হাওর অঞ্চলে বোরোর ‘বাম্পার ফলনে’ খুশি কৃষক। চলতি বছরে প্রকৃতির আনুকূল্যে ও হাওরবাসীর উৎসবের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টারে ধান সংগ্রহ অভিযান। কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে দ্রুত ধান কেটে গোলায় তুলছেন তারা। একইসঙ্গে মেশিন দিয়েই চলছে ধান মাড়াই ও বস্তাবন্দির কাজ।
কৃষকেরা বলছেন, যন্ত্রটি তাদের ধান ঘরে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরের প্রায় সব ধান কাটা শেষ হয়েছে। তারা খেত থেকে পাকা বোরো ধান বস্তায় ভরে নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন, আবার কেউ কেউ বিক্রি করছেন আশেপাশের হাটে।
গতবছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের ৪৫ হাজার মেট্রিকটন ধান তলিয়ে যায়। এতে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকেরা। কৃষকের ক্ষতি কমাতে ও সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগ ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার সরবরাহ করে। চলতি বছরে কৃষি মন্ত্রলালয়ও ধান সংগ্রহে কৃষকদের সহায়তায় ‘ব্যাপক’তৎপরতা দেখায়।
কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্লান্ত, পর্যুদস্ত হাওরবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের সমন্বিত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের সহায়তায় ইতোমধ্যেই ধান সংগ্রহ অভিযান ১০ থেকে ১৪ দিন কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এপ্রিল শেষে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল ও ভোলার নিম্নাঞ্চল ঘুরে দেখা যায় প্রায় ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ। কিছু হাইব্রিড জাতের ধান কাটা শুধু বাকি। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কৃষক সাদেকুল আলাম জানান, ঈদের আগেই ৫ বিঘা জমির ধান কাটা শেষ। দুই দিনে মাত্র নয় হাজার টাকায় ধান কাটা থেকে মাড়াই শেষ করেছি। ২০২০ সালেও এই জমির ধান কাটতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতো। কম্বাইন হারভেস্টার আমাদের জীবনটাই সহজ করে দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকায় মে মাসের ১০ তারিখের আগে আগে ধান কাটা শেষ হতো না, এইবার এপ্রিলের ৩০ এর মধ্যেই সব ধান শেষ। কাঁচা ধানের দাম একটু কম আছে, কিন্তু মে মাস কষ্ট করে ধরে রাখতে পারলেই ভালো দাম পাওয়া যাবে।
সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণের সহকারী পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকট নেই। প্রায় ১ হাজার হারভেস্টার মাঠে ধান কাটার কাজ করেছে। চলতি বছর জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল, কাটা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে।
‘শাল্লা, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও দিরাই উপজেলার হাওরের ১০০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। ২৩ থেকে ২৪ এপ্রিল ঝড়-ঝাপটা ছিল, এর পর থেকে আর সমস্যা হয়নি। এবার সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০ শতাংশের উপর জমি হারভেস্টার দিয়ে কাটা হয়েছে। আগে যেখানে পুরো এক মাস লাগত সেখানে ১৪ থেকে ১৬ দিনেই হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ করা সম্ভব হয়েছে।’ বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনার হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে বোরো ধান কাটা ৯৯ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি, কলমাকান্দাসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব খেতের বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘জেলায় ছোট-বড় ১৩৪টি হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে এবার ৪০ হাজার ৯৭৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮, ব্রি-৮৮সহ উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড। শ্রমিকের পাশাপাশি ৭০২টি কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটা হয়েছে বলে ১০ দিন আগেই অভিযান মোটামুটি শেষ।’
সমন্বিত ব্যবস্থপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের তথা স্মার্ট কৃষির কোন বিকল্প নেই। এজন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ১২ ক্যাটাগরির যন্ত্র হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলে ৭০ শতাংশ এবং সমতলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।’
স্মার্ট কৃষিযন্ত্রের কারণে কৃষকদের ব্যয় সাশ্রয়ও হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা কম সময়ে নিরাপদে তাদের ধান সংগ্রহ করতে পারছে বলেও জানান তিনি।
গত আমন মৌসুমে কম্বাইন হারভেস্টার ও অন্যান্য কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকের এক হাজার ১১৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এই বোরো মৌসুমের হিসাব আমরা করছি। তিনি আশা করেন, প্রকৃতিক দুর্যোগকে পাশ কাটিয়ে স্মার্ট কৃষির সহায়তায় খুব কম সময়ে ধান সংগ্রহ করে হাওর তথা দেশবাসীর খাদ্য নিরাপত্তার উত্তম বিধান নিশ্চত করার নিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রী, কিষান-কিষানি ও কৃষি সম্প্রসারণের মিলিত প্রয়াস উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত থাকবে।
সারা দেশে মোট মেশিন দেয়া হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ এর মধ্যে কম্বাইন হারবেস্টার ৮ হাজার ৫০০, রিপার ১ হাজার ৬০০। ইতিমধ্যে হাওর অঞ্চলে ৩ হাজার ৫০০ হারবেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। তবে, ধান কাটায় ব্যবহার হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ হারভেস্টার।
বুধবার, ১০ মে ২০২৩
