পাঁচ ইসলামি ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র শেয়ারধারীদের ভাগ্য নিয়ে বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত বুধবার বলেছেন, ‘সব শেয়ারের মূল্য শূন্য হয়ে গেছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের মূল্য ঋণাত্মক ৪২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না।’
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেনি এবং একীভূত করার প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আবারও বলেছে, অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারী, শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় বিবেচনার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।
আলোচ্য পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছিল ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের এবং বাকি চারটি ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। তারা দুজনেই ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার সঙ্গে সংগতি রেখে আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল), বিশ্বব্যাংক, এফসিডিওর কারিগরি সহায়তা ও মতামতসমূহ বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ তৈরি করা হয়েছে। এ রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতাধীন ব্যাংকসমূহের আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডারসহ বিবিধ পাওনাদারের অধিকারের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ১৬ (২) (ট), ২৮ (৫), ৩৭ (২) (গ) এবং ৩৮ (২) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন টুলস প্রয়োগের সঙ্গে সংগতি রেখে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ারধারী, দায়ী ব্যক্তি, অ্যাডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন ধারক এবং টিয়ার ২ মূলধন ধারক ব্যতীত সাব-অর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারের ওপর লোকসান আরোপ করতে পারবে।
এ ছাড়া ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর ধারা ৪০-এ অবসায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেজল্যুশনের অধীন থাকা ব্যাংককে বিলুপ্ত করা হলে শেয়ারধারীরা যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতেন, তার চেয়ে অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাদের ক্ষতির পরিমাণের পার্থক্যের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী, রেজল্যুশনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত কোনো স্বতন্ত্র পেশাদার মূল্যায়নকারী কর্তৃক সম্পাদিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে শেয়ারধারীরা কোনো ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হলে তা দেওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত একিউআর এবং বিশেষ পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব ব্যাংক বিশাল লোকসানে রয়েছে এবং তাদের নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় ‘৫টি সংকটাপন্ন ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের রেজ্যুলেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের লোকসানের দায়ভার বহন করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় বিবেচনার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বা শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাঁদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
পাঁচ ইসলামি ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র শেয়ারধারীদের ভাগ্য নিয়ে বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত বুধবার বলেছেন, ‘সব শেয়ারের মূল্য শূন্য হয়ে গেছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের মূল্য ঋণাত্মক ৪২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না।’
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেনি এবং একীভূত করার প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আবারও বলেছে, অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারী, শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় বিবেচনার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।
আলোচ্য পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছিল ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের এবং বাকি চারটি ছিল চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে। তারা দুজনেই ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চার সঙ্গে সংগতি রেখে আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল), বিশ্বব্যাংক, এফসিডিওর কারিগরি সহায়তা ও মতামতসমূহ বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ তৈরি করা হয়েছে। এ রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আওতাধীন ব্যাংকসমূহের আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডারসহ বিবিধ পাওনাদারের অধিকারের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ১৬ (২) (ট), ২৮ (৫), ৩৭ (২) (গ) এবং ৩৮ (২) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন টুলস প্রয়োগের সঙ্গে সংগতি রেখে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ারধারী, দায়ী ব্যক্তি, অ্যাডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন ধারক এবং টিয়ার ২ মূলধন ধারক ব্যতীত সাব-অর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারের ওপর লোকসান আরোপ করতে পারবে।
এ ছাড়া ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর ধারা ৪০-এ অবসায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেজল্যুশনের অধীন থাকা ব্যাংককে বিলুপ্ত করা হলে শেয়ারধারীরা যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতেন, তার চেয়ে অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাদের ক্ষতির পরিমাণের পার্থক্যের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী, রেজল্যুশনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত কোনো স্বতন্ত্র পেশাদার মূল্যায়নকারী কর্তৃক সম্পাদিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে শেয়ারধারীরা কোনো ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হলে তা দেওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত একিউআর এবং বিশেষ পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব ব্যাংক বিশাল লোকসানে রয়েছে এবং তাদের নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় ‘৫টি সংকটাপন্ন ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের রেজ্যুলেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের লোকসানের দায়ভার বহন করতে হবে’ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারধারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় বিবেচনার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বা শেয়ারধারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তাঁদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।