alt

মুক্ত আলোচনা

চিনি শিল্পে সংকট ও উত্তরণ

নিতাই চন্দ্র রায়

: শনিবার, ২৫ মে ২০১৯

সময় মতো আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে ক্ষোভে-দুঃখে জমি থেকে আখ উপড়ে ফেলেছেন জয়পুরহাট চিনি কলের কৃষক। আখের বদলে আবাদ করেছেন অন্য ফসল। চাষিদের কথা- তিন মাস আগে তারা আখ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখনও টাকা পাননি। তাহলে তাদের সংসরা চলে কীভাবে? ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচই আসে কোত্থেতে? যে ফসল বিক্রি করে দিনের পর দিন পাওনা টাকার জন্য ধরনা দিতে হয়, সেই ফসল আবাদ না করাই ভালো। জয়পুর হাট চিনি কলের ইবনে আল মাসুদ এবছর নিজের ৬ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলেন এবং মামার সঙ্গে যৌথভাবে করেছিলেন আরও ১৬ বিঘা জমিতে আখের চাষ। চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে তার পাওনা ছিল ছয় লাখ টাকা। সেই টাকা সময় মতো না পাওয়াতে অভিমানে তিনি ১৬ বিঘা জমির আখ উপড়ে ফেলেন। তার মতো জয়পুরহাট সদর উপজেলার গাড়িয়াকান্ত গ্রামের আর একজন চাষি হাফিজার রহমান আখ বিক্রি করে সময় মতো আখের মূল্য আড়াই লাখ টাকা না পেয়ে দুই একর জমির আখ তুলে ফেলে ওই জমিতে কলার চাষ করেন। এভাবে জংপুরহাট চিনি কলের বিভিন্ন সাবজোন থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ একর জমির আখ তুলে ছিলেন কৃষক। এটা শুধু জয়পুরহাট চিনি কলে নয়; অন্যান্য চিনিকলেও এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।

আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। এ সময়ে আমন ধান, আলু ও ভুট্টার মতো তিনটি ফসলের চাষ করে আখের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আয় করা যায় অনায়াসে। তারপরও সেই আখ বিক্রি করে যদি সময় মতো মূল্য না পাওয়া যায়, তাহলে আখের আবাদ করবে কেন কৃষক? আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে দেশের ১৫টি রাষ্ট্রায়াত্ত চিনিকলে আখ সরবরাহ করেন কৃষক। চিনি বিক্রি না হওয়ার কারণে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে মহা বিপদে পড়েছেন কৃষক। সরকারি ১৫টি চিনিকলের কাছে আখ চাষিদের পাওনা রয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আখের মূল্য ১১৯ কোটি টাকা এবং বীজের মূল্য ৩১ কোটি টাকা। আখ চাষিদের পাওনা ১৫০ কোটি টাকা আসন্ন ঈদের আগে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনকে পরিশোধের পরামর্শ দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির এ উদ্যোগকে আমার অভিনন্দন জানাই।

এরকমতো ছিল না দেশের কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারি প্রতিষ্ঠান চিনিশিল্প। আখ বিক্রির সঙ্গে সঙ্গেই কৃষক আখের মূল্য পেতেন। মনের আনন্দে নতুন আখ রোপণ করতেন। মুড়ি আখের যতœ নিতেন। সময় মতো সারও কীটনাশক প্রয়োগ করে আখের ফলন বাড়নোর চেষ্টা করতেন। বেশি দিনের কথা না, ১৯৮৯-৯০ মাড়াই মৌসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ২০৩ টন আখ মাড়াই করে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬২ টন চিনি উৎপাদন করে। সে সময় চিনি আহরণের হার ছিল ৮.৭৭%। পরবর্তীতে ২০০০-২০০১ মাড়াই মৌসুমে ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৬ টন আখ মাড়াই করে ৯৮ হাজার ৩৫৫ টন চিনি উৎপাদন করে বিএসএফআইসি। ওই মাড়াই মৌসুমে চিনি আহরণ হার ছিল ৭.১১%। এরপর জলবায়ু পরিবর্তন, তুলনামূলক কম সূর্যালোক ঘণ্টা, আগাম আখ চাষের জমির পরিমাণ হ্রাস, নিচু জমিতে আখ চাষ, উচ্চ চিনি আহরণযুক্ত ইক্ষু জাতের অভাব, অপরিপক্ব আখ মাড়াই, পুরাতন যন্ত্রপাতি ও মিলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কমতে থাকে চিনি আহরণ হার ও মোট চিনি উৎপাদন।

