alt

মুক্ত আলোচনা

জঙ্গিদের পরবর্তী লক্ষ্য কোন দেশ!

কবীর চৌধুরী তন্ময়

: শনিবার, ০৪ মে ২০১৯

রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশকিছু ওলোট-পালটের ঘটনা ঘটছে। শিগগিরই আরও কিছু ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। মারাত্মকভাবে হতাশায় নিমজ্জিত দলগুলোতেই ঘটছে ওইসব ঘটনা। কড়া নির্দেশ গণফোরামের ও বিএনপি থেকে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা শপথ গ্রহণ করবেন না। কারণ তারা মনে করেন একাদশ সংসদ নির্বাচন আদৌ কোন নির্বাচন নয়। জালিয়াতির ওই নির্বাচনের ফলাফল তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোরতম হুঁশিয়ারি থাকা সত্ত্বেও গণফোরামের দুজন এবং বিএনপির একজন শপথ গ্রহণ করেছেন। বিএনপির বাকিরাও নাকি ৩০ তারিখের মধ্যেই শপথ নিতে পারেন। অর্থাৎ এ লেখাট যখন ছাপা হবে তার আগেই সবকিছু হয়ে যাবে। যারা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে শপথ নিয়েছেন তাদের যথারীতি বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও গণফোরামের একটি সভায় দল থেকে বহিষ্কৃত এক এমপি স্বমহিমায় উপস্থিত হয়ে একেবারে মঞ্চেই দলের সভাপতি ড. কামালের পাশে উপবেশন করেছিলেন। ওই সভাটি গণফোরামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা। অথচ সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু উপস্থিত ছিলেন না, এটা শুধু অস্বাভাবিকই নয়, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে দলের মতদ্বৈধতা চরমভাবে প্রকাশ পেয়েছে যা ভাঙন পর্যন্ত গড়াতে পারে। আবার একই সভায় গণফোরামের অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বহিষ্কৃত মোকাব্বির খান এমপি কেমন করে সভায় উপস্থিত হয়ে একেবারে মঞ্চে উপবেশন করলেন? একজন ক্ষুব্ধ নেতা তো মিডিয়ার সামনেই বললেন- চেম্বারে দেখা করতে গেলে ‘গেট আউট’ বলে বের করে দেন, আবার বাসায় গেলে শপথ নেয়ার পরামর্শ দেন। এমনই দুমুখো শাপ ড. কামাল হোসেন। উল্লেখ্য, সিলেট থেকে নির্বাচিত এমপি মোকাব্বির খানের বেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক মন্টু সাহেব কি সভাপতির এমন দ্বিচারিতা ভূমিকার জন্যই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন? নাকি অন্য কোন পরিকল্পনা নিয়ে তিনি এগোচ্ছেন?

