ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’
বাড়বে ঠাণ্ডা : জনজীবন বিপর্যস্ত : ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টায় ফার্মগেট এলাকার চিরচেনা রূপ পালটে গেছে। অন্যান্য দিনের মতো মানুষের কোলাহল নেই, বাস কন্ডাকটরের চিৎকার নেই, ফুটপাতের দোকান নেই, রাস্তায় গণপরিবহন কম, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম। অনেক দোকান তখন পর্যন্ত বন্ধ। আর জলে ভরা ফার্মগেটের তেজকুনি পাড়ার রাস্তা।
অসময়ের এই বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। সোমবার ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভিজে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন। রিকশা, গাড়ি না পেয়ে, হেঁটেই ছুটছেন পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে।
পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সামনে দেখা যায় কোন মা তার ছেলের মাথায় ছাতা ধরে আছেন, কেউবা মেয়ের বইয়ের ব্যাগ। কেউবা ভিজে যাওয়া পরীক্ষার্থীর মাথা মুছে দিচ্ছেন। এমন একজন পরীক্ষার্থীর মা রুবিনা ইসলাম মোহাম্মদপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের কেন্দ্রে। রুবিনা বলেন, ‘পরীক্ষা না থাকলে আজ বেরই হতে দিতাম না রাইহানকে, আমি তো দূর। কি একটা অসময়ে বৃষ্টি।’ তার কথার রেশ ধরে আরেকজন অভিভাবক বলেন, ‘শীত নামানোর বৃষ্টি এইটা।’ রুবিনা বলেন, ‘না এটা নিম্নচাপের বৃষ্টি’। এভাবে বৃষ্টি নিয়ে দুর্ভোগের কথা চলতে থাকে দুই অভিভাবকের, আর তাদের ছেলেরা বইয়ের পাতায় দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিতে থাকে শেষ বারের মতো।
দেখা যায়, রাস্তার ধারে প্রতিবিন্ধী মেয়েটি আর একটা দোকানের এক চিলতে বারান্দায় জবুথবু হয়ে বসে আছে।
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে এমনি অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশের। বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা বাতাসে চরম দুর্ভোগে নিম্নআয়ের মানুষ। শুধু তাই নয়, জাওয়াদের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডুবে গেছে বীজতলা ঘরবাড়ি।
আশার খবর তিন দিনের এই বৃষ্টির দুর্ভোগ আজ থেকে কেটে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানা যায়, আজ থেকে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে, তবে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা তিন দিন ধরে কখনও গুঁড়িগুঁড়ি বা ভারী বৃষ্টি, আবার কোন অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির কারণে দেশের তাপমাত্রাও বেশ খানিকটা কমে এসেছে। মানুষ গরম পোশাকের সঙ্গে বৃষ্টি প্রতিরোধক পোশাক ও ছাতা নিয়ে বেরিয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। বিশেষ কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কাউকে বের হতে দেখা যায়নি।
গত শনিবার শুরু হওয়া বৃষ্টি সোমবার সারাদিনই ভিজিয়েছে কর্মমুখী মানুষকে। যানবাহন সংকট আর রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিশেষ করে দুর্ভোগে পড়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্র্থীসহ শিক্ষার্থীরা। অলি-গলি শুধু নয়, বড় রাস্তা ডুবে যায় পানি আর কাদায়। চলাচলের জন্য গণপরিবহন রাস্তায় কম দেখা যায়। বৃষ্টির সঙ্গে ঠাণ্ডা হাওয়া থাকায় রিকশাও তুলনামূলক ছিল কম, আর যাও বা রিকশা দেখা গেছে, তারা দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছে। নিরূপায় সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যের দিকে ছুটেন।
সোমবার বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি গলি। প্রধান সড়কেও বৃষ্টির পানি জমে যায়। গেন্ডারিয়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেলিনা পারভীন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিস রাস্তা থেকে নিচু হওয়ায় পানি এসে ডুবে গেছে। রিকশা নিয়ে ঢোকার উপায় নেই। আর এ পানি বৃষ্টির পানি হলে হতো, বৃষ্টির পানির সঙ্গে যত ময়লা-আবর্জনা সব মিশে পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। ময়লা পানিতে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পা চুলকানো শুরু হয়ে যায়। এই পানি পায়ে লাগলে চর্মরোগ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।’ স্থানীয় লোকজন বলছেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি সড়ক দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসার নতুন পানির পাইপ বসানোর কাজ করায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখন অনেকটাই নষ্ট।
