alt

ঢাবি শিক্ষক লীনা তাপসীর বিরুদ্ধে পিএইচডি জালিয়াতির অভিযোগ

প্রতিনিধি, ঢাবি : রোববার, ১৩ জুন ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংগীত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহসীনা আক্তার খানম ওরফে লীনা তাপসী খানের বিরুদ্ধে পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক সংগীতশিল্পী ইফফাত আরা নার্গিস। একইসঙ্গে তিনি এ শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি ও নজরুল পদক বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

রোববার (১৩ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, একজন সংগীতশিল্পী হয়ে সংগীত গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি আমাকে খুবই আহত করেছে। সংগীত বিষয়ে একজন শিক্ষকের রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক অপকর্ম আজ আমাকে বিষয়টি তুলে ধরতে বাধ্য করেছে। আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার চৌর্যবৃত্তি নিয়ে অভিযোগ তুলছি। সেই শিক্ষকের নাম মহসিনা আক্তার খানম। যিনি কিনা তাপসী খান ছদ্মনামে সংগীতজগতে পরিচিত। তার মতো একজন পরিচিত শিল্পী ও শিক্ষক যখন চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন, তখন আমাদের কষ্ট হয়। অভিযোগটি তদন্তপূর্বক শাস্তি প্রদানের দাবিতে আমার এই বিবেকতাড়িত প্রতিবাদ।

তিনি বলেন, সংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি লীনা তাপসী খানের নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার গ্রন্থটি সংগ্রহ করি। কিন্তু বইটি পাঠ করে আমার এর আগে পাঠ করা তিন-চারটি গ্রন্থের সঙ্গে বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাই, যা পরিষ্কার চৌর্যবৃত্তি। চুরির ওপর ভিত্তি করে যদি তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভ রচিত হয়ে থাকে তবে, এ ডিগ্রি তদন্তপূর্বক বাতিল হলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আর যদি তার এই পুস্তক পিএইচডির সাথে সম্পর্কিত না হয় তবে গবেষক হয়ে অন্যের গ্রন্থ থেকে যথাযথ তথ্য সংকেত উল্লেখ না করে নিজের গ্রন্থে ব্যবহার করে যে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় তিনি নিয়েছেন, তার যথাযোগ্য বিচার হওয়া উচিত বলে আমি দাবি করি। এই অভিসন্দর্ভের কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন, এই গ্রন্থের কারণে তিনি পদোন্নতি নিয়েছেন, এই গ্রন্থের জন্য তিনি নজরুল পদকও লাভ করেছেন। অর্থাৎ এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে তিনি আর্থিক সুবিধা, পেশাগত সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা গ্রহণ করেছেন, যা দুর্নীতি হিসেবেও গণ্য।

তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ২৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক। এই স্বরলিপির স্থান হতে পারতো গ্রন্থের পরিশিষ্টে। মূল পাঠে এই স্বরলিপি কোনোক্রমেই স্থান পাওয়ার কথা নয়। এটিও একধরনের চৌর্যবৃত্তি। দেখা যাচ্ছে যে ২৭৭ পৃষ্ঠার বইয়ের মধ্যে ৮০ (স্বরলিপি)। ২৬ (শ্যামপ্রসাদ) + ৪৬ (কাকলী) +১৭ (পরিশিষ্ট) = ১৬৯ পৃষ্ঠা লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। এগুলো অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু গৃহীত। বাকি ১০১ পৃষ্ঠা লীনা তাপসীর খানের লেখা বলে দাবি করা হয়েছে। তার মধ্যে ইদরিস আলীর গ্রন্থ থেকেও নেওয়া হয়েছে। যথাযথ অনুসন্ধান হলে প্রমাণিত হতে পারে যে ওইসব পৃষ্ঠায় ব্যবহৃত তথ্যও লেখকের নয়। এমতাবস্থায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, আমার অভিযোগটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। কেবল উপাচার্য নন, দুজন উপ-উপাচার্য এবং সিন্ডিকেটের সকল সদস্যের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তদন্তের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, বরং লীনা একজন জাতীয় অধ্যাপকের দোহাই দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে যে কেউ তার কিছুই করতে পারবে না। এই সংবাদ যাতে প্রচারিত না হয় সেই ব্যাপারে তিনি তদবির করে বেড়াচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরেও তদন্ত করছে না, সেই রহস্য বুঝতে পারছি না।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন নায়েমের সাবেক এই পরিচালক। দাবিগুলো হলো- অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক লীনা তাপসীর পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল করা; এ ডিগ্রির জন্য প্রাপ্ত সব সুবিধা প্রত্যাহার করা; এ ডিগ্রি প্রদানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শাস্তি প্রদান করা; এ ডিগ্রির ওপর রচিত গ্রন্থ- নজরুল সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার বাতিলের জন্য কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া; এ গ্রন্থের জন্য প্রাপ্ত নজরুল পদক বাতিল করে নজরুল পদককে কলঙ্কমুক্ত করা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক লীনা তাপসী খান সংবাদকে বলেন, আমি নিজে নিজে জালিয়াতি করে কোনো সার্টিফিকেট বের করিনি, আমার একটা বোর্ড ছিল, সুপারভাইজার ছিল। আমার পিএইচডির সুপারভাইজার ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আজ তাকেও প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা র‍্যাংকিংয়ে নিতে চাচ্ছি, আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা জায়গায় পৌঁছাক। অথচ যার কোনো পিএইচডি ডিগ্রি নেই, যার কোনো লেখা নেই তিনি এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আঙুল তুলছেন। তিনি অন্যের প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্ক্যান্ডাল রটাচ্ছেন, অথচ এর কোনো ভিত্তি নেই।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের একটা কথা শুনছিলাম। কথাগুলো যতটা আন্তরিকভাবে, দায়িত্বশীলভাবে আসার কথা ছিল, সেভাবে আসেনি। সাংবাদিকদের এবং বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগের কপি যখন দেওয়া হয়েছে, তখন আমি বিষয়টি জানতে পারি। দায়িত্বশীল মহল থেকে যথাযথভাবে উপাচার্যকে অভিযোগ জানালে, তখন তা নেওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, উনি (ইফফাত আরা নার্গিস) দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। উনি আন্তরিক হলে সহায়তা করলে, নিয়মনীতি অনুসরণ করে অভিযোগ করলে, তখন আমরা দেখতে পারতাম যে বিষয়টা আসলে কী। অনেক সময় তো বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। অভিযোগ এলেই তো তদন্ত করা যায় না। এখানে মানুষের সম্মান-মর্যাদার বিষয় জড়িত থাকে। আর এসব বিষয়ে আমরা খুব কঠোর। অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

ছবি

জকসুতে বামজোটের মাওলানা ভাসানী ব্রিগেড প্যানেল

ছবি

ধানমন্ডি বত্রিশের বাড়ি ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানালেন রাকসুর জিএস আম্মার

ছবি

জকসু: বামদের নেতৃত্বে ‘মাওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেল ঘোষণা

ছবি

জকসু: ছাত্রদল ও ছাত্রঅধিকারের যৌথ ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেল ঘোষণা

ছবি

শাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ১৭ ডিসেম্বরই ভোট

ছবি

জবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হলেন খাদিজা

ছবি

রাবিতে নবীনবরণ: এক মঞ্চে রাকসু, ডাকসু ও চাকসুর ভিপি

ছবি

ঢাবি রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এরশাদ হালিমের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

ছবি

ছাত্রলীগের রাবি শাখার সাবেক নেতা আটক

ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু: সম্মিলিত ছাত্র সংসদের বিবৃতি

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

ছবি

রাকসু জিএসের সঙ্গে বাকবিতন্ডা, রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চাইলেন রাকসুর প্রতিনিধিরা

ছবি

‘সোহ্রাওয়ার্দীতে গাঁজা বেঁচতে নিষেধ করায় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে হত্যা’: ডিবি

ছবি

সৈয়দপুরে আর্মি ইউনিভার্সিটিতে মেট্রোরেল বিষয়ক সেমিনার

ছবি

জকসু নির্বাচন ২২ ডিসেম্বর

ছবি

রাকসুর প্রথম অধিবেশনে ১২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

জকসু নির্বাচন ২২ ডিসেম্বর

ছবি

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা যৌক্তিক সময়ে নেওয়ার দাবি উত্তীর্ণদের

