সাতক্ষীরা : ঈদগাহ মাঠে ফুটবল খেলছে শিশু-কিশোররা -সংবাদ
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতেই জর্জরিত নয়, এই প্রতিকূলতার প্রভাব এখানকার শিশুদের শৈশব থেকে কেড়ে নিচ্ছে খেলার আনন্দ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা এখানকার খেলার মাঠগুলোকে যেমন গ্রাস করছে, তেমনি দখলদারির থাবায় সংকুচিত হচ্ছে অবশিষ্ট খেলার জায়গা। এর ফলস্বরূপ সাতক্ষীরা শহরের শিশুরা খোলা আকাশের নিচে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশুরা ঝুঁকছে স্মার্টফোন আর অনলাইন গেমের ভার্চুয়াল জগতে, যা তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেলায় পৌর এলাকায় খেলার মাঠের এই সংকট এখন কেবল খেলার জায়গার অভাব নয়, এটি দখল, অব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে কিছু অল্প জায়গায় উপযোগী খেলা ও কার্যক্রম হতে পারে কার্যকর বিকল্প। এ জন্য প্রয়োজন অভিভাবক, শিক্ষক, কমিউনিটি সংগঠক বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১.১০ বর্গকিলোমিটার। এখানে বসবাস করছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৫-১৫ বছর বয়সি শিশু-কিশোর রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। অথচ এই শহরে শিশুদের জন্য নির্ধারিত একটিও পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠ নেই। শুধু শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের একটি খোলা জায়গা রয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় পৌর এলাকায় ২৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনোটিতেই খেলার মাঠ নেই। ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাঠ আছে ৫টির। এর মধ্যে বড় মাঠ বলতে গেলে সরকারি কলেজ মাঠ, পিএন হাইস্কুল মাঠ, সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ আর রসুলপুর স্কুল মাঠ। কিন্তু এসব মাঠের কোথাও শিশুরা যখন খুশি তখন খেলতে পারে না।
স্কুল-কলেজের মাঠগুলো ক্লাসের সময়ের পর অনেক ক্লাব বা খেলার একাডেমি ব্যবহার করে। তারা নিজেদের মতো করে খেলা বা শেখানোর কাজ করে। সেখানে এলাকার সব ছেলেমেয়েরা যখন তখন ইচ্ছেমতো খেলতে পারে না।
এদিকে জেলা স্টেডিয়ামের মাঠও বেশিরভাগ সময় বন্ধই থাকে। বড় কোনো খেলার টুর্নামেন্ট বা আয়োজন থাকলে তবেই সেটা খোলা হয়। ফলে স্টেডিয়ামের মাঠও সাধারণ শিশুদের খেলার কোনো কাজেই আসে না। সব মিলিয়ে শহরের অনেক ছেলেমেয়েই খেলার জায়গার অভাবে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শহরের একমাত্র পার্ক শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক। একসময় এর একটি বড় অংশে শিশুরা খেলত। কিন্তু সেই মাঠ দখল করে এখন সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবন। পার্কের শহিদ মিনারের সামনের অংশে সামান্য কিছু খোলা জায়গা থাকলেও, সভা-সমাবেশ ও মেলা আয়োজনের জন্য সেই অংশও মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। পার্কের একটি পাশে কয়েক বছর আগে বেসরকারি একটি সংস্থা শিশুদের জন্য রাইড স্থাপন করেছিল। ঘূর্ণি চাকা, স্লাইড, দোলনাসহ ছোটদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জোন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই রাইডগুলো সব নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। দেখভালের অভাবে স্থানটি এখন পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আস্তানায়। বিকালে শিশুরা যখন খেলতে চায়, তখন এ জায়গা তাদের জন্য হয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর।
প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রতিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত সবুজ অঞ্চল ও উদ্যান রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, নগরায়ণ, দখল, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দূষণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকটের কারণে দেশব্যাপি খেলার মাঠগুলো ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশই দখল হচ্ছে, পাশাপাশি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং তার শ্রেণি চরিত্র হারাচ্ছে।
পাভেল পার্থ তার অভিজ্ঞতায় দেখেছেন দেশের উপকূল, হাওর ও পাহাড়ি এলাকার খেলার মাঠ বেশি ঝুঁকিতে আছে। বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ হারিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল, লবণাক্ততা, খরার কারণে মাঠগুলির পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ থাকার ফলে কিংবা খরার কারণে মাঠের মাটি ও ঘাস নষ্ট হয়। ক্রমান্বয়ে মাঠগুলি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার ফলে মাঠ পরবর্তীতে দখল করে অন্যরা। সেসব মাঠকে অন্য বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে। খেলার মাঠ হারানোর ফলে এর বড় প্রভাব পড়ে শিশু, কিশোর ও তরুণদের জীবনে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শামছুর রহমান বলেন, খেলার অভাব শিশুদের শারীরিক কর্মকান্ড মারাত্মকভাবে সীমিত