দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে তামাক চাষ বেড়েছে। খাদ্য ফলানোর জমিতে ব্যাপক হারে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সংকটককে বাড়িয়ে দিচ্ছে। শক্তিশালি তামাক নিয়ন্ত্রন আইন কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। তাই দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন না হলে দেশে খাদ্য সংকট বাড়বে। রাজধানিতে কৃষি সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় একথা বলেন তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) সম্মিলিতভাবে ‘কোম্পানির আগ্রাসনে বাড়ছে তামাক চাষ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি’বিষয়ক এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় সেশন পরিচালনা করেন তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও বিএনটিটিপি) এর টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা।
কর্মশালার সেশন পরিচালনাকালে সুশান্ত সিনহা বলেন, ‘তামাক পাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার তামাক চাষ বৃদ্ধির প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তামাক চাষ যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি কৃষকের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু তামাক কোম্পানি বিপুলভাবে লাভবান হচ্ছে। তামাক কোম্পানি ‘তামাক চাষ লাভজনক’ এমন একটি মিথ্যা তথ্য মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেসব জেলায় তামাক চাষ হয় দেশের দরিদ্রতার সূচকে সেসব জেলার অবস্থান সর্বাগ্রে।’
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশে তামাক কোম্পানির আগ্রাসনে বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এ জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই।’
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, ‘তামাক কোম্পানি ১০টি খাতে ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাদের কর ফাঁকির প্রকৃত কোনো হিসেব নেই। যে পরিমানে স্বাস্থ্য ক্ষতি হচ্ছে সে তুলনায় রাজস্ব আসছে অনেক কম। তামাক চাষের কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিও বাড়ছে। সবমিলিয়ে দেশে তামাক চাষের কারণে বছরে দেড় লাখ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।’
কর্মশালায় বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, ‘সরকার খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। কিন্তু তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নানা ধরনের টালবাহানা করে। হাইকোর্টের এপিলেড ডিভিশনের আদেশে বলা হয়েছে তামাক চাষ কমাতে হবে এবং দেশে নতুন করে কোনো ধরনের তামাক কোম্পানি স্থাপনের অনুমতি দেয়া যাবে না। কিন্তু এ আদেশ অমান্য করা হচ্ছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ড. রুমানা হক বলেন, ‘আমাদেরকে তামাক চাষ থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপই হলো দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা। এছাড়া দেশের কৃষকরা যাতে তামাক চাষ থেকে বের হয়ে অন্য ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সেটা নিয়েও সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।’
কর্মশালায় সমাপনী বক্তব্য দেন, বিইআরের তামাক কর প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। আর সঞ্চালনা করেন বিইআরের সিনিয়র প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিল। কর্মশালায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৩৫জন কৃষি সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে তামাক চাষ বেড়েছে। খাদ্য ফলানোর জমিতে ব্যাপক হারে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সংকটককে বাড়িয়ে দিচ্ছে। শক্তিশালি তামাক নিয়ন্ত্রন আইন কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। তাই দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন না হলে দেশে খাদ্য সংকট বাড়বে। রাজধানিতে কৃষি সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় একথা বলেন তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) সম্মিলিতভাবে ‘কোম্পানির আগ্রাসনে বাড়ছে তামাক চাষ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি’বিষয়ক এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় সেশন পরিচালনা করেন তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও বিএনটিটিপি) এর টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সুশান্ত সিনহা।
কর্মশালার সেশন পরিচালনাকালে সুশান্ত সিনহা বলেন, ‘তামাক পাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার তামাক চাষ বৃদ্ধির প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তামাক চাষ যা পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি কৃষকের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু তামাক কোম্পানি বিপুলভাবে লাভবান হচ্ছে। তামাক কোম্পানি ‘তামাক চাষ লাভজনক’ এমন একটি মিথ্যা তথ্য মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেসব জেলায় তামাক চাষ হয় দেশের দরিদ্রতার সূচকে সেসব জেলার অবস্থান সর্বাগ্রে।’
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশে তামাক কোম্পানির আগ্রাসনে বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এ জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই।’
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, ‘তামাক কোম্পানি ১০টি খাতে ব্যাপক ক্ষতি করছে। তাদের কর ফাঁকির প্রকৃত কোনো হিসেব নেই। যে পরিমানে স্বাস্থ্য ক্ষতি হচ্ছে সে তুলনায় রাজস্ব আসছে অনেক কম। তামাক চাষের কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকিও বাড়ছে। সবমিলিয়ে দেশে তামাক চাষের কারণে বছরে দেড় লাখ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।’
কর্মশালায় বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, ‘সরকার খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। কিন্তু তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নানা ধরনের টালবাহানা করে। হাইকোর্টের এপিলেড ডিভিশনের আদেশে বলা হয়েছে তামাক চাষ কমাতে হবে এবং দেশে নতুন করে কোনো ধরনের তামাক কোম্পানি স্থাপনের অনুমতি দেয়া যাবে না। কিন্তু এ আদেশ অমান্য করা হচ্ছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ড. রুমানা হক বলেন, ‘আমাদেরকে তামাক চাষ থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপই হলো দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা। এছাড়া দেশের কৃষকরা যাতে তামাক চাষ থেকে বের হয়ে অন্য ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সেটা নিয়েও সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।’
কর্মশালায় সমাপনী বক্তব্য দেন, বিইআরের তামাক কর প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। আর সঞ্চালনা করেন বিইআরের সিনিয়র প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিল। কর্মশালায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৩৫জন কৃষি সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।