alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

: সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১০৫ বছর অতিক্রম করে ১০৬ বছরে পদার্পণ করল। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দলটি শুধু রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ নয়-বরং উপমহাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও চিন্তাজগতের গভীরে প্রোথিত এক ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার। ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর তাসখন্দে এম এন রায় ও তার সহযোদ্ধাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এই পার্টি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম, শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্নকে একত্রিত করে এক নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করেছিল।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম কোনো কাকতালীয় ঘটনা ছিল না; এটি ছিল বিশ্ব সমাজের এক বৃহত্তর ঐতিহাসিক ধারার সংগ্রামের অংশ। ইউরোপে শিল্পবিপ্লব-উত্তর পুঁজিবাদের বৈষম্য, রুশ বিপ্লবের বিজয় এবং উপনিবেশিক নিপীড়নের প্রতিক্রিয়ায় জন্ম নেয় এই রাজনৈতিক চেতনা, যার কেন্দ্রে ছিল “সমতা, ন্যায্যতা ও উৎপাদনের ওপর সমাজের মালিকানা”-এই মূলনীতি।

কমিউনিস্ট ইশতেহার ও চিন্তার ভিত্তি : ১৮৪৮ সালে কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের লেখা কমিউনিস্ট ইশতেহার মানব ইতিহাসের এক অনন্য রাজনৈতিক দলিল। “সব দেশের শ্রমিকগণ, ঐক্যবদ্ধ হও” - এই আহ্বান আজও মানবমুক্তির সংগ্রামের প্রাণস্পন্দন। মার্কস দেখিয়েছিলেন, ইতিহাসের প্রতিটি যুগের ভিত্তিতে থাকে উৎপাদনব্যবস্থা ও তার ওপর প্রতিষ্ঠিত শ্রেণিসংঘাত। সামন্ততন্ত্রের অবসান যেমন পুঁজিবাদ জন্ম দিয়েছিল, তেমনি পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বই সমাজতন্ত্রের জন্ম ঘটাবে।

ভারতের মতো উপনিবেশিক অর্থনীতিতে মার্কসবাদের এই বিশ্লেষণ নতুন তাৎপর্য পেয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য যে শ্রেণিসংঘাত সৃষ্টি করেছিল, তা ভারতীয় কমিউনিস্টদের রাজনীতির প্রাথমিক দার্শনিক ভিত্তি হয়ে ওঠে।

মার্কসবাদের আগমন: ভারতীয় বুদ্ধিজীবী ও প্রবাসীদের ভূমিকা : মার্কসবাদের সাথে ভারতীয়দের পরিচয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকেই ঘটে। ১৮৭১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিকের সভায় কলকাতা থেকে এক ভারতীয় প্রতিনিধি আন্তর্জাতিকের শাখা খোলার অনুমতি চান। পরবর্তী সময়ে দাদাভাই নৌরজী, লালা হরদয়াল, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ সমাজতান্ত্রিক চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হন।

কিন্তু রুশ বিপ্লব (১৯১৭)–এর পর থেকেই উপমহাদেশে মার্কসবাদ এক জীবন্ত রাজনৈতিক আদর্শে পরিণত হয়। রুশ শ্রমিকশ্রেণির বিজয় এদেশের শ্রমিক ও কৃষকদের সামনে তুলে ধরে নতুন আশার আলোÑযে শ্রমিকও হতে পারে ইতিহাসের নির্মাতা।

রুশ বিপ্লব ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের নতুন ধারা:

রুশ বিপ্লব উপনিবেশিক বিশ্বের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। বিপ্লবীদের একাংশ যারা বার্লিন, প্যারিস বা মস্কোতে নির্বাসিত ছিলেন, তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শেখেন।

এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায় (এম এন রায়) - যিনি মেক্সিকোয় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠা করে পরে ১৯২০ সালে তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। তার সহযাত্রী ছিলেন এভেলিনা ট্রেন্ট রায়, অবনী মুখার্জী, মুহম্মদ শফিক সিদ্দিকী প্রমুখ।

তাসখন্দ সম্মেলন শুধু একটি সংগঠন গঠনের ঘটনা নয়; এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন-জাতীয় মুক্তি ও শ্রেণি মুক্তির ঐক্য।

