কুমিল্লার শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বরুড়ায় কৃষকদের কষ্ট আর শ্রমে উৎপাদিত কচুর লতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। ফলে একদিকে এ সবজি ফসলটির মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্থনীতিতে চালিকা শক্তি হিসেবে যোগান দিচ্ছে। অপরদিকে এখানকার কৃষকেরা অভাব অনটন আর বেকারত্ব দূরীকরনের মাধ্যমে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখি সমৃদ্ধ জীবন যাপন করছেন। তবে কৃষকদের অভিযোগ তারা অর্থকরী সবজী ফসল এ কচুর লতি চাষ করতে গিয়ে ভেজাল কীট নাশকের দ্বারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। যার ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার তারা ভাল লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরে জমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং ভবানীপুর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে কচুর লতি চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরাও বিক্ষিপ্তভাবে অর্থকরী ফসল কচুর লতি আবাদ করে থাকেন। ধান ফসলের আবাদের পর রবি এবং খরিপ মৌসুম তথা সারা বছর কচুর লতির আবাদ করে থাকেন কৃষকেরা। আবাদকৃত কচুর লতি জাতগুলো হচ্ছে বারী-১, বারী-২ এবং বারী-৩।
কৃষকদের উৎপাদিত এ জাতীয় কচুর লতি খেতে বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদা স্থানীয়ভাবে যেমন কদর রয়েছে তেমনি সারা দেশে রয়েছে এর কদর। উপরোন্ত দেশের সীমানা পেরিয়ে এই সুস্বাদু সবজী ফসল কচুর লতি সৌদি আরব, কুয়েত, দুবাই, কাতার, আরব আমিরাতসহ মধ্য প্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডাসহ কমপক্ষে ৫০টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে। যারপ্রেক্ষিতে ব্যপকভিত্তিতে কচুর লতি আবাদ হওয়া এলাকার মধ্যে বিজয়পুর, নাটেহরা এবং মুগুজি নামক এলাকায় কচুল লতি বেচাকেনার হাট বসানো হয়েছে। সপ্তাহে শনি এবং মঙ্গলবার ব্যতীত এসব গ্রাম্য হাটে ৫দিন এসব কচুর লতি শত শত কৃষকরা বিক্রি করে থাকেন। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে এ কচুর লতি বিক্রি। আর এ সময় এসব হাটে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সবজি ব্যবসায়িরা পিকআপ ভ্যান, ট্রাক আর ভ্যান গাড়ি নিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কচুর লতি ক্রয় করে নেন। আর এ লতি এ ব্যবসায়ীরা ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রা বাড়ি, শ্যামপুর, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় পাইকারী সবজির বাজারে বিক্রি করে থাকেন। ওই স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় হাটবাজারে সরবরাহ এ কচুর লতি সরবরাহ করে থাকেন।
চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বাঙ্গালী বসবাসকারী কমপক্ষে ৫০টি দেশে এ কচুর লতি রপ্তানী করা হয়ে থাকে। বিজয়পুর গ্রামের প্রান্তিক চাষী মো. শাহ আলম জানান, তিনি খরিপ মৌসুমে ৪৮ শতক জমিতে কচুর লতি আবাদ করেন। এতে এক বছরে উৎপাদন বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আর এ জমি থেকে উৎপাদিত লতি বিক্রি করেছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। এতে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। মুগুজী গ্রামের কৃষক মো. নুরুল ইসলাম জানান, তিনি তার ১২ শতক জমিতে কচুর লতি আবাদ করেছেন। এতে তার বছরে উৎপাদন বাবদ ব্যয় করেছেন ১৪ হাজার টাকা। আর এ জমি থেকে উৎপাদিত লতি বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকা। এতে তিনি প্রায় ১৬ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। আগানগর গ্রামের প্রান্তিক চাষী মো. মনির হোসেন জানান, তিনি তার ৫২ শতক জমিতে কচুর লতি আবাদ করেছেন। এতে তার উৎপাদন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। আর এ জমি থেকে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করেছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। এতে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। অন্য কৃষকেরা একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, কচুর লতি আবাদে ক্ষতি নেই। এর মধ্যে রবি মৌসুমে তথা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে লতি বিক্রিতে বেশী পরিমাণ লাভবান হওয়া যায়। কেননা ওই মৌসুমে অন্যান্য জাতের সবজি বাজারে কম থাকায় কচুর লতির চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেড়ে যায়। এ সময় প্রতি কেজি লতি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। তবে অন্য মৌসুমে লতি কেজি প্রতি ২৪-২৮ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এ সময় লাভের পরিমাণ কিছুটা কম হয়। অপরদিকে উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক রফিকুল হাসানসহ অনেকে জানান, কচুর