alt

opinion » post-editorial

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

: বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি ও শ্রমবাজারের পরিবর্তনের এই যুগে শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান এখন আর কেবল সামাজিক দায় নয়, বরং টেকসই উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। বিশ্ব শোভন কর্ম দিবস প্রতিবছর ৭ অক্টোবর পালিত হয়Ñ শ্রমিকের মর্যাদা, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার হিসেবে। সভ্যতার নির্মাতা ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এরাই।

এবারের প্রতিপাদ্য ছিলÑ “গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”, যা শ্রমিকের অধিকার ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার গভীর বার্তা বহন করে।

শোভন কাজের ধারণা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে শ্রমিক অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে আসে। আইএলও ১৯৯৯ সালে “ডিসেন্ট ওয়ার্ক এজেন্ডা” প্রবর্তনের মাধ্যমে এই ধারণাকে একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকারে রূপ দেয়। এর লক্ষ্যÑ প্রত্যেক শ্রমিক যেন নিরাপদ, ন্যায্য, মর্যাদাপূর্ণ ও সুরক্ষিত পরিবেশে কাজ করতে পারে। আইএলও-এর মতে, শোভন কাজের মূল ভিত্তি চারটি স্তম্ভে দাঁড়িয়েÑ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম অধিকার, এবং সামাজিক সংলাপ।

এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮ নম্বর লক্ষ্য হলো “শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি”। বাংলাদেশসহ সব সদস্য রাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজারের চিত্র

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২০ কোটি মানুষ বেকার, ৪০০ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে অনানুষ্ঠানিক বা অস্থায়ী কর্মে নিযুক্ত, এবং ৬০% শ্রমিকই সামাজিক সুরক্ষার বাইরে। বিশেষত নারী ও অভিবাসী শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি অনিশ্চিত কর্মপরিবেশে কাজ করছে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ কোটি শিশু শ্রমে নিযুক্ত, যার এক-তৃতীয়াংশ বিপজ্জনক পেশায়।

কোভিড-১৯ মহামারির পর বিশ্ব শ্রমবাজারে স্থায়ী এক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ঐতিহ্যগত কর্মসংস্থানের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। ফলে “শোভন কাজ” কেবল একটি সামাজিক দাবি নয়, বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। দেশের মোট শ্রমশক্তি প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ৮৭% অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। গার্মেন্টস খাতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ, যাদের ৬০% নারী। কৃষিখাতে ৪০% শ্রমশক্তি এখনো নিয়োজিত। দেশের মোট শ্রমিকের প্রায় ৬৫% কোনো লিখিত নিয়োগপত্র পায় না, এবং প্রায় ৭৫% শ্রমিক এখনো ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত।

শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে সরকার ২০১৫ সালে “জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল” গ্রহণ করেছে। তবে বাস্তবায়নে অগ্রগতি ধীরগতি। আইএলও’র পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মাত্র ১৫% শ্রমিক কোনো প্রকার সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পান, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার গড় ৩৮%।

শোভন কাজের ১০টি মানদ- ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

আইএলও ঘোষিত শোভন কাজের দশটি মানদ-ের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের বাস্তবতা মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়Ñ এখনও অনেক পথ বাকি। বাংলাদেশের শ্রম বাজারের পরিস্থিতি ২০২৪ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কাজের সুযোগের ক্ষেত্রে বেকারত্ব হার ৪.২% হলেও নারী বেকারত্ব পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। উৎপাদনশীল কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকপ্রতি উৎপাদন কম থাকায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সীমিত। কাজের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়নে নিয়ন্ত্রণ ও ভয়ের সংস্কৃতি বিদ্যমান, যা তাদের স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার সুযোগকে সীমিত করে। কাজে সমতার দিক থেকে দেখা যায়, নারী শ্রমিক সাধারণত গড়পড়তা ২১% কম বেতন পান। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, বছরে ১০,০০০-এর বেশি পেশাগত দুর্ঘটনা ঘটছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের মর্যাদা কম, শোষণ প্রবল। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে যুব বেকারত্ব ১০% এর উপরে রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা খুবই সীমিত, শ্রমিকের মাত্র ১৫% এর কম সুবিধা পাচ্ছেন। শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া জটিল এবং দমননীতি রয়েছে। আর সামাজিক সংলাপের ক্ষেত্রে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের শ্রমক্ষেত্রে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সমতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান।