ষড়যন্ত্র মামলা ও দমননীতি : ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী দ্রুত বুঝতে পারে যে, এই নতুন আন্দোলন তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি। ফলে ১৯২১-১৯২৭ সালের মধ্যে পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯২৪ সালের কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা এবং ১৯২৯ সালের মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।

মুজাফ্ফর আহমদ, এস এ ডাঙ্গে, সওকত উসমানী, সোমনাথ লাহিড়ী, ঘাটে প্রমুখ নেতারা কারাবরণ করেন। তবে কারাগারের ভেতরেই তারা মার্কসবাদী তত্ত্বের গভীর অধ্যয়ন করেন এবং পার্টির আদর্শিক ভিত্তি সুদৃঢ় করেন।

শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের বিস্তার : ১৯২০ থেকে ১৯৩০ দশকজুড়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষক সংগঠনের বিকাশ ঘটে। ১৯২০ সালে মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস-যা পরবর্তীতে শ্রমিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

বাংলায় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজান্টস পার্টি (১৯২৬) শ্রমিক ও কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে দেয়। মুজাফ্ফর আহমদ, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ নেতারা সংগঠনকে রাজনৈতিক চরিত্র দেন। এই সময়েই “লাঙ্গল” ও “গণবাণী” পত্রিকা বামপন্থী চিন্তার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পার্টির বৈধতা ও পুনর্গঠন:

১৯৩৩ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পার্টি চক্র থেকে একটি কেন্দ্রীভূত সংগঠনে রূপ নেয়। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ড. গঙ্গাধর অধিকারী, পরে এস ভি ঘাটে ও পি সি যোশী। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্টিকে বেআইনি ঘোষণা করলেও ১৯৩৬ সালে পুনরায় সংগঠিত হয়ে পার্টি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু করে।

এই সময় কমিউনিস্টরা কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক পার্টির সাথে কাজ শুরু করে, শ্রমিক ধর্মঘট, কৃষক সম্মেলন ও মুক্তি সংগ্রামের নানা কর্মসূচিতে যুক্ত হয়।

স্বাধীনতা আন্দোলনে কমিউনিস্ট অবদান:

কমিউনিস্টরা স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বিমুখী ভূমিকা রাখে। একদিকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, অন্যদিকে সামাজিক বিপ্লবের প্রস্তুতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের কৌশল তাদের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’-এর সময় পার্টি “অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ওয়ার”-এর যুক্তিতে অংশ না নিলেও, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে কৃষক আন্দোলন, তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ (১৯৪৬-৫১) প্রভৃতির মাধ্যমে শ্রেণিসংগ্রামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

স্বাধীনতার পর বিভাজন ও মতপার্থক্য : স্বাধীনতার পর পার্টি নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। ১৯৪৭-১৯৫০ সালের মধ্যে দলটি বিভাজিত ভারত, নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাস্তবতা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে।

১৯৬৪ সালে আদর্শগত মতভেদ ও চীন-সোভিয়েত দ্বন্দ্বের প্রভাবে পার্টি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়Ñসিপিআই ও সিপিআই (এম)। পরবর্তীতে সিপিআই (এম-এল), নকশালবাড়ি আন্দোলনসহ আরও বিভিন্ন গোষ্ঠী জন্ম নেয়। এই বিভাজন সত্ত্বেও ভারতের রাজনীতিতে বামপন্থার প্রভাব অটুট থাকেÑবিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকারের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমিউনিস্ট উত্তরাধিকার : বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের শিকড় ভারতবর্ষের এই আন্দোলনেই। মুজাফ্ফর আহমদ, আব্দুল হালিম, রণেন সেন, মণি সিংহ প্রমুখ নেতারা পূর্ববঙ্গে কমিউনিস্ট সংগঠন গড়ে তোলেন।

১৯৪৮ সালে গঠিত পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, পরে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্ট কর্মীরা সরাসরি অংশ নেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি - সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ - মূলত বামপন্থী চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ।