করে ফেলেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে তাদের স্বাস্থ্য ও মনে। বাইরে খেলার সুযোগ না থাকায় শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল বা অন্যান্য ডিভাইসে মুখ গুঁজে থাকছে। এই আসক্তি তাদের চোখের সমস্যা, স্থূলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। পাশাপাশি, সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশা ও খেলাধুলার সুযোগ না পাওয়ায় তারা সামাজিক দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। মানসিক চাপ, হতাশা ও একাকিত্ব অনুভব করছে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি শিশুর খেলাধুলা ও বিশ্রামের অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ এই সনদের স্বাক্ষরকারী। নগর উন্নয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতি ১২ হাজার মানুষের জন্য একটি খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক। সাতক্ষীরায় এই হিসাব মেলাতে গেলে কমপক্ষে ১০টি মাঠ থাকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে নেই একটিও।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, সাতক্ষীরা শহরে শিশুদের জন্য পরিকল্পিত খেলার মাঠ নেই এটা সত্য। তবে কয়েক বছর আগে একটি নতুন মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল, যেখানে ওয়ার্ড ভিত্তিক খেলার মাঠ রাখার প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়া শহরে অন্তত দুটি উন্মুক্ত মাঠ ও একটি শিশুবান্ধব পার্কের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা আমরাও অনুভব করি। শহর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গার পরিমাণ কমে আসছে, যার প্রভাব খেলার মাঠের উপরও পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খেলার মাঠ দখল হয়ে যাওয়া বা অনুপযুক্ত থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে খেলার মাঠ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। প্রতি উপজেলায় সরকারিভাবে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের খড়িবিলা এলাকায় একটি আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জমি নির্ধারণ করা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান মাঠগুলো দখলমুক্ত করে বা সংস্কার করে খেলার উপযোগী রাখতে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ক্লাবগুলোকে সরকারি অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়
সাতক্ষীরা : ঈদগাহ মাঠে ফুটবল খেলছে শিশু-কিশোররা -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতেই জর্জরিত নয়, এই প্রতিকূলতার প্রভাব এখানকার শিশুদের শৈশব থেকে কেড়ে নিচ্ছে খেলার আনন্দ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা এখানকার খেলার মাঠগুলোকে যেমন গ্রাস করছে, তেমনি দখলদারির থাবায় সংকুচিত হচ্ছে অবশিষ্ট খেলার জায়গা। এর ফলস্বরূপ সাতক্ষীরা শহরের শিশুরা খোলা আকাশের নিচে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশুরা ঝুঁকছে স্মার্টফোন আর অনলাইন গেমের ভার্চুয়াল জগতে, যা তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জেলায় পৌর এলাকায় খেলার মাঠের এই সংকট এখন কেবল খেলার জায়গার অভাব নয়, এটি দখল, অব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। তবে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে কিছু অল্প জায়গায় উপযোগী খেলা ও কার্যক্রম হতে পারে কার্যকর বিকল্প। এ জন্য প্রয়োজন অভিভাবক, শিক্ষক, কমিউনিটি সংগঠক বা স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১.১০ বর্গকিলোমিটার। এখানে বসবাস করছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৫-১৫ বছর বয়সি শিশু-কিশোর রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। অথচ এই শহরে শিশুদের জন্য নির্ধারিত একটিও পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠ নেই। শুধু শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের একটি খোলা জায়গা রয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় পৌর এলাকায় ২৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনোটিতেই খেলার মাঠ নেই। ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাঠ আছে ৫টির। এর মধ্যে বড় মাঠ বলতে গেলে সরকারি কলেজ মাঠ, পিএন হাইস্কুল মাঠ, সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ আর রসুলপুর স্কুল মাঠ। কিন্তু এসব মাঠের কোথাও শিশুরা যখন খুশি তখন খেলতে পারে না।
স্কুল-কলেজের মাঠগুলো ক্লাসের সময়ের পর অনেক ক্লাব বা খেলার একাডেমি ব্যবহার করে। তারা নিজেদের মতো করে খেলা বা শেখানোর কাজ করে। সেখানে এলাকার সব ছেলেমেয়েরা যখন তখন ইচ্ছেমতো খেলতে পারে না।