লতি বিক্রির হাটে ১ হাজার কেজি ওজনের একটি আঁটি প্রসেসিং করে আঁটি বেঁধে দিলে তারা সবজি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫শত টাকা মজুরী পেয়ে থাকেন। এতে করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। যার ফলে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মোটামুটি খেয়ে দেয়ে ভালভাবে জীবন যাপন করে আসছেন। এছাড়া তারা অভিযোগ করে বলেন, কচুর লতি আবাদে প্রতি সপ্তাহে জমিতে সার কীট নাশক ছিটাতে হয়। ভেজাল কীট নাশকের কারনে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। যার ফলে কচুর লতি বিক্রি করে সীমিত লাভ পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, বছরে রবি মৌসুম অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত, খরিপ ১ মৌসুম মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এবং খরিপ ২ মৌসুম জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ৩ মৌসুমে কচুর লতি আবাদ হয়ে থাকে। এসময় জমি ভালভাবে প্রস্তুত করে উন্নত জাতের লতি কচুর চারা জমিতে রোপন করা হয়ে থাকে। ভালভাবে পরিচর্যার শেষে প্রায় ৩ মাস পর থেকে লতি কর্তন করে বিক্রি শুরু হয়। এর থেকে প্রতি সপ্তাহে লতি কর্তন করে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করা হয়। পুরো মৌসুম জুড়ে চলে লতি উত্তোলন আর বিক্রি।
এ উপজেলায় চলতি বছরে খরিপ মৌসুমে ১৪৭ হেক্টর জমিতে এবং রবি মৌসুমে প্রায় ৪ শত ৩৯ হেক্টর জমিতে কচুর লতি আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত কচুর লতির জাতগুলো বারী-১, বারী-২, বারী-৩ রয়েছে। আর অর্থকরী এ কচুর লতি আবাদের সাথে প্রায় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার প্রান্তিক চাষী সম্পৃক্ত রয়েছেন। অপরদিকে ৯ হাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার ফলে এসব এলাকাসমূহে অভাব অনটন আর বেকারত্ব দূরীভূত হয়েছে। সবজি ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা কামাল, মো. সুমন মিয়া, আবদুল মান্নান জানান, গত প্রায় ৪ দশক যাবৎ তারা এখানকার স্থানীয় হাট বাজার থেকে সারা বছর কচুর লতি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ি, শ্যামপুর, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় পাইকারী সবজি বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরবরাহ করে থাকেন। এতে তারা প্রতি কেজি কচুর লতিতে ১ থেকে ২ টাকা লাভবান হয়ে থাকেন। ওই সব বাজার থেকে এসব কচুর লতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে। এছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ীরা বরুড়ায় সুস্বাদু এ কচুর লতি ইউরোপ, আমেরিকা, সৌদি আরবসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে রপ্তানী করে থাকেন। এছাড়া তারা আরও জানান, প্রতি ভর মৌসুমে এখানকার হাট বাজার থেকে কৃষকদের কাছ থেকে প্রত্যক ব্যবসায়ী এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ কচুর লতি ক্রয় করে থাকেন। আনসিজনে ৪ শত থেকে প্রায় ৫ শত মণ কচুর লতি ক্রয় করে থাকেন। এ ব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, এ উপজেলার কৃষকেরা কচুর লতি সবজি ফসলটি আবাদ করে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করে আসছেন। যার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভাব অনটন ও বেকারত্ব দূরীভূত হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ কচুর লতি পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে। তিনি আরও জানান, তার দপ্তর থেকে কচুর লতি চাষে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঠিক মাত্রায় সার, কীট নাশক, বালাই নাশক পদ্ধতি ব্যবহারে উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। এছাড়া কৃষকদের কচুর লতি মাঠ থেকে সংগ্রহ করার পর প্রসেসিং করার জন্য কন্দাল ফসলের প্রকল্প থেকে দুটি প্রসেসিং সেড নির্মান করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু-এমং মারমা মং বলেন, বরুড়ায় কৃষকেরা কচুর লতি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এ কচুর লতি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় বিদেশে ও রপ্তানী হচ্ছে। কৃষকরা যাতে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা নিয়ে এ ফসলটির আবাদ করতে পারেন তার জন্য কৃষকদের সাথে এখানকার ব্যাংকের ম্যানেজারদের পরামর্শের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা যাতে ক্ষেত থেকে তাদের উৎপাদিত লতি উত্তোলন করে প্রসেসিং করে বিক্রি করতে পারেন সেই লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সড়কের পাশে দুটি প্রসেসিং সেড নির্মান করা হয়েছে।
এছাড়া ভেজাল কীট নাশকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে অবশ্যই কৃষি অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