আর্থসামাজিক বিশ্লেষণ: পুঁজিবাদ, বৈষম্য ও নতুন বাস্তবতা: আজ, ২১ শতকে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হলেও বৈষম্যের ব্যবধান অভূতপূর্ব।

ভারতে শীর্ষ ১% ধনী দেশের মোট সম্পদের ৭৩% নিয়ন্ত্রণ করে (অক্সফাম, ২০২৪)। অন্যদিকে প্রায় ২২ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে।

বাংলাদেশেও গত এক দশকে জিডিপি বেড়েছে, কিন্তু আয়বৈষম্যের জিনি সূচক ০.৪৮ থেকে বেড়ে ০.৫১-এ পৌঁছেছে (বিবিএস, ২০২৩)।

এই বৈষম্য, কর্পোরেট আধিপত্য, শ্রমিক অধিকার সংকোচন ও কৃষিজ সংকটের যুগে মার্কসবাদী রাজনৈতিক বিশ্লেষণ আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।

শ্রেণি কাঠামোর পুনর্বিন্যাস - যেখানে গিগ-ওয়ার্কার, অনানুষ্ঠানিক শ্রমিক ও ডিজিটাল শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে - তা নতুন “প্রলেতারিয়েত”-এর রূপ তৈরি করছে।

এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঐতিহাসিক শিক্ষা হলো- অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে, তবে তা স্থায়ী উন্নয়ন নয়।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ : ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আজ ঐতিহাসিক দায়িত্বের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে গ্লোবাল পুঁজিবাদের আগ্রাসন, অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় মৌলবাদ ও কর্পোরেট রাজনীতির উত্থান-এই দ্বৈত চাপে শ্রেণিসংগ্রামকে নতুনভাবে সংগঠিত করা জরুরি।

বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মতো দেশগুলোতে শ্রমিক-কৃষকের ঐক্যকে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিসরে ফিরিয়ে আনা দরকার।

এই পুনর্গঠনের জন্য দরকার তাত্ত্বিক নবায়ন-যেখানে ডিজিটাল অর্থনীতি, জলবায়ু সংকট, নারী মুক্তি ও আদিবাসী অধিকারও শ্রেণি প্রশ্নের অংশ হিসেবে যুক্ত হবে।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১০৫ বছরের যাত্রা কেবল একটি রাজনৈতিক সংগঠনের ইতিহাস নয়; এটি উপমহাদেশের সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাস। মুজাফ্ফর আহমদ থেকে এম এন রায়, সোমনাথ লাহিড়ী থেকে পি সি যোশী-তাদের ত্যাগ ও চিন্তার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক রাজনৈতিক চেতনা।

আজও যখন দারিদ্র্য, বেকারত্ব, লিঙ্গবৈষম্য ও ধর্মীয় বিদ্বেষ সমাজকে বিভক্ত করে রাখছে, তখন কমিউনিস্ট উত্তরাধিকার আমাদের মনে করিয়ে দেয়- “মানুষের মুক্তিই রাজনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য।”

[লেখক : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি; সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন]

নির্বাচনী মাঠে জামায়াতী হেকমত

শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর বৈষম্য ও জাতির অগ্রযাত্রাধ

এইচএসসি ফল: সংখ্যার খেল না কি শিক্ষার বাস্তব চিত্র?

বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি ভোটের পরে এবার নাকি গণভোট!

কমরেড ইলা মিত্রের শততম জন্মজয়ন্তী

কত মৃত্যু হলে জাগবে বিবেক?

বৈষম্যের বিবিধ মুখ

মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি আইনি সহায়তা

গাজা : এখন শান্তি রক্ষা করবে কে?

দোসর, বাই ডিফল্ট!

জমি কেনা দাগে দাগে কিন্তু ভোগদখল একদাগে

রাষ্ট্র কি শুধু শিক্ষকদের বেলায় এসে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে?

শতরঞ্জ কি খিলাড়ী

শিক্ষক থাকে রাজপথে, আর পুলিশ ছাড়ে থানা

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা : স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবিষ্যৎ কী?