এদিকে জেলা স্টেডিয়ামের মাঠও বেশিরভাগ সময় বন্ধই থাকে। বড় কোনো খেলার টুর্নামেন্ট বা আয়োজন থাকলে তবেই সেটা খোলা হয়। ফলে স্টেডিয়ামের মাঠও সাধারণ শিশুদের খেলার কোনো কাজেই আসে না। সব মিলিয়ে শহরের অনেক ছেলেমেয়েই খেলার জায়গার অভাবে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শহরের একমাত্র পার্ক শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক। একসময় এর একটি বড় অংশে শিশুরা খেলত। কিন্তু সেই মাঠ দখল করে এখন সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবন। পার্কের শহিদ মিনারের সামনের অংশে সামান্য কিছু খোলা জায়গা থাকলেও, সভা-সমাবেশ ও মেলা আয়োজনের জন্য সেই অংশও মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। পার্কের একটি পাশে কয়েক বছর আগে বেসরকারি একটি সংস্থা শিশুদের জন্য রাইড স্থাপন করেছিল। ঘূর্ণি চাকা, স্লাইড, দোলনাসহ ছোটদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জোন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই রাইডগুলো সব নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। দেখভালের অভাবে স্থানটি এখন পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আস্তানায়। বিকালে শিশুরা যখন খেলতে চায়, তখন এ জায়গা তাদের জন্য হয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর।
প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রতিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত সবুজ অঞ্চল ও উদ্যান রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, নগরায়ণ, দখল, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দূষণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকটের কারণে দেশব্যাপি খেলার মাঠগুলো ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশই দখল হচ্ছে, পাশাপাশি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এবং তার শ্রেণি চরিত্র হারাচ্ছে।
পাভেল পার্থ তার অভিজ্ঞতায় দেখেছেন দেশের উপকূল, হাওর ও পাহাড়ি এলাকার খেলার মাঠ বেশি ঝুঁকিতে আছে। বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ হারিয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়, পাহাড়ি ঢল, লবণাক্ততা, খরার কারণে মাঠগুলির পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ থাকার ফলে কিংবা খরার কারণে মাঠের মাটি ও ঘাস নষ্ট হয়। ক্রমান্বয়ে মাঠগুলি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার ফলে মাঠ পরবর্তীতে দখল করে অন্যরা। সেসব মাঠকে অন্য বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করে। খেলার মাঠ হারানোর ফলে এর বড় প্রভাব পড়ে শিশু, কিশোর ও তরুণদের জীবনে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শামছুর রহমান বলেন, খেলার অভাব শিশুদের শারীরিক কর্মকান্ড মারাত্মকভাবে সীমিত করে ফেলেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে তাদের স্বাস্থ্য ও মনে। বাইরে খেলার সুযোগ না থাকায় শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল বা অন্যান্য ডিভাইসে মুখ গুঁজে থাকছে। এই আসক্তি তাদের চোখের সমস্যা, স্থূলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি করছে। পাশাপাশি, সমবয়সিদের সঙ্গে মেলামেশা ও খেলাধুলার সুযোগ না পাওয়ায় তারা সামাজিক দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। মানসিক চাপ, হতাশা ও একাকিত্ব অনুভব করছে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি শিশুর খেলাধুলা ও বিশ্রামের অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ এই সনদের স্বাক্ষরকারী। নগর উন্নয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতি ১২ হাজার মানুষের জন্য একটি খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক। সাতক্ষীরায় এই হিসাব মেলাতে গেলে কমপক্ষে ১০টি মাঠ থাকা প্রয়োজন। অথচ বাস্তবে নেই একটিও।
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, সাতক্ষীরা শহরে শিশুদের জন্য পরিকল্পিত খেলার মাঠ নেই এটা সত্য। তবে কয়েক বছর আগে একটি নতুন মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল, যেখানে ওয়ার্ড ভিত্তিক খেলার মাঠ রাখার প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়া শহরে অন্তত দুটি উন্মুক্ত মাঠ ও একটি শিশুবান্ধব পার্কের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, খেলার মাঠের প্রয়োজনীয়তা আমরাও অনুভব করি। শহর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গার পরিমাণ কমে আসছে, যার প্রভাব খেলার মাঠের উপরও পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খেলার মাঠ দখল হয়ে যাওয়া বা অনুপযুক্ত থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে খেলার মাঠ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। প্রতি উপজেলায় সরকারিভাবে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের খড়িবিলা এলাকায় একটি আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জমি নির্ধারণ করা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান মাঠগুলো দখলমুক্ত করে বা সংস্কার করে খেলার উপযোগী রাখতে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ক্লাবগুলোকে সরকারি অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়