হাওর অঞ্চলে বোরোর ‘বাম্পার ফলনে’ খুশি কৃষক। চলতি বছরে প্রকৃতির আনুকূল্যে ও হাওরবাসীর উৎসবের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আধুনিক কম্বাইন হারভেস্টারে ধান সংগ্রহ অভিযান। কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে দ্রুত ধান কেটে গোলায় তুলছেন তারা। একইসঙ্গে মেশিন দিয়েই চলছে ধান মাড়াই ও বস্তাবন্দির কাজ।
কৃষকেরা বলছেন, যন্ত্রটি তাদের ধান ঘরে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরের প্রায় সব ধান কাটা শেষ হয়েছে। তারা খেত থেকে পাকা বোরো ধান বস্তায় ভরে নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন, আবার কেউ কেউ বিক্রি করছেন আশেপাশের হাটে।
গতবছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের ৪৫ হাজার মেট্রিকটন ধান তলিয়ে যায়। এতে ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকেরা। কৃষকের ক্ষতি কমাতে ও সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগ ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার সরবরাহ করে। চলতি বছরে কৃষি মন্ত্রলালয়ও ধান সংগ্রহে কৃষকদের সহায়তায় ‘ব্যাপক’তৎপরতা দেখায়।
কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্লান্ত, পর্যুদস্ত হাওরবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের সমন্বিত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের সহায়তায় ইতোমধ্যেই ধান সংগ্রহ অভিযান ১০ থেকে ১৪ দিন কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এপ্রিল শেষে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার হাওর অঞ্চল ও ভোলার নিম্নাঞ্চল ঘুরে দেখা যায় প্রায় ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ। কিছু হাইব্রিড জাতের ধান কাটা শুধু বাকি। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কৃষক সাদেকুল আলাম জানান, ঈদের আগেই ৫ বিঘা জমির ধান কাটা শেষ। দুই দিনে মাত্র নয় হাজার টাকায় ধান কাটা থেকে মাড়াই শেষ করেছি। ২০২০ সালেও এই জমির ধান কাটতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতো। কম্বাইন হারভেস্টার আমাদের জীবনটাই সহজ করে দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকায় মে মাসের ১০ তারিখের আগে আগে ধান কাটা শেষ হতো না, এইবার এপ্রিলের ৩০ এর মধ্যেই সব ধান শেষ। কাঁচা ধানের দাম একটু কম আছে, কিন্তু মে মাস কষ্ট করে ধরে রাখতে পারলেই ভালো দাম পাওয়া যাবে।
সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণের সহকারী পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকট নেই। প্রায় ১ হাজার হারভেস্টার মাঠে ধান কাটার কাজ করেছে। চলতি বছর জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল, কাটা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে।
‘শাল্লা, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও দিরাই উপজেলার হাওরের ১০০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। ২৩ থেকে ২৪ এপ্রিল ঝড়-ঝাপটা ছিল, এর পর থেকে আর সমস্যা হয়নি। এবার সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০ শতাংশের উপর জমি হারভেস্টার দিয়ে কাটা হয়েছে। আগে যেখানে পুরো এক মাস লাগত সেখানে ১৪ থেকে ১৬ দিনেই হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ করা সম্ভব হয়েছে।’ বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনার হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে বোরো ধান কাটা ৯৯ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি, কলমাকান্দাসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব খেতের বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘জেলায় ছোট-বড় ১৩৪টি হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে এবার ৪০ হাজার ৯৭৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-২৮, ব্রি-৮৮সহ উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড। শ্রমিকের পাশাপাশি ৭০২টি কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটা হয়েছে বলে ১০ দিন আগেই অভিযান মোটামুটি শেষ।’
সমন্বিত ব্যবস্থপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের তথা স্মার্ট কৃষির কোন বিকল্প নেই। এজন্য সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ১২ ক্যাটাগরির যন্ত্র হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলে ৭০ শতাংশ এবং সমতলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।’
স্মার্ট কৃষিযন্ত্রের কারণে কৃষকদের ব্যয় সাশ্রয়ও হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা কম সময়ে নিরাপদে তাদের ধান সংগ্রহ করতে পারছে বলেও জানান তিনি।
গত আমন মৌসুমে কম্বাইন হারভেস্টার ও অন্যান্য কৃষিযন্ত্রের ব্যবহারে কৃষকের এক হাজার ১১৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এই বোরো মৌসুমের হিসাব আমরা করছি। তিনি আশা করেন, প্রকৃতিক দুর্যোগকে পাশ কাটিয়ে স্মার্ট কৃষির সহায়তায় খুব কম সময়ে ধান সংগ্রহ করে হাওর তথা দেশবাসীর খাদ্য নিরাপত্তার উত্তম বিধান নিশ্চত করার নিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রী, কিষান-কিষানি ও কৃষি সম্প্রসারণের মিলিত প্রয়াস উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত থাকবে।
সারা দেশে মোট মেশিন দেয়া হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ এর মধ্যে কম্বাইন হারবেস্টার ৮ হাজার ৫০০, রিপার ১ হাজার ৬০০। ইতিমধ্যে হাওর অঞ্চলে ৩ হাজার ৫০০ হারবেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। তবে, ধান কাটায় ব্যবহার হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ হারভেস্টার।