বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) : খালের দূষিত পানিতে ফসলের সর্বনাশ। দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক -সংবাদ
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে লবনাক্ত ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যে দুষিত পানির কারণে শত শত একর আবাদি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। যার কারণে এসব এলাকায় কয়েক হাজার কৃষক চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
কৃষকেরা জানান, কর্ণফুলি নদী থেকে বয়ে আসা বোয়ালখালী খাল ও রায়খালি খালের পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা শিল্প এবং লবণ কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত শিল্পবর্জ্যের দূষিত পানি এখন যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
রোববার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,
কর্ণফুলী নদী থেকে বয়ে আসা রায়খালী খালটি শাকপুরা, ঘোষখীল হয়ে সারোয়াতলীর কঞ্জুরিতে শেষ হয়। যার সাথে সংযুক্ত রয়েছে ১০ টি সেচ স্কীম। এসব সেচ স্কীমের আওতায় এলাকার পশ্চিম বিলে ২০০ একর, পূর্ব বিলে ৩০০ একর, মাঝের বিলে ২৫০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেননি কৃষকেরা। সেচ স্কীম ম্যানেজাররা বলেন, গত বছর রায়খালী খালের পানি দিয়ে সেচ দেওয়ায় বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ওই এলাকার কৃষক ও সেচ স্কীম ম্যানেজাররা। এনিয়ে তারা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও এর সুরাহা পাননি বলে জানিয়েছেন। ফলে এবছর নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাননি।
সারোয়াতলীর মাঝির পাড়া এলাকার হাজী বিলের সেচ স্কীম ম্যানেজার মো.নুরুল আবচার বলেন, গত বছর ৬০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। ধান তো দূরের কথা খড়ও পাইনি। সেচের পানিতে কারখানার লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকায় সব ক্ষেত জ্বলে গেছে। বেঙ্গুরা মাদ্রাসা বিলের স্কীম ম্যানেজার মো. ইউছুপ বলেন, গেল বছর ৫৬ একর জমিতে বোরো চাষ করে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরে স্কীম বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন স্কীম ম্যানেজার হামিদুল হক চৌধুরী, আব্দুস শুক্কুর, অরুণ ভঞ্জ, মো. হাসেম ও মো ইদ্রিস।
দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে কৃষিকেই জীবিকার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন
উত্তর কঞ্জুরি এলাকার কৃষক ওয়াহিদুল আলম। তিনি বলেন, নিজস্ব পাঁচটি পুকুরের পানিতে সেচ নির্ভর করে ৭ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেন। বৃষ্টি না হওয়ায় মৌসুমের শেষ দিকে পানির সংকট দেখা দিলে বাধ্য হয়ে পাশের রায়খালী খালের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করেন। এরপরেই শুরু হয় বিপর্যয়। ধানগাছগুলো বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এতে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি। ওয়াহিদুল আলম বলেন, উদ্দেশ্য ছিলো ফসল ফলিয়ে মাটি ও মানুষের সঙ্গে থেকে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা। কিন্তু খালের দূষিত পানিতে সব সর্বনাশ হয়ে গেছে। এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই সমস্যা কেবল ওয়াহিদ আলমের একার নয়। এলাকার আরও প্রায় হাজারো কৃষকের। ফলে আশেপাশের প্রায় কয়েকশত একর চাষযোগ্য জমি অনাবাদি পড়ে আছে। বৃষ্টি না হলে আউশ আবাদেও শংকায় রয়েছেন বলে জানান তারা।
বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, কারখানার বর্জ্যের কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা হতে পারে না। এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো.আতিক উল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমে বোয়ালখালীতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮১০ হেক্টর জমিতে। এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও সারোয়াতলী ইউনিয়নের রায়খালী খালের স্কীমগুলো লবণ ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ব্যবহারের ফলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরও কৃষকদের লোকসান গুণতে হয়েছিলো। লবণ কারখানা ও শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে পানিতে অতিমাত্রায় লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল ছড়ায়। এতে জলজ প্রাণী, ক্ষেত খামার ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কৃষকেরা। জানা গেছে, গত জানুয়ারীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ‘’র কর্মকর্তারা বেশ কয়েকটি এলাকার খাল ও স্কিম পরিদর্শন করেছেন। এসময় কৃষকেরা অভিযোগগুলো তাদের কাছে তুলে ধরেন।
বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) : খালের দূষিত পানিতে ফসলের সর্বনাশ। দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক -সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে লবনাক্ত ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যে দুষিত পানির কারণে শত শত একর আবাদি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। যার কারণে এসব এলাকায় কয়েক হাজার কৃষক চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
কৃষকেরা জানান, কর্ণফুলি নদী থেকে বয়ে আসা বোয়ালখালী খাল ও রায়খালি খালের পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা শিল্প এবং লবণ কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত শিল্পবর্জ্যের দূষিত পানি এখন যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
রোববার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,
কর্ণফুলী নদী থেকে বয়ে আসা রায়খালী খালটি শাকপুরা, ঘোষখীল হয়ে সারোয়াতলীর কঞ্জুরিতে শেষ হয়। যার সাথে সংযুক্ত রয়েছে ১০ টি সেচ স্কীম। এসব সেচ স্কীমের আওতায় এলাকার পশ্চিম বিলে ২০০ একর, পূর্ব বিলে ৩০০ একর, মাঝের বিলে ২৫০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেননি কৃষকেরা। সেচ স্কীম ম্যানেজাররা বলেন, গত বছর রায়খালী খালের পানি দিয়ে সেচ দেওয়ায় বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ওই এলাকার কৃষক ও সেচ স্কীম ম্যানেজাররা। এনিয়ে তারা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও এর সুরাহা পাননি বলে জানিয়েছেন। ফলে এবছর নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাননি।
সারোয়াতলীর মাঝির পাড়া এলাকার হাজী বিলের সেচ স্কীম ম্যানেজার মো.নুরুল আবচার বলেন, গত বছর ৬০ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। ধান তো দূরের কথা খড়ও পাইনি। সেচের পানিতে কারখানার লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল থাকায় সব ক্ষেত জ্বলে গেছে। বেঙ্গুরা মাদ্রাসা বিলের স্কীম ম্যানেজার মো. ইউছুপ বলেন, গেল বছর ৫৬ একর জমিতে বোরো চাষ করে সর্বশান্ত হয়ে গেছি। অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরে স্কীম বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন স্কীম ম্যানেজার হামিদুল হক চৌধুরী, আব্দুস শুক্কুর, অরুণ ভঞ্জ, মো. হাসেম ও মো ইদ্রিস।
দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে কৃষিকেই জীবিকার লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন
উত্তর কঞ্জুরি এলাকার কৃষক ওয়াহিদুল আলম। তিনি বলেন, নিজস্ব পাঁচটি পুকুরের পানিতে সেচ নির্ভর করে ৭ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেন। বৃষ্টি না হওয়ায় মৌসুমের শেষ দিকে পানির সংকট দেখা দিলে বাধ্য হয়ে পাশের রায়খালী খালের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করেন। এরপরেই শুরু হয় বিপর্যয়। ধানগাছগুলো বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এতে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি। ওয়াহিদুল আলম বলেন, উদ্দেশ্য ছিলো ফসল ফলিয়ে মাটি ও মানুষের সঙ্গে থেকে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা। কিন্তু খালের দূষিত পানিতে সব সর্বনাশ হয়ে গেছে। এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই সমস্যা কেবল ওয়াহিদ আলমের একার নয়। এলাকার আরও প্রায় হাজারো কৃষকের। ফলে আশেপাশের প্রায় কয়েকশত একর চাষযোগ্য জমি অনাবাদি পড়ে আছে। বৃষ্টি না হলে আউশ আবাদেও শংকায় রয়েছেন বলে জানান তারা।
বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, কারখানার বর্জ্যের কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা হতে পারে না। এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো.আতিক উল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমে বোয়ালখালীতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮১০ হেক্টর জমিতে। এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও সারোয়াতলী ইউনিয়নের রায়খালী খালের স্কীমগুলো লবণ ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ব্যবহারের ফলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরও কৃষকদের লোকসান গুণতে হয়েছিলো। লবণ কারখানা ও শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে পানিতে অতিমাত্রায় লবণ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল ছড়ায়। এতে জলজ প্রাণী, ক্ষেত খামার ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে কৃষকেরা। জানা গেছে, গত জানুয়ারীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ‘’র কর্মকর্তারা বেশ কয়েকটি এলাকার খাল ও স্কিম পরিদর্শন করেছেন। এসময় কৃষকেরা অভিযোগগুলো তাদের কাছে তুলে ধরেন।