মিরপুরের ফারহানা হক মনি তার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেকে সকাল ৮টায় স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি চলে যান আবার সাড়ে ১২টায় এসে নিয়ে যান। সোমবার সকালে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় আর বাড়ি যাননি, স্কুল ছুটির পর ছেলেকে নিয়ে বাসার উদ্দেশে বেরিয়ে যান। কিন্তু কোন রিকশা যেতে চাইছে না। মেট্রোরেলের কাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত আর পানি জমে যাওয়ায় ভয়ে ভয়ে চলছেন। ছেলের মাথায় ছাতা ধরে নিজে ভিজে ছেলের হাত ধরে অতি সন্তর্পণে পা ফেলে এগিয়ে যান বাসার দিকে।
এদিকে আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং টানা তৃতীয় দিনের বৃষ্টিতে বরিশালের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরে লোকজনের চলাচল কমেছে। অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। যানবাহনের সংখ্যাও কম। অফিস আদালতসহ সর্বত্র উপস্থিতি তুলনামূলক কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার মানুষ।
ভোলার মনপুরায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের পুকুরের মাছ পানির সঙ্গে ভেসে গেছে। গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। জনজীবনের দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও হাজীর হাট ইউপি চেয়ারম্যান সরেজমিন গিয়ে স্লুইসগেটের কপাটগুলো উঠিয়ে দিয়েছেন।
খুলনার সাতক্ষীরায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত আছে। ২৪ ঘণ্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা আশাশুনি ও শ্যামনগরের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ উপকূলে আসার আগেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ হিসেবে এটি সোমবার মধ্যরাতে ভারতের ওডিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার রয়েছে। দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বেড়ে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। সমুদ্রে অবস্থানরত নৌযান ও মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় দেশের উপকূলে বিপদ একটু কমেছে। ফলে কৃষকদের ওই বৃষ্টি থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
চলতি মাসের জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই মাসে বঙ্গোপসাগরে আরেকটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। তবে এটি বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আসার আশঙ্কা কম। মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি এবং শেষের দিকে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে ঠাণ্ড বাতাস আসা শুরু করবে। আর নদী তীরবর্তী এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’
বাড়বে ঠাণ্ডা : জনজীবন বিপর্যস্ত : ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
সোমবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টায় ফার্মগেট এলাকার চিরচেনা রূপ পালটে গেছে। অন্যান্য দিনের মতো মানুষের কোলাহল নেই, বাস কন্ডাকটরের চিৎকার নেই, ফুটপাতের দোকান নেই, রাস্তায় গণপরিবহন কম, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম। অনেক দোকান তখন পর্যন্ত বন্ধ। আর জলে ভরা ফার্মগেটের তেজকুনি পাড়ার রাস্তা।
অসময়ের এই বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। সোমবার ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভিজে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন। রিকশা, গাড়ি না পেয়ে, হেঁটেই ছুটছেন পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে।
পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর সামনে দেখা যায় কোন মা তার ছেলের মাথায় ছাতা ধরে আছেন, কেউবা মেয়ের বইয়ের ব্যাগ। কেউবা ভিজে যাওয়া পরীক্ষার্থীর মাথা মুছে দিচ্ছেন। এমন একজন পরীক্ষার্থীর মা রুবিনা ইসলাম মোহাম্মদপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের কেন্দ্রে। রুবিনা বলেন, ‘পরীক্ষা না থাকলে আজ বেরই হতে দিতাম না রাইহানকে, আমি তো দূর। কি একটা অসময়ে বৃষ্টি।’ তার কথার রেশ ধরে আরেকজন অভিভাবক বলেন, ‘শীত নামানোর বৃষ্টি এইটা।’ রুবিনা বলেন, ‘না এটা নিম্নচাপের বৃষ্টি’। এভাবে বৃষ্টি নিয়ে দুর্ভোগের কথা চলতে থাকে দুই অভিভাবকের, আর তাদের ছেলেরা বইয়ের পাতায় দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিতে থাকে শেষ বারের মতো।
দেখা যায়, রাস্তার ধারে প্রতিবিন্ধী মেয়েটি আর একটা দোকানের এক চিলতে বারান্দায় জবুথবু হয়ে বসে আছে।
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে এমনি অবস্থা রাজধানীসহ সারা দেশের। বৃষ্টি আর ঠাণ্ডা বাতাসে চরম দুর্ভোগে নিম্নআয়ের মানুষ। শুধু তাই নয়, জাওয়াদের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডুবে গেছে বীজতলা ঘরবাড়ি।
