পলাশ (নরসিংদী) : পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ -সংবাদ
নরসিংদী জেলার শিলমান্দি, চরপাড়া, মুলপাড়া ও চর মাহমুদপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া। পলাশের পূর্বপাশ দিয়ে পারুলিয়া, চরনগরদী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাম এখন মরা গাঙ। এক সময় সর্পিল আকারের এই নদের ইতিহাস এখন শুধু বয়োবৃদ্ধদের মুখে মুখে।
সনাতন ধর্মের পুরাণ মতে, ঋষি শান্তনুর স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রহ্মার পুত্র সন্তান হিসেবে জলপিন্ড আকারে ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম হয়। যার জলের ধারা কৈলাস, গন্ধমাদনা, জারুধি ও সম্বর্তক নামক চারটি পর্বতের মাঝখান থেকে ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার রুপে জন্ম নেয়া পরশুরামের মাতৃহত্যার মত গুরুপাপ থেকে মুক্তির মাধ্যমে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে, পরিপূর্ণ যৌবন প্রাপ্তির পর ব্রহ্মপুত্র, নদের রুপ-গুনের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে গঙ্গাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গঙাকে খুঁজতে থাকে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গাকে কতটা ভালোবাসে তা পরীক্ষা করার জন্য গঙ্গা ছদ্মবেশে বুড়িগঙ্গা রুপ নিয়ে এগিয়ে আসে ব্রহ্মপুত্রের দিকে। বৃদ্ধা বুড়িগঙ্গাকে দেখে মা, সম্বোধন করে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গার খুঁজ নিতে চায় আর তার বিয়ের মনোবাসনা প্রকাশ করে। মা, সম্বোধন করায় বুড়িগঙ্গা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তার নিজের গঙ্গা পরিচয় ব্রহ্মপুত্রকে প্রদান পূর্বক বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ফিরিয়ে দেয়। এদিকে লজ্জায় ব্রহ্মপুত্র জিভে কামড় দিয়ে নিজ জলাঙ্গে প্রচন্ড আলোড়ন তুলে সাত প্যাঁচ দিয়ে নিজের গতিপথ পাল্টে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়, আর পুরাতন পথে রয়ে যাওয়া জলের ধারা মরা গাঙ নামধারন করে।
নিসর্গের অপরুপ আলেখ্য খুঁজে পাওয়া যায় এই মরা গাঙ আর তার বাঁকে বাঁকে। সর্পিলাকার এই গাঙ মহাকালের চাকায় ভর করে আজও বর্ষা আসলে ভরা জলে হয়ে উঠে প্রমত্তা, পাক খাওয়া ঘোলা জলে পাড় ভাঙ্গে দু তীরে। আর বসন্তে, শীতে প্রায় শুকিয়ে যায়, হয় জীর্ন, মৃতপ্রায়। খুব বেশী দীর্ঘ না হলেও গাঙটির বুকে জমা কথামালা কিন্তু কোনও মহাকাব্যের চেয়ে কম নয়। মুলপাড়া গ্রামের সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম ররাজা ও তার পিতা মো. রেজাউল হক রাজু চরনগরদী গ্রামের সিরাজউদ্দিন পাঠান, পারুলিয়া গ্রামের পরেশ দাস জানান, এক সময় এই গাঙের বুকের উপর দিয়েই পাল তৌলা নৌকা চলাচল করতো, ডাকাত দল লুট করতে আসতো, বাঁশের সাঁকু পাড় হয়ে কত বর-কনের বিয়ে হতো, সাঁতরে পার হয়ে কত প্রেমিক প্রেমিকার মিলন-পলায়ন হতো।
এছাড়াও আরো কত শত সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আবহমান বাংলার মানুষের সহজ সরল যাপিত জীবনের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আছে এই মরা গাঙ। কত স্মৃতি, কত সুখ, কত জনের কত কথা, ব্যথা আর কত প্রাপ্তি -হারানোর আনন্দ অশ্রু নিয়ে আজো বয়ে চলছে এই গাঙ, গাঙের কাজলা জলের নিরবধি ধারা। এই গাঙের তীরেই রয়েছে আমাদের এলাকার জনপ্রিয় গ্রামীণ হাট নতুন বাজার, এলাকার প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় গোরস্থান, আছে হিন্দুদেরও পঞ্চতত্বে বিলীন হবার মত শশ্মানঘাট, আর অদূরে হিন্দুধর্মালম্বীদের পুরাতন তীর্থস্থান মঠখোলা। এক সময় প্রবাহমান এই গাঙের জলরাশিতে হিন্দুরা পুন্যস্নান করে এই মঠখোলাতে শিবপূজা করতো, কালের বিবর্তনে গাঙের জল বেশী কমে যাওয়ায় যা বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এই গাঙ বিধৌত উর্বর অববাহিকায় এখনো প্রচুর পরিমানে ধান, গম, কলা, মুলা, টমেটো, আলু, শাক-সবজি সহ নানাবিধ ফসলের বাম্পার ফলন ঘটে। গাঙের তটসংলগ্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত স্থাপিত হচ্ছে নিত্য নতুন কত শত বসতবাড়ি আর স্থাপনা।
জন্ম নিয়েছে, নিচ্ছে অসংখ্য কৃষক, রসিক, সুজন, ভাবুক, সমঝদার, কৃতি সন্তান আর পুন্যবানেরা।কিন্তু এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদেন ঐতিহ্য ফিরে চান নদের তীরবর্তী লোকজন। তবে লোকমুখে শোনা যায় ব্রহ্মপুত্র নদের হারানো নদের ঐতিহ্য ফিরে আনতে সরকার হাতে নিয়েছে কাজ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