প্রযুক্তি ও শ্রমবাজারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারে নতুন রূপ দিচ্ছে। ম্যাকিন্সি গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট (২০২৩) অনুসারে, আগামী দশকে বিশ্বব্যাপী ৩০ কোটি কর্মসংস্থান অটোমেশনের কারণে ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশে বিশেষ করে গার্মেন্টস, কলসেন্টার ও প্রশাসনিক খাতে প্রযুক্তিগত রূপান্তরের প্রভাব ক্রমবর্ধমান। তবে এর ইতিবাচক দিক হলোÑ নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, গিগ-ইকোনমি ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে নতুন সুযোগও তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সার রপ্তানিকারক দেশ, যেখানে প্রায় ৮ লাখ যুবক–যুবতী যুক্ত আছেন। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং নতুন কর্মনীতি প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।

শোভন কাজ ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক

এবারের প্রতিপাদ্য “গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”-এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, ন্যায়ভিত্তিক শ্রমনীতি কেবল আইন নয়, আমূল পরিবর্তন অভিমুখী একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। যেখানে রাষ্ট্র, মালিক ও শ্রমিকÑতিন পক্ষই সিদ্ধান্তগ্রহণে সমান ভূমিকা রাখে, সেখানেই শোভন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

“গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”Ñএই প্রতিপাদ্যটি গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য বহন করে। গণতান্ত্রিক সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে তবেই ন্যায়ভিত্তিক শ্রমনীতি প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন সম্ভব।

যেখানে শ্রমিক ইউনিয়ন করার অধিকার অবাধ, যেখানে শ্রমিকের কণ্ঠ নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারেÑসেখানেই টেকসই শিল্প সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ত্রিপক্ষীয় সংলাপের সংস্কৃতি জোরদার করা এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রকৃত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।

সামাজিক ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন অর্থনীতি

বাংলাদেশে আয়ের বৈষম্য এখন রেকর্ড উচ্চতায়। বিবিএস (২০২২)-এর তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ১০% ধনী শ্রেণি দেশের মোট আয়ের ৪১% উপভোগ করে, আর নিম্ন ৫০% জনগোষ্ঠী ভোগ করে মাত্র ১৫%। এই বৈষম্য শ্রমবাজারেও প্রতিফলিতÑ ন্যূনতম মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নারী শ্রমিকের অধিকারÑসব ক্ষেত্রেই অসাম্য দৃশ্যমান। অতএব শোভন কাজের চেতনা বাস্তবায়ন মানে কেবল কর্মসংস্থান নয়, বরং একটি ন্যায্য অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন করা।

সরকার ও নীতিনির্ধারকদের করণীয়

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন ও পুনর্মূল্যায়ন:

জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় শ্রমিকদের জন্য বাস্তবসম্মত মজুরি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ:

স্বাস্থ্যবীমা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, পেনশন ও বেকার ভাতাÑ এসব সুবিধা শ্রমিকদের নাগালের মধ্যে আনতে হবে।

শ্রম আইন বাস্তবায়ন:

২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধিত হলেও মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ দুর্বল। আইন বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণ ও দ-নীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।

দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি:

ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানে শ্রমিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ঘঝউঅ)-এর কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

নারী শ্রমিকের সুরক্ষা:

সমান বেতন, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধের কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

শ্রমিক-মালিক সংলাপের কাঠামো জোরদার:

শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন ও দরকষাকষি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, যাতে উভয় পক্ষের আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও নাগরিক করণীয়

শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, এনজিও ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও এ প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখতে হবে। গণমাধ্যমকে শ্রমিক অধিকার বিষয়ে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে সমাজে শ্রমিক মর্যাদার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রম শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তরুণ প্রজন্ম ন্যায্য শ্রমনীতি সম্পর্কে সচেতন হবে।

শোভন কাজ কেবল একটি কর্মক্ষেত্রের দাবি নয়Ñ এটি মানব মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মৌলিক শর্ত। একজন মানুষ শুধু জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করে না; সে তার পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে চায়। তাই একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের শোষণভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি।