আশার খবর তিন দিনের এই বৃষ্টির দুর্ভোগ আজ থেকে কেটে যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানা যায়, আজ থেকে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে, তবে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা তিন দিন ধরে কখনও গুঁড়িগুঁড়ি বা ভারী বৃষ্টি, আবার কোন অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির কারণে দেশের তাপমাত্রাও বেশ খানিকটা কমে এসেছে। মানুষ গরম পোশাকের সঙ্গে বৃষ্টি প্রতিরোধক পোশাক ও ছাতা নিয়ে বেরিয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। বিশেষ কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কাউকে বের হতে দেখা যায়নি।
গত শনিবার শুরু হওয়া বৃষ্টি সোমবার সারাদিনই ভিজিয়েছে কর্মমুখী মানুষকে। যানবাহন সংকট আর রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। বিশেষ করে দুর্ভোগে পড়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্র্থীসহ শিক্ষার্থীরা। অলি-গলি শুধু নয়, বড় রাস্তা ডুবে যায় পানি আর কাদায়। চলাচলের জন্য গণপরিবহন রাস্তায় কম দেখা যায়। বৃষ্টির সঙ্গে ঠাণ্ডা হাওয়া থাকায় রিকশাও তুলনামূলক ছিল কম, আর যাও বা রিকশা দেখা গেছে, তারা দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছে। নিরূপায় সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যের দিকে ছুটেন।
সোমবার বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি গলি। প্রধান সড়কেও বৃষ্টির পানি জমে যায়। গেন্ডারিয়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেলিনা পারভীন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিস রাস্তা থেকে নিচু হওয়ায় পানি এসে ডুবে গেছে। রিকশা নিয়ে ঢোকার উপায় নেই। আর এ পানি বৃষ্টির পানি হলে হতো, বৃষ্টির পানির সঙ্গে যত ময়লা-আবর্জনা সব মিশে পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। ময়লা পানিতে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পা চুলকানো শুরু হয়ে যায়। এই পানি পায়ে লাগলে চর্মরোগ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।’ স্থানীয় লোকজন বলছেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি সড়ক দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসার নতুন পানির পাইপ বসানোর কাজ করায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখন অনেকটাই নষ্ট।
মিরপুরের ফারহানা হক মনি তার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেকে সকাল ৮টায় স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি চলে যান আবার সাড়ে ১২টায় এসে নিয়ে যান। সোমবার সকালে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় আর বাড়ি যাননি, স্কুল ছুটির পর ছেলেকে নিয়ে বাসার উদ্দেশে বেরিয়ে যান। কিন্তু কোন রিকশা যেতে চাইছে না। মেট্রোরেলের কাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত আর পানি জমে যাওয়ায় ভয়ে ভয়ে চলছেন। ছেলের মাথায় ছাতা ধরে নিজে ভিজে ছেলের হাত ধরে অতি সন্তর্পণে পা ফেলে এগিয়ে যান বাসার দিকে।
এদিকে আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং টানা তৃতীয় দিনের বৃষ্টিতে বরিশালের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরে লোকজনের চলাচল কমেছে। অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। যানবাহনের সংখ্যাও কম। অফিস আদালতসহ সর্বত্র উপস্থিতি তুলনামূলক কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার মানুষ।
ভোলার মনপুরায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকের পুকুরের মাছ পানির সঙ্গে ভেসে গেছে। গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। জনজীবনের দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও হাজীর হাট ইউপি চেয়ারম্যান সরেজমিন গিয়ে স্লুইসগেটের কপাটগুলো উঠিয়ে দিয়েছেন।
খুলনার সাতক্ষীরায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত আছে। ২৪ ঘণ্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা আশাশুনি ও শ্যামনগরের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ উপকূলে আসার আগেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ হিসেবে এটি সোমবার মধ্যরাতে ভারতের ওডিশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার রয়েছে। দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া বেড়ে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। সমুদ্রে অবস্থানরত নৌযান ও মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় দেশের উপকূলে বিপদ একটু কমেছে। ফলে কৃষকদের ওই বৃষ্টি থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
চলতি মাসের জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই মাসে বঙ্গোপসাগরে আরেকটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। তবে এটি বাংলাদেশ উপকূলের দিকে আসার আশঙ্কা কম। মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি এবং শেষের দিকে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে ঠাণ্ড বাতাস আসা শুরু করবে। আর নদী তীরবর্তী এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।