ছবি

শ্লীলতা, অশ্লীলতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অবক্ষয়ের চোরাবালিতে আলোর দিশারী

অটোমেশন ও দেশের যুব কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ

দুর্যোগে ভয় নয়, প্রস্তুতিই শক্তি

বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন

ছবি

‘আল্লাহ তুই দেহিস’: এ কোন ঘৃণার আগুন, ছড়িয়ে গেল সবখানে!

চেকের মামলায় আসামী যেসব ডিফেন্স নিয়ে খালাস পেতে পারেন

খেলনাশিল্প: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে ফিরে আসা কালো মেঘ

গীর্জায় হামলার নেপথ্যে কী?

সংঘের শতবর্ষের রাজনৈতিক তাৎপর্য

দুর্নীতি আর চাঁদাবাজি রাজনৈতিক-সংস্কৃতির অংশ

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

বাংলার সংস্কৃতি : উৎস, বিবর্তন ও বর্তমান সমাজ-মনন

রম্যগদ্য: শিক্ষা সহজ, বিদ্যা কঠিন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভূমিকা উপেক্ষিত

শ্রমজীবী মানুষের শোভন কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের বাস্তবতা

প্রবারণার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের শেষ সুযোগ?

পাহাড় থেকে সমতল: আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

উপমহাদেশে সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১০৫ বছর অতিক্রম করে ১০৬ বছরে পদার্পণ করল। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দলটি শুধু রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ নয়-বরং উপমহাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও চিন্তাজগতের গভীরে প্রোথিত এক ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার। ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর তাসখন্দে এম এন রায় ও তার সহযোদ্ধাদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এই পার্টি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম, শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্নকে একত্রিত করে এক নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করেছিল।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম কোনো কাকতালীয় ঘটনা ছিল না; এটি ছিল বিশ্ব সমাজের এক বৃহত্তর ঐতিহাসিক ধারার সংগ্রামের অংশ। ইউরোপে শিল্পবিপ্লব-উত্তর পুঁজিবাদের বৈষম্য, রুশ বিপ্লবের বিজয় এবং উপনিবেশিক নিপীড়নের প্রতিক্রিয়ায় জন্ম নেয় এই রাজনৈতিক চেতনা, যার কেন্দ্রে ছিল “সমতা, ন্যায্যতা ও উৎপাদনের ওপর সমাজের মালিকানা”-এই মূলনীতি।

কমিউনিস্ট ইশতেহার ও চিন্তার ভিত্তি : ১৮৪৮ সালে কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের লেখা কমিউনিস্ট ইশতেহার মানব ইতিহাসের এক অনন্য রাজনৈতিক দলিল। “সব দেশের শ্রমিকগণ, ঐক্যবদ্ধ হও” - এই আহ্বান আজও মানবমুক্তির সংগ্রামের প্রাণস্পন্দন। মার্কস দেখিয়েছিলেন, ইতিহাসের প্রতিটি যুগের ভিত্তিতে থাকে উৎপাদনব্যবস্থা ও তার ওপর প্রতিষ্ঠিত শ্রেণিসংঘাত। সামন্ততন্ত্রের অবসান যেমন পুঁজিবাদ জন্ম দিয়েছিল, তেমনি পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বই সমাজতন্ত্রের জন্ম ঘটাবে।

ভারতের মতো উপনিবেশিক অর্থনীতিতে মার্কসবাদের এই বিশ্লেষণ নতুন তাৎপর্য পেয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য যে শ্রেণিসংঘাত সৃষ্টি করেছিল, তা ভারতীয় কমিউনিস্টদের রাজনীতির প্রাথমিক দার্শনিক ভিত্তি হয়ে ওঠে।

মার্কসবাদের আগমন: ভারতীয় বুদ্ধিজীবী ও প্রবাসীদের ভূমিকা : মার্কসবাদের সাথে ভারতীয়দের পরিচয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকেই ঘটে। ১৮৭১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিকের সভায় কলকাতা থেকে এক ভারতীয় প্রতিনিধি আন্তর্জাতিকের শাখা খোলার অনুমতি চান। পরবর্তী সময়ে দাদাভাই নৌরজী, লালা হরদয়াল, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ সমাজতান্ত্রিক চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হন।