শোভন কাজের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে যথাযথভাবে অনুধাবন করে এর মূল ভিত্তি ও চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যমান শোষণমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন দরকার। দরকার জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুশাসন নিশ্চিত করা। আর সেটি করতে হলে আমাদের বৈষম্যহীন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ এই চার নীতিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের চার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক কর্মজগৎ গড়ে তোলার সংগ্রামেÑ

শ্রমিক, মালিক ও রাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল “শোভন কাজ” বাস্তবে রূপ পাবে। তাহলেই আগামী প্রজন্মের জন্য তৈরি হবে একটি মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই কর্মজীবনের ভবিষ্যৎ।

[লেখক: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি]

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

সোশ্যাল মিডিয়ার ‘লাইক’ সংস্কৃতি: আসক্তি নাকি নতুন যোগাযোগ?

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যু

মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবর্তন: আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি

রম্যগদ্য: “কেশ ফ্যালায় ভাই, কেশ ফ্যালায়...”

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীর অধিকার: বিসিএস ও শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য

ন্যাশনাল গ্যালারি : রঙতুলির মহাসমুদ্রে একদিন

যুব শক্তি বনাম বেকারত্ব

প্রযুক্তি, আর্থিক পরিকল্পনা ও গণিতের ব্যবহার

ফরাসি বিপ্লব: বৈষম্য নিরসনে সামগ্রিক মুক্তির প্রেরণা

অন্তর্বর্তী সরকারের নিউইয়র্ক সফর

প্রবীণদের যত্ন: নৈতিক দায়িত্ব থেকে সামাজিক শক্তি নির্মাণ

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অপরিহার্যতা

জনমিতিক সুবিধা: স্বপ্নের দশক ও নীতিগত সংস্কারের অপরিহার্যতা

বিদ্যালয় ও মাঠ দখলের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের সংগ্রাম

শিক্ষাসংস্কারে চাই সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা

ভারতে এসআইআর বিতর্ক

কীটনাশক: জনস্বাস্থ্যের হুমকি

কীটনাশক: জনস্বাস্থ্যের হুমকি

ব্যাংক একীভূতকরণ: আর্থিক খাতের সামনে নতুন বাস্তবতা

দায়িত্বশীল আচরণে গড়ে উঠুক দেশের পর্যটন খাত

এশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সমীকরণ

বাংলাদেশের গিগ অর্থনীতি: উন্নয়নের হাতিয়ার নাকি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ?

জলাতঙ্ক: প্রতিরোধযোগ্য তবু প্রাণঘাতী

বেড়ে চলা বৈষম্যের দেওয়াল

নৃশংসতার ভিডিও, নীরব দর্শক আর হারিয়ে যাওয়া মানবতা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও জনস্বাস্থ্যের সংকট

জেন জি’র অস্থির অভিযাত্রা

রম্যগদ্য: রবার্ট ব্রুস ও মাকড়শা

জাতিসংঘের নিউইয়র্ক সম্মেলন

বিশ্ব ফুসফুস দিবস: সুস্থ শ্বাসের অঙ্গীকার

সংখ্যার আড়ালে অর্থনীতির অদেখা বাস্তবতা

tab

opinion » post-editorial

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি ও শ্রমবাজারের পরিবর্তনের এই যুগে শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান এখন আর কেবল সামাজিক দায় নয়, বরং টেকসই উন্নয়নের অন্যতম শর্ত। বিশ্ব শোভন কর্ম দিবস প্রতিবছর ৭ অক্টোবর পালিত হয়Ñ শ্রমিকের মর্যাদা, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার হিসেবে। সভ্যতার নির্মাতা ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এরাই।

এবারের প্রতিপাদ্য ছিলÑ “গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”, যা শ্রমিকের অধিকার ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার গভীর বার্তা বহন করে।