দীর্ঘদিন কাছে থেকে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই কারণেই প্রথমে আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাককে দলের নীতি-আদর্শের প্রতি ড. কামালের আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে তাদের সব বলেছিলাম। এরপর যখন দলের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিলেও তাকেও বলেছি। মূলত: পশ্চিমা পুঁজিবাদের ধারক-বাহক এ লোকটিকে হজম করে চলা খুবই কঠিন। বঙ্গবন্ধুর দ্বারা যেটা সম্ভব হয়েছে তা অন্যদের দ্বারা সম্ভব নয়। রহস্যজনক, দুমুখো নীতির লোক। তাই এক সময় যখন আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন এবং গণফোরাম নামে নতুন দল গঠন করলেন তখন তার নাম-পরিচয় দেখেই অনেকে আকৃষ্ট হয়েছেন। তার রাজনীতির আসল রহস্য কেউই বুঝতে পারেননি। মোস্তফা মোহসিন মন্টু যখন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হন তখনই আমি ভেবেছি- যদি মন্টু সাহেব বঙ্গবন্ধু প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসেন তাহলে ড. কামালের সঙ্গে বেশিদিন ঘর করতে পারবেন না। আমার এখনও বিশ্বাস মন্টু সাহেব যথার্থই বঙ্গবন্ধুকেই নেতা মানেন, রাজনীতির পথ প্রদর্শক ভাবেন। কামাল হোসেন যখন কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেন, তখন অনেকে বিভ্রান্ত হলেও আমরা হই না। কেননা তার ওই বঙ্গবন্ধু নাম ব্যবহার শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ফায়দা নেয়ার জন্য। বিএনপিও তাকে পরিমাপ করতে পারেনি। তারা ঐক্যফ্রন্টের নামে ডা. বদরুদ্দোজাকে কৌশলে বাদ দিয়ে যে নির্বাচনী খেলায় নেমেছিল তাতে কামালের লাভ হলেও বিএনপির হয়েছে মহাক্ষতি। বিএনপি নির্বাচনে জোরালো ভূমিকা পালনে মোটেই প্রস্তুত ছিল না। তাদের সংগঠন সম্পূর্ণ অগোছালো। ফলে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। কিন্তু যাদের কোনই সম্ভাবনা এমনকি ড. কামালেরও কোন সম্ভাবনা ছিল না সেই গণফোরাম দুটি আসনে জয়ী হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপির মতো বিরাট দল জিতেছে ৬টি আসনে। সরকার কারচুপি করেছে, জালিয়াতি করেছে ইত্যাদি বলে তারা যতই অভিযোগ তুলুক না কেন বাস্তবতা হলো বিএনপি ছয়টি আসনে জয়ী হয়েছে। ’৭৯ সালে জিয়াউর রহমান সাহেব একটা ভোট ডাকাতির চরমপরাকাষ্ঠা দেখিয়ে সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। সেই ডাকাতির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসনে জয়ী হয়ে সংসদে বিরোধী দল হয়েছিল। বিএনপি যদি সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে এবার নির্বাচন করতো বহু আসনেই জয়ী হতে পারত। শক্তিশালী বিরোধী দল হতে মোটেই বেগ পেতে হতো না। নির্বাচনে নেমে তারা ‘খেলা খেলা’ কাজটা না করলেই পারতো। ড. কামাল যে একজন নীতিহীন রহস্যজনক লোক তার সর্বশেষ প্রমাণ তিনি তলে তলে শপথ নেয়ার কথা বলেছেন আর ওপর প্রকাশ্যে ‘গেট আউট’ বলে হুমকি দিয়েছেন। তাদের দুজন এমপিই বলেছেন দলীয় প্রধানের অনুমতি নিয়েই তারা শপথ নিয়েছেন।

অনেক নাটক-চিত্র নাটক লেখা ও মঞ্চস্থ করার পরে বিএনপির বাকি ৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্য থেকে চারজনই শপথ নিয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর কেমন করে নেন। বিএনপির মহাসচিব বলে কথা। দীর্ঘ কয়েক বছর ভারপ্রাপ্ত থাকার পর পূর্ণ মহাসচিব হয়েছেন। যদি শপথ নিলে তাদের প্রবাসী নেতা নাখোশ হন। তাই অনেক প্রমাদগুনে শপথ নেননি। অর্থাৎ বিএনপির একজন এখন পর্যন্ত শপথ নিলেন না। যারা শপথ নিয়েছেন তারা মিডিয়ার সামনেই সরাসরি জানিয়েছেন- বিএনপির সাজাপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের অনুমতি নিয়েই শপথ গ্রহণ করেছেন। সংসদে বসে তারা বিএনপির দাবি-দাওয়াই তুলে ধরবেন। একেবারে ৯০ দিনের শেষ দিনের শেষ সময়ে শপথ গ্রহণের নাটকের যবনিকা টানলেন বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। মনে হচ্ছে লজ্জা শরমের কারণেই মির্জা ফখরুল শপথ নিতে পারলেন না। কেননা শপথ না নেয়ার প্রশ্নে দল থেকে বহিষ্কারের এত হুমকি-ধামকির পরে কোন মুখে তিনি শপথ নেবেন। যদি তারেক রহমানই অনুমোদন করে থাকেন তাহলে তার বাধা কোথায়?

