মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : সুপেয় পনির দাবিতে গ্রামবাসীর মানববন্ধন -সংবাদ
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামের ৫১টি পরিবারের খাবার পানির একমাত্র ভরসা লবণাক্ত খালের পানি। গোটা গ্রামের ৪ শতাধিক মানুষের বছরের পর বছর জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সাড়ে তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তা বর্ষা মৌসুমে চলাচলে দুর্বিষহ জীবন। সুপেয় পানির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি স্থানীয়রা।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় গ্রামবাসীর স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ সুপেয় পানির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানবন্ধন করেছেন।
সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামের ৫১টি পরিবারের ৩/৪ শত মানুষ কয়েক যুগ ধরে এ গ্রামে বসবাস করে আসছে। বেশিরভাগ পরিবারগুলো আয়ের উৎস দিন মজুর, স্থানীয় খেত-খামারে দৈনন্দিন মজুরিতে কাজ করে সংসার চালায়। আবার অনেকে সংসারের তাগিদে ছেলে-মেয়ে পরিবার পরিজন রেখে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ফেনী শহরে শ্রমিকের কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠায় এ থেকে চলে তাদের সংসার। এ গ্রামের বাসিন্দারা বছরের পর বছর খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছেন লবণাক্ত নদীর পানি। নদীর পানি থেকে তাদের রান্না, খাওয়া, গোসলাদিসহ যাবতীয় কাজে একমাত্র এ পানি।
গ্রামটির সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে পায়ে হেঁটে ইউপি মে¤া^র ডবলু শেখের বাড়ি থেকে পানি এনে তাদের পান করতে হয়। গ্রামের অন্যপ্রান্তে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে পঞ্চায়েত বাড়ি মিষ্টি পুকুরের পানি এনে তাদের ব্যবহার করতে হয়। এ থেকে বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষরা অনেক পথ হেঁটে নিয়মিত খাবার পানি আনতে না পেরে সরাসরি খালের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করছেন দৈনন্দিন পরিবারে। লবণাক্ত এ পানি ব্যবহার করার ফলে ডায়রিয়াসহ পানিজনিত বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে পরছে গ্রামবাসীরা।
স্থানীয়দের দাবি, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে ভোট নেয়ার জন্য গ্রামের মানুষকে খাবার পানির সমস্যা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পাকা রাস্তা নির্মাণের একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পরে আর কোনো খোঁজখবর রাখেন না তারা। ৫১টি পরিবারের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার শুধুমাত্র ৩টি পানির ছোট ট্যাংকি দিয়েছে এনজিও সংস্থা। তা থেকে ৩টি পরিবারের পানির সংকট কিছুদিনের জন্য মেটাতে পারে। বাকিদের খালের পানি ভরসা। ওই গ্রামের বাসিন্দা মতিবর খলিফা, ইসমাইল শেখ, বৃদ্ধ সামছুল হক মৃধা, কালাম মোল্লা, হাসিনা বেগম, হাজেরা বেগম, মেহেরুন নেছা, আসমা আক্তার, নুপুর বেগম, নাসরিন বেগম, ফাহিমা খানমসহ একাধিকরা বলেন, ৫০/৬০ বছর ধরে বাপদাদার আমল থেকে এ গ্রামে বসবাস করে আসছি। ভিটে-মাটির সম্বল বলতে ২-৫ শতক বসতবাড়ি। হাতের ওপর দৈনিক কাজ না করলে সংসার চলে না।
ছেলে-মেয়েরা ভাঙাচুরা ৩ কিলোমিটার মাটির রাস্তা হেটে স্কুলে যেতে হয় তাদের। বর্ষার সময়ে হাটু পানি ভেঙে দুর্ভোগের আর শেষ থাকেনা। গ্রামের একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে বাঁশে করে কাঁধে নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে পাকা রাস্তায় উঠে হাসপাতালে যেতে হয়। নিয়মিত নদীর পানি খাবার হিসেবে গ্রামবাসীর পান করতে হয়। তারা সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। যদিও বেসরকারি সংস্থা ডর্প ২০১৭ সাল থেকে উপকূলীয় এ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণে জন্য মাঠ পর্যায়ে খাবার পানির পুকুর খনন ও ফিল্টার স্থাপন পানির ট্যাংকি সরবরাহ করছেন।
এলাকা ভিত্তিক তা অপ্রতুল। অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন শুধু ডর্প এনজিও নয় এ এলাকার মানুষের সুপেয় খাবার পানির সংকট নিরসনে ও তাদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে সরকারের পাশাপশি বেসরকারি আরও একাধিক সংস্থার এগিয়ে আশা প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন এ উপজেলায় খাবার পানির সরবরাহে সাড়ে ৪ হাজার টিউবওয়েলের ব্যবহার ছিল। আর্সেনিক ও অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে টিউবওয়েলগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী।