শোভন কাজের ধারণা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে শ্রমিক অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে আসে। আইএলও ১৯৯৯ সালে “ডিসেন্ট ওয়ার্ক এজেন্ডা” প্রবর্তনের মাধ্যমে এই ধারণাকে একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকারে রূপ দেয়। এর লক্ষ্যÑ প্রত্যেক শ্রমিক যেন নিরাপদ, ন্যায্য, মর্যাদাপূর্ণ ও সুরক্ষিত পরিবেশে কাজ করতে পারে। আইএলও-এর মতে, শোভন কাজের মূল ভিত্তি চারটি স্তম্ভে দাঁড়িয়েÑ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম অধিকার, এবং সামাজিক সংলাপ।

এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮ নম্বর লক্ষ্য হলো “শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি”। বাংলাদেশসহ সব সদস্য রাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজারের চিত্র

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২০ কোটি মানুষ বেকার, ৪০০ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে অনানুষ্ঠানিক বা অস্থায়ী কর্মে নিযুক্ত, এবং ৬০% শ্রমিকই সামাজিক সুরক্ষার বাইরে। বিশেষত নারী ও অভিবাসী শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি অনিশ্চিত কর্মপরিবেশে কাজ করছে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ কোটি শিশু শ্রমে নিযুক্ত, যার এক-তৃতীয়াংশ বিপজ্জনক পেশায়।

কোভিড-১৯ মহামারির পর বিশ্ব শ্রমবাজারে স্থায়ী এক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ঐতিহ্যগত কর্মসংস্থানের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। ফলে “শোভন কাজ” কেবল একটি সামাজিক দাবি নয়, বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। দেশের মোট শ্রমশক্তি প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ৮৭% অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। গার্মেন্টস খাতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ, যাদের ৬০% নারী। কৃষিখাতে ৪০% শ্রমশক্তি এখনো নিয়োজিত। দেশের মোট শ্রমিকের প্রায় ৬৫% কোনো লিখিত নিয়োগপত্র পায় না, এবং প্রায় ৭৫% শ্রমিক এখনো ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত।

শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনতে সরকার ২০১৫ সালে “জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল” গ্রহণ করেছে। তবে বাস্তবায়নে অগ্রগতি ধীরগতি। আইএলও’র পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মাত্র ১৫% শ্রমিক কোনো প্রকার সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পান, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার গড় ৩৮%।

শোভন কাজের ১০টি মানদ- ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

আইএলও ঘোষিত শোভন কাজের দশটি মানদ-ের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের বাস্তবতা মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়Ñ এখনও অনেক পথ বাকি। বাংলাদেশের শ্রম বাজারের পরিস্থিতি ২০২৪ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কাজের সুযোগের ক্ষেত্রে বেকারত্ব হার ৪.২% হলেও নারী বেকারত্ব পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। উৎপাদনশীল কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকপ্রতি উৎপাদন কম থাকায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সীমিত। কাজের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়নে নিয়ন্ত্রণ ও ভয়ের সংস্কৃতি বিদ্যমান, যা তাদের স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার সুযোগকে সীমিত করে। কাজে সমতার দিক থেকে দেখা যায়, নারী শ্রমিক সাধারণত গড়পড়তা ২১% কম বেতন পান। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, বছরে ১০,০০০-এর বেশি পেশাগত দুর্ঘটনা ঘটছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের মর্যাদা কম, শোষণ প্রবল। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে যুব বেকারত্ব ১০% এর উপরে রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা খুবই সীমিত, শ্রমিকের মাত্র ১৫% এর কম সুবিধা পাচ্ছেন। শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া জটিল এবং দমননীতি রয়েছে। আর সামাজিক সংলাপের ক্ষেত্রে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের শ্রমক্ষেত্রে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও সমতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান।

প্রযুক্তি ও শ্রমবাজারের নতুন চ্যালেঞ্জ

ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারে নতুন রূপ দিচ্ছে। ম্যাকিন্সি গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট (২০২৩) অনুসারে, আগামী দশকে বিশ্বব্যাপী ৩০ কোটি কর্মসংস্থান অটোমেশনের কারণে ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশে বিশেষ করে গার্মেন্টস, কলসেন্টার ও প্রশাসনিক খাতে প্রযুক্তিগত রূপান্তরের প্রভাব ক্রমবর্ধমান। তবে এর ইতিবাচক দিক হলোÑ নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, গিগ-ইকোনমি ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে নতুন সুযোগও তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সার রপ্তানিকারক দেশ, যেখানে প্রায় ৮ লাখ যুবক–যুবতী যুক্ত আছেন। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং নতুন কর্মনীতি প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।

