাল হয়ে গেল বেশি। ঘটনা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত কাছারি বাড়িকে ঘিরে। হামলার ঘটনা ১০ জুন তারিখে। খবর পাই স্থানীয় বিবাদ; খুব বড় ধরনের ঘটনা নয়। তাই ১১ তারিখ কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসতে একটু ঘুরপথে রওনা দিয়ে রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর দেখতে দুপুরে শাহজাদপুরে উপস্থিত হই।
১১ জুন শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির সম্মুখে এসে দেখি রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি পরিদর্শন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল এক পরিদর্শনকারীর সাথে কাছারি বাড়ির কর্মচারীদের বাগবিত-ার একপর্যায়ে পরিদর্শনকারীকে কর্মচারীরা মারধর করে। তার পরিণতিতে পাল্টা হামলা এবং কয়েকটি কক্ষ ও জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। হতে পারে পরিদর্শনকারী তরুণ বাগবিত-ার একপর্যায়ে ‘সমন্বয়ক সমন্বয়ক’ ভাব দেখিয়েছেন! অথবা জাতীয়তাবাদী ‘অমুক’ দলের নেতা বলে ভাব দেখিয়েছেন। তাই বলে তাকে মারধর করতে হবে। আবার পরিদর্শনকারীর পক্ষে যারা এগিয়ে এলেন তারা একটিবার বিবেচনা করলেন না, এই কাছারি বাড়ি তাদের শাহজাদপুরের ঐতিহ্য। ওই কর্মচারীর সম্পত্তি নয়। যাহোক সীমিত ভাঙচুর ও উগ্রতার মধ্য দিয়ে ঘটনার পরিসমাপ্তি হয়েছে। এলাকার পরিচিতজনদের সাথে কথা বলেও যেটা জেনেছি পরিদর্শনকারী আর কাছারীবাড়ির কর্মচারীর মধ্যে গোলযোগের ফলে ঘটনার সূত্রপাত, কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
অথচ এই ঘটনায় মনে হলো সারা ভারতবর্ষ রে রে করে উঠল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি আরও কতো কি! মমতাজিতো বিরাট চিঠি পাঠিয়েছেন মোদিজির কাছে। তার দাবি, এ ঘটনায় মোদিজিকেই দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মোদিজি কি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব শুনে হাসবেন না কাঁদবেন! বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনই বা কেমন করিৎকর্মা যে প্রকৃত ঘটনা না জেনে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একটা রিপোর্ট তাদের বিদেশ মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিল।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জুলাই জাগরণে গণতন্ত্রকামী সব শক্তি অংশ নিলেও আন্দোলন দমনে সরকারের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের পাশর্^প্রতিক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে সমন্বয়কতন্ত্রের আড়ালে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং মুক্তিযুদ্ধে পরাভূত শক্তি এক হিংস্র চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হয়। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের সাথে সাথে বেশ কিছু এলাকায় মন্দির, মাজার, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছিল। বিশেষ করে হঠাৎ করে উগ্র মৌলবাদী উত্থানের চেহারা দেখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনস্তত্ত্বাতিক জগতে যে অসহায়ত্ব জন্ম নিল তা কিন্তু আজও দূর হয়নি। বরং জামায়াতে ইসলাম যখন বলে তারা মন্দির ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জানমাল পাহারা দেবে তখন ওই অসহায়ত্ব আরও বেড়ে যায়। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতা আছে, ১৯৭১ সালে জামায়াত এলাকায় এলাকায় শান্তি কমিটি গঠন করে শান্তির নামে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে সংখ্যালঘু নিধন ও উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১ কোটি মানুষকে দেশত্যাগ করে শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে হয়েছিল।
তাই প্রধান সমস্যা হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজ মাতৃভূমিতে অসহায়ত্ববোধ। ধর্মান্ধগোষ্ঠীর মব উল্লম্ফন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত দেশে-বিদেশে অবস্থানরত পেইড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ইউটিউবারদেরও একই ধরনের উল্লম্ফনে এ অসহায়ত্ব আরও বেড়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যত কোনো আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। এ সুযোগে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যকার একটি অংশও ইসলামী মৌলবাদীদের ন্যায় নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে সরবে-নীরবে হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা চালিয়ে কার্যত তাদের মানসিক অসহায়ত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিরাজমান এ সমস্যার সমাধানে সরকারের দিক থেকে রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া প্রয়োজন। ‘সব নাগরিকই সমান অধিকার ভোগ করবেন’-এ ধরনের লুকোছাপা কথায় আস্থা ফিরবে না। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ছবি দৃশ্যমান করতে হবে। সাম্প্রদায়িক প্রচারণা নিষিদ্ধ করতে হবে।
গনতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি সমূহ যে জোটেই যে থাকুন না কেন বা ভিন্ন
কোনো অবস্থানে থাকলেও এ প্রশ্নে নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলায় জেলায় ঐক্যবদ্ধ সমাবেশ করে বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রচারনাকে এবং মব উল্লম্ফনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। পতিত সরকার ও দল ‘জামায়াত শিবির, জামায়াত শিবির’ জিগির করে ধর্মান্ধ শক্তিকে কখনও শক্ত হাতে প্রশাসনিক ভাবে মোকাবিলা করে, আবার কখনও আলিঙ্গন করে নানা সুবিধা দিয়ে বশে রেখেছে, তাদের কাছ থেকে কওমি জননী উপাধি নিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে ওই শক্তিকে মোকাবিলা করেনি। নিজেদের স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক চেহারার কারণে সেই নৈতিক শক্তিও তারা হারিয়েছিলেন। বিরাজমান রাজনৈতিক ভারসাম্যে বিএনপি এককভাবেই সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সাম্প্রদায়িক শক্তি ও রাজনীতির বিরুদ্ধে বিএনপি অবস্থান স্পষ্ট করলে অন্ধকারের শক্তি কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
তবে ভারতবর্ষের সরকার ও মিডিয়ার অপপ্রচার বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তিকে বাড়তি মদদ জোগাচ্ছে এবং এখানকার গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে দুর্বল করছে। শক্তিশালী হচ্ছে হিন্দুত্ববাদ ও ইসলামী মৌলবাদ। ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতবর্ষের সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিতে চায়। আমাদের দেশেও জামায়াত, হেফাজত ও এনসিপি আর জন্মসূত্রে বাংলাদেশি মার্কিন নাগরিক আলী রীয়াজ সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিতে চান। তাই যতই দুই দেশের এই দুই শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হোক না কেন আদর্শগত
দিক দিয়ে তারা পরস্পরের মিত্র। ভারত বর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী শক্তি সমূহ লড়াই করছে সে দেশের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী শক্তি সমূহ এবং নারী সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক সংগঠন, প্রগতিশীল শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা সোচ্চার হচ্ছেন দেশের
গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনে অসাম্প্রদায়িক চরিত্র অক্ষুণœ রাখতে। আর ২০২৪-এর জুলাই সংগ্রামেও রাজপথে নেমে আসা তরুণ প্রজন্ম এক বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন এঁকেছিল।
জুলাই জাগরণে ছাত্র-তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি তারুণ্যের সেই স্বপ্ন হারিয়ে যাবে না। সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানুষ লড়ে যাবে। ভারতবর্ষের সরকার, কর্তাব্যক্তি ও মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ অনেক হয়েছে, এবার থামুন। অযাচিত নাক গলানো বন্ধ করুন। নিজেদের চরকায় একটু ভালো করে তেল দেন। বিগত ৭৭ বছরে স্বাধীন ভারতের যা যা প্রগতিশীল অর্জন বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রই আজ মোদি শাসনে বিপন্ন। আপনারা সেদিকে নজর দিন। আমাদের লড়াইটা আমাদেরই লড়তে দিন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের সূচনা। ওই সময় ভারত বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সর্বাত্মক প্রচষ্টা নিয়েছিল সর্বোপরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কয়েক হাজার সেনা তাদের জীবন দিয়েছিলেন। শুধু ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকারই নয় ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিসমূহ বিশেষত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে অবিস্মরণীয় সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন তাও কখনো ভোলার মতো নয়। বাংলাদেশর জনগণ কৃতজ্ঞতার সাথে ভারতবর্ষের সে অবদানকে স্মরণ করে। যদিও মোদি জমানায় আমাদের চেনা-জানা সেই ভারতবর্ষ আর নেই। তারপরেও প্রতিবেশীতো আর পাল্টানো যায় না। নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বন্ধনে আবদ্ধ দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক যাতে পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে অগ্রসর হয় সে বিষয়ে যতœবান থাকলে উভয় দেশই লাভবান হবে।