কুমিল্লার শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বরুড়ায় কৃষকদের কষ্ট আর শ্রমে উৎপাদিত কচুর লতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। ফলে একদিকে এ সবজি ফসলটির মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্থনীতিতে চালিকা শক্তি হিসেবে যোগান দিচ্ছে। অপরদিকে এখানকার কৃষকেরা অভাব অনটন আর বেকারত্ব দূরীকরনের মাধ্যমে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখি সমৃদ্ধ জীবন যাপন করছেন। তবে কৃষকদের অভিযোগ তারা অর্থকরী সবজী ফসল এ কচুর লতি চাষ করতে গিয়ে ভেজাল কীট নাশকের দ্বারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। যার ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার তারা ভাল লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরে জমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং ভবানীপুর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে কচুর লতি চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরাও বিক্ষিপ্তভাবে অর্থকরী ফসল কচুর লতি আবাদ করে থাকেন। ধান ফসলের আবাদের পর রবি এবং খরিপ মৌসুম তথা সারা বছর কচুর লতির আবাদ করে থাকেন কৃষকেরা। আবাদকৃত কচুর লতি জাতগুলো হচ্ছে বারী-১, বারী-২ এবং বারী-৩।
কৃষকদের উৎপাদিত এ জাতীয় কচুর লতি খেতে বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদা স্থানীয়ভাবে যেমন কদর রয়েছে তেমনি সারা দেশে রয়েছে এর কদর। উপরোন্ত দেশের সীমানা পেরিয়ে এই সুস্বাদু সবজী ফসল কচুর লতি সৌদি আরব, কুয়েত, দুবাই, কাতার, আরব আমিরাতসহ মধ্য প্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডাসহ কমপক্ষে ৫০টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে। যারপ্রেক্ষিতে ব্যপকভিত্তিতে কচুর লতি আবাদ হওয়া এলাকার মধ্যে বিজয়পুর, নাটেহরা এবং মুগুজি নামক এলাকায় কচুল লতি বেচাকেনার হাট বসানো হয়েছে। সপ্তাহে শনি এবং মঙ্গলবার ব্যতীত এসব গ্রাম্য হাটে ৫দিন এসব কচুর লতি শত শত কৃষকরা বিক্রি করে থাকেন। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে এ কচুর লতি বিক্রি। আর এ সময় এসব হাটে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সবজি ব্যবসায়িরা পিকআপ ভ্যান, ট্রাক আর ভ্যান গাড়ি নিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কচুর লতি ক্রয় করে নেন। আর এ লতি এ ব্যবসায়ীরা ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রা বাড়ি, শ্যামপুর, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় পাইকারী সবজির বাজারে বিক্রি করে থাকেন। ওই স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় হাটবাজারে সরবরাহ এ কচুর লতি সরবরাহ করে থাকেন।
চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বাঙ্গালী বসবাসকারী কমপক্ষে ৫০টি দেশে এ কচুর লতি রপ্তানী করা হয়ে থাকে। বিজয়পুর গ্রামের প্রান্তিক চাষী মো. শাহ আলম জানান, তিনি খরিপ মৌসুমে ৪৮ শতক জমিতে কচুর লতি আবাদ করেন। এতে এক বছরে উৎপাদন বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আর এ জমি থেকে উৎপাদিত লতি বিক্রি করেছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। এতে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। মুগুজী গ্রামের কৃষক মো. নুরুল ইসলাম জানান, তিনি তার ১২ শতক জমিতে কচুর লতি আবাদ করেছেন। এতে তার বছরে উৎপাদন বাবদ ব্যয় করেছেন ১৪ হাজার টাকা। আর এ জমি থেকে উৎপাদিত লতি বিক্রি করেছেন ৩০ হাজার টাকা। এতে তিনি প্রায় ১৬ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। আগানগর গ্রামের প্রান্তিক চাষী মো. মনির হোসেন জানান, তিনি তার ৫২ শতক জমিতে কচুর লতি আবাদ করেছেন। এতে তার উৎপাদন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। আর এ জমি থেকে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করেছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। এতে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। অন্য কৃষকেরা একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, কচুর লতি আবাদে ক্ষতি নেই। এর মধ্যে রবি মৌসুমে তথা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে লতি বিক্রিতে বেশী পরিমাণ লাভবান হওয়া যায়। কেননা ওই মৌসুমে অন্যান্য জাতের সবজি বাজারে কম থাকায় কচুর লতির চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেড়ে যায়। এ সময় প্রতি কেজি লতি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। তবে অন্য মৌসুমে লতি কেজি প্রতি ২৪-২৮ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এ সময় লাভের পরিমাণ কিছুটা কম হয়। অপরদিকে উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক রফিকুল হাসানসহ অনেকে জানান, কচুর লতি বিক্রির হাটে ১ হাজার কেজি ওজনের একটি আঁটি প্রসেসিং করে আঁটি বেঁধে দিলে তারা সবজি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫শত টাকা মজুরী পেয়ে থাকেন। এতে করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। যার ফলে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মোটামুটি খেয়ে দেয়ে ভালভাবে জীবন যাপন করে আসছেন। এছাড়া তারা অভিযোগ করে বলেন, কচুর লতি আবাদে প্রতি সপ্তাহে জমিতে সার কীট নাশক ছিটাতে হয়। ভেজাল কীট নাশকের কারনে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। যার ফলে কচুর লতি বিক্রি করে সীমিত লাভ পাওয়া যায়। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, বছরে রবি মৌসুম অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত, খরিপ ১ মৌসুম মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এবং খরিপ ২ মৌসুম জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ৩ মৌসুমে কচুর লতি আবাদ হয়ে থাকে। এসময় জমি ভালভাবে প্রস্তুত করে উন্নত জাতের লতি কচুর চারা জমিতে রোপন করা হয়ে থাকে। ভালভাবে পরিচর্যার শেষে প্রায় ৩ মাস পর থেকে লতি কর্তন করে বিক্রি শুরু হয়। এর থেকে প্রতি সপ্তাহে লতি কর্তন করে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করা হয়। পুরো মৌসুম জুড়ে চলে লতি উত্তোলন আর বিক্রি।
এ উপজেলায় চলতি বছরে খরিপ মৌসুমে ১৪৭ হেক্টর জমিতে এবং রবি মৌসুমে প্রায় ৪ শত ৩৯ হেক্টর জমিতে কচুর লতি আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত কচুর লতির জাতগুলো বারী-১, বারী-২, বারী-৩ রয়েছে। আর অর্থকরী এ কচুর লতি আবাদের সাথে প্রায় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার প্রান্তিক চাষী সম্পৃক্ত রয়েছেন। অপরদিকে ৯ হাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার ফলে এসব এলাকাসমূহে অভাব অনটন আর বেকারত্ব দূরীভূত হয়েছে। সবজি ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা কামাল, মো. সুমন মিয়া, আবদুল মান্নান জানান, গত প্রায় ৪ দশক যাবৎ তারা এখানকার স্থানীয় হাট বাজার থেকে সারা বছর কচুর লতি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ি, শ্যামপুর, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় পাইকারী সবজি বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরবরাহ করে থাকেন। এতে তারা প্রতি কেজি কচুর লতিতে ১ থেকে ২ টাকা লাভবান হয়ে থাকেন। ওই সব বাজার থেকে এসব কচুর লতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে। এছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ীরা বরুড়ায় সুস্বাদু এ কচুর লতি ইউরোপ, আমেরিকা, সৌদি আরবসহ বিশ্বের ৫০টি দেশে রপ্তানী করে থাকেন। এছাড়া তারা আরও জানান, প্রতি ভর মৌসুমে এখানকার হাট বাজার থেকে কৃষকদের কাছ থেকে প্রত্যক ব্যবসায়ী এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ কচুর লতি ক্রয় করে থাকেন। আনসিজনে ৪ শত থেকে প্রায় ৫ শত মণ কচুর লতি ক্রয় করে থাকেন। এ ব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, এ উপজেলার কৃষকেরা কচুর লতি সবজি ফসলটি আবাদ করে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করে আসছেন। যার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভাব অনটন ও বেকারত্ব দূরীভূত হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ কচুর লতি পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে। তিনি আরও জানান, তার দপ্তর থেকে কচুর লতি চাষে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঠিক মাত্রায় সার, কীট নাশক, বালাই নাশক পদ্ধতি ব্যবহারে উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। এছাড়া কৃষকদের কচুর লতি মাঠ থেকে সংগ্রহ করার পর প্রসেসিং করার জন্য কন্দাল ফসলের প্রকল্প থেকে দুটি প্রসেসিং সেড নির্মান করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু-এমং মারমা মং বলেন, বরুড়ায় কৃষকেরা কচুর লতি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এ কচুর লতি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় বিদেশে ও রপ্তানী হচ্ছে। কৃষকরা যাতে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা নিয়ে এ ফসলটির আবাদ করতে পারেন তার জন্য কৃষকদের সাথে এখানকার ব্যাংকের ম্যানেজারদের পরামর্শের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা যাতে ক্ষেত থেকে তাদের উৎপাদিত লতি উত্তোলন করে প্রসেসিং করে বিক্রি করতে পারেন সেই লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সড়কের পাশে দুটি প্রসেসিং সেড নির্মান করা হয়েছে।
এছাড়া ভেজাল কীট নাশকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে অবশ্যই কৃষি অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।