দলের একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে, বিএনপির দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সংসদে তার জোড়ালো ভূমিকা পালনের বিরাট সুযোগ রয়েছে। সংসদে তার উপস্থিতি প্রয়োজন। দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে, দলের স্বার্থে। ৭৯ সালের জিয়াউর রহমানের সংসদের বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ৩৯ জন সদস্য থাকলেও মাত্র দুজন সদস্যই সরকারি দল বিএনপিকে এবং তাদের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানকে চৌকশ আক্রমণ চালিয়ে সংসদ মাতিয়ে রাখতেন। তখন বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি লিডার ছিলেন মহীউদ্দিন আহমদ। তারা দুজন বিএনপিকে যুক্তিতর্কে কোণঠাসা করে রাখার নজির আমরা দেখেছি। তাই শুধু সংখ্যা দিয়ে নয়, মেধা মুক্তি, বাকচাতুর্য দিয়েও বড় দলকে কোণঠাসা করা যায়। তাই বিএনপি যদি ৬ জন বা ৮ জন নিয়ে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে সংসদকে কাপিয়ে রাখা সম্ভব। সে কারণেই মির্জা ফখরুলের সংসদে যাওয়া একান্ত উচিত ছিল। তারা ভুলের ডোবাজল থেকে আর বেরিয়েই আসতে পারছেন না।

ভুলের রাজনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রয়েছে বিএনপিকে। প্রথমে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া সিদ্ধান্ত ছিল। বেশিদিন তাতে অটল থাকতে পারেনি। ঐক্যফ্রন্ট গঠন হওয়ার পর অগোছালোভাবে নির্বাচনে যায়। সাংগঠনিকভাবে তারা এতটাই বিশৃঙ্খল ছিল যে, নির্বাচনে নেমে ‘ কানামাছি’ খেলেছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনের পক্ষে ভূমিকা নিয়েছিল লোভনীয় বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে। যারা প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতি আসনে গড়ে ৪/৫ করে মনোনয়ন দেয়ার ঘটনায়। প্রত্যেক প্রার্থীরই বিপুল অর্থ ব্যয় করে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাও আবার একজন নয় একাধিক। এ সব খেলার ফল পেয়েছে তারা নির্বাচনে। বিএনপি-গণফোরাম মিলে ৮টি আসনে জয়। এবার সিদ্ধান্ত নির্বাচন মানি না, সরকার বৈধ নয়, সংসদ একদলীয় ইত্যাদি বলে শপথ না নেয়ার। অবশেষে আগেই দলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তিনজন শপথ নেন। সর্বশেষ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার শেষদিনে বিএনপি পাঁচজনের চারজনই শপথ নিয়েছেন। বাকি রইলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল। দোহাই দিয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী নেতার অনুমতি নিয়েই তারা শপথ নিয়েছেন। কথায় বলে ‘গাধা পানি খায় ঘোলা করে’। সংসদে যারা যোগ দিয়েছেন তারা নাকি পুনর্নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার থাকবেন। তাহলে আগে তাদের মাথায় এ সব দাবির কথা এলো না কেন? এ সব দাবি হালে বাতাস না পেলেও দাবি তারা করতেই পারেন। তাতে কারও কিছু বলার নেই। তবে প্রথমেই বলেছি মির্জা ফখরুল সংসদে থাকলে ওই সব দাবি আরও জোড়ালোভাবে তুলতে পারতেন।