[লেখক : সাবেক ছাত্র নেতা]
আনোয়ারুল হক
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
‘২৪-এর জুলাই আন্দোলনের সময়গুলোতে ভারতীয় মিডিয়া সাধারণভাবে আন্দোলনের সংবাদ পরিবেশন করেছে। সংবাদে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য এবং সরকারের বক্তব্য তুলে ধরেছে। সবটাই আমাদের মতো করে না হলেও মোটামুটি স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। কিন্তু ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অতিরঞ্জিত প্রচার, ভারত সরকারের কিছু কর্তাব্যক্তি ও রাজনীতিকেরও তা নিয়ে সমালোচনা ও
বাড়তি মন্তব্য দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মন্তব্য করেছিলেন, ‘হয়তো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ভারতের কিছুটা সময় লাগছে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গত সরকারের সংগে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির সম্পর্কের বিষয়ে দূরত্ব রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেই দূরত্ব ঘোচাতে কাজ করবে। মানুষ যেন ভাবে ভারত ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ঝানু কূটনীতিকের মতো ঠা-া মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের আগমনের পর থেকে পররাষ্ট্র সচিব কিছুটা কোণঠাসা হলেও এখনও সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে মনে হয়। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া ও ভারত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এবং তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে কাল্পনিক সব অভিযোগ উত্থাপন করেই চলেছেন।
সরকার পরিবর্তনের ১০ মাস পার হয়ে গেলেও তৌহিদ হোসেনের আশানুযায়ী ভারত সরকার এবং ভারতবর্ষের কিছু মিডিয়া বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না।
ধৈর্য হারিয়ে বাংলাদেশের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তিও অযাচিত মন্তব্য করেছেন। যেমন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারত স্থলবেষ্টিত এবং ঢাকা এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’
চীন সফরে যেয়ে ভারতবর্ষের স্পর্শকাতর ইস্যুতে খোঁচা দিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতের সামুদ্রিক যোগাযোগের অভিভাবকত্বের আকাক্সক্ষা পোষণ করাটা খুব জরুরি ছিল না। বা একজন উপদেষ্টার বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে কাল্পনিক ভাবনা ফেসবুকে পোস্ট দেয়াটাও অতি প্রয়োজনীয় ছিল না। বাংলাদেশের দিক থেকে এ দুটি বিষয়ে বিচ্যুতি ছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রতিবেশীর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেই মনে হয়। কিন্তু ভারতবর্ষের মোদি সরকার ও বিজেপি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার জন্য প্রস্তুত। বিজেপি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে একটা ইস্যু সৃষ্টি করে আগামী বছরে পশ্চিম বাংলাসহ কয়েকটি রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভোট বিভাজনের রাজনীতিতে মরিয়া হয়ে নেমেছে। পশ্চিম বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির সাথে পাল্লা দেয়ার প্রচেষ্টায় অনেক সময় সস্তা রাজনীতি করছেন।
ভারতবর্ষে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অবৈধভাবে থাকলে আইনমতো, নিয়মমতো তাদের প্রস্থান করাতে হবে। একইভাবে বাংলাদেশে কোনো ভারতীয় নাগরিকও অবৈধভাবে থাকলে একই ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রতিদিন পুশব্যাক তো ওই পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মনোবৃত্তি। ভারতবর্ষ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সেই ভারতবর্ষকে আজ মোদি প্রতিবেশীদের কাছে ছোট মনের দেশ হিসাবে দাঁড় করাচ্ছেন। যে ঘটনা নিয়ে লেখা, তার আগে প্যাঁচাল হয়ে গেল বেশি। ঘটনা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত কাছারি বাড়িকে ঘিরে। হামলার ঘটনা ১০ জুন তারিখে। খবর পাই স্থানীয় বিবাদ; খুব বড় ধরনের ঘটনা নয়। তাই ১১ তারিখ কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসতে একটু ঘুরপথে রওনা দিয়ে রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর দেখতে দুপুরে শাহজাদপুরে উপস্থিত হই।
