রংপুরে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনদের মারধর -সংবাদ
রংপুর নগরীর ধাপ মেডিকেল পূর্বগেইট এলাকায় কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক রোগীর হার্টের রিং পড়াতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাসপাতালের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার হয়ে আহত হয়েছে অন্তত ৫জন।
এ ঘটনাটি ঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে। ওইদিন মধ্যরাত পর্যন্ত পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চলে নানান সাজানো নাটক, এমনই অভিযোগ মৃত রোগীর স্বজনদের।
হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনরা জানান, গত বুধবার রাত ১২টার দিকে বুকে ব্যাথা নিয়ে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোকছেদুল ইসলাম (৫০)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রোগীর হার্টে রিং পরানোর পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
স্বজনদের দাবি, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনের স্বাক্ষর নিয়ে তড়িঘড়ি রোগীর অপারেশন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে ব্যাপারটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন তারা। প্রতিবাদ জানাতে গেলে রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় পুরো হাসপাতাল জুড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
পরিবারের সদস্যরা আরও অভিযোগ করেন, কমিউনিটি প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলা ও দালাল চক্রের প্রতারণায় মোকছেদুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হলে গত বুধবার রাতে মোকছেদুল ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসক মো. আবু জাহিদ বসুনিয়া তার এনজিওগ্রাম করেন। এ সময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে ভুল বুঝিয়ে একটি বন্ডে স্বাক্ষর করিয়ে দ্রুত রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। অপারেশন চলাকালীন অবস্থায়ই মকসেদ মারা যান।
স্বজনদের অভিযোগ, রোগীর মৃত্যুর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহকে আইসিইউতে জীবিত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা জোরপূর্বক আইসিইউতে প্রবেশ করলে মোকছেদুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। মুহূর্তেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে সম্প্রচার করা হলে হাসপাতালের কর্মচারী ও তাদের সহযোগীরা মৃত রোগী মোকছেদুল ইসলামের স্বজনদের ওপর হামলা চালায়। এতে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ অনেকেই আহত হন।
নিহতের ছেলে শাফিউল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশন রুমে শুধু বাবার ‘আ আ’ শব্দ শুনছিলাম। পরে যখন আইসিইউতে নেয়া হয়, বাবা কোনো নড়াচড়া করেননি। আমরা বুঝে গেছি তখনই বাবা মারা গেছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
মৃতের শ্যালক হুমায়ুন কবির জানান, ‘আইসিইউতে ঢুকে দেখি আমার দুলাভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। আমি ফেইসবুক লাইভে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানাতে গেলে হাসপাতালের পেটোয়া বাহিনী আমার ওপর চড়াও হয়, আমাকে বেদম মারধর করে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি হাসপাতালের পরিচালককে জিজ্ঞাসা করছিলাম আপনারা কার বন্ড সই নিয়েছেন, তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেন নাই। উল্টো আমাকে ওপর থেকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে আনে, তারা আমাকে মারতে মারতে আমার পরনে থাকা পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে।
এ ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে এলাকাবাসী হাসপাতাল ঘেরাও করে দোষীদের শাস্তি দাবি করে। স্থানীয়রা বলেন, হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত একটি দালাল চক্র প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল।
পুরো ঘটনার ভিডিও চিত্র বা ছবি ধারণ করতে গণমাধ্যমকর্মীদের বার বার বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালের পরিচালক মেরাজ মহসিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই জড়িত নয়। রোগী নিজেই পরামর্শ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আমরা কেবল অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলাম। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নেয়া হয় এবং সেখানে মারা যান। পরে স্বজনরা জোর করে প্রবেশ করে ফেইসবুকে লাইভ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেন বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘দোষ ঢাকতে’ এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
এলাকাবাসী ও স্বজনরা পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
রংপুরে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনদের মারধর -সংবাদ
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
রংপুর নগরীর ধাপ মেডিকেল পূর্বগেইট এলাকায় কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক রোগীর হার্টের রিং পড়াতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাসপাতালের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার হয়ে আহত হয়েছে অন্তত ৫জন।
এ ঘটনাটি ঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে। ওইদিন মধ্যরাত পর্যন্ত পুরো ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চলে নানান সাজানো নাটক, এমনই অভিযোগ মৃত রোগীর স্বজনদের।
হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনরা জানান, গত বুধবার রাত ১২টার দিকে বুকে ব্যাথা নিয়ে কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোকছেদুল ইসলাম (৫০)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রোগীর হার্টে রিং পরানোর পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
স্বজনদের দাবি, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনের স্বাক্ষর নিয়ে তড়িঘড়ি রোগীর অপারেশন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে ব্যাপারটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন তারা। প্রতিবাদ জানাতে গেলে রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় পুরো হাসপাতাল জুড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
পরিবারের সদস্যরা আরও অভিযোগ করেন, কমিউনিটি প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলা ও দালাল চক্রের প্রতারণায় মোকছেদুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হলে গত বুধবার রাতে মোকছেদুল ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসক মো. আবু জাহিদ বসুনিয়া তার এনজিওগ্রাম করেন। এ সময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তার অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে ভুল বুঝিয়ে একটি বন্ডে স্বাক্ষর করিয়ে দ্রুত রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। অপারেশন চলাকালীন অবস্থায়ই মকসেদ মারা যান।
স্বজনদের অভিযোগ, রোগীর মৃত্যুর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহকে আইসিইউতে জীবিত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা জোরপূর্বক আইসিইউতে প্রবেশ করলে মোকছেদুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। মুহূর্তেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে সম্প্রচার করা হলে হাসপাতালের কর্মচারী ও তাদের সহযোগীরা মৃত রোগী মোকছেদুল ইসলামের স্বজনদের ওপর হামলা চালায়। এতে কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ অনেকেই আহত হন।
নিহতের ছেলে শাফিউল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশন রুমে শুধু বাবার ‘আ আ’ শব্দ শুনছিলাম। পরে যখন আইসিইউতে নেয়া হয়, বাবা কোনো নড়াচড়া করেননি। আমরা বুঝে গেছি তখনই বাবা মারা গেছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
মৃতের শ্যালক হুমায়ুন কবির জানান, ‘আইসিইউতে ঢুকে দেখি আমার দুলাভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। আমি ফেইসবুক লাইভে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানাতে গেলে হাসপাতালের পেটোয়া বাহিনী আমার ওপর চড়াও হয়, আমাকে বেদম মারধর করে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি হাসপাতালের পরিচালককে জিজ্ঞাসা করছিলাম আপনারা কার বন্ড সই নিয়েছেন, তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেন নাই। উল্টো আমাকে ওপর থেকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে আনে, তারা আমাকে মারতে মারতে আমার পরনে থাকা পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে।
এ ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে এলাকাবাসী হাসপাতাল ঘেরাও করে দোষীদের শাস্তি দাবি করে। স্থানীয়রা বলেন, হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত একটি দালাল চক্র প্রায় দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করেছিল।
পুরো ঘটনার ভিডিও চিত্র বা ছবি ধারণ করতে গণমাধ্যমকর্মীদের বার বার বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালের পরিচালক মেরাজ মহসিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই জড়িত নয়। রোগী নিজেই পরামর্শ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আমরা কেবল অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলাম। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নেয়া হয় এবং সেখানে মারা যান। পরে স্বজনরা জোর করে প্রবেশ করে ফেইসবুকে লাইভ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেন বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘দোষ ঢাকতে’ এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
এলাকাবাসী ও স্বজনরা পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।