ছবি

জকসুতে এমফিল বাদ: আমাদের মাইনাস করার মাস্টারপ্ল্যান, বলছে ছাত্রদল

ছবি

বিএনপির বিরুদ্ধে ডাকসুর শিবিরের তিন নেতার বিবৃতি

ছবি

ইবিতে জুলাইবিরোধী ৩০ শিক্ষক-কর্মকর্তা বরখাস্ত

ছবি

সিটি ইউনিভার্সিটিতে সংবাদ সম্মেলন: শাস্তি, ক্ষতিপূরণ ও জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি

ছবি

জবি ছাত্রদলের মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

রাবি: দুই প্রশিক্ষকের উপস্থিতিতে ডুবেছেন সায়মা, তদন্তে পাওয়া গেছে অন্যান্য ‘গাফিলতি’

ছবি

‘বৈষম্য’ বাতিলের দাবীতে লাগাতার কর্মবিরতিতে রাবির স্কুল শিক্ষকরা

ছবি

জকসু নির্বাচন: পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন

ছবি

রাবি: সায়মার মৃত্যুর ‘সুষ্ঠু বিচার’ দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরা, বিক্ষোভ

ছবি

চবির শহীদ আবদুর রব হলে সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন

ছবি

রাবি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আমরণ অনশন, তদন্তে কমিটি

ছবি

রাবি: সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

রাবি: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আমরণ অনশন, তদন্তে কমিটি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদ থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নিয়োগ বাতিল

ছাত্র সংসদ এখন থেকে জাতীয় ছাত্রশক্তি

ছবি

বুয়েটের শ্রীশান্তের বিরুদ্ধে মামলায় ধর্মানুভূতিতে আঘাতের ধারা

ছবি

পুলিশের বলা ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’ নিয়ে প্রশ্ন জোবায়েদের শিক্ষকের

tab

ঢাবি শিক্ষক লীনা তাপসীর বিরুদ্ধে পিএইচডি জালিয়াতির অভিযোগ

প্রতিনিধি, ঢাবি

রোববার, ১৩ জুন ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংগীত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহসীনা আক্তার খানম ওরফে লীনা তাপসী খানের বিরুদ্ধে পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক সংগীতশিল্পী ইফফাত আরা নার্গিস। একইসঙ্গে তিনি এ শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি ও নজরুল পদক বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

রোববার (১৩ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, একজন সংগীতশিল্পী হয়ে সংগীত গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি আমাকে খুবই আহত করেছে। সংগীত বিষয়ে একজন শিক্ষকের রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক অপকর্ম আজ আমাকে বিষয়টি তুলে ধরতে বাধ্য করেছে। আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার চৌর্যবৃত্তি নিয়ে অভিযোগ তুলছি। সেই শিক্ষকের নাম মহসিনা আক্তার খানম। যিনি কিনা তাপসী খান ছদ্মনামে সংগীতজগতে পরিচিত। তার মতো একজন পরিচিত শিল্পী ও শিক্ষক যখন চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন, তখন আমাদের কষ্ট হয়। অভিযোগটি তদন্তপূর্বক শাস্তি প্রদানের দাবিতে আমার এই বিবেকতাড়িত প্রতিবাদ।

তিনি বলেন, সংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি লীনা তাপসী খানের নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার গ্রন্থটি সংগ্রহ করি। কিন্তু বইটি পাঠ করে আমার এর আগে পাঠ করা তিন-চারটি গ্রন্থের সঙ্গে বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাই, যা পরিষ্কার চৌর্যবৃত্তি। চুরির ওপর ভিত্তি করে যদি তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভ রচিত হয়ে থাকে তবে, এ ডিগ্রি তদন্তপূর্বক বাতিল হলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আর যদি তার এই পুস্তক পিএইচডির সাথে সম্পর্কিত না হয় তবে গবেষক হয়ে অন্যের গ্রন্থ থেকে যথাযথ তথ্য সংকেত উল্লেখ না করে নিজের গ্রন্থে ব্যবহার করে যে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় তিনি নিয়েছেন, তার যথাযোগ্য বিচার হওয়া উচিত বলে আমি দাবি করি। এই অভিসন্দর্ভের কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন, এই গ্রন্থের কারণে তিনি পদোন্নতি নিয়েছেন, এই গ্রন্থের জন্য তিনি নজরুল পদকও লাভ করেছেন। অর্থাৎ এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে তিনি আর্থিক সুবিধা, পেশাগত সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা গ্রহণ করেছেন, যা দুর্নীতি হিসেবেও গণ্য।

তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ২৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক। এই স্বরলিপির স্থান হতে পারতো গ্রন্থের পরিশিষ্টে। মূল পাঠে এই স্বরলিপি কোনোক্রমেই স্থান পাওয়ার কথা নয়। এটিও একধরনের চৌর্যবৃত্তি। দেখা যাচ্ছে যে ২৭৭ পৃষ্ঠার বইয়ের মধ্যে ৮০ (স্বরলিপি)। ২৬ (শ্যামপ্রসাদ) + ৪৬ (কাকলী) +১৭ (পরিশিষ্ট) = ১৬৯ পৃষ্ঠা লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। এগুলো অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু গৃহীত। বাকি ১০১ পৃষ্ঠা লীনা তাপসীর খানের লেখা বলে দাবি করা হয়েছে। তার মধ্যে ইদরিস আলীর গ্রন্থ থেকেও নেওয়া হয়েছে। যথাযথ অনুসন্ধান হলে প্রমাণিত হতে পারে যে ওইসব পৃষ্ঠায় ব্যবহৃত তথ্যও লেখকের নয়। এমতাবস্থায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, আমার অভিযোগটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। কেবল উপাচার্য নন, দুজন উপ-উপাচার্য এবং সিন্ডিকেটের সকল সদস্যের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তদন্তের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, বরং লীনা একজন জাতীয় অধ্যাপকের দোহাই দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে যে কেউ তার কিছুই করতে পারবে না। এই সংবাদ যাতে প্রচারিত না হয় সেই ব্যাপারে তিনি তদবির করে বেড়াচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কেন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরেও তদন্ত করছে না, সেই রহস্য বুঝতে পারছি না।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন নায়েমের সাবেক এই পরিচালক। দাবিগুলো হলো- অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক লীনা তাপসীর পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল করা; এ ডিগ্রির জন্য প্রাপ্ত সব সুবিধা প্রত্যাহার করা; এ ডিগ্রি প্রদানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শাস্তি প্রদান করা; এ ডিগ্রির ওপর রচিত গ্রন্থ- নজরুল সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার বাতিলের জন্য কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া; এ গ্রন্থের জন্য প্রাপ্ত নজরুল পদক বাতিল করে নজরুল পদককে কলঙ্কমুক্ত করা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক লীনা তাপসী খান সংবাদকে বলেন, আমি নিজে নিজে জালিয়াতি করে কোনো সার্টিফিকেট বের করিনি, আমার একটা বোর্ড ছিল, সুপারভাইজার ছিল। আমার পিএইচডির সুপারভাইজার ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আজ তাকেও প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা র‍্যাংকিংয়ে নিতে চাচ্ছি, আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা জায়গায় পৌঁছাক। অথচ যার কোনো পিএইচডি ডিগ্রি নেই, যার কোনো লেখা নেই তিনি এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আঙুল তুলছেন। তিনি অন্যের প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্ক্যান্ডাল রটাচ্ছেন, অথচ এর কোনো ভিত্তি নেই।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের একটা কথা শুনছিলাম। কথাগুলো যতটা আন্তরিকভাবে, দায়িত্বশীলভাবে আসার কথা ছিল, সেভাবে আসেনি। সাংবাদিকদের এবং বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগের কপি যখন দেওয়া হয়েছে, তখন আমি বিষয়টি জানতে পারি। দায়িত্বশীল মহল থেকে যথাযথভাবে উপাচার্যকে অভিযোগ জানালে, তখন তা নেওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, উনি (ইফফাত আরা নার্গিস) দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। উনি আন্তরিক হলে সহায়তা করলে, নিয়মনীতি অনুসরণ করে অভিযোগ করলে, তখন আমরা দেখতে পারতাম যে বিষয়টা আসলে কী। অনেক সময় তো বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। অভিযোগ এলেই তো তদন্ত করা যায় না। এখানে মানুষের সম্মান-মর্যাদার বিষয় জড়িত থাকে। আর এসব বিষয়ে আমরা খুব কঠোর। অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

back to top