কিন্তু রুশ বিপ্লব (১৯১৭)–এর পর থেকেই উপমহাদেশে মার্কসবাদ এক জীবন্ত রাজনৈতিক আদর্শে পরিণত হয়। রুশ শ্রমিকশ্রেণির বিজয় এদেশের শ্রমিক ও কৃষকদের সামনে তুলে ধরে নতুন আশার আলোÑযে শ্রমিকও হতে পারে ইতিহাসের নির্মাতা।

রুশ বিপ্লব ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের নতুন ধারা:

রুশ বিপ্লব উপনিবেশিক বিশ্বের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। বিপ্লবীদের একাংশ যারা বার্লিন, প্যারিস বা মস্কোতে নির্বাসিত ছিলেন, তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শেখেন।

এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায় (এম এন রায়) - যিনি মেক্সিকোয় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠা করে পরে ১৯২০ সালে তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। তার সহযাত্রী ছিলেন এভেলিনা ট্রেন্ট রায়, অবনী মুখার্জী, মুহম্মদ শফিক সিদ্দিকী প্রমুখ।

তাসখন্দ সম্মেলন শুধু একটি সংগঠন গঠনের ঘটনা নয়; এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন-জাতীয় মুক্তি ও শ্রেণি মুক্তির ঐক্য।

ষড়যন্ত্র মামলা ও দমননীতি : ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী দ্রুত বুঝতে পারে যে, এই নতুন আন্দোলন তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি। ফলে ১৯২১-১৯২৭ সালের মধ্যে পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯২৪ সালের কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা এবং ১৯২৯ সালের মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।

মুজাফ্ফর আহমদ, এস এ ডাঙ্গে, সওকত উসমানী, সোমনাথ লাহিড়ী, ঘাটে প্রমুখ নেতারা কারাবরণ করেন। তবে কারাগারের ভেতরেই তারা মার্কসবাদী তত্ত্বের গভীর অধ্যয়ন করেন এবং পার্টির আদর্শিক ভিত্তি সুদৃঢ় করেন।

শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের বিস্তার : ১৯২০ থেকে ১৯৩০ দশকজুড়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষক সংগঠনের বিকাশ ঘটে। ১৯২০ সালে মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস-যা পরবর্তীতে শ্রমিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

বাংলায় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজান্টস পার্টি (১৯২৬) শ্রমিক ও কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে দেয়। মুজাফ্ফর আহমদ, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ নেতারা সংগঠনকে রাজনৈতিক চরিত্র দেন। এই সময়েই “লাঙ্গল” ও “গণবাণী” পত্রিকা বামপন্থী চিন্তার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পার্টির বৈধতা ও পুনর্গঠন:

১৯৩৩ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পার্টি চক্র থেকে একটি কেন্দ্রীভূত সংগঠনে রূপ নেয়। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ড. গঙ্গাধর অধিকারী, পরে এস ভি ঘাটে ও পি সি যোশী। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্টিকে বেআইনি ঘোষণা করলেও ১৯৩৬ সালে পুনরায় সংগঠিত হয়ে পার্টি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু করে।

এই সময় কমিউনিস্টরা কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক পার্টির সাথে কাজ শুরু করে, শ্রমিক ধর্মঘট, কৃষক সম্মেলন ও মুক্তি সংগ্রামের নানা কর্মসূচিতে যুক্ত হয়।

স্বাধীনতা আন্দোলনে কমিউনিস্ট অবদান:

কমিউনিস্টরা স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বিমুখী ভূমিকা রাখে। একদিকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, অন্যদিকে সামাজিক বিপ্লবের প্রস্তুতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের কৌশল তাদের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। ১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’-এর সময় পার্টি “অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ওয়ার”-এর যুক্তিতে অংশ না নিলেও, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে কৃষক আন্দোলন, তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ (১৯৪৬-৫১) প্রভৃতির মাধ্যমে শ্রেণিসংগ্রামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

স্বাধীনতার পর বিভাজন ও মতপার্থক্য : স্বাধীনতার পর পার্টি নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। ১৯৪৭-১৯৫০ সালের মধ্যে দলটি বিভাজিত ভারত, নতুন রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাস্তবতা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে।

