alt

পলাশের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ এখন মরা গাঙ

প্রতিনিধি, পলাশ (নরসিংদী) : মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

পলাশ (নরসিংদী) : পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ -সংবাদ

নরসিংদী জেলার শিলমান্দি, চরপাড়া, মুলপাড়া ও চর মাহমুদপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া। পলাশের পূর্বপাশ দিয়ে পারুলিয়া, চরনগরদী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাম এখন মরা গাঙ। এক সময় সর্পিল আকারের এই নদের ইতিহাস এখন শুধু বয়োবৃদ্ধদের মুখে মুখে।

সনাতন ধর্মের পুরাণ মতে, ঋষি শান্তনুর স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রহ্মার পুত্র সন্তান হিসেবে জলপিন্ড আকারে ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম হয়। যার জলের ধারা কৈলাস, গন্ধমাদনা, জারুধি ও সম্বর্তক নামক চারটি পর্বতের মাঝখান থেকে ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার রুপে জন্ম নেয়া পরশুরামের মাতৃহত্যার মত গুরুপাপ থেকে মুক্তির মাধ্যমে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে, পরিপূর্ণ যৌবন প্রাপ্তির পর ব্রহ্মপুত্র, নদের রুপ-গুনের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে গঙ্গাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গঙাকে খুঁজতে থাকে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গাকে কতটা ভালোবাসে তা পরীক্ষা করার জন্য গঙ্গা ছদ্মবেশে বুড়িগঙ্গা রুপ নিয়ে এগিয়ে আসে ব্রহ্মপুত্রের দিকে। বৃদ্ধা বুড়িগঙ্গাকে দেখে মা, সম্বোধন করে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গার খুঁজ নিতে চায় আর তার বিয়ের মনোবাসনা প্রকাশ করে। মা, সম্বোধন করায় বুড়িগঙ্গা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তার নিজের গঙ্গা পরিচয় ব্রহ্মপুত্রকে প্রদান পূর্বক বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ফিরিয়ে দেয়। এদিকে লজ্জায় ব্রহ্মপুত্র জিভে কামড় দিয়ে নিজ জলাঙ্গে প্রচন্ড আলোড়ন তুলে সাত প্যাঁচ দিয়ে নিজের গতিপথ পাল্টে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়, আর পুরাতন পথে রয়ে যাওয়া জলের ধারা মরা গাঙ নামধারন করে।

নিসর্গের অপরুপ আলেখ্য খুঁজে পাওয়া যায় এই মরা গাঙ আর তার বাঁকে বাঁকে। সর্পিলাকার এই গাঙ মহাকালের চাকায় ভর করে আজও বর্ষা আসলে ভরা জলে হয়ে উঠে প্রমত্তা, পাক খাওয়া ঘোলা জলে পাড় ভাঙ্গে দু তীরে। আর বসন্তে, শীতে প্রায় শুকিয়ে যায়, হয় জীর্ন, মৃতপ্রায়। খুব বেশী দীর্ঘ না হলেও গাঙটির বুকে জমা কথামালা কিন্তু কোনও মহাকাব্যের চেয়ে কম নয়। মুলপাড়া গ্রামের সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম ররাজা ও তার পিতা মো. রেজাউল হক রাজু চরনগরদী গ্রামের সিরাজউদ্দিন পাঠান, পারুলিয়া গ্রামের পরেশ দাস জানান, এক সময় এই গাঙের বুকের উপর দিয়েই পাল তৌলা নৌকা চলাচল করতো, ডাকাত দল লুট করতে আসতো, বাঁশের সাঁকু পাড় হয়ে কত বর-কনের বিয়ে হতো, সাঁতরে পার হয়ে কত প্রেমিক প্রেমিকার মিলন-পলায়ন হতো।

এছাড়াও আরো কত শত সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আবহমান বাংলার মানুষের সহজ সরল যাপিত জীবনের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আছে এই মরা গাঙ। কত স্মৃতি, কত সুখ, কত জনের কত কথা, ব্যথা আর কত প্রাপ্তি -হারানোর আনন্দ অশ্রু নিয়ে আজো বয়ে চলছে এই গাঙ, গাঙের কাজলা জলের নিরবধি ধারা। এই গাঙের তীরেই রয়েছে আমাদের এলাকার জনপ্রিয় গ্রামীণ হাট নতুন বাজার, এলাকার প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় গোরস্থান, আছে হিন্দুদেরও পঞ্চতত্বে বিলীন হবার মত শশ্মানঘাট, আর অদূরে হিন্দুধর্মালম্বীদের পুরাতন তীর্থস্থান মঠখোলা। এক সময় প্রবাহমান এই গাঙের জলরাশিতে হিন্দুরা পুন্যস্নান করে এই মঠখোলাতে শিবপূজা করতো, কালের বিবর্তনে গাঙের জল বেশী কমে যাওয়ায় যা বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।