পলাশ (নরসিংদী) : পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
নরসিংদী জেলার শিলমান্দি, চরপাড়া, মুলপাড়া ও চর মাহমুদপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া। পলাশের পূর্বপাশ দিয়ে পারুলিয়া, চরনগরদী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাম এখন মরা গাঙ। এক সময় সর্পিল আকারের এই নদের ইতিহাস এখন শুধু বয়োবৃদ্ধদের মুখে মুখে।
সনাতন ধর্মের পুরাণ মতে, ঋষি শান্তনুর স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রহ্মার পুত্র সন্তান হিসেবে জলপিন্ড আকারে ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম হয়। যার জলের ধারা কৈলাস, গন্ধমাদনা, জারুধি ও সম্বর্তক নামক চারটি পর্বতের মাঝখান থেকে ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার রুপে জন্ম নেয়া পরশুরামের মাতৃহত্যার মত গুরুপাপ থেকে মুক্তির মাধ্যমে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে, পরিপূর্ণ যৌবন প্রাপ্তির পর ব্রহ্মপুত্র, নদের রুপ-গুনের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে গঙ্গাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গঙাকে খুঁজতে থাকে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গাকে কতটা ভালোবাসে তা পরীক্ষা করার জন্য গঙ্গা ছদ্মবেশে বুড়িগঙ্গা রুপ নিয়ে এগিয়ে আসে ব্রহ্মপুত্রের দিকে। বৃদ্ধা বুড়িগঙ্গাকে দেখে মা, সম্বোধন করে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গার খুঁজ নিতে চায় আর তার বিয়ের মনোবাসনা প্রকাশ করে। মা, সম্বোধন করায় বুড়িগঙ্গা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তার নিজের গঙ্গা পরিচয় ব্রহ্মপুত্রকে প্রদান পূর্বক বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ফিরিয়ে দেয়। এদিকে লজ্জায় ব্রহ্মপুত্র জিভে কামড় দিয়ে নিজ জলাঙ্গে প্রচন্ড আলোড়ন তুলে সাত প্যাঁচ দিয়ে নিজের গতিপথ পাল্টে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়, আর পুরাতন পথে রয়ে যাওয়া জলের ধারা মরা গাঙ নামধারন করে।
নিসর্গের অপরুপ আলেখ্য খুঁজে পাওয়া যায় এই মরা গাঙ আর তার বাঁকে বাঁকে। সর্পিলাকার এই গাঙ মহাকালের চাকায় ভর করে আজও বর্ষা আসলে ভরা জলে হয়ে উঠে প্রমত্তা, পাক খাওয়া ঘোলা জলে পাড় ভাঙ্গে দু তীরে। আর বসন্তে, শীতে প্রায় শুকিয়ে যায়, হয় জীর্ন, মৃতপ্রায়। খুব বেশী দীর্ঘ না হলেও গাঙটির বুকে জমা কথামালা কিন্তু কোনও মহাকাব্যের চেয়ে কম নয়। মুলপাড়া গ্রামের সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম ররাজা ও তার পিতা মো. রেজাউল হক রাজু চরনগরদী গ্রামের সিরাজউদ্দিন পাঠান, পারুলিয়া গ্রামের পরেশ দাস জানান, এক সময় এই গাঙের বুকের উপর দিয়েই পাল তৌলা নৌকা চলাচল করতো, ডাকাত দল লুট করতে আসতো, বাঁশের সাঁকু পাড় হয়ে কত বর-কনের বিয়ে হতো, সাঁতরে পার হয়ে কত প্রেমিক প্রেমিকার মিলন-পলায়ন হতো।
এছাড়াও আরো কত শত সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আবহমান বাংলার মানুষের সহজ সরল যাপিত জীবনের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আছে এই মরা গাঙ। কত স্মৃতি, কত সুখ, কত জনের কত কথা, ব্যথা আর কত প্রাপ্তি -হারানোর আনন্দ অশ্রু নিয়ে আজো বয়ে চলছে এই গাঙ, গাঙের কাজলা জলের নিরবধি ধারা। এই গাঙের তীরেই রয়েছে আমাদের এলাকার জনপ্রিয় গ্রামীণ হাট নতুন বাজার, এলাকার প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় গোরস্থান, আছে হিন্দুদেরও পঞ্চতত্বে বিলীন হবার মত শশ্মানঘাট, আর অদূরে হিন্দুধর্মালম্বীদের পুরাতন তীর্থস্থান মঠখোলা। এক সময় প্রবাহমান এই গাঙের জলরাশিতে হিন্দুরা পুন্যস্নান করে এই মঠখোলাতে শিবপূজা করতো, কালের বিবর্তনে গাঙের জল বেশী কমে যাওয়ায় যা বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এই গাঙ বিধৌত উর্বর অববাহিকায় এখনো প্রচুর পরিমানে ধান, গম, কলা, মুলা, টমেটো, আলু, শাক-সবজি সহ নানাবিধ ফসলের বাম্পার ফলন ঘটে। গাঙের তটসংলগ্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত স্থাপিত হচ্ছে নিত্য নতুন কত শত বসতবাড়ি আর স্থাপনা।
জন্ম নিয়েছে, নিচ্ছে অসংখ্য কৃষক, রসিক, সুজন, ভাবুক, সমঝদার, কৃতি সন্তান আর পুন্যবানেরা।কিন্তু এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদেন ঐতিহ্য ফিরে চান নদের তীরবর্তী লোকজন। তবে লোকমুখে শোনা যায় ব্রহ্মপুত্র নদের হারানো নদের ঐতিহ্য ফিরে আনতে সরকার হাতে নিয়েছে কাজ।