১১ জুন শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির সম্মুখে এসে দেখি রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি পরিদর্শন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল এক পরিদর্শনকারীর সাথে কাছারি বাড়ির কর্মচারীদের বাগবিত-ার একপর্যায়ে পরিদর্শনকারীকে কর্মচারীরা মারধর করে। তার পরিণতিতে পাল্টা হামলা এবং কয়েকটি কক্ষ ও জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। হতে পারে পরিদর্শনকারী তরুণ বাগবিত-ার একপর্যায়ে ‘সমন্বয়ক সমন্বয়ক’ ভাব দেখিয়েছেন! অথবা জাতীয়তাবাদী ‘অমুক’ দলের নেতা বলে ভাব দেখিয়েছেন। তাই বলে তাকে মারধর করতে হবে। আবার পরিদর্শনকারীর পক্ষে যারা এগিয়ে এলেন তারা একটিবার বিবেচনা করলেন না, এই কাছারি বাড়ি তাদের শাহজাদপুরের ঐতিহ্য। ওই কর্মচারীর সম্পত্তি নয়। যাহোক সীমিত ভাঙচুর ও উগ্রতার মধ্য দিয়ে ঘটনার পরিসমাপ্তি হয়েছে। এলাকার পরিচিতজনদের সাথে কথা বলেও যেটা জেনেছি পরিদর্শনকারী আর কাছারীবাড়ির কর্মচারীর মধ্যে গোলযোগের ফলে ঘটনার সূত্রপাত, কোনো সাম্প্রদায়িক বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
অথচ এই ঘটনায় মনে হলো সারা ভারতবর্ষ রে রে করে উঠল। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি আরও কতো কি! মমতাজিতো বিরাট চিঠি পাঠিয়েছেন মোদিজির কাছে। তার দাবি, এ ঘটনায় মোদিজিকেই দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মোদিজি কি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব শুনে হাসবেন না কাঁদবেন! বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশনই বা কেমন করিৎকর্মা যে প্রকৃত ঘটনা না জেনে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একটা রিপোর্ট তাদের বিদেশ মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিল।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জুলাই জাগরণে গণতন্ত্রকামী সব শক্তি অংশ নিলেও আন্দোলন দমনে সরকারের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের পাশর্^প্রতিক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে সমন্বয়কতন্ত্রের আড়ালে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এবং মুক্তিযুদ্ধে পরাভূত শক্তি এক হিংস্র চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হয়। ৫ আগস্টের পরিবর্তনের সাথে সাথে বেশ কিছু এলাকায় মন্দির, মাজার, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়েছিল। বিশেষ করে হঠাৎ করে উগ্র মৌলবাদী উত্থানের চেহারা দেখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনস্তত্ত্বাতিক জগতে যে অসহায়ত্ব জন্ম নিল তা কিন্তু আজও দূর হয়নি। বরং জামায়াতে ইসলাম যখন বলে তারা মন্দির ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জানমাল পাহারা দেবে তখন ওই অসহায়ত্ব আরও বেড়ে যায়। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতা আছে, ১৯৭১ সালে জামায়াত এলাকায় এলাকায় শান্তি কমিটি গঠন করে শান্তির নামে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে সংখ্যালঘু নিধন ও উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১ কোটি মানুষকে দেশত্যাগ করে শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে হয়েছিল।
তাই প্রধান সমস্যা হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজ মাতৃভূমিতে অসহায়ত্ববোধ। ধর্মান্ধগোষ্ঠীর মব উল্লম্ফন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত দেশে-বিদেশে অবস্থানরত পেইড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ইউটিউবারদেরও একই ধরনের উল্লম্ফনে এ অসহায়ত্ব আরও বেড়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যত কোনো আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। এ সুযোগে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যকার একটি অংশও ইসলামী মৌলবাদীদের ন্যায় নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে সরবে-নীরবে হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা চালিয়ে কার্যত তাদের মানসিক অসহায়ত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিরাজমান এ সমস্যার সমাধানে সরকারের দিক থেকে রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া প্রয়োজন। ‘সব নাগরিকই সমান অধিকার ভোগ করবেন’-এ ধরনের লুকোছাপা কথায় আস্থা ফিরবে না। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ছবি দৃশ্যমান করতে হবে। সাম্প্রদায়িক প্রচারণা নিষিদ্ধ করতে হবে।
গনতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি সমূহ যে জোটেই যে থাকুন না কেন বা ভিন্ন
কোনো অবস্থানে থাকলেও এ প্রশ্নে নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলায় জেলায় ঐক্যবদ্ধ সমাবেশ করে বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রচারনাকে এবং মব উল্লম্ফনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। পতিত সরকার ও দল ‘জামায়াত শিবির, জামায়াত শিবির’ জিগির করে ধর্মান্ধ শক্তিকে কখনও শক্ত হাতে প্রশাসনিক ভাবে মোকাবিলা করে, আবার কখনও আলিঙ্গন করে নানা সুবিধা দিয়ে বশে রেখেছে, তাদের কাছ থেকে কওমি জননী উপাধি নিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে ওই শক্তিকে মোকাবিলা করেনি। নিজেদের স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক চেহারার কারণে সেই নৈতিক শক্তিও তারা হারিয়েছিলেন। বিরাজমান রাজনৈতিক ভারসাম্যে বিএনপি এককভাবেই সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সাম্প্রদায়িক শক্তি ও রাজনীতির বিরুদ্ধে বিএনপি অবস্থান স্পষ্ট করলে অন্ধকারের শক্তি কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
তবে ভারতবর্ষের সরকার ও মিডিয়ার অপপ্রচার বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তিকে বাড়তি মদদ জোগাচ্ছে এবং এখানকার গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে দুর্বল করছে। শক্তিশালী হচ্ছে হিন্দুত্ববাদ ও ইসলামী মৌলবাদ। ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতবর্ষের সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিতে চায়। আমাদের দেশেও জামায়াত, হেফাজত ও এনসিপি আর জন্মসূত্রে বাংলাদেশি মার্কিন নাগরিক আলী রীয়াজ সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিতে চান। তাই যতই দুই দেশের এই দুই শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হোক না কেন আদর্শগত
দিক দিয়ে তারা পরস্পরের মিত্র। ভারত বর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী শক্তি সমূহ লড়াই করছে সে দেশের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী শক্তি সমূহ এবং নারী সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক সংগঠন, প্রগতিশীল শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা সোচ্চার হচ্ছেন দেশের
গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনে অসাম্প্রদায়িক চরিত্র অক্ষুণœ রাখতে। আর ২০২৪-এর জুলাই সংগ্রামেও রাজপথে নেমে আসা তরুণ প্রজন্ম এক বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন এঁকেছিল।
জুলাই জাগরণে ছাত্র-তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি তারুণ্যের সেই স্বপ্ন হারিয়ে যাবে না। সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানুষ লড়ে যাবে। ভারতবর্ষের সরকার, কর্তাব্যক্তি ও মিডিয়ার প্রতি অনুরোধ অনেক হয়েছে, এবার থামুন। অযাচিত নাক গলানো বন্ধ করুন। নিজেদের চরকায় একটু ভালো করে তেল দেন। বিগত ৭৭ বছরে স্বাধীন ভারতের যা যা প্রগতিশীল অর্জন বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রই আজ মোদি শাসনে বিপন্ন। আপনারা সেদিকে নজর দিন। আমাদের লড়াইটা আমাদেরই লড়তে দিন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের সূচনা। ওই সময় ভারত বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সর্বাত্মক প্রচষ্টা নিয়েছিল সর্বোপরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কয়েক হাজার সেনা তাদের জীবন দিয়েছিলেন। শুধু ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকারই নয় ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিসমূহ বিশেষত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে অবিস্মরণীয় সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন তাও কখনো ভোলার মতো নয়। বাংলাদেশর জনগণ কৃতজ্ঞতার সাথে ভারতবর্ষের সে অবদানকে স্মরণ করে। যদিও মোদি জমানায় আমাদের চেনা-জানা সেই ভারতবর্ষ আর নেই। তারপরেও প্রতিবেশীতো আর পাল্টানো যায় না। নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বন্ধনে আবদ্ধ দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক যাতে পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে অগ্রসর হয় সে বিষয়ে যতœবান থাকলে উভয় দেশই লাভবান হবে।
[লেখক : সাবেক ছাত্র নেতা]