এই গাঙ বিধৌত উর্বর অববাহিকায় এখনো প্রচুর পরিমানে ধান, গম, কলা, মুলা, টমেটো, আলু, শাক-সবজি সহ নানাবিধ ফসলের বাম্পার ফলন ঘটে। গাঙের তটসংলগ্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত স্থাপিত হচ্ছে নিত্য নতুন কত শত বসতবাড়ি আর স্থাপনা।

জন্ম নিয়েছে, নিচ্ছে অসংখ্য কৃষক, রসিক, সুজন, ভাবুক, সমঝদার, কৃতি সন্তান আর পুন্যবানেরা।কিন্তু এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদেন ঐতিহ্য ফিরে চান নদের তীরবর্তী লোকজন। তবে লোকমুখে শোনা যায় ব্রহ্মপুত্র নদের হারানো নদের ঐতিহ্য ফিরে আনতে সরকার হাতে নিয়েছে কাজ।

ছবি

শ্রীপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৬৮ পরিবারের মাঝে ছাগল বিতরণ

শীতে খেজুরের রস-গুড়ের স্বাদ জোগাতে ব্যস্ত গাছিরা

চাটখিলে চিহ্নিত মাদক কারবারি ইয়াবাসহ আটক

সিরাজগঞ্জে কৃষক-কৃষাণী প্রশিক্ষণ

কালিয়াকৈরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

ছবি

কুমিল্লায় গোখরা সাপসহ ১৭টি বাচ্চা উদ্ধার

ছবি

বোয়ালখালীতে আগাম সরিষার জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত কৃষক

ছবি

শক্তিশালী বোমা মেশিনে বালি অপসারণ, ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ

ছবি

নিয়ম না মেনেই সড়কের পার্শ্বে দ্বিতল ভবন নির্মাণ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ছবি

সুপেয় পানির দাবিতে সোচ্চার মোরেলগঞ্জবাসী

মহেশপুর ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত

ছবি

সাবেক এমপি সাদেক খানের ১২ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

নিরাপত্তার দাবিতে গৃহবধুর সংবাদ সম্মেলন

ছবি

নারীকে বাঁচাতে গিয়ে ২ তরুণের মৃত্যু

ছবি

ধনবাড়ীতে পিকাপ-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৪

তাহিরপুরে ইয়াবাসহ ব্যবসায়ী আটক

ছবি

রাণীনগরে গোয়াল ঘরের তালা কেটে গরু চুরি

ছবি

বরুড়ার কচুর লতি বিদেশে

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু

ছবি

সিরাজগঞ্জে গৃহবধু হত্যায় স্বামী ও ননদের যাবজ্জীবন

ছবি

হবিগঞ্জে ইসকন মন্দিরে অগ্নিকান্ড

ছবি

নোয়াখালীতে ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা যুবক আটক

ছবি

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩, আহত ৫

ছবি

সিরাজগঞ্জের রোপা আমন কাটা শুরু, ভালো ফলনে খুশি কৃষক

ছবি

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে নারীসহ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

ঠিকাদার লাপাত্তা, খুলনায় বন্ধ দুই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

ছবি

চকরিয়ায় ইয়াংছা সড়কে রাত নামলেই ডাকাত আতঙ্ক

ছবি

ডিমলায় কৃষকেদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ

ছবি

নরসিংদীর বিসিক এলাকা মাদকসেবী ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য

ছবি

কাঁঠালিয়ায় বন্ধ ব্রিজের কাজ শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

মির্জাগঞ্জে বস্তায় আদা চাষ করে তাক লাগালেন কৃষক

ছবি

দুমকিতে পল্লীসেবা সংঘের উদ্যোগে শাক- সবজির বীজ বিতরণ

গাজীপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান বরখাস্ত

নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, বৃষ্টি ৩-৬ দিন, কুয়াশা পড়তে পারে

ঠিকাদার লাপাত্তা, খুলনায় বন্ধ দুই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

ছবি

মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে টায়ারে আগুন দিতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা দগ্ধ

tab

পলাশের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ এখন মরা গাঙ

প্রতিনিধি, পলাশ (নরসিংদী)

পলাশ (নরসিংদী) : পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ -সংবাদ

মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

নরসিংদী জেলার শিলমান্দি, চরপাড়া, মুলপাড়া ও চর মাহমুদপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া। পলাশের পূর্বপাশ দিয়ে পারুলিয়া, চরনগরদী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাম এখন মরা গাঙ। এক সময় সর্পিল আকারের এই নদের ইতিহাস এখন শুধু বয়োবৃদ্ধদের মুখে মুখে।