শোভন কাজ ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক

এবারের প্রতিপাদ্য “গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”-এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, ন্যায়ভিত্তিক শ্রমনীতি কেবল আইন নয়, আমূল পরিবর্তন অভিমুখী একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। যেখানে রাষ্ট্র, মালিক ও শ্রমিকÑতিন পক্ষই সিদ্ধান্তগ্রহণে সমান ভূমিকা রাখে, সেখানেই শোভন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

“গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে”Ñএই প্রতিপাদ্যটি গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক তাৎপর্য বহন করে। গণতান্ত্রিক সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে তবেই ন্যায়ভিত্তিক শ্রমনীতি প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন সম্ভব।

যেখানে শ্রমিক ইউনিয়ন করার অধিকার অবাধ, যেখানে শ্রমিকের কণ্ঠ নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারেÑসেখানেই টেকসই শিল্প সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ত্রিপক্ষীয় সংলাপের সংস্কৃতি জোরদার করা এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের প্রকৃত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।

সামাজিক ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন অর্থনীতি

বাংলাদেশে আয়ের বৈষম্য এখন রেকর্ড উচ্চতায়। বিবিএস (২০২২)-এর তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ১০% ধনী শ্রেণি দেশের মোট আয়ের ৪১% উপভোগ করে, আর নিম্ন ৫০% জনগোষ্ঠী ভোগ করে মাত্র ১৫%। এই বৈষম্য শ্রমবাজারেও প্রতিফলিতÑ ন্যূনতম মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নারী শ্রমিকের অধিকারÑসব ক্ষেত্রেই অসাম্য দৃশ্যমান। অতএব শোভন কাজের চেতনা বাস্তবায়ন মানে কেবল কর্মসংস্থান নয়, বরং একটি ন্যায্য অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন করা।

সরকার ও নীতিনির্ধারকদের করণীয়

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন ও পুনর্মূল্যায়ন:

জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় শ্রমিকদের জন্য বাস্তবসম্মত মজুরি কাঠামো তৈরি করতে হবে।

সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ:

স্বাস্থ্যবীমা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, পেনশন ও বেকার ভাতাÑ এসব সুবিধা শ্রমিকদের নাগালের মধ্যে আনতে হবে।

শ্রম আইন বাস্তবায়ন:

২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধিত হলেও মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ দুর্বল। আইন বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণ ও দ-নীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।

দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি:

ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানে শ্রমিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ঘঝউঅ)-এর কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

নারী শ্রমিকের সুরক্ষা:

সমান বেতন, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধের কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

শ্রমিক-মালিক সংলাপের কাঠামো জোরদার:

শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন ও দরকষাকষি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, যাতে উভয় পক্ষের আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও নাগরিক করণীয়

শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, এনজিও ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও এ প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখতে হবে। গণমাধ্যমকে শ্রমিক অধিকার বিষয়ে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে সমাজে শ্রমিক মর্যাদার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রম শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তরুণ প্রজন্ম ন্যায্য শ্রমনীতি সম্পর্কে সচেতন হবে।

শোভন কাজ কেবল একটি কর্মক্ষেত্রের দাবি নয়Ñ এটি মানব মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মৌলিক শর্ত। একজন মানুষ শুধু জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করে না; সে তার পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে চায়। তাই একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের শোষণভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি।

শোভন কাজের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে যথাযথভাবে অনুধাবন করে এর মূল ভিত্তি ও চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যমান শোষণমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন দরকার। দরকার জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুশাসন নিশ্চিত করা। আর সেটি করতে হলে আমাদের বৈষম্যহীন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ এই চার নীতিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের চার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক কর্মজগৎ গড়ে তোলার সংগ্রামেÑ

শ্রমিক, মালিক ও রাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল “শোভন কাজ” বাস্তবে রূপ পাবে। তাহলেই আগামী প্রজন্মের জন্য তৈরি হবে একটি মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই কর্মজীবনের ভবিষ্যৎ।

[লেখক: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি]

back to top