বাংলাদেশে আখই একমাত্র ফসল, যা কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি মিলে সরবরাহ করতে পারেন। আখের মূল্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষককে প্রদান করা হয়। আখকে বলা হয় বীমাকৃত ফসল। কারণ খরা, অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা এবং রোগও পোকা মাকড়ের আক্রমণেও আখ ফসল একেবারে নষ্ট হয় না। বঞ্চিত করে না কৃষককে। অর্থ সংকটের কারণে চিনিকলগুলো এখনও আখের জমিতে উপরি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক সংগ্রহ করতে পারেনি। উপরি সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো উপরি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে না পারলে আখের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ হ্রাস পাবে- এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। গত ২০১৮-১৯ মাড়াই মৌসুমে ১৫টি চিনিকলের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ও ১ লাখ ২৫ হাজার টন। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১১ লাখ ৮২ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৬৮ হাজার ৯৫২ টন চিনি উৎপাদন করা হয়। জুন মাসের পর বর্ষা শুরু হলে আখের জমিতে আর উপরি সার ও কীটাশক প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। একারণে আগামী মাড়াই মৌসুমে আখের স্বল্পতার কারণে চিনিকলগুলোতে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ আরও হ্রাস পাবে এবং লোকসানের পরিমাণও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সার ও কীটনাশক ক্রয়ের জন্য মিলগুলোকে যত শিগগিরই সম্ভব প্রয়োজনীয় অর্থ সররাহ করতে হবে।

জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে চিনিকলগুলো লোকসান ছিল ৩১৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৪১ কোটি টাকায়। আর গত অর্থবছরে ১৪টি চিনিকলের লোকসান হয় ৮৩৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে থাকা ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মধ্য লাভ করেছে শুধু দুটি প্রতিষ্ঠান। দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও কুষ্টিয়ার রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি। লাভে থাকা কেরুর চিনি কারখানা ছাড়াও আছে ডিস্টিলারি ইউনিট, বাণিজ্যিক খামার পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানা। সব মিলিয়ে কেরু গত অর্থ বছরে লাভ করেছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অবশ্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরের কেরুর লাভ ছিল ৯ কোটির টাকার বেশি। কুষ্টিয়ার রেনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বর কোম্পানি গত বছর লাভ করেছে ৬ কোটি টাকা।

১৫টি চিনি কলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার টন হলেও বর্তমানে বছরে চিনি উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭০ লাখ টনের মতো অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। আখের স্বল্পতাই উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী চিনি উৎপাদন না হওয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আখ চাষিদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনবার আখের দাম বৃদ্ধির পরও মিল এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক হচ্ছে না আখ চাষ। বর্তমানে মিলসগেটে প্রতি মণ (৪০) আখের দাম ১৪০ টাকা। সে হিসেবে ১০০ কেজি আখের দাম ৩৫০ টাকা। সদ্যসমাপ্ত মাড়াই মৌসুমে করপোরেশনের গড় চিনি আহরণ হার ছিল ৫.৮৩%। সে অনুযায়ী ১০০ কেজি আখ থেকে চিনি পাওয়া যায় ৫ কেজি ৮৩০ গ্রাম। ৫০ টাকা কেজি হিসেবে যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৯১ দশমিক ৫০ টাকা। অর্থাৎ ১০০ কেজি আখ থেকে যে চিনি পাওয়া যায় তা বিক্রি করে আখের দামই উঠে না। তারপর তো রয়েছে উৎপাদন উপকরণ- চুন, সালফারের দাম, জ্বালানি খরচ, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনÑভাতা, আখ পরিবহন খরচ এবং যন্ত্রপাতি মেরামতসহ অন্যান্য ব্যয়। এ অবস্থাতে চিনি কলগুলো লাভ করবে কীভাবে? সম্প্রতি (১৫ মে বুধবার) জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বিএসএফআইসির প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে সংস্থাটি চিনিকলের লোকসানের কিছু কারণ উল্লেখ করে। কারণগুলো হলো- উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম, পুঞ্জিভূত ঋণ ও সুদ, আখের উন্নত জাতের উদ্ভাবন না হওয়া, কারখানার আধুনিকায়ন না হওয়া ও দক্ষ জনবলের অভাব। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে কম দামে বাজারজাত করা। লোকসানের পাশাপাশি করপোরেশনের ব্যাংক ঋণ ও দায় দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭১০ কোটি টাকা। করপোরেশনের দাবি লোকসান কমাতে ব্যাংকঋণ সুদসহ এককালীন মওকুফ করা হোক। এছাড়া বিএসএফআইসি না লাভ না ক্ষতি পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতন প্রদান।

দেখা গেছে সরকারিভাবে চিনির দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করলে বেসরকারি পরিশোধন কারখানগুলো তাদের পরিশোধিত চিনি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। আবার চিনির দাম কমিয়ে সরকার প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকা নির্ধারণ করলে পরিশোধন কোম্পানিগুলো বিক্রি করে ৪৮ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে পরিশোধন কারখানাগুলোর উৎপাদিত চিনির রং ধবধবে সাদা। এসব কারণে সরকারি চিনি কলে উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয় না। দেশে বর্তমানে ৬টি চিনি পরিশোধন কারখানা রয়েছে। এসব কারখানাগুলো ব্রাজিলও থাইল্যান্ড থেকে র-সুগার আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারজাত করছে। এসব পরিশোধন কারখানাগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ লাখ টন। আর দেশের বার্ষিক চিনির চাহিদা ১৪ লাখ টন। শর্ত ছিল পরিশোধন কারখানাগুলো তাদের উৎপাদিত চিনির ৫০% বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। কিন্তু তারা সে শর্ত ভঙ্গ করে বিদেশে রফতানি না করে উৎপাদিত সমুদয় চিনিই দেশে বাজারজাত করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কৃষিভিত্তিক চিনি শিল্প ও আখ চাষিগণ।

কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের কোটি কোটি কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পই পারে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে। সে লক্ষ্যেই দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্থাপন করা হয় কৃষিভিত্তিক চিনি শিল্প। চিনি শিল্পগুলো শুধু চিনি উৎপাদনই করে না। স্বল্প সুদে আখ চাষিদের মধ্যে বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করে। প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। আখ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়। আখের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শীতকালীন সবজি, ডাল ও তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে আখচাষিদের উদ্বুদ্ধ করে। আখ চাষিদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের এককালীন বৃত্তি প্রদান করে। মিলজোন এলাকায় রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট মেরামত করে। আখ চাষিদের উৎপাদিত সমুদয় আখ সরকার নির্ধারিত দামে ক্রয় করে। আখের মূল্য হিসেবে চিনিকলগুলো আখচাষিদের মধ্যে কোটি টাকা বিতরণ করে, যা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এবং এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধকোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে। চিনিকল এলাকায় অনেক কৃষক আছেন যাদের পাকা বাড়ি নির্মাণ হয়েছে আখের টাকায়। যাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন আখ বিক্রির অর্থে। চিনিকলগুলো চিনি উৎপাদনের সঙ্গে অনেক সামাজিক দায়িত্ব পালন করে, তাতে লাভবান হচ্ছেন দেশের ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষক ও ভোক্তা সাধারণ। সে হিসেবে চিনি পরিশোধন কারখানাগুলো দ্বারা এদেশের কৃষকের কোন উপকারই হচ্ছে না। উপকার হচ্ছে ব্রাজিল ও থাইল্যান্ডের কৃষকের। আমরা সবাই বলি- কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। সেটা যদি সত্য হয়, তা হলে আর দেরি না করে অনতিবিলম্বে আখ চাষিদের পাওনা আখের মূল্য পরিশোধে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে চিনিকলগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারেও সঠিক ও বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকেই। অন্যথায় সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ হলে বেসরকারি পরিশোধন কারখানাগুলোর একচেটিয়া ব্যবসার কারণে দেশবাসীকে বর্তমানের দ্বিগুণ দামে চিনির স্বাদ ভোগ করতে হবে-এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

[লেখক : সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লি. গোপালপুর, নাটোর]

netairoy18@yahoo.com

দৈনিক সংবাদ : ২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

চিনি শিল্পে সংকট ও উত্তরণ

নিতাই চন্দ্র রায়

শনিবার, ২৫ মে ২০১৯

সময় মতো আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে ক্ষোভে-দুঃখে জমি থেকে আখ উপড়ে ফেলেছেন জয়পুরহাট চিনি কলের কৃষক। আখের বদলে আবাদ করেছেন অন্য ফসল। চাষিদের কথা- তিন মাস আগে তারা আখ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখনও টাকা পাননি। তাহলে তাদের সংসরা চলে কীভাবে? ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচই আসে কোত্থেতে? যে ফসল বিক্রি করে দিনের পর দিন পাওনা টাকার জন্য ধরনা দিতে হয়, সেই ফসল আবাদ না করাই ভালো। জয়পুর হাট চিনি কলের ইবনে আল মাসুদ এবছর নিজের ৬ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলেন এবং মামার সঙ্গে যৌথভাবে করেছিলেন আরও ১৬ বিঘা জমিতে আখের চাষ। চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে তার পাওনা ছিল ছয় লাখ টাকা। সেই টাকা সময় মতো না পাওয়াতে অভিমানে তিনি ১৬ বিঘা জমির আখ উপড়ে ফেলেন। তার মতো জয়পুরহাট সদর উপজেলার গাড়িয়াকান্ত গ্রামের আর একজন চাষি হাফিজার রহমান আখ বিক্রি করে সময় মতো আখের মূল্য আড়াই লাখ টাকা না পেয়ে দুই একর জমির আখ তুলে ফেলে ওই জমিতে কলার চাষ করেন। এভাবে জংপুরহাট চিনি কলের বিভিন্ন সাবজোন থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ একর জমির আখ তুলে ছিলেন কৃষক। এটা শুধু জয়পুরহাট চিনি কলে নয়; অন্যান্য চিনিকলেও এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।

আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। এ সময়ে আমন ধান, আলু ও ভুট্টার মতো তিনটি ফসলের চাষ করে আখের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আয় করা যায় অনায়াসে। তারপরও সেই আখ বিক্রি করে যদি সময় মতো মূল্য না পাওয়া যায়, তাহলে আখের আবাদ করবে কেন কৃষক? আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে দেশের ১৫টি রাষ্ট্রায়াত্ত চিনিকলে আখ সরবরাহ করেন কৃষক। চিনি বিক্রি না হওয়ার কারণে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে মহা বিপদে পড়েছেন কৃষক। সরকারি ১৫টি চিনিকলের কাছে আখ চাষিদের পাওনা রয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আখের মূল্য ১১৯ কোটি টাকা এবং বীজের মূল্য ৩১ কোটি টাকা। আখ চাষিদের পাওনা ১৫০ কোটি টাকা আসন্ন ঈদের আগে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনকে পরিশোধের পরামর্শ দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির এ উদ্যোগকে আমার অভিনন্দন জানাই।

এরকমতো ছিল না দেশের কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারি প্রতিষ্ঠান চিনিশিল্প। আখ বিক্রির সঙ্গে সঙ্গেই কৃষক আখের মূল্য পেতেন। মনের আনন্দে নতুন আখ রোপণ করতেন। মুড়ি আখের যতœ নিতেন। সময় মতো সারও কীটনাশক প্রয়োগ করে আখের ফলন বাড়নোর চেষ্টা করতেন। বেশি দিনের কথা না, ১৯৮৯-৯০ মাড়াই মৌসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ২০৩ টন আখ মাড়াই করে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬২ টন চিনি উৎপাদন করে। সে সময় চিনি আহরণের হার ছিল ৮.৭৭%। পরবর্তীতে ২০০০-২০০১ মাড়াই মৌসুমে ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৬ টন আখ মাড়াই করে ৯৮ হাজার ৩৫৫ টন চিনি উৎপাদন করে বিএসএফআইসি। ওই মাড়াই মৌসুমে চিনি আহরণ হার ছিল ৭.১১%। এরপর জলবায়ু পরিবর্তন, তুলনামূলক কম সূর্যালোক ঘণ্টা, আগাম আখ চাষের জমির পরিমাণ হ্রাস, নিচু জমিতে আখ চাষ, উচ্চ চিনি আহরণযুক্ত ইক্ষু জাতের অভাব, অপরিপক্ব আখ মাড়াই, পুরাতন যন্ত্রপাতি ও মিলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কমতে থাকে চিনি আহরণ হার ও মোট চিনি উৎপাদন।

বাংলাদেশে আখই একমাত্র ফসল, যা কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি মিলে সরবরাহ করতে পারেন। আখের মূল্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষককে প্রদান করা হয়। আখকে বলা হয় বীমাকৃত ফসল। কারণ খরা, অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা এবং রোগও পোকা মাকড়ের আক্রমণেও আখ ফসল একেবারে নষ্ট হয় না। বঞ্চিত করে না কৃষককে। অর্থ সংকটের কারণে চিনিকলগুলো এখনও আখের জমিতে উপরি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক সংগ্রহ করতে পারেনি। উপরি সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো উপরি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে না পারলে আখের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ হ্রাস পাবে- এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। গত ২০১৮-১৯ মাড়াই মৌসুমে ১৫টি চিনিকলের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ও ১ লাখ ২৫ হাজার টন। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১১ লাখ ৮২ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৬৮ হাজার ৯৫২ টন চিনি উৎপাদন করা হয়। জুন মাসের পর বর্ষা শুরু হলে আখের জমিতে আর উপরি সার ও কীটাশক প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। একারণে আগামী মাড়াই মৌসুমে আখের স্বল্পতার কারণে চিনিকলগুলোতে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ আরও হ্রাস পাবে এবং লোকসানের পরিমাণও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সার ও কীটনাশক ক্রয়ের জন্য মিলগুলোকে যত শিগগিরই সম্ভব প্রয়োজনীয় অর্থ সররাহ করতে হবে।

জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে চিনিকলগুলো লোকসান ছিল ৩১৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৪১ কোটি টাকায়। আর গত অর্থবছরে ১৪টি চিনিকলের লোকসান হয় ৮৩৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে থাকা ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মধ্য লাভ করেছে শুধু দুটি প্রতিষ্ঠান। দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও কুষ্টিয়ার রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি। লাভে থাকা কেরুর চিনি কারখানা ছাড়াও আছে ডিস্টিলারি ইউনিট, বাণিজ্যিক খামার পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানা। সব মিলিয়ে কেরু গত অর্থ বছরে লাভ করেছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অবশ্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরের কেরুর লাভ ছিল ৯ কোটির টাকার বেশি। কুষ্টিয়ার রেনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বর কোম্পানি গত বছর লাভ করেছে ৬ কোটি টাকা।

১৫টি চিনি কলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার টন হলেও বর্তমানে বছরে চিনি উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭০ লাখ টনের মতো অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। আখের স্বল্পতাই উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী চিনি উৎপাদন না হওয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আখ চাষিদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনবার আখের দাম বৃদ্ধির পরও মিল এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক হচ্ছে না আখ চাষ। বর্তমানে মিলসগেটে প্রতি মণ (৪০) আখের দাম ১৪০ টাকা। সে হিসেবে ১০০ কেজি আখের দাম ৩৫০ টাকা। সদ্যসমাপ্ত মাড়াই মৌসুমে করপোরেশনের গড় চিনি আহরণ হার ছিল ৫.৮৩%। সে অনুযায়ী ১০০ কেজি আখ থেকে চিনি পাওয়া যায় ৫ কেজি ৮৩০ গ্রাম। ৫০ টাকা কেজি হিসেবে যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৯১ দশমিক ৫০ টাকা। অর্থাৎ ১০০ কেজি আখ থেকে যে চিনি পাওয়া যায় তা বিক্রি করে আখের দামই উঠে না। তারপর তো রয়েছে উৎপাদন উপকরণ- চুন, সালফারের দাম, জ্বালানি খরচ, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনÑভাতা, আখ পরিবহন খরচ এবং যন্ত্রপাতি মেরামতসহ অন্যান্য ব্যয়। এ অবস্থাতে চিনি কলগুলো লাভ করবে কীভাবে? সম্প্রতি (১৫ মে বুধবার) জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বিএসএফআইসির প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে সংস্থাটি চিনিকলের লোকসানের কিছু কারণ উল্লেখ করে। কারণগুলো হলো- উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম, পুঞ্জিভূত ঋণ ও সুদ, আখের উন্নত জাতের উদ্ভাবন না হওয়া, কারখানার আধুনিকায়ন না হওয়া ও দক্ষ জনবলের অভাব। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে কম দামে বাজারজাত করা। লোকসানের পাশাপাশি করপোরেশনের ব্যাংক ঋণ ও দায় দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭১০ কোটি টাকা। করপোরেশনের দাবি লোকসান কমাতে ব্যাংকঋণ সুদসহ এককালীন মওকুফ করা হোক। এছাড়া বিএসএফআইসি না লাভ না ক্ষতি পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতন প্রদান।

দেখা গেছে সরকারিভাবে চিনির দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করলে বেসরকারি পরিশোধন কারখানগুলো তাদের পরিশোধিত চিনি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। আবার চিনির দাম কমিয়ে সরকার প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকা নির্ধারণ করলে পরিশোধন কোম্পানিগুলো বিক্রি করে ৪৮ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে পরিশোধন কারখানাগুলোর উৎপাদিত চিনির রং ধবধবে সাদা। এসব কারণে সরকারি চিনি কলে উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয় না। দেশে বর্তমানে ৬টি চিনি পরিশোধন কারখানা রয়েছে। এসব কারখানাগুলো ব্রাজিলও থাইল্যান্ড থেকে র-সুগার আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারজাত করছে। এসব পরিশোধন কারখানাগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ লাখ টন। আর দেশের বার্ষিক চিনির চাহিদা ১৪ লাখ টন। শর্ত ছিল পরিশোধন কারখানাগুলো তাদের উৎপাদিত চিনির ৫০% বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। কিন্তু তারা সে শর্ত ভঙ্গ করে বিদেশে রফতানি না করে উৎপাদিত সমুদয় চিনিই দেশে বাজারজাত করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কৃষিভিত্তিক চিনি শিল্প ও আখ চাষিগণ।

কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের কোটি কোটি কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পই পারে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে। সে লক্ষ্যেই দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্থাপন করা হয় কৃষিভিত্তিক চিনি শিল্প। চিনি শিল্পগুলো শুধু চিনি উৎপাদনই করে না। স্বল্প সুদে আখ চাষিদের মধ্যে বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করে। প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। আখ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়। আখের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শীতকালীন সবজি, ডাল ও তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে আখচাষিদের উদ্বুদ্ধ করে। আখ চাষিদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের এককালীন বৃত্তি প্রদান করে। মিলজোন এলাকায় রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট মেরামত করে। আখ চাষিদের উৎপাদিত সমুদয় আখ সরকার নির্ধারিত দামে ক্রয় করে। আখের মূল্য হিসেবে চিনিকলগুলো আখচাষিদের মধ্যে কোটি টাকা বিতরণ করে, যা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এবং এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধকোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে। চিনিকল এলাকায় অনেক কৃষক আছেন যাদের পাকা বাড়ি নির্মাণ হয়েছে আখের টাকায়। যাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন আখ বিক্রির অর্থে। চিনিকলগুলো চিনি উৎপাদনের সঙ্গে অনেক সামাজিক দায়িত্ব পালন করে, তাতে লাভবান হচ্ছেন দেশের ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষক ও ভোক্তা সাধারণ। সে হিসেবে চিনি পরিশোধন কারখানাগুলো দ্বারা এদেশের কৃষকের কোন উপকারই হচ্ছে না। উপকার হচ্ছে ব্রাজিল ও থাইল্যান্ডের কৃষকের। আমরা সবাই বলি- কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। সেটা যদি সত্য হয়, তা হলে আর দেরি না করে অনতিবিলম্বে আখ চাষিদের পাওনা আখের মূল্য পরিশোধে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে চিনিকলগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারেও সঠিক ও বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকেই। অন্যথায় সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ হলে বেসরকারি পরিশোধন কারখানাগুলোর একচেটিয়া ব্যবসার কারণে দেশবাসীকে বর্তমানের দ্বিগুণ দামে চিনির স্বাদ ভোগ করতে হবে-এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

[লেখক : সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লি. গোপালপুর, নাটোর]

netairoy18@yahoo.com

দৈনিক সংবাদ : ২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

back to top