সনাতন ধর্মের পুরাণ মতে, ঋষি শান্তনুর স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রহ্মার পুত্র সন্তান হিসেবে জলপিন্ড আকারে ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম হয়। যার জলের ধারা কৈলাস, গন্ধমাদনা, জারুধি ও সম্বর্তক নামক চারটি পর্বতের মাঝখান থেকে ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার রুপে জন্ম নেয়া পরশুরামের মাতৃহত্যার মত গুরুপাপ থেকে মুক্তির মাধ্যমে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে, পরিপূর্ণ যৌবন প্রাপ্তির পর ব্রহ্মপুত্র, নদের রুপ-গুনের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে গঙ্গাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গঙাকে খুঁজতে থাকে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গাকে কতটা ভালোবাসে তা পরীক্ষা করার জন্য গঙ্গা ছদ্মবেশে বুড়িগঙ্গা রুপ নিয়ে এগিয়ে আসে ব্রহ্মপুত্রের দিকে। বৃদ্ধা বুড়িগঙ্গাকে দেখে মা, সম্বোধন করে ব্রহ্মপুত্র গঙ্গার খুঁজ নিতে চায় আর তার বিয়ের মনোবাসনা প্রকাশ করে। মা, সম্বোধন করায় বুড়িগঙ্গা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে তার নিজের গঙ্গা পরিচয় ব্রহ্মপুত্রকে প্রদান পূর্বক বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে ফিরিয়ে দেয়। এদিকে লজ্জায় ব্রহ্মপুত্র জিভে কামড় দিয়ে নিজ জলাঙ্গে প্রচন্ড আলোড়ন তুলে সাত প্যাঁচ দিয়ে নিজের গতিপথ পাল্টে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়, আর পুরাতন পথে রয়ে যাওয়া জলের ধারা মরা গাঙ নামধারন করে।

নিসর্গের অপরুপ আলেখ্য খুঁজে পাওয়া যায় এই মরা গাঙ আর তার বাঁকে বাঁকে। সর্পিলাকার এই গাঙ মহাকালের চাকায় ভর করে আজও বর্ষা আসলে ভরা জলে হয়ে উঠে প্রমত্তা, পাক খাওয়া ঘোলা জলে পাড় ভাঙ্গে দু তীরে। আর বসন্তে, শীতে প্রায় শুকিয়ে যায়, হয় জীর্ন, মৃতপ্রায়। খুব বেশী দীর্ঘ না হলেও গাঙটির বুকে জমা কথামালা কিন্তু কোনও মহাকাব্যের চেয়ে কম নয়। মুলপাড়া গ্রামের সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম ররাজা ও তার পিতা মো. রেজাউল হক রাজু চরনগরদী গ্রামের সিরাজউদ্দিন পাঠান, পারুলিয়া গ্রামের পরেশ দাস জানান, এক সময় এই গাঙের বুকের উপর দিয়েই পাল তৌলা নৌকা চলাচল করতো, ডাকাত দল লুট করতে আসতো, বাঁশের সাঁকু পাড় হয়ে কত বর-কনের বিয়ে হতো, সাঁতরে পার হয়ে কত প্রেমিক প্রেমিকার মিলন-পলায়ন হতো।

এছাড়াও আরো কত শত সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আবহমান বাংলার মানুষের সহজ সরল যাপিত জীবনের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আছে এই মরা গাঙ। কত স্মৃতি, কত সুখ, কত জনের কত কথা, ব্যথা আর কত প্রাপ্তি -হারানোর আনন্দ অশ্রু নিয়ে আজো বয়ে চলছে এই গাঙ, গাঙের কাজলা জলের নিরবধি ধারা। এই গাঙের তীরেই রয়েছে আমাদের এলাকার জনপ্রিয় গ্রামীণ হাট নতুন বাজার, এলাকার প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় গোরস্থান, আছে হিন্দুদেরও পঞ্চতত্বে বিলীন হবার মত শশ্মানঘাট, আর অদূরে হিন্দুধর্মালম্বীদের পুরাতন তীর্থস্থান মঠখোলা। এক সময় প্রবাহমান এই গাঙের জলরাশিতে হিন্দুরা পুন্যস্নান করে এই মঠখোলাতে শিবপূজা করতো, কালের বিবর্তনে গাঙের জল বেশী কমে যাওয়ায় যা বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।

এই গাঙ বিধৌত উর্বর অববাহিকায় এখনো প্রচুর পরিমানে ধান, গম, কলা, মুলা, টমেটো, আলু, শাক-সবজি সহ নানাবিধ ফসলের বাম্পার ফলন ঘটে। গাঙের তটসংলগ্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত স্থাপিত হচ্ছে নিত্য নতুন কত শত বসতবাড়ি আর স্থাপনা।

জন্ম নিয়েছে, নিচ্ছে অসংখ্য কৃষক, রসিক, সুজন, ভাবুক, সমঝদার, কৃতি সন্তান আর পুন্যবানেরা।কিন্তু এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদেন ঐতিহ্য ফিরে চান নদের তীরবর্তী লোকজন। তবে লোকমুখে শোনা যায় ব্রহ্মপুত্র নদের হারানো নদের ঐতিহ্য ফিরে আনতে সরকার হাতে নিয়েছে কাজ।

back to top