কিছুদিন থেকে বিএনপির নেতারা বলছিলেনÑ বিএনপির নির্বাচিত সদস্যদের চাপ দেয়া হচ্ছে শপথ নেয়ার জন্য। কারণ সরকার তার বৈধতা নিশ্চিত করতে চায়। অর্থাৎ বিএনপির ৬ সদস্য সংসদে গেলেই যেন সংসদ ও সরকার বৈধ হবে। সরকার তখন বলতে পারবে নির্বাচিত সব সদস্যই সংসদে বসে তাদের ভূমিকা রাখছেন। বোকার সর্গে যারা বাস করেন তারাই কেবল এমনটা ভাবতে পারেন। তিন মাসের ওপর নতুন সংসদ গঠন হয়েছে সরকার গঠনের মাধ্যমে সে জাতীয় আন্তর্জাতিক কাজকর্ম করে চলেছে দায়িত্ব করছে। বিএনপি গণফোরামের ৮ জন সদস্য শপথ নেওয়া থেকে বাদ থাকলে সরকারের কি সামান্যতম কোন ক্ষতি হয়েছে? কোন সংস্থা বা দেশ কি সে জন্য সরকারের বৈধতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলেছে? আহম্মকের সঙ্গে যারা বাস করে তারাই ভাবতে পারেন তাদের উপস্থিত ছাড়া সরকার বৈধ হবে না। বিএনপি নেতারা একটা সাধারণ কথা ভুলে গেছেন নির্বাচনটা বৈধ ও আইন অনুযায়ী হয়েছে। ভোটপর্বে গিয়ে কিছু পরিমাণ বাড়াবাড়ি হয়েছে তাতে গোটা নির্বাচন ও তার ফলাফলের অবৈধতার কোন ছাপ পড়েনি। ভারতে এখন লোকসভার নির্বাচন হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের সময় অসংখ্যা ঘটনা ঘটছে বিশেষ করে পশ্চিম রাষ্ট্রের নির্বাচনে। তাই গোটা লোকসভা নির্বাচনের শ্লীলতাহানি ঘটেনি। এসব ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়েই সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা অধিকতর জনগণ দ্বারা গঠিত সরকার ব্যবস্থা বলা হয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হলো সমাজের একটি বিশেষ সুবিধাভোগী মানুষের দ্বারা পরিচালিত ব্যবস্থা ওই সুবিধাভোগীরাই আবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আমাদের বর্তমান ব্যবস্থায় তো একজন শ্রমিক বা কৃষকের পক্ষে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সুযোগই নেই। এটাই গণতন্ত্র। যত প্রকার শাসনব্যবস্থা রয়েছে তার মধ্যে এ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকেই অপেক্ষাকৃত উত্তম বলে স্বীকার করা হয়।

ইউরোপ-আমেরিকা এশিয়া সর্বত্রই গণতান্ত্রিক শাসনে ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। কোথাও কম, কোথাও বেশি। এসব কারণেই একদা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের সম-আদর্শের দেশসমূহ গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তাদের বিশ্বাস সেটাই উত্তম ব্যবস্থা। বিএনপি নেতাদের এসব বুঝতে হবে এবং কঠিন বাস্তবতা সহজে মেনে নেয়ার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। তাহলেই তারা দেখতে পাবেন ত্রুটি-বিচ্যুতি কোথায় কিভাবে তা রোধ করা যায়। তাদের নিজেদের আমলেও পারেনি একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে। এটা ব্যক্তি বা সংগঠনগত ত্রুটি নয় এটা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যেই চিরকাল টিকে থাকার ত্রুটি। দেশ যত উন্নত-শিক্ষিত হবে ততই কমে আসবে ত্রুটি-বিচ্যুতি। আমেরিকার মতো সর্বোন্নত দেশেও নির্বাচন ব্যবস্থা শতভাগ ত্রুটিমুক্ত হয়নি। এবার বিএনপি বা অন্যান্য বিরোধী দলকে ঐকমত্য হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। যতদূর সম্ভব গ্রহণযোগ্য করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। নইলে নির্বাচনের সংকটের মধ্যেই জাতিকে হাবুডুবু খেতে হবে। অনির্দিষ্টকাল তা চলতে পারে না।

[লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট]

দৈনিক সংবাদ : ৪ মে ২০১৯, শনিবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

জঙ্গিদের পরবর্তী লক্ষ্য কোন দেশ!