১৯৬৪ সালে আদর্শগত মতভেদ ও চীন-সোভিয়েত দ্বন্দ্বের প্রভাবে পার্টি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়Ñসিপিআই ও সিপিআই (এম)। পরবর্তীতে সিপিআই (এম-এল), নকশালবাড়ি আন্দোলনসহ আরও বিভিন্ন গোষ্ঠী জন্ম নেয়। এই বিভাজন সত্ত্বেও ভারতের রাজনীতিতে বামপন্থার প্রভাব অটুট থাকেÑবিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকারের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমিউনিস্ট উত্তরাধিকার : বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের শিকড় ভারতবর্ষের এই আন্দোলনেই। মুজাফ্ফর আহমদ, আব্দুল হালিম, রণেন সেন, মণি সিংহ প্রমুখ নেতারা পূর্ববঙ্গে কমিউনিস্ট সংগঠন গড়ে তোলেন।

১৯৪৮ সালে গঠিত পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, পরে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্ট কর্মীরা সরাসরি অংশ নেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি - সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ - মূলত বামপন্থী চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ।

আর্থসামাজিক বিশ্লেষণ: পুঁজিবাদ, বৈষম্য ও নতুন বাস্তবতা: আজ, ২১ শতকে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হলেও বৈষম্যের ব্যবধান অভূতপূর্ব।

ভারতে শীর্ষ ১% ধনী দেশের মোট সম্পদের ৭৩% নিয়ন্ত্রণ করে (অক্সফাম, ২০২৪)। অন্যদিকে প্রায় ২২ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে।

বাংলাদেশেও গত এক দশকে জিডিপি বেড়েছে, কিন্তু আয়বৈষম্যের জিনি সূচক ০.৪৮ থেকে বেড়ে ০.৫১-এ পৌঁছেছে (বিবিএস, ২০২৩)।

এই বৈষম্য, কর্পোরেট আধিপত্য, শ্রমিক অধিকার সংকোচন ও কৃষিজ সংকটের যুগে মার্কসবাদী রাজনৈতিক বিশ্লেষণ আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।

শ্রেণি কাঠামোর পুনর্বিন্যাস - যেখানে গিগ-ওয়ার্কার, অনানুষ্ঠানিক শ্রমিক ও ডিজিটাল শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে - তা নতুন “প্রলেতারিয়েত”-এর রূপ তৈরি করছে।

এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ঐতিহাসিক শিক্ষা হলো- অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে, তবে তা স্থায়ী উন্নয়ন নয়।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ : ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আজ ঐতিহাসিক দায়িত্বের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে গ্লোবাল পুঁজিবাদের আগ্রাসন, অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় মৌলবাদ ও কর্পোরেট রাজনীতির উত্থান-এই দ্বৈত চাপে শ্রেণিসংগ্রামকে নতুনভাবে সংগঠিত করা জরুরি।

বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মতো দেশগুলোতে শ্রমিক-কৃষকের ঐক্যকে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিসরে ফিরিয়ে আনা দরকার।

এই পুনর্গঠনের জন্য দরকার তাত্ত্বিক নবায়ন-যেখানে ডিজিটাল অর্থনীতি, জলবায়ু সংকট, নারী মুক্তি ও আদিবাসী অধিকারও শ্রেণি প্রশ্নের অংশ হিসেবে যুক্ত হবে।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১০৫ বছরের যাত্রা কেবল একটি রাজনৈতিক সংগঠনের ইতিহাস নয়; এটি উপমহাদেশের সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাস। মুজাফ্ফর আহমদ থেকে এম এন রায়, সোমনাথ লাহিড়ী থেকে পি সি যোশী-তাদের ত্যাগ ও চিন্তার ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক রাজনৈতিক চেতনা।

আজও যখন দারিদ্র্য, বেকারত্ব, লিঙ্গবৈষম্য ও ধর্মীয় বিদ্বেষ সমাজকে বিভক্ত করে রাখছে, তখন কমিউনিস্ট উত্তরাধিকার আমাদের মনে করিয়ে দেয়- “মানুষের মুক্তিই রাজনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য।”

[লেখক : কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি; সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন]

back to top