বিকল্প ব্যবস্থায় বৃষ্টির পানি ধরে রেখে খাবার পানি ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ৩ হাজার লিটারের ১১ হাজার পানির ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী অপ্রতুল বরাদ্দ ১ লাখ পরিবারের শুধুমাত্র ১৫% মানুষকে সরকারি বরাদ্দের এ সুবিধার আওতায় এসছে। পরবর্তী বরাদ্দ হলে পর্যাক্রমে তা সরবরাহ করা হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : সুপেয় পনির দাবিতে গ্রামবাসীর মানববন্ধন -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামের ৫১টি পরিবারের খাবার পানির একমাত্র ভরসা লবণাক্ত খালের পানি। গোটা গ্রামের ৪ শতাধিক মানুষের বছরের পর বছর জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সাড়ে তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তা বর্ষা মৌসুমে চলাচলে দুর্বিষহ জীবন। সুপেয় পানির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি স্থানীয়রা।
গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় গ্রামবাসীর স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ সুপেয় পানির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানবন্ধন করেছেন।
সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামের ৫১টি পরিবারের ৩/৪ শত মানুষ কয়েক যুগ ধরে এ গ্রামে বসবাস করে আসছে। বেশিরভাগ পরিবারগুলো আয়ের উৎস দিন মজুর, স্থানীয় খেত-খামারে দৈনন্দিন মজুরিতে কাজ করে সংসার চালায়। আবার অনেকে সংসারের তাগিদে ছেলে-মেয়ে পরিবার পরিজন রেখে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ফেনী শহরে শ্রমিকের কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠায় এ থেকে চলে তাদের সংসার। এ গ্রামের বাসিন্দারা বছরের পর বছর খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছেন লবণাক্ত নদীর পানি। নদীর পানি থেকে তাদের রান্না, খাওয়া, গোসলাদিসহ যাবতীয় কাজে একমাত্র এ পানি।
গ্রামটির সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে পায়ে হেঁটে ইউপি মে¤া^র ডবলু শেখের বাড়ি থেকে পানি এনে তাদের পান করতে হয়। গ্রামের অন্যপ্রান্তে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে পঞ্চায়েত বাড়ি মিষ্টি পুকুরের পানি এনে তাদের ব্যবহার করতে হয়। এ থেকে বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষরা অনেক পথ হেঁটে নিয়মিত খাবার পানি আনতে না পেরে সরাসরি খালের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করছেন দৈনন্দিন পরিবারে। লবণাক্ত এ পানি ব্যবহার করার ফলে ডায়রিয়াসহ পানিজনিত বিভিন্ন রোগাক্রান্ত হয়ে পরছে গ্রামবাসীরা।
স্থানীয়দের দাবি, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে ভোট নেয়ার জন্য গ্রামের মানুষকে খাবার পানির সমস্যা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পাকা রাস্তা নির্মাণের একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পরে আর কোনো খোঁজখবর রাখেন না তারা। ৫১টি পরিবারের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার শুধুমাত্র ৩টি পানির ছোট ট্যাংকি দিয়েছে এনজিও সংস্থা। তা থেকে ৩টি পরিবারের পানির সংকট কিছুদিনের জন্য মেটাতে পারে। বাকিদের খালের পানি ভরসা। ওই গ্রামের বাসিন্দা মতিবর খলিফা, ইসমাইল শেখ, বৃদ্ধ সামছুল হক মৃধা, কালাম মোল্লা, হাসিনা বেগম, হাজেরা বেগম, মেহেরুন নেছা, আসমা আক্তার, নুপুর বেগম, নাসরিন বেগম, ফাহিমা খানমসহ একাধিকরা বলেন, ৫০/৬০ বছর ধরে বাপদাদার আমল থেকে এ গ্রামে বসবাস করে আসছি। ভিটে-মাটির সম্বল বলতে ২-৫ শতক বসতবাড়ি। হাতের ওপর দৈনিক কাজ না করলে সংসার চলে না।
ছেলে-মেয়েরা ভাঙাচুরা ৩ কিলোমিটার মাটির রাস্তা হেটে স্কুলে যেতে হয় তাদের। বর্ষার সময়ে হাটু পানি ভেঙে দুর্ভোগের আর শেষ থাকেনা। গ্রামের একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে বাঁশে করে কাঁধে নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে পাকা রাস্তায় উঠে হাসপাতালে যেতে হয়। নিয়মিত নদীর পানি খাবার হিসেবে গ্রামবাসীর পান করতে হয়। তারা সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। যদিও বেসরকারি সংস্থা ডর্প ২০১৭ সাল থেকে উপকূলীয় এ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণে জন্য মাঠ পর্যায়ে খাবার পানির পুকুর খনন ও ফিল্টার স্থাপন পানির ট্যাংকি সরবরাহ করছেন।
এলাকা ভিত্তিক তা অপ্রতুল। অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন শুধু ডর্প এনজিও নয় এ এলাকার মানুষের সুপেয় খাবার পানির সংকট নিরসনে ও তাদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে সরকারের পাশাপশি বেসরকারি আরও একাধিক সংস্থার এগিয়ে আশা প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন এ উপজেলায় খাবার পানির সরবরাহে সাড়ে ৪ হাজার টিউবওয়েলের ব্যবহার ছিল। আর্সেনিক ও অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে টিউবওয়েলগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী।
বিকল্প ব্যবস্থায় বৃষ্টির পানি ধরে রেখে খাবার পানি ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ৩ হাজার লিটারের ১১ হাজার পানির ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী অপ্রতুল বরাদ্দ ১ লাখ পরিবারের শুধুমাত্র ১৫% মানুষকে সরকারি বরাদ্দের এ সুবিধার আওতায় এসছে। পরবর্তী বরাদ্দ হলে পর্যাক্রমে তা সরবরাহ করা হবে।