কবীর চৌধুরী তন্ময়

শনিবার, ০৪ মে ২০১৯

রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশকিছু ওলোট-পালটের ঘটনা ঘটছে। শিগগিরই আরও কিছু ঘটবে বলে মনে হচ্ছে। মারাত্মকভাবে হতাশায় নিমজ্জিত দলগুলোতেই ঘটছে ওইসব ঘটনা। কড়া নির্দেশ গণফোরামের ও বিএনপি থেকে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তারা শপথ গ্রহণ করবেন না। কারণ তারা মনে করেন একাদশ সংসদ নির্বাচন আদৌ কোন নির্বাচন নয়। জালিয়াতির ওই নির্বাচনের ফলাফল তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোরতম হুঁশিয়ারি থাকা সত্ত্বেও গণফোরামের দুজন এবং বিএনপির একজন শপথ গ্রহণ করেছেন। বিএনপির বাকিরাও নাকি ৩০ তারিখের মধ্যেই শপথ নিতে পারেন। অর্থাৎ এ লেখাট যখন ছাপা হবে তার আগেই সবকিছু হয়ে যাবে। যারা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে শপথ নিয়েছেন তাদের যথারীতি বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও গণফোরামের একটি সভায় দল থেকে বহিষ্কৃত এক এমপি স্বমহিমায় উপস্থিত হয়ে একেবারে মঞ্চেই দলের সভাপতি ড. কামালের পাশে উপবেশন করেছিলেন। ওই সভাটি গণফোরামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা। অথচ সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু উপস্থিত ছিলেন না, এটা শুধু অস্বাভাবিকই নয়, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে দলের মতদ্বৈধতা চরমভাবে প্রকাশ পেয়েছে যা ভাঙন পর্যন্ত গড়াতে পারে। আবার একই সভায় গণফোরামের অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বহিষ্কৃত মোকাব্বির খান এমপি কেমন করে সভায় উপস্থিত হয়ে একেবারে মঞ্চে উপবেশন করলেন? একজন ক্ষুব্ধ নেতা তো মিডিয়ার সামনেই বললেন- চেম্বারে দেখা করতে গেলে ‘গেট আউট’ বলে বের করে দেন, আবার বাসায় গেলে শপথ নেয়ার পরামর্শ দেন। এমনই দুমুখো শাপ ড. কামাল হোসেন। উল্লেখ্য, সিলেট থেকে নির্বাচিত এমপি মোকাব্বির খানের বেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক মন্টু সাহেব কি সভাপতির এমন দ্বিচারিতা ভূমিকার জন্যই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন? নাকি অন্য কোন পরিকল্পনা নিয়ে তিনি এগোচ্ছেন?

দীর্ঘদিন কাছে থেকে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই কারণেই প্রথমে আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাককে দলের নীতি-আদর্শের প্রতি ড. কামালের আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে তাদের সব বলেছিলাম। এরপর যখন দলের সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিলেও তাকেও বলেছি। মূলত: পশ্চিমা পুঁজিবাদের ধারক-বাহক এ লোকটিকে হজম করে চলা খুবই কঠিন। বঙ্গবন্ধুর দ্বারা যেটা সম্ভব হয়েছে তা অন্যদের দ্বারা সম্ভব নয়। রহস্যজনক, দুমুখো নীতির লোক। তাই এক সময় যখন আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন এবং গণফোরাম নামে নতুন দল গঠন করলেন তখন তার নাম-পরিচয় দেখেই অনেকে আকৃষ্ট হয়েছেন। তার রাজনীতির আসল রহস্য কেউই বুঝতে পারেননি। মোস্তফা মোহসিন মন্টু যখন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হন তখনই আমি ভেবেছি- যদি মন্টু সাহেব বঙ্গবন্ধু প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসেন তাহলে ড. কামালের সঙ্গে বেশিদিন ঘর করতে পারবেন না। আমার এখনও বিশ্বাস মন্টু সাহেব যথার্থই বঙ্গবন্ধুকেই নেতা মানেন, রাজনীতির পথ প্রদর্শক ভাবেন। কামাল হোসেন যখন কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেন, তখন অনেকে বিভ্রান্ত হলেও আমরা হই না। কেননা তার ওই বঙ্গবন্ধু নাম ব্যবহার শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। ফায়দা নেয়ার জন্য। বিএনপিও তাকে পরিমাপ করতে পারেনি। তারা ঐক্যফ্রন্টের নামে ডা. বদরুদ্দোজাকে কৌশলে বাদ দিয়ে যে নির্বাচনী খেলায় নেমেছিল তাতে কামালের লাভ হলেও বিএনপির হয়েছে মহাক্ষতি। বিএনপি নির্বাচনে জোরালো ভূমিকা পালনে মোটেই প্রস্তুত ছিল না। তাদের সংগঠন সম্পূর্ণ অগোছালো। ফলে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। কিন্তু যাদের কোনই সম্ভাবনা এমনকি ড. কামালেরও কোন সম্ভাবনা ছিল না সেই গণফোরাম দুটি আসনে জয়ী হয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপির মতো বিরাট দল জিতেছে ৬টি আসনে। সরকার কারচুপি করেছে, জালিয়াতি করেছে ইত্যাদি বলে তারা যতই অভিযোগ তুলুক না কেন বাস্তবতা হলো বিএনপি ছয়টি আসনে জয়ী হয়েছে। ’৭৯ সালে জিয়াউর রহমান সাহেব একটা ভোট ডাকাতির চরমপরাকাষ্ঠা দেখিয়ে সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। সেই ডাকাতির নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসনে জয়ী হয়ে সংসদে বিরোধী দল হয়েছিল। বিএনপি যদি সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে এবার নির্বাচন করতো বহু আসনেই জয়ী হতে পারত। শক্তিশালী বিরোধী দল হতে মোটেই বেগ পেতে হতো না। নির্বাচনে নেমে তারা ‘খেলা খেলা’ কাজটা না করলেই পারতো। ড. কামাল যে একজন নীতিহীন রহস্যজনক লোক তার সর্বশেষ প্রমাণ তিনি তলে তলে শপথ নেয়ার কথা বলেছেন আর ওপর প্রকাশ্যে ‘গেট আউট’ বলে হুমকি দিয়েছেন। তাদের দুজন এমপিই বলেছেন দলীয় প্রধানের অনুমতি নিয়েই তারা শপথ নিয়েছেন।

অনেক নাটক-চিত্র নাটক লেখা ও মঞ্চস্থ করার পরে বিএনপির বাকি ৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্য থেকে চারজনই শপথ নিয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর কেমন করে নেন। বিএনপির মহাসচিব বলে কথা। দীর্ঘ কয়েক বছর ভারপ্রাপ্ত থাকার পর পূর্ণ মহাসচিব হয়েছেন। যদি শপথ নিলে তাদের প্রবাসী নেতা নাখোশ হন। তাই অনেক প্রমাদগুনে শপথ নেননি। অর্থাৎ বিএনপির একজন এখন পর্যন্ত শপথ নিলেন না। যারা শপথ নিয়েছেন তারা মিডিয়ার সামনেই সরাসরি জানিয়েছেন- বিএনপির সাজাপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের অনুমতি নিয়েই শপথ গ্রহণ করেছেন। সংসদে বসে তারা বিএনপির দাবি-দাওয়াই তুলে ধরবেন। একেবারে ৯০ দিনের শেষ দিনের শেষ সময়ে শপথ গ্রহণের নাটকের যবনিকা টানলেন বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। মনে হচ্ছে লজ্জা শরমের কারণেই মির্জা ফখরুল শপথ নিতে পারলেন না। কেননা শপথ না নেয়ার প্রশ্নে দল থেকে বহিষ্কারের এত হুমকি-ধামকির পরে কোন মুখে তিনি শপথ নেবেন। যদি তারেক রহমানই অনুমোদন করে থাকেন তাহলে তার বাধা কোথায়?

দলের একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে, বিএনপির দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সংসদে তার জোড়ালো ভূমিকা পালনের বিরাট সুযোগ রয়েছে। সংসদে তার উপস্থিতি প্রয়োজন। দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে, দলের স্বার্থে। ৭৯ সালের জিয়াউর রহমানের সংসদের বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ৩৯ জন সদস্য থাকলেও মাত্র দুজন সদস্যই সরকারি দল বিএনপিকে এবং তাদের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানকে চৌকশ আক্রমণ চালিয়ে সংসদ মাতিয়ে রাখতেন। তখন বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি লিডার ছিলেন মহীউদ্দিন আহমদ। তারা দুজন বিএনপিকে যুক্তিতর্কে কোণঠাসা করে রাখার নজির আমরা দেখেছি। তাই শুধু সংখ্যা দিয়ে নয়, মেধা মুক্তি, বাকচাতুর্য দিয়েও বড় দলকে কোণঠাসা করা যায়। তাই বিএনপি যদি ৬ জন বা ৮ জন নিয়ে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে সংসদকে কাপিয়ে রাখা সম্ভব। সে কারণেই মির্জা ফখরুলের সংসদে যাওয়া একান্ত উচিত ছিল। তারা ভুলের ডোবাজল থেকে আর বেরিয়েই আসতে পারছেন না।

ভুলের রাজনীতি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রয়েছে বিএনপিকে। প্রথমে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া সিদ্ধান্ত ছিল। বেশিদিন তাতে অটল থাকতে পারেনি। ঐক্যফ্রন্ট গঠন হওয়ার পর অগোছালোভাবে নির্বাচনে যায়। সাংগঠনিকভাবে তারা এতটাই বিশৃঙ্খল ছিল যে, নির্বাচনে নেমে ‘ কানামাছি’ খেলেছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনের পক্ষে ভূমিকা নিয়েছিল লোভনীয় বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে। যারা প্রমাণ পাওয়া যায় প্রতি আসনে গড়ে ৪/৫ করে মনোনয়ন দেয়ার ঘটনায়। প্রত্যেক প্রার্থীরই বিপুল অর্থ ব্যয় করে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাও আবার একজন নয় একাধিক। এ সব খেলার ফল পেয়েছে তারা নির্বাচনে। বিএনপি-গণফোরাম মিলে ৮টি আসনে জয়। এবার সিদ্ধান্ত নির্বাচন মানি না, সরকার বৈধ নয়, সংসদ একদলীয় ইত্যাদি বলে শপথ না নেয়ার। অবশেষে আগেই দলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তিনজন শপথ নেন। সর্বশেষ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার শেষদিনে বিএনপি পাঁচজনের চারজনই শপথ নিয়েছেন। বাকি রইলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল। দোহাই দিয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী নেতার অনুমতি নিয়েই তারা শপথ নিয়েছেন। কথায় বলে ‘গাধা পানি খায় ঘোলা করে’। সংসদে যারা যোগ দিয়েছেন তারা নাকি পুনর্নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সোচ্চার থাকবেন। তাহলে আগে তাদের মাথায় এ সব দাবির কথা এলো না কেন? এ সব দাবি হালে বাতাস না পেলেও দাবি তারা করতেই পারেন। তাতে কারও কিছু বলার নেই। তবে প্রথমেই বলেছি মির্জা ফখরুল সংসদে থাকলে ওই সব দাবি আরও জোড়ালোভাবে তুলতে পারতেন।

কিছুদিন থেকে বিএনপির নেতারা বলছিলেনÑ বিএনপির নির্বাচিত সদস্যদের চাপ দেয়া হচ্ছে শপথ নেয়ার জন্য। কারণ সরকার তার বৈধতা নিশ্চিত করতে চায়। অর্থাৎ বিএনপির ৬ সদস্য সংসদে গেলেই যেন সংসদ ও সরকার বৈধ হবে। সরকার তখন বলতে পারবে নির্বাচিত সব সদস্যই সংসদে বসে তাদের ভূমিকা রাখছেন। বোকার সর্গে যারা বাস করেন তারাই কেবল এমনটা ভাবতে পারেন। তিন মাসের ওপর নতুন সংসদ গঠন হয়েছে সরকার গঠনের মাধ্যমে সে জাতীয় আন্তর্জাতিক কাজকর্ম করে চলেছে দায়িত্ব করছে। বিএনপি গণফোরামের ৮ জন সদস্য শপথ নেওয়া থেকে বাদ থাকলে সরকারের কি সামান্যতম কোন ক্ষতি হয়েছে? কোন সংস্থা বা দেশ কি সে জন্য সরকারের বৈধতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলেছে? আহম্মকের সঙ্গে যারা বাস করে তারাই ভাবতে পারেন তাদের উপস্থিত ছাড়া সরকার বৈধ হবে না। বিএনপি নেতারা একটা সাধারণ কথা ভুলে গেছেন নির্বাচনটা বৈধ ও আইন অনুযায়ী হয়েছে। ভোটপর্বে গিয়ে কিছু পরিমাণ বাড়াবাড়ি হয়েছে তাতে গোটা নির্বাচন ও তার ফলাফলের অবৈধতার কোন ছাপ পড়েনি। ভারতে এখন লোকসভার নির্বাচন হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের সময় অসংখ্যা ঘটনা ঘটছে বিশেষ করে পশ্চিম রাষ্ট্রের নির্বাচনে। তাই গোটা লোকসভা নির্বাচনের শ্লীলতাহানি ঘটেনি। এসব ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়েই সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা অধিকতর জনগণ দ্বারা গঠিত সরকার ব্যবস্থা বলা হয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হলো সমাজের একটি বিশেষ সুবিধাভোগী মানুষের দ্বারা পরিচালিত ব্যবস্থা ওই সুবিধাভোগীরাই আবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আমাদের বর্তমান ব্যবস্থায় তো একজন শ্রমিক বা কৃষকের পক্ষে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সুযোগই নেই। এটাই গণতন্ত্র। যত প্রকার শাসনব্যবস্থা রয়েছে তার মধ্যে এ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকেই অপেক্ষাকৃত উত্তম বলে স্বীকার করা হয়।

ইউরোপ-আমেরিকা এশিয়া সর্বত্রই গণতান্ত্রিক শাসনে ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। কোথাও কম, কোথাও বেশি। এসব কারণেই একদা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের সম-আদর্শের দেশসমূহ গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তাদের বিশ্বাস সেটাই উত্তম ব্যবস্থা। বিএনপি নেতাদের এসব বুঝতে হবে এবং কঠিন বাস্তবতা সহজে মেনে নেয়ার মানসিকতা অর্জন করতে হবে। তাহলেই তারা দেখতে পাবেন ত্রুটি-বিচ্যুতি কোথায় কিভাবে তা রোধ করা যায়। তাদের নিজেদের আমলেও পারেনি একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে। এটা ব্যক্তি বা সংগঠনগত ত্রুটি নয় এটা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যেই চিরকাল টিকে থাকার ত্রুটি। দেশ যত উন্নত-শিক্ষিত হবে ততই কমে আসবে ত্রুটি-বিচ্যুতি। আমেরিকার মতো সর্বোন্নত দেশেও নির্বাচন ব্যবস্থা শতভাগ ত্রুটিমুক্ত হয়নি। এবার বিএনপি বা অন্যান্য বিরোধী দলকে ঐকমত্য হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। যতদূর সম্ভব গ্রহণযোগ্য করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। নইলে নির্বাচনের সংকটের মধ্যেই জাতিকে হাবুডুবু খেতে হবে। অনির্দিষ্টকাল তা চলতে পারে না।

[লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট]

দৈনিক সংবাদ : ৪ মে ২০১৯, শনিবার, ৭ এর পাতায